করণিক: আখতার২৩৯
গতিময় স্থির আবর্তে ‘ভুল’-এর প্রবন্ধ
ভুল ক’রে গ্যাছে বারবার, -আমাদের বিশিষ্ট হার্মেসিস,
-আমাদের বিগত বর্তমান,-
--যে ভুলের কারণে ভুগেছিলো মিসরবাসী ॥
যদি তাকে আবারো
জাগিয়ে দেওয়া হয় নির্ভুল নির্দেশসহ,-
যা’ কিনা আগেও দেওয়া হয়েছিলো তাকে; -আবারো সে
ভুলে যাবে, -নির্দেশগুলো ভুলে যাবে নিমেষে।
এবং আবারো ‘স্বীয় চেতনায় বর্তমানে’ চলমান সে
সেই ভুলই করবে হার্মেসিস, -আর ভুগবে মিসরবাসী ॥
আবারো নকশা ধ’রে ধ’রে
বাদুরকালো অন্ধকার অগ্রাহ্য ক’রে
বোঁটকা শুকনো বাসি অন্ধকার ভেদ ক’রে
নির্ভিক হার্মেসিস পায়ে পায়ে এগিয়ে যাবে,
-পৌঁছুবে নকশাচিহ্নিত সংরক্ষিত মমীটার কাছে;
--মমীটার বুক ফেড়ে মূল্যবান রত্ন বের ক’রে
ভরাবে ক্লিওপেট্রার পেতে ধরা শূন্য-আঁচল, -আর, -
-নিমেষেই ভুলে যাবে দীক্ষাগুরুদেরকে দেওয়া অঙ্গীকার।
‘এ্যান্টনি আকৃষ্ট’ ক্লিওপেট্রাকে পাবার আশায়
বেগার খাটুনি-ই হবে সার ॥
জীবন-সমান ভুলের খেসারতে ব্যস্ত হার্মেসিসকে,
অর্থাৎ, -আমাদের নিত্যাগত বর্তমান হার্মেসিসকে
খা যাচ্ছে সাবেক নাটকীয় কর্মকাণ্ডে ধন্য।
সকল সমকালে, -স্বতন্ত্র সহজাত বৈশিষ্ট্যে
প্রত্যেক হার্মেসিস অনন্য ॥
‘সাবধান! হার্মেসিস সাবধান!! -সম্মুখে সীমাহীন প্রবঞ্চনা!!!’-
--নেপথ্য চিরে ভেসে আসা সতর্কবাণী সফলতা পায় না;
--মুখোমুখি দাঁড়ানো ক্লিওপেট্রা,
--মোহমুগ্ধ হার্মেসিস হারায় নিশানা।
আবারো জাগিয়ে দেওয়া হ’লে,-
-নিখুঁত ছকে বাঁধা হার্মেসিসের ভুল
আর অসচেতন নাগরিকের ভোগান্তি দেখা যাবে।
-জীবন-নাট্যের আমুদে দর্শকেরা দেখবে আর আনন্দ পাবে।
--নিরপেক্ষ নির্বাক দর্শকেরা নির্ভেজাল নির্দোষ আনন্দ পাবে ॥
কৌতূহলী দর্শক, -পরমানন্দে মিশে যায়নি যারা, -তাদের জিজ্ঞাসা,
-অর্থাৎ, -সমকালে বর্তমান দর্শকের সাধারণ জিজ্ঞাসা,--
--‘এক-ই ‘ভুল’-এর চলচ্চিত্র ক্যানো দেখতে হয় বার বার!?’
--জবাব পাবার আশায়, -আমার সমান বেকুবের মতো
প্রশ্ন ছুড়ে ফ্যালফ্যালে চেয়ে থাকি, -জবাব আসে না;
--আশপাশ থেকে আসে সন্দেহমাখা চাহনি আর রহস্যময় হাসি।
--জবাব না-পেয়েও আনাড়ি দর্শক আমি, --না-বুঝেও হাসি ॥
যেখানেই গ্যাছি, -সঙ্গে ছিলো প্রশ্নটা, -পারিনি তাড়াতে,-
--চেষ্টা ক’রেও পারিনি তাড়াতে,
--অগত্যা আমাকে চেষ্টা ছাড়তে হ’লো
নাকি জীবিকাস্রোতের পাকে তলিয়ে গ্যালো জিজ্ঞাসাটা,
-তা’ নিয়ে ভেবেছি কি-না, --স্মরণে আসে না ॥
অবশেষে, -নেপথ্যের একধাপ আড়াল থেকে নিঃশব্দ-বিস্ফোরণে,
-জানি না কখন জবাব এলো ! -যেন শোনা গ্যালো নিজ-কানে,
-“-‘হার্মেসিসের ভুল’ই হ’চ্ছে, -মহাজগতের গতি,-
-অথবা, -এ-জগতের প্রাণ-ই হ’চ্ছে, -হার্মেসিসের ভুল,-
যে’ ভুল না-থাকলে মানুষ থেমে যাবে শান্তিতে।
-প্রবাহমান সময় জমাট বাঁধবে মহাকালের শিরা ধমনীতে ॥”
বাহুল্য প্রশ্নটা আজ আর জ্বালাতন করে না; --
-বরং, -যখন দেখি, কোনো জনপদের পাশে শুয়ে কিম্বা ব’সে
কিম্বা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেউ একান্তে মনখুলে হাসে;
-আমার বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, -ভুলোমন হার্মেসিসদের
ভুলের বহর দেখে দেখে দরুণ মজা পাচ্ছে সে ॥
-‘ভুলের মাশুল গুণতে ব্যস্ত হার্মেসিস
পায় না বিশ্রাম নিদ্রায় জাগরণে;
-পায় না সে আনন্দিত দর্শকের সারিতে দাঁড়াবার অবসর।’-
তাকে দেখে মহাজগৎনাট্যের কোনো মোহিত দর্শক
হাসতে হাসতে উন্মাদ হ’য়ে যাক্, -কখনো কাম্য নয়;
-সমান কারণে কৌতুকপূর্ণ কোনো জিজ্ঞাসা যেমন,-
--‘আত্মভোলা হার্মেসিসের কীর্তিকলাপ-ই কি তবে!
--বন্ধু তোমাকে--!! --থামাও হাসি, -জবাব দাও,-
বন্ধু, -তোমার ঐ হাসির কারণ?’ -বাহুল্য বিদ্ঘুটে প্রশ্নটা
যেন ছোড়াই হয় না হাস্যরত ঐ বন্ধুকে, -বরং,-
--‘হার্মেসিসের ভুলে হার্মেসিস অপরাধী কি না!?’--
--সকল সমকালে জনপদের অবাক ঐ দর্শক বন্ধুর
আজগুবি প্রশ্নখানা
বন্ধুর কাছে করে জবাব প্রার্থনা ॥
-- (১৯৮৪-২০০১)
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।