সামনে মহা লড়াই পেছনে মৃত্যু!
এই পোস্টটা দেয়ার আগে কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতেই হল। আমি লক্ষ্য করেছি ব্লগে আস্তিকতা, নাস্তিকতা, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে কোন পোস্ট আসলেই কিছু মন্ত্যব্য কমন থাকে যেমন: ‘আবার শুরু হল আস্তিক নাস্তিক ক্যাচাল’, পুরান পাগল.........আমদানি, “হিট বাড়ানোর কৌশল” ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্লগে এই বিষয়টা পুরনো সন্দেহ নেই। কিন্তু পিরামিডের বয়স যেমন ১০০ বছর ধরে ৫০০০ বছর থাকে তেমনি ধর্মের প্রাচীনত্বের কাছে ব্লগের প্রাচীনত্বের তুলনাই চলেনা।
আমার এই পোস্টের বিষয়বস্তুটাও বিতর্ক হিসেবে পুরনো এবং প্রমানিত।
বিষয়টা হল ধর্মীয় দৃষ্টিতে “ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তি ও আল্লাহর সার্বভৌত্ব”। এই বিতর্কে নাস্তিক ও আস্তিকরা যার যার অবস্থানে খুবই পরিষ্কার এবং অনড়।
প্রশ্ন হচ্ছে আমি যে কাজ করি তা আমি আমার নিজের ইচ্ছেতেই করি না আল্লাহর কাছ থেকে তা পূর্বনির্ধারিত । খুবই সিম্পল ব্যাপার। আমি যদি নিজের ইচ্ছেতেই সবকাজ করি তাহলে তার দায় আমার।
তবে সমস্যা হল এতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন হয়। আবার যদি এরকম হয় যে আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত কাজই আমি করি তাহলে অপরাধের(এবং অবিশ্বাসের) দায়দায়িত্ব আমার থাকেনা। নাস্তিকেরা খুবই গুরুত্বের সাথে এই পয়েন্টটা উল্লেখ করে থাকেন।
অপরদিকে আস্তিকদের বক্তব্য হচ্ছে আল্লাহ সবকিছুর নিয়ন্তা; এবং ভাগ্য পূর্বনির্ধারিত থাকা সত্বেও যেহেতু তিনি মানুষকে বিবেক,জ্ঞান, বুদ্ধি দিয়েছেন তাই মানুষের অপরাধের দায় মানুষেরই। ব্যাপারটা কিভাবে সম্ভব সেটা অবশ্য এতে পরিষ্কার হয়না!
এই কথাগুলো আপনারা অনেক আগে থেকেই জানেন।
এবং আপনাদের লেখা পড়ে পড়ে আমিও জেনেছি। নতুন বিষয় হল এতদিন আমি অন্যের উদ্ধৃত করা কোরানের আয়াত পড়তাম; কিছুদিন ধরে আমি বাংলায় কোরান চর্চা করছি। আজকে নিজের সরাসরি পড়া কিছু আয়াত এখানে উল্লেখ করতে চাই।
এই আয়াত গুলো থেকে বিতর্কের বিষয়বস্তু “ব্যাক্তির ইচ্ছাশক্তি ও আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে” আরেকটু সুনিদিষ্টকরণ করে বলা যায় “অবিশ্বাসীর অবিশ্বাসের দায় কার? আল্লাহর না অবিশ্বাসীর নিজের?”
নিচের আয়াতগুলো দেখুন:
-আল্লাহ কাউকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাইলে তিনি তার হৃদয় ইসলামের জন্য বড় করে দেন ও কাউকে বিপথগামী করতে চাইলে তিনি তার হৃদয় খুব ছোট করে দেন, তার কাছে ইসলাম মেনে চলা আকাশে চড়ার মতই দু:সাধ্য হয়ে পড়ে! যারা বিশ্বাস করেনা আল্লাহ তাদেরকে এভাবে অপদস্ত করেন।
সুরা আনআম
আয়াত-১২৫
-আল্লাহ যাকে পথ দেখান সে-ই পথ পায়, আর যাদেরকে তিনি বিপথগামী করেন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
সুরা আরাফ
আয়াত-১৭৮
-তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বিশ্বাস করত। তা হলে কি তুমি বিশ্বাসী হওয়ার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবে?
-আল্লাহর অনুমতি ছাড়া বিশ্বাস করার সাধ্য কারও নেই। আর যারা বোঝে না আল্লাহ তাদেরকে কলুষলিপ্ত করবেন।
সুরা ইউনুস
আয়াত-৯৯-১০০
-আমি প্রত্যেক রসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষি করে পাঠিয়েছি, তাদের কাছে পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন ও যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন, আর তিনি শক্তিমান তত্ত্বজ্ঞানী।
সুরা ইব্রাহিম
আয়াত-৪
-সরলপথের নির্দেশ দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব; কিন্তু পথের মধ্যে কিছু বাকা পথও আছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন।
সুরা নাহল
আয়াত-৯
-তুমি ওদেরকে পথ প্রদর্শন করতে আগ্রহী হলেও আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেছেন তাকে তিনি সৎপথে পরিচালিত করবেন না ও তাদেরকে কেউই সাহায্য করবে না।
সুরা নাহল
আয়াত-৩৭
-আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে একজাতি করতে পারতেন, কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন ও যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। তোমরা যা কর সে-বিষয়ে অবশ্যই তোমাদের প্রশ্ন করা হবে।
সুরা নাহল
আয়াত-৯৩
-তোমরা দেখলে দেখতে তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থান করছে। সূর্য ওঠার সময় তাদের গুহার ডানে হেলে আছে আর ডোবার সময় তাদের বাম পাশ দিয়ে পার হচ্ছে। আল্লাহ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন সে সতপথপ্রাপ্ত, আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনোই তার জন্য পথপ্রদশনকারী বা অভিভাবক খুজে পাবে না।
সুরা কাহাফ
আয়াত-১৭
এই রকম আয়াত আরো আছে। আর দিলাম না।
(বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান অনূদিত কোরান শরিফ : সরল বঙ্গানুবাদ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।