সিরিয়াস ব্লগিং এর সময় নাই
একবার আমাকে রাত ১১ টার দিকে গুরুতর অসুস্থ এক রোগী দেখার জন্য নিয়ে যাওয়া হল . . .
স্থানীয় এক নেতা অসুস্থ্য . . . সারাদিন পাতলা পায়খানায় ভোগার পর রাত ১১ টায় উনার মনে হইল 'হায় হায় এই রাইত কেমনে যাইব?' . . . আর সেজন্য আমার কাছে এক মৌলানা পাঠাইসে আমাকে নিয়ে যাবার জন্য . . .
তো আমি সি এন জি তে বসা . . . যে লোক আমাকে নিতে আসছে সে কিছুদুর যাবার পর বলে 'স্যার আমার চেম্বার টা দেকিয়া জাউক্কা ' ...
(আমার চেম্বার দেখে যান)
তার কথা শুনে আমি অন্ধকারে ভালো মতো তাকালাম। ' আপনি ডাক্তার?আমি তো ভাবলাম মৌলানা সাহেব '
'জি অয় স্যার ... আফনারার দুয়ায় টুক টাক ছিকিসসা খরি '
(জি স্যার, আপনাদের দোয়ায় টুকটাক চিকিৎসা করি)
পান খাওয়া মুখে তার সে কি অমায়িক হাসি ... এমন জোর জবরদস্তি শুরু করল যে তার চেম্বার আমার দেখতেই হল ...
চেম্বারে ঢুকে তো আমি হা ... ৩ রুমের বিশাল চেম্বার ... ইনক্লুডিং ডেন্টিস্ট টেবিল অ্যান্ড এ লট অফ সারজিকেল ইন্ত্রুমেন্ত . . . ' ইকানো টুক টাক অফারেসন উন খরি লাই স্যার স্যার ঠাণ্ডা খাউক্কা ... ঠাণ্ডা আনাইলাই ' (এখানে টুক টাক অপারেশন করি স্যার , ঠাণ্ডা খাবেন স্যার?? ঠাণ্ডা আনাই??)
আমি তো পুরাই টাস্কি . . . কিসের ঠাণ্ডা খাব কিসের কি ... বললাম 'চলেন রোগী দেখে আসি ...' সারা রাস্তা মাথা আমার ভন ভন করল তার চেম্বারের কথা ভেবে . . .
রোগীর বাড়ীতে গিয়া দেখি মরা কান্না চলতেসে ... খাইসে ... ডাক্তার আসিবার পূর্বে কি ঘটনা ঘটিয়া গেলো??
রোগীর ঘরে ঢুকে দেখি নারী পুরুষ নির্বিশেষে ২০ জন রোগীকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে ... ইলেক্ট্রিসিটি নাই ... হাতপাখায় বাতাস করতেসে প্রায় ৫ জন ... বহু কষ্টে মানুষ জন কে পাশ কাটাইয়া রোগীর কাছে পউছালাম...
জিজ্ঞেস করলাম 'কি হইসে বলেন তো'
'দাখতর সাব বিয়ান তাকি খালি পাতলা পায়খানা আর বমি... '
(সকাল থেকে পাতলা পায়খানা আর বমি)
আমি দেখলাম রোগী ডিহাইড্রেটেড ... রেপিড পাল্স ... ব্লাড প্রেসার ৬০/৪০ ... জানতে চাইলাম 'কোন চিকিৎসা করেন নাই??'
'জি অয় স্যার আমরার অও দাখতর সাবে(আমাকে যে মৌলানা নিয়ে আসছে) ছিকিসসা দিসইন' (জি স্যার এই ডাক্তার সাহেব চিকিৎসা দিয়েছেন)
'কাগজ দেখি' বলার পর আমাকে এনে তার প্রেসক্রিপশন দেখাল... দেখলাম ৪ টা অ্যান্টি বায়োটিক দিয়ে রাখসে ... আর কলেরা স্যালাইন দিসে বাটারফ্লাই নিডল দিয়ে ১০ ফোঁটা ( বাটার ফ্লাই এর সুই খুবই চিকন , এটা দিয়ে খুব অল্প পরিমান স্যালাইন পাস হয়। অথচ রোগীর তখন অনেক পরিমান স্যালাইন দরকার এবং এইটাই মুল চিকিৎসা)
আমার মাথা গরম হয়ে গেল... হালার পুত ... মনে মনে বললাম ...
বাটার ফ্লাই চেঞ্জ করে রানিং ফ্লুয়িড শুরু করলাম ... ও আর এস শুরু করলাম ... ইত্যাদি ইত্যাদি ...
হসপিটাল অ্যাডমিশন উপদেশ দিয়ে ফিরে আসলাম... পড়ে অবশ্য রোগী আমাকে ফোন করে জানাইসে যে হসপিটাল অ্যাডমিশন লাগে নাই ... আমার চিকিৎসাতেই কাজ হয়ে গেসে ...
কিন্তু ইহা আমি কি দেখিলাম?? হাতুড়ে ডাক্তার দের এই সাহস আর দৌরাত্ম্য
কি ভয়ংকর
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।