সব বিষয়ে জানতে ও শিখতে আগ্রহী একজন উদার মনের মানুষ।
মাইক্রোসফটের সুচনা ১৯৮২ সালে IBM compatible PC -র জন্য non-graphical command line অপারেটিং সিস্টেম MS-DOS দিয়ে। কমান্ড ভিত্তিক জটিলতার কারণে MS-DOS সাধারণ মানুষের কাছে খুব একটা জনপ্রিয়তা পায় নি। এরপর ১৯৮৫ সালে মাইক্রোসফট আবির্ভাব ঘটায় সহজ, সরল এবং গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ। ফ্রেন্ডলি ইউজার ইন্টারফেসের এই অপারেটিং সিস্টেমটি শুধু জনপ্রিয়তাই পায় নি, একই সাথে কমপিউটারকেও সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে।
এরপর মাইক্রোসফটকে আর পিছন দিকে ফিরে তাকাতে হয় নি। এরপরের ইতিহাস আমরা সবাই জানি। মাইক্রোসফট ও বিল গেট আজ একটি জায়েন্ট আইটি প্রতিষ্টান ও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী লোকের নাম, একটি কিংবদন্তির নাম এবং কমপিউটার জগতের একটি মাইলস্টোন। পরবর্তীতে মাইক্রোসফট ধাপে ধাপে উইন্ডোজকে আরো উন্নত করে ও নতুন নতুন ফিচার যোগ করে ডেভেলপ করে উইন্ডোজের নতুন নতুন ভার্সন। সেই ধারাবাহিতার সাম্প্রতিক সংযোজন উইন্ডোজ ৭।
আশি বা নব্বইয়ের দশকে মাইক্রোসফটের যে ক্রিয়েটিভিটি ছিল তা এখন নাই। যেসব ফিচার/প্লাগইন আমরা নেটের ফ্রী প্রোগ্রামে পায় তা মাইক্রোসফটের সার্ভিস প্যাক ও নতুন ভার্সনে আসে অনেক পরে। মাইক্রোসফট বিশেষ করে অপারেটিং সিস্টেমে মনোপলির সুযোগ নিয়ে এখনও একচেটিয়া ব্যবসা করছে। চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন ও কমপিউটার প্রস্তুতকারি কোম্পানীদের সাথে চুক্তিতে প্রি ইনস্টল প্রোগ্রাম বিক্রি করে মাইক্রোসফট উইন্ডোজের ব্যবসা ভালোই চালাচ্ছিল। পিসি ওয়ার্ল্ড পত্রিকা মন্তব্য করেছিলেন মাইক্রোসফটের প্রোগ্রাম ডেভেলপার টিম থেকে মার্কেটিং টিম অনেক শক্তিশালী।
যাইহোক দীর্ঘ সাফল্যের ইতিহাসে মাইক্রোসফট প্রথম ধাক্কাটা খেয়েছে উইন্ডোজ ভিসতা রিলিজ দেয়ার পর। এটাতে এত বেশি সমস্যা ছিল যে অনেক ব্যবহারকারী ভিসতা আনইনস্টল করে আবার এক্সপিতে ফিরে গেছে। এ সমস্যাগুলোর কিছু সমাধান দিয়ে মাইক্রোসফট পরপর দুটি সার্ভিস প্যাকও ছেড়েছে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। ইংরেজিতে একটা কথা আছে "You never get a second chance to make a first impression". এরই বানিজ্যিক সমাধান উইন্ডোজ ৭।
অর্থাৎ উইন্ডোজ ভিসতার ভূলত্রুটিগুলো সংশোধন করে কিছু নতুন ফিচার যোগ করে নতুন পোশাকে নতুন সাজে 'সার্ভিস প্যাক #' এর পরিবর্তে 'উইন্ডোজ সেভেন' নাম দিয়ে ক্রেতা সাধারণকে চমক দেয়া! যাই হোক, আজকে উইন্ডোজ ৭ এর নতুন ফিচারগুলো নিয়ে সহজভাবে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব। বুঝতে অসুবিধা হলে ফিচারের ভিডিও ক্লিকের লিঙ্কগুলো দেখতে পারেন। উইন্ডোজ সেভেনের উল্লেখযোগ্য ৭টি ফিচার:
১। Desktop উইন্ডোজ সেভেনের ডেস্কটপে নতুন ফিচার Aero Shake হল একাধিক ওপেন উইন্ডোর একটিতে মাউস ক্লিক করে নাড়া দিলে সে উইন্ডোটি maximize হবে, বাকীগুলো minimize হবে। ডেস্কটপের টাস্কবারকে ডেভেলপ করে সুপারবারে উন্নত করা হয়েছে।
