সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে,
হযরত নাওয়াস ইবনে-সামআন [রাঃ] বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃ] একদিন ভোর বেলা দাজ্জালের আলোচনা করলেন। আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি তার সম্পর্কে কিছু কথা বললেন, যাদ্দ্বারা মনে হচ্ছিল যে, সে নেহাতই তুচ্ছ ও নগণ্য [উদাহরণতঃ সে কানা হবে] পক্ষান্তরে কিছু কথা এমন বললেন। যাদ্দ্বারা মনে হচ্ছিল যে, তার ফেত্ণা অত্যন্ত ভয়াবহ ও কঠোর হবে। [উদাহরণতঃ জান্নাত ও দোযখ তার সাথে থাকবে। এবং অন্যান্য আরও অস্বাভাবিক ও ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা ঘটবে।
রসুলুল্লাহ [সাঃ]-এর বর্ণনার ফলে [আমরা এমন ভীত হয়ে পড়লাম,। যেন দাজ্জাল খর্জুর বৃক্ষের ঝড়ের মধ্যেই রয়েছে। অর্থাৎ, অদুরেই বিরাজমান রয়েছে। বিকালে যখন আমরা রসলুল্লাহ [সাঃ]-এর দরবারে উপস্থিত হলাম। তখন তিনি আমদের মনের অবস্থা আচঁ করে নিলেন এবং জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি বুঝেছ? আমরা আরয করলাম।
আপনি দাজ্জালের আলোচনা প্রসঙ্গে এমন কিছু কথা বলেছেন। যাতে বুঝা যায় যে, তার ব্যাপারটি নেহাতই তুচ্ছ এবং আরও কিছু কথা বলেছেন, যাতে মনে হয়, সে খুব শক্তিসম্পন্ন হবে এবং তার ফেত্ণা হবে খুব গুরুতর। এখন আমাদের মনে হয়েছে যে, যেন সে নিকটেই খর্জুরবৃক্ষের ঝাড়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে। রসুলুল্লাহ [সাঃ] বলেনঃ তোমাদের সম্পর্কর আমি যেসব ফেত্ণার আশঙ্কা করি, তন্মধ্যে দাজ্জালের তুলনায় অন্যান্য ফেত্ণা অধিক ভয়েরযোগ্য। অর্থাত্ট, দাজ্জালের ফেত্ণা এতটুকু গুরতর নয় যতটুকু তোমরা মনে করছ।
যদি আমার জিনদ্দশায় সে আবির্ভুত হয়,তবে আমি নিজে তার মোকাবেলা করব। কাজেই তোমাদের চিন্তান্বিত হওয়ার কারন নেই। পক্ষান্তরে সে যদি আমার পরে আসে, তবে প্রত্যেকই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে পরাভুত করার চেষ্টা করবে। আমার অনুপস্থিতিতে আল্লাহ তা-আলা মুসলমানদের সাহায্যকারী। [তার লক্ষন এই যে,] সে যুবক, ঘন কোঁকড়ানু চুলওয়ালাহবে।
তার একটি চক্ষু উপরের দিকে উখখিত হবে[এবং অপর চক্ষুটি হবে না। যদি আমি [কুত্সীত চেহারার] কোন ব্যক্তিকে তার তুলনা তবে সে হচ্ছে আব্দুল ওযযা ইবনে-কুতনা। [জাহেলিয়াত আমলে কুত্সীত চেহারার 'বনু-খোযাআ'' গোত্রের এ লোকটির তুলনা ছিল না। যদি কোন মুসলমান দাজ্জালের সম্মুখীন হয়ে যায়, তবে সুরা-কাহফের প্রথম আয়াতগুলো পড়ে নেয়া উচিত। এতে সে দাজ্জালের ফেত্ণা থেকে নিরাপধ হয়ে যাবে।
দাজ্জাল সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যেবর্তী স্থান থেকে বের হয়ে চতুর্দিকে হাঙ্গামা সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দারা, তোমরা তার মোকাবেলায় সুদৃঢ় থাক। আমরা আরয করলামঃ ইয়া রসুলুল্লাহ [সাঃ],সে কতদিন থাকবে। তিনি বললেনঃ সে চল্লিশ দিন থাকবে, কিন্তূ প্রথম দিন এক বছরের সমান হবে। দ্বিতীয় দিন এক মাসের এবং তৃতিয় দিনএক সপ্তাহের সমান হবে।
