"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"
বিবেক ও আমিঃ কথোপকথন
- তুমি কে?
- আমাকে চিনতে পারছোনা? আমি তোমার বিবেক।
- আমার কাছে তোমার কাজ কি?
- তোমাকে সঠিক পথ দেখানো।
- সঠিক পথ আবার কোনটি?
- যে পথে চললে মানুষের মঙ্গল হয়, কল্যাণ হয়। বলতে পারো, সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত পথ।
- কে দেবে সেই পথের সন্ধান? তুমি?
- নাহ্।
আমি নই, তোমার সৃষ্টিকর্তা- তবে সশরীরে নয়। আমি বিবেকরূপে তোমার জ্ঞান, তোমার বিচারবুদ্ধি, তোমার সৃষ্টিশীলতা আর তোমার বোধকে জাগ্রত করার চেষ্টা করবো। অর্থাৎ আমিই তোমাকে অনুপ্রাণিত করবো সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত পথে চলার জন্য। যদিও তাঁর উপস্থিতি সবসময় তোমার কাছে অদৃশ্যমান হয়েই থাকবে। তাই বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দোটানায় তুমি ভুল পথে চললে আমিই তোমাকে রোধ করার চেষ্টা করবো, তোমার চিন্তা-চেতনা ও ভাবনাকে সঠিক পথে তাড়িত ও প্রভাবিত করার চেষ্ট করবো।
- কেউ কী সেই পথের সন্ধান জানে?
- অনেকই জানে। সাধনা ও ত্যাগের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার সেই নির্দেশিত পথের সন্ধান পেয়েছেন অনেকেই। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষণজন্মা কিছু অতি মানবীয় গুনাবলী সম্বলিত নবী, মহামানব/মহাপুরুষ, সাধু, পীর-আউলিয়া, দরবেশ ও কিছু মহাজ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ। তাঁরা যে পথের সন্ধান পেয়েছেন বা সবচেয়ে উন্নত পথ বলে মেনে নিয়েছেন তা হলো ধর্ম, যা মূলতঃ বিশ্বাস- যা তুমি ধারণ করো। মানুষ তার নিজস্ব বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী হয় আর তার কাছে সেটাই তার পরম বিশ্বাস।
আর সেই বিশ্বাসেই সে অনঢ়।
- সব ধর্মই কী একই নির্দেশ দেয়?
- না। সব ধর্মের মূল ভিত্তি, বক্তব্য ও নির্দেশ একরকম নয়। মানব কল্যাণের লক্ষ্যে যুগে যুগে জাতি, গোত্র, বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন ধর্মের প্রবর্তন হয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে, প্রসারণ হয়েছে, পরিত্যক্ত হয়েছে, সমালোচিত হয়েছে, সংষ্করণ হয়েছে। অবশেষে কয়েকটি মূল ধর্ম একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছে।
যা আমরা নিজ নিজ ধর্ম বলে মানি।
- সেই পথে চললে আমার কী লাভ?
- নিজেকে একজন বিশ্বাসী ও আদর্শ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। নিজেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে সৃষ্টির সার্থকতা প্রমাণ করা। পূণ্যের মাধ্যমে পরকালে অপার সুখভোগ লাভ। তাছাড়া তোমার মনের ও আত্মার প্রশান্তি লাভ।
- তাতে তোমার কী লাভ?
- আমার নিজেরো মুক্তিলাভ অর্থাৎ সকল দায়বদ্ধতা থেকে আমার অব্যাহতি। সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক অর্পিত দায়িত্বের যথাযথ পালন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। তোমার যেমন সৃষ্টিকর্তার কাছে সৃষ্টির সার্থকতা প্রমাণের দায়িত্ব আছে তেমনি আমারো নিজের কর্তব্যনিষ্ঠা ও দায়িত্ব পালনের যথাযথ প্রমাণ দেয়া। একদিন দুজনেই যখন সৃষ্টিকর্তার কাছে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হবো সেদিন তোমার সাথে সাথে আমাকেও জেরা করা হবে। সেদিন আমি অর্থাৎ তোমার বিবেক তোমার সাথে থাকবে না।
তাই কোন সত্যই তুমি গোপন করতে পারবে না। চিন্তা করে বলারও কিছু থাকবে না।
- মুক্তি! দায়িত্ব! এসব কথা আসছে কেন? আমি কী তোমাকে আটকে রেখেছি?
- না তা নয়। সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত কেউ আমাকে আটকাতে বা বিতাড়িত করতে পারবেনা। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত দেহ আর আত্মা যেমন নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত, আমিও ঠিক তেমনি তোমার অস্তিত্ব, চেতনা ও বোধের সাথেই অটুটভাবে সম্পর্কযুক্ত।
তুমি যতদিন বেঁচে থাকবে, আমিও ঠিক ততদিনই তোমার সাথে থাকবো। তোমার মৃত্যু হলে আমারো মৃত্যু। ধুর! ভুল বললাম। মৃত্যু নয় মুক্তি। কারণ আমি আত্মার সাথে সম্পর্কযুক্ত।
তাই আত্মার মতো আমারো মৃত্যু নেই। মুক্তি বলাটাই শ্রেয়। তোমার হয়তো শুনতে ভাল লাগছে না। তাই আবারো বলছি, আমাকে মনে মনে নির্বাসন দিয়ে কোন লাভ হবেনা। আমি সবসময়ই তোমার সাথেই আছি।
তুমি কি খেয়াল করেছো ঘুমের মাঝেও আমি অনেক সময় তোমাকে তাড়িয়ে বেড়াই। তুমি দুঃস্বপ্ন দেখে আতঙ্কে কেঁপে ওঠো। বুকে ফুঁ দাও। কিন্তু সেই ফুঁ আমাকে কখনই স্পর্শ করেনা। আমি আমার জায়গায় স্থির, অনঢ়, অবিচল।
- শেষ বিচারের দিনে তুমি কী আমার বিবেক হওয়া সত্ত্বেও আমার পক্ষে থাকবে না?
- নাহ্। থাকবো না। তুমি যেমন ঈশ্বরের সৃষ্টি আমিও তেমনি তাঁরই সৃষ্টি। তাঁরই অনুচর হয়ে তোমাকে চোখে চোখে রাখাই আমার কর্তব্য। তিনি সবই দেখছেন, আমারো ফাঁকি দেবার কোন উপায় নেই।
তোমার যাবতীয় কর্মকান্ডের নিয়ন্ত্রক বা উপদেষ্টা যদিও আমি তবুও তোমাকে রোধ করার শক্তি ঈশ্বর আমাকে দেননি। সেই ক্ষমতা ঈশ্বর সম্পূর্ণভাবে তোমার হাতেই ন্যাস্ত করেছেন।
(পুনঃ প্রকাশ, সংশোধিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।