কোন প্রোগ্রামকে সক্রিয়/নিষ্ক্রিয় বা দৃশ্যমান/অদৃশ্যমান করতে সুপারবারের আইকনে পয়েন্টার রাখলেই হবে ক্লিক করতে হবে না। এছাড়া যদি একই প্রোগ্রামের দুটি উইন্ডো ওপেন থাকে সুপারবারে সেই প্রোগ্রামের আইকনে পয়েন্টার রাখলে দুটি উইন্ডোই পাশাপাশি দৃশ্যমান হবে। এখন যে উইন্ডোতে মাউস রাখবেন সেটি maximize হয়ে সক্রিয় হবে, একই সাথে অন্য উইন্ডোটি নিষ্ক্রিয় হয়ে minimize হবে। এই যে ক্লিকের পরিবর্তে আইকনে মাউস পয়েন্টার রাখলেই কাজ হয়ে যাচ্ছ তার নাম Aero Peek । দুটি উইন্ডো পাশাপাশি রেখে বা ইচ্ছানুযায়ী ডেস্কটপে প্ল্যাস করে কাজ করার সুবিধার্থে Snap ফিচার।
কোন উইন্ডোকে ড্রাগ এন্ড ড্রপ করে ডেস্কটপের বাম কিনারায় স্পর্শ করালে সেটি ডেস্কটপের বাম পাশের ৫০% জুড়ে maximize হবে। একইভাবে অন্য উইন্ডোকে ডান কিনারায় স্পর্শ করালে সেটি ডেস্কটপের ডান পাশের ৫০% জুড়ে maximize হবে। আবার কোন উইন্ডোকে ড্রাগ এন্ড ড্রপ করে ডেস্কটপের উপরের কিনারায় স্পর্শ করালে সেটি ডেস্কটপের ১০০% জুড়ে maximize হবে।
২। HomeGroup হোম নেটওর্য়াক বা একাধিক কমপিউটারের মধ্যে ফাইল, প্রোগ্রাম, প্রিন্টার ইত্যাদি শেয়ারের কাজগুলোকে আরো সহজ করার জন্য HomeGroup।
আপনি আপনার যে কোন ফাইলে বিভিন্ন security অপশন দিতে পারবেন, যেমন '১ নম্বর' ফাইলটি 'ক' শুধু পড়তে পারবে, 'খ' পড়তেও পারবে লিখতেও পারবে ইত্যাদি। এছাড়া wireless networking কে আরো সহজ করা হয়েছে।
৩। Jump Lists দিয়ে আপনি সরাসরি ওপেন করতে পারবেন সাম্প্রতিক কালে ব্যবহার করেছেন এমন ধরনের ডকুমেন্ট, ছবি, গান বা ওয়েবসাইট। টাস্কবার বা স্টার্ট মেনুতে প্রোগ্রাম আইকনে Right Click করলেই হবে।
যে প্রোগ্রামে ক্লিক করবেন সে প্রোগ্রামের রিলেটেড ডকুমেন্ট/ফাইল Jump Lists -এ প্রদর্শিত হবে।
৪। Windows Live Essentials -এর অধীনে রয়েছে: চাটের জন্য Messenger, ফটো সংরক্ষণ ও শেয়ারের জন্য Photo Gallery, ই-মেইল প্রোগ্রাম Mail, ব্লগ-ফটো-ভিডিও কম্পোস করার জন্য Writer, নিজস্ব মুভি ও স্লাইড শোর জন্য Movie Maker, কমপিউটারকে নিয়ন্ত্রন ও মনিটরিং করার জন্য Family Safety এবং instantly যে কোন পেইজ থেকে চার্জ করার জন্য Toolbar।
৫। Windows Search: উইন্ডোজ ৭ -এর Start menu-র search boxকে আরো উন্নত করা হয়েছে।
Windows Search PC-তে খুজেঁ পাওয়া relevant documents, pictures, music, এবং e-mail কে ক্যাটাগরি হিসেবে ভাগ করে দেখাবে।
৬। Performance improvements : পারফোরমেন্স বৃদ্ধি করার জন্য Sleep মুড, Search টাইম, USB devices রিকগনাইজ এবং ব্যাকগ্রাউন্ড ওয়ার্কে আরো উন্নত ও দ্রুত করা হয়েছে। টিভি, ভিডিও, মিউজিক এবং অনলাইন এন্টারটেইনমেন্টের জন Windows Media Center কে আরো উন্নত করা হয়েছে। উইন্ডোজ সেভেন -এর ৪টি অপশন: Home Basic, Home Premium, Professional, and Ultimate।
Home Basic ছাড়া বাকী সবগুলো আপশন আবার দুই ধরনের ৩২ ও ৬৪ বিট।
৭। Windows Touch : উইন্ডোজ ৭ দিয়ে কমপিউটারকে touchscreen PCতে পরিনত করা যাবে যেখানে কীবোর্ড ও মাউসের প্রয়োজন হবে না। Windows Touch কিভাবে কাজ করে জানতে চাইলে ভিডিও লিঙ্কটিতে Windows Touchscreen ক্লিক করুন। এই ফিচারটি ব্যবহার করতে touch-screen monitor প্রয়োজন হবে।