অবশিষ্ট দিন গুলো সাধারন দিনের মতইহবে। আমরা আরয করলাম ইয়া রসুলুল্লাহ [সাঃ]। যে দিন এক বছরের সমান হবে, আমরা কি তাতেই শোধু এক দিনের[পাচঁ ওয়াক্তের] নামাযই পড়ব? তিনি বললেনঃ ন, বরং সময়ের অনুমান করে পুর্ণ এক বছরের নামায পড়তে হবে। আমরা আবার আরয করলামঃ ইয়া রসুলুল্লাহ [সাঃ], সে কেমন দ্রুতগতিতে সফর করবে? তিনি বললেনঃ সে মেঘখণ্ডের মত দ্রুতচলবে। যার পেছনে অনুকূল বাতাস থাকে।
দাজ্জাল কোন সম্প্রদায়ের কছে পৌছে তাকে মিথ্যা ধর্মবিশ্বাসের প্রতি দাওয়াত দেবে। তারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলে সে মেঘমালাকে বর্ষনের আদেশ দেবে। ফলে, বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং মাটিকে আদেশ দেবে, ফলে, সে শস্য-শ্যামলা হয়ে যাবে। তাদের চতুষ্পদ জন্তু তাতে চরবে। সন্ধায়যখন জন্তুগুলো ফিরে আসবে, তখন তাদের কুঁজ পুর্বের তুলনায় উচুঁ হবে এবং স্তন দুধে পরিপুর্ণ থাকবে।
এরপর দাজ্জাল অন্য সম্প্রদায়ের কাছে যাবে এবং তাদেরকেও কুফরের দাওয়াত দেবে। কিন্তূ তারা তার দাওয়াত প্রত্যাখান করবে। সে নিরাশ হয়ে ফিরে গেলে সেখানকার মুসলমানরা দুর্ভিক্ষে পতিত হবে। তাদের কাছে কোন অর্থ কড়ি থাকবে না। সে শস্যবিহীন অনুর্বর ভূমিকে সম্বোধন করে বলবেঃ তোর গুপ্তধন বাইরে নিয়ে আয়।
সে মতে ভূমির গুপ্তধন তার পেছনে পেছনে চলবে। যেমন মৌমাছিরা তাদের সরদারের পেছনে পেছনে চলে। অতঃপর দাজ্জাল একজন ভরপুর যুবক ব্যক্তিকে ডাকবে এবং তাকে তরবারির আঘাতে দ্বিখণ্ডিত করে দেবে। তার উভয় খণ্ড এতটুকু দূরত্বে রাখা হবে,যেমন তীর নিক্ষেপকারী ও তার লক্ষ্যবস্তূর মাঝখানে থাকে। অতঃপর সে তাকে ডাক দেবে, সে[জীবিত হয়ে] দাজ্জালের কাছে প্রফুল্ল চিত্তে চলে আসবে।
আবু সাঈদ খুদরী [রাঃ] বর্ণনায় রয়েছে যে, দাজ্জাল মদীনা থেকে দূরে থাকবে। মদীনার পথসমূহে আসাও তার পক্ষে সম্ভব হবে না। সে মদীনার নিকট বর্তি একটি লবণাক্ত ভূমিতে আগমন করবে। তখন সমসাময়িক এক মহান ব্যক্তি তার কেছে এসে বলবেনঃ আমি পুর্ণ বিশ্বাস সহকারে বলছি যে, তই সেই দাজ্জাল। যা সংবাদ রসুলুল্লাহ [সাঃ] আমাদেরকে দিয়েছিলেন।
একথা শোনে দাজ্জাল বলবেঃ লোকসকল। যদি আমি এ ব্যক্তিকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করে দেই তবে আমি যে খোদা এ ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ করবে কি। সবাই উত্তরে দেবেঃ না। অতঃপর সে লোকটিকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করে দেবে। লোকটি জীবিত হয়ে দাজ্জালকে বলবেঃ এবার আমার বিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে যে তুই-ই সে দাজ্জাল।
দাজ্জাল তাকে পুনরায় হত্যা করতে চাইবে, কিন্তু সমর্থ হবে না। -[মুসলিম শরীফ]
সংগ্রহ,
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।