ভালো আছি
হাতুড়ে ডাক্তার কথাটার সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। কিন্তু হাতুড়ে চোর! অর্থাৎ যে কিনা চুরি করতে গিয়ে হাতড়ে মরে। পাঠক, ইতিহাসে সত্যি সত্যি এমন কিছু দুর্ভাগা চোরের কথা শোনা যায়। এক মুহুর্তের ভুল, দুর্বল পরিকল্পনা কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে নিছক দুর্ভাগ্য এদের জীবনে দুর্যোগ নিয়ে এসেছে। তেমনি কয়েকটি ঘটনা নিয়ে এ লেখা ।
১৯৭৮ সালের এক অসম্ভভ শীতের সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে এক চোর তার কাজে বেরোয়। গায়ে মোটা জামাকাপড়। তারপরও শীত মানতে চাইছে না । তার লক্ষ্য ছিল একটা সুপার মার্কেট। স্কাইলাইট গলে সে চাইছিল ঢুকতে।
কিন্তু স্কাইলাইটের জানালা বেশ সরু ধরনের ছিল। তাই সে তার গায়ের মোটা কাপড়চোপড় ছুড়ে স্কাইলাইট দিয়ে ভেতরে ফেলে দেয়। উদ্দেশ্য ছিল মার্কেটে ঢুকে দ্রুত সব কাপড় পরে নেবে, অসম্ভব শীতের মধ্যে সম্পূর্ণ দিগম্বর অবস্থায় সে উঠে আসে স্কাইলাইটের পাশে, কিন্তু বিধি বাম, জানালা এতই ছোট যে সে ভেতরে ঢুকতে পারছে না । এদিকে গায়ে একটা সুতোও নেই, রাস্তায় এত লোকজনের মাঝখান দিয়ে যতবড় সাহসীই হোক না কেন, কে পারবে উলঙ্গ শরীরে হেটে যেতে। কাজেই আর কি করা, বসে বসে শীতে কাঁপতে থাকে চোর।
ঘন্টা দুয়েক পর পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া দু’জন পুলিশ তাকে লক্ষ করে এগিয়ে আসে। প্রথমে একচোট হেসে তারা ভেতর থেকে কাপড় উদ্ধার করে চোরকে তা পরতে দেয়। তারপর সোজা থানায়।
১৯৭৯ সালের ২০ জানুয়ারি ডেভিড গুডঅল নামের আরেক চোর ইংল্যান্ডের বার্নসলেতে এক দোকানে জিনিসপত্র সরাতে প্রবেশ করল। তার কাজ শেষ।
বেরোতে যাবে, এমন সময় দরজার বাইরে দুর্ধর্ষ আট জন গোয়েন্দা তার পথ আটকাল। দুর্ভগ্যজনকভাবে, ওই দিনই দোকানটিতে গোয়েন্দাদের বাৎসরিক সভার কথা ছিল। ফলে আটজনই তাকে পৃথক ভাবে লক্ষ করতে থাকে। একজনই যেখানে যথেষ্ট সেখানে আট-আটজন!
১৯৬৮ সালে ডেট্রয়টের আরেক ঘটনা। এক চোরের সাথে তার কুকুরের হৃদতা এতই গাঢ় ছিল যে সে চুরির সময়ও কুকুরটিকে সঙ্গে নিয়ে যেত।
একদিন চুরি শেষে হঠাৎ পথিমধ্যে পুলিস তাকে থামার জন্যে ইশারা করে। সে কুকুরকে ফেলে রেখে একদৌড়ে পালিয়ে সোজা বাড়িতে চলে আসে। এদিকে পুলিস কুকুরটির ঘাড়ে আস্তে আস্তে আদর করে ফিসফিস করে শুধু বলে চলল ‘বাড়ি চলো, লক্ষ্মী সোনা। বাড়ি চলো’। প্রভুভক্ত কুকুরটি পথ চিনে চিনে পুলিস নিয়ে চলে এলো তার বাড়িতে।
তারপর.........