Home Basic-এ touchscreen ফিচার নেই। Home Premium, Professional এবং Ultimate তে আছে।
Windows 7 system requirements
উইন্ডোজ ৭ ব্যবহার করতে কমপক্ষে নিম্নোক্ত কনফিগারেশনের কমপিউটার প্রয়োজন হবে:
# 1 gigahertz (GHz) or faster 32-bit (x86) or 64-bit (x64) processor
# 1 gigabyte (GB) RAM (32-bit) or 2 GB RAM (64-bit)
# 16 GB available hard disk space (32-bit) or 20 GB (64-bit)
# DirectX 9 graphics device with WDDM 1.0 or higher driver
Additional requirements to use certain features:
Internet access
Video playback may require additional memory
For some Windows Media Center functionality a TV tuner
Windows Touch & Tablet PCs require specific hardware
HomeGroup requires a network
BitLocker requires Trusted Platform Module (TPM) 1.
and
Windows XP Mode requires an additional 1 GB of RAM, an additional 15 GB of available hard disk space, and a processor capable of hardware virtualization with Intel VT or AMD-V turned on।
XP এবং Vista থেকে Windows 7 আপগ্রেড
XP থেকে Windows 7 আপগ্রেড হবে ফ্রেস ইনস্টলেশন, অর্থাৎ পুরানো ফাইল-ডকুমেন্ট অটোমেটিকালি ট্রান্সফার হবে না। সুতরাং হার্ডডিস্কের সব ফাইল-ডকুমেন্টের অবশ্যই ব্যাকআপ করে নিতে হবে।
এরপরে ইনস্টলেশন এবং তারপরে পুরানো ফাইল-ডকুমেন্ট রিসেইভ। বিকল্প সমাধান পার্টিশন করে XP এবং Windows 7 ডুয়েল বুট করা।
Vista থেকে Windows 7 আপগ্রেডের direct upgrade path রয়েছে। সুতরাং এখানে হবে আপগ্রেড প্রসেস, অর্থাৎ পুরানো ফাইল-ডকুমেন্ট অটোমেটিকালি Windows 7-এ ট্রান্সফার হবে। তারপরেও হার্ডডিস্কের প্রয়োজনীয় ফাইল-ডকুমেন্টের ব্যাকআপ রাখা ভাল।
অনেকসময় আপগ্রেড প্রসেসের সময় system fail জাতীয় সমস্যা হতে পারে।
উল্লেখ্য: যারা ২৬-০৬-২০০৯ থেকে ৩১-০১-২০১০ এর মধ্যে Windows Vista Premium বা Windows Vista Business সহ কমপিউটার কিনেছেন বা কিনবেন তাঁরা বিনামূল্যে Windows 7 আপগ্রেডের সুযোগ পাবেন। এ ব্যাপারে কমপিউটার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করুন অথবা কমপিউটার নির্মাতা কোম্পানীর ওয়েবসাইট চেক করেন।
শেষ কথা: মাইক্রোসফট আগামী ২২শে অক্টোবর উইন্ডোজ সেভেন -এর রিলিজ তারিখ ঘোষণা দিয়েছে। যদিও অনেকে Windows 7 Release Candidate Available for Public কপি ডাউনলোড করে ইতিমধ্যে ব্যবহার করেছেন।
এখন দেখা যাক প্রথম ব্যবহাকারীরা কী মন্তব্য করেন। উইন্ডোজ এক্সপির ভবিষ্যত এখন অনিশ্চিত! কারণ মাইক্রোসফট মনে হয় এক্সপি আর আপডেট করবে না। কারণ মাইক্রোসফট চায় ভালো পারফরমেন্সের জন্য (ব্যবসায়িক কারণে!) আমরা উইন্ডোজ ভিসতা অথবা সেভেন ব্যবহার করি।
--------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট, মাইক্রোসফট, পত্রপত্রিকা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।