আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্পিনোজার নির্বিকার ঈশ্বর

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
বেনেডিক্ট স্পিনোজা। (১৬৩২-১৬৭৭) ওলন্দাজা (Dutch) দার্শনিক। স্পিনোজার বড় বোন বাড়ি নিয়ে মামলা করেছিল।

বাড়িটি বোনকে লিখে দিয়ে স্পিনোজা গৃহত্যাগ করেছিলেন। অবাক হওয়ার কিছু নেই-প্রকৃত দার্শনিকেরা এমনই হয়। তাছাড়া ইহুদি ধর্মনেতাদের সঙ্গেও স্পিনোজার গোল বেঁধেছিল-পরিনতিতে স্পিনোজাকে সম্প্রদায় চ্যূত করা হয়েছিল। দার্শনিকটি তারপর আমস্টারডামের একটি কাচের দোকানে কাজ নিলেন। ইউরোপের বিদগ্ধজনেরা সেই কাচের দোকানেই নাকি আসতেন দলছুট দার্শনিককে শ্রদ্ধা জানাতে।

যা হোক। সেই কাচ পরিস্কার করতে করতেই ফুসফুসে কাচের গুঁড়ো ঢুকে মাত্র ৪৪ বছরে অস্টাদশ শতকের ইউরোপীয় জ্ঞানদীপ্ত যুগের অন্যতম পুরোধা ব্যাক্তিটি মৃত্যুবরণ করেন। হল্যান্ড। সপ্তদশ শতকে হয়ে উঠেছিল স্পেন থেকে নির্বাসিত ইহুদিদের আশ্রয়স্থল। ২৪ নভেম্বর ১৬৩২।

বেনেডিক্ট (বা বারুচ) স্পিনোজার জন্ম হল্যান্ডে। আমস্টারডামের এক ইহুদি পরিবারে। পরিবারের শিকড়টি ছিল স্পেনে। ওখানকার খ্রিস্টান রাজা ইহুদিদের তাড়িয়ে দিয়েছিল। নির্বাসিত ইহুদিরা ইউরোপের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল।

সপ্তদশ শতকের আমস্টারডাম। এখনকার আমস্টারডামের একটি কফিশপ। কৈশরে ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়াও লাতিন ও ফিজিক্স পড়েছিলেন স্পিনোজা । পাঠ্যসূচির অর্ন্তগত ছিল ফরাসি দার্শনিক দেকার্ত ও ইতালিও সংশয়বাদী জিওদার্নো ব্রুনো। (একে চার্চ পুড়িয়ে মেরেছিল) তরুণ বয়েসেই হল্যান্ডের ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে স্পিনোজার বিরোধ বাঁধে।

কেন ? বলছি। স্পিনোজা ছিলেন সর্বপ্রাণবাদী অদ্বৈতবাদী। এই কথাটা মোটেও কঠিন নয়। ব্যাখ্যা করছি। স্পিনোজার মতে- ঈশ্বর এবং জগৎ অভিন্ন।

কাজেই অতিজাগতিক ঈশ্বরের সন্ধানে দৃশ্যমান জগতের বাইরে যাওয়ার দরকার নাই-বর্তমানের সীমিত অভিজ্ঞতায় ঈশ্বরলাভ বা ঈশ্বরজ্ঞান সম্ভব। ঈশ্বর সামগ্রিকভাবে প্রকৃতিতে বাঁচেন ও আন্দোলিত হন। (গড মুভস অ্যান্ড লিভস্ ইন নেচার। ) সমগ্র বিশ্ববহ্মান্ডই ঈশ্বর। প্রকৃতি কিংবা ঈশ্বর প্রকৃতি কিংবা ঈশ্বর-এর মূল কারণ এবং প্রকৃতি কিংবা ঈশ্বর স্বয়ংসম্পূর্ন।

এই ধারনার জন্যই স্পিনোজার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরের শতাব্দীতে স্পিনোজাকে ‘বাজে শয়তান’ বলা হয়েছিল! স্পিনোজা আরও বিশ্বাস করতেন: মানুষ-অহংবশত ঈশ্বরকে নিজের রুপে কল্পনা করেছে। ধারণাটি অ্যানথ্রোপোমরফিক বা মানুষকেন্দ্রিক। মানুষ আরও কল্পনা করেছে -এই কল্পিত মানুষের ব্যাপারে বিশেষভাবে কৌতূহলী। স্পিনোজার প্রবল আপত্তি এখানেই। স্পিনোজার ঈশ্বর ভালোও বাসে না ঘৃনাও করে না।

সামগ্রিক অস্তিত্ব (দি টোটালিটি অভ এক্সিজটেন্স) প্রকৃতি, ঈশ্বর মানুষের অনেক উর্ধে; মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতি উদাসীন-কাজেই পার্সোনাল গড-এর ধারণাই অবাস্তব। তাহলে শুভ ও অশুভ? আমাদের ধারণায় যা কিছু মঙ্গলময়- তার ক্রেডিট আমরা ঈশ্বরকে দেই-যা কিছু খারাপ লাগে - শয়তানকে দোষারোপ করি। এসব কথাই স্পিনোজা লিখেছেন ‘এথিক্স’ নামে একটি গ্রন্থে । লাতিন ভাষায়। প্রকাশ পেয়েছিল মৃত্যুর পর।

১৬৭৭ সালে। বইটির পুরো নাম: ‘এথিকা অরডাইন জিওমেট্রিকো ডেমোনসস্ট্রাটা। ’ এথিকা অরডাইন জিওমেট্রিকো ডেমোনসস্ট্রাটা বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা স্পিনোজাকে "বাজে শয়তান" বললেও আধুনিক যুগ স্পিনোজার ভাবনাকে সম্মান করেছে। শ্রদ্ধভরে ভাস্কর্য নির্মান করেছে। আমি আগেই বলেছি।

স্পিনোজা ছিলেন অস্টাদশ শতকের ইউরোপীয় জ্ঞানদীপ্ত যুগের অন্যতম পথিকৃৎ। যে কারণে বারট্রান্ড রাসেল তাঁকে the noblest and most lovable of the great philosophers বলে অবহিত করেছেন।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।