অনেকেই আছে যারা প্রেমে পড়লে তা প্রকাশে লজ্জা পায়। অনেক সময় তারা আশ্রয় নেয় চিঠির। এ রকম এক লাজুক চোরের সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৬৯ সালে পোর্টল্যান্ডে। ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে সে ক্যাশিয়ারকে একটা স্লিপে লিখে পাঠায় ‘আমি ডাকাতি করতে এসেছি এবং আমার সাথে পিস্তল আছে, কথা না বাড়িয়ে সব টাকা বস্তায় ভরে দাও’। ক্যাশিয়ার মজা পেয়ে পাল্টা স্লিপে লেখে ‘টাকা দেয়ার ইচ্ছা ছিল কারণ আমি খুব ভয় পেয়েছি ।
তবে আমাদের কাছে কোন বস্তা নেই। কাজেই চলে যাও’। স্লিপ পেয়ে বেচারা চোর ক’বার ঠোট উল্টিয়ে চলে যায়।
লন্ডনের ডেভিড রিচের ঘটনা আরও হাস্যকর। ১৯৭৮ সালের ১৫ মার্চ সে ছদ্মবেশে ব্যাংক ডাকাতি করতে যায়।
অত্যন্ত নিখুত ছদ্মবেশ, মুখ চোখ সব ঢাকা। অসংখ্য লোকের মাঝে সে হঠাৎ দাড়িয়ে পকেট থেকে তার অস্ত্র বের করে জোরে জোরে বলতে থাকে ‘যে যার জায়গায় আছ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকো। এক চুল নড়লে খুলি উড়িয়ে দেব। আর তুমি (ক্যাশিয়ার), তুমি সব টাকা জলদি বস্তায় ভরে আমাকে দিয়ে দাও’। কিন্তু কেউ তার কথায় কর্ণপাত করে না ।
তখন সে আবার গমগম করে উঠে হাতের অস্ত্রটা ঘোরাতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে সে খেয়াল করে যে ভুলে পকেট থেকে পিস্তলের বদলে তার চশমার খাপ বেরিয়েছে। চোখ প্রায় ঢাকা থাকায় একদম বুঝতে পারেনি কিছু। কিন্তু তখন আর একদম সময় নেই। সে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
১৯৩৩ সালের ৪ নভেম্বরের কথা । প্যারিসের এক চোর এক অ্যান্টিক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ঢোকে চুরি করার জন্যে। গভীর রাত। চোর কি মনে করে ড্রইংরুমে রাখা ১৫ শতকের এক যোদ্ধামূর্তির লৌহ ব্যুহ পরে নেয় । সে ধারণা করেছিল, এতে তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হয়তো দৃঢ় হবে।
সে আস্তে আস্তে সিড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতে থাকে। এদিকে লোহার টুংটাং শব্দ শুনে বাড়ির মালিক জেগে উঠে। উঠেই সে দেখে এই অদ্ভুত দৃশ্য। চোর টের পেয়ে দৌড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ভারী বর্ম নিয়ে কতদূর আর যাওয়া যায়।
গৃহকর্তা তাকে আলতো এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। চোর বেচারার নড়ারও ক্ষমতা ছিল না। তার উপর ব্যবসায়ী ভদ্রলোক এই রাতের অতিথিকে খাবার না খাওয়ালেও খাবার টেবিলটা তার উপর ফেলে তাকে আটকে রেখে পুলিসে খবর দেয়। টেবিলের আঘাতে লোহার বর্ম বেঁকে এমনই অবস্থা দাড়ায় যে, সেটা খুলতে প্রায় ২৪ ঘন্টা সময় লেগে যায়। এই একদিন বেচারা চোরকে শিরস্ত্রাণের মুখের ছোট্ট ফাঁকা জায়গা দিয়ে কায়ক্লেশে খাবার-দাবার দেয়া হয়।
চোরদের ইতিহাসে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছিল সম্ভবত উত্তর মেক্সিকোর সালতিলো কারাগারে। ৭৫ জন কয়েদী ওই জেলখানা থেকে পালানোর উদ্দেশ্যে সুড়ঙ্গ খুঁড়তে থাকে। ছয়মাস রাতদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর তারা সুড়ঙ্গ মুখে পৌছায়। তারা যে নকশা অনুযায়ী কাজ করেছিল তার সামান্য ভুলের কারণে তারা গিয়ে পৌছায় জেলের বাইরের আদালতে। তখন কোর্ট চলছিল, রুমে জজ বসে, পাশে অসংখ্য পুলিশ হঠাৎ একে একে উদয় হলো ৭৫ জন কয়েদী।
ঘটনার আকস্মিকতায় বিমূঢ় হয়ে কয়েদীরা নড়তে চড়তেও ভুলে যায়। বলাবাহুল্য তাদের আবার সুড়ঙ্গপথেই নিজ বাসভূমে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়।
হায়, কেউ তাদের দুঃখ বুঝল না!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।