‘স্বপ্ন আর সত্যির মধ্যে তফাৎ কেবল ইচ্ছে আর চেষ্টার’—অ্যান শার্লি
ক্যাভেন্ডিশে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই মন খুশি হয়ে যাবে যে কারও। শারলটটাউন থেকে ৪০-৪৫ মিনিটের ড্রাইভ। রাস্তার এক পাশে সেন্ট লরেন্স উপসাগরের হাতছানি আর অন্য পাশে হলুদ-সবুজের কোলার্জ। মাঝেমধ্যে সূর্যের ছটায় হঠাৎ চমকে ওঠা পথ-হারানো পাথুরে নদীর ক্ষীণ স্রোত।
বিশ্বের বেশির ভাগ লোকের কাছে পিইআই মানে ক্যাভেন্ডিশ আর ক্যাভেন্ডিশ মানেই আগুন-চুলের মেয়ে Anne Shirley।
এই অ্যানের জন্যই প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটন তাঁদের প্রথম রাজকীয় সফরে প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সেই সময় অ্যানকে ঘিরে কেট মিডলটনের উপচে পড়া উচ্ছ্বাস দ্বীপবাসীর হূদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল।
কে এই অ্যান? পিইআইয়ে জন্ম নেওয়া লেখক Lucy Maud Montgomery-এর অনন্য সৃষ্টি ১১ বছরের আগুনরঙা চুলের রোগাটে অনাথ শিশু, যে তার জীবনের সব ঝঞ্ঝাকে অসম্ভব কল্পনাশক্তির জোরে জয় করেছে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে অ্যান আশার প্রতীক, জীবনকে ভালোবাসার প্রতীক।
অ্যানকে নিয়ে লেখা প্রথম বই Anne of Green Gables ছাপা হয় ১৯০৮ সালে আর ছাপা হওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যেই ১৯ হাজার কপি দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়।
প্রথম বছরই এই বইয়ের সংস্করণের সংখ্যা ছিল ১০। আজ পর্যন্ত বিশ্বের ১৫টির বেশি ভাষায় এর অনুবাদ হয়েছে। আর বিক্রি? ৫০ মিলিয়নের বেশি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিধ্বস্ত জাপান তার জনসাধারণকে উদ্দীপ্ত করতে Anne of Green Gables-কে বেছে নেয়। জাপানি ভাষায় অনূদিত এই বই ১৯৫২ সালে জাপানের স্কুল পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়।
গত বছর এই বইয়ের জাপানি সংস্করণের ৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপনের অংশ হিসেবে ‘সুপ্রভাত জাপান’ এক ঘণ্টার এক অনুষ্ঠান ক্যাভেন্ডিশ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করেছিল।
Lucy Maud Montgomery-এর জন্মস্থান তাঁর দিদিমার বাড়ি, যেখানে তাঁর বড় হওয়া, লেখক হিসেবে বেড়ে ওঠা এবং তাঁর আত্মীয়ের বাড়ি, যেটিকে ঘিরে Anne of Green Gables লেখা হয়েছে—সবই ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে নিবিড় পরিচর্যায় সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিশেষ করে Avonlea Village—অ্যানের শোবার ঘর, পড়ার টেবিল, রান্না ঘরের সব খুঁটিনাটি লেখকের বর্ণনার সঙ্গে মিল রেখে পুরোপুরি উনিশ শতকের গোড়ার আবহে সাজানো হয়েছে। এমনকি অ্যানের শোবার ঘরের জানালা দিয়ে দেখা তার প্রিয় চেরি-আপেলগাছ, প্যাঁচানো প্রেমিক যুগল গাছ কিংবা ভুতুড়ে বন; ঠিকঠাক যেমনটি বইয়ে লেখা বরং এতটাই জীবন্ত যে দর্শনার্থীদের ভ্রম হয় সত্যিই কি অ্যান কাল্পনিক?
তিন বছর পর গত সপ্তাহে (১৫ আগস্ট) আবার গেলাম ক্যাভেন্ডিশে। প্রথমবার গিয়েছিলাম অতিথিদের নিয়ে বসন্তের শুরুতে—বাতাসে তখনো শীতের আমেজ, পর্যটকদের ভিড় ছিল না তেমন আর এবার উপচে পড়া ভিড়।
পার্কিং স্পট পেতে বেশ ঘুরতে হলো আমাদের। সপ্রতিভ টুর গাইড বয়সনির্বিশেষে সব পর্যটকের কৌতূহল মেটাচ্ছে চৌকসে। মনে পড়ে গেল ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের সাগরদাঁড়ি গ্রামের কথা, গিয়েছিলাম মাইকেল মধুসূধনের জন্মস্থান দেখতে। একটা গুমোট স্যাঁতসেঁতে ঘরে কিছু লোক বসে আছে। এদিক-ওদিক কিছু চটিবই ছড়িয়ে আছে।
নোনা ধরা দেয়ালে কয়েকটা ছবি ঝুলছে মাইকেলের। টিমটিমে বাতির আলোয় ভালো করে কিছু বোঝার উপায় নেই। দমবন্ধ করা পরিবেশ। আমরা দ্রুত বেরিয়ে এসেছিলাম। স্থাপনার কাজ চলছিল বাইরে তখন।
তাঁদেরই একজন খুব সপ্রতিভভাবে আমাদের পিলারের একটা কোণ দেখিয়ে বললেন, ‘ওইখানে মাইকেল জন্ম নিয়েছিল। ’ তাঁর বলার ধরন, চারপাশ—পুরো ব্যাপারটার মধ্যে শ্রদ্ধার দৈন্য ছিল ভীষণ।
শুনেছি, নতুন ভবন খুব সুন্দর হয়েছে। এবার দেশে গেলে আমার অতি জরুরি কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে ‘সাগরদাঁড়ি দর্শন’।
রঞ্জনা ব্যানার্জি
শারলটটাউন, পিইআই, কানাডা
<ranjanabj@yahoo.com>।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।