সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
গ্রামীন ফোন থেকে রুবাবা দৌলা মতিনের পদত্যাগের খবরটা প্রথম ছাপে আমার দেশ ৩১ আগস্ট। ভেবেছিলাম ব্লগে ফেসবুকে একটা হুলস্থুল লেগে যাবে। কিন্তু বিস্ময়ের সাথে খেয়াল করলাম কেউ কিছু লেখলো না। এমনকি পরের দিন প্রায় সবগুলা পত্রিকায় মোটামুটি গুরুত্ব সহকারে খবরটা ছাপার পরও দেখলাম ব্লগে-ফেসবুকে তেমন কোনো আলোচনা হইলো না।
তাকে ধিক্কার জানিয়ে, তার পদত্যাগে খুশী হয়ে কেউ পোস্ট দিল না। ব্যাপারটা আমাকে অবাক করলো। তো কাল থেকেই ভাবতেছিলাম একটা লেখা দেই এই ব্যাপারে। নানা কাজে কর্মে লেখা দিয়া সারতে পারি নাই। এখন একটু সময় পাইলাম।
রুবাবা দৌলা মতিন বিষয়ে ভার্চুয়াল কর্মকাণ্ড নিয়া আমার কিছু উদ্বেগ জানায়া রাখতেছি।
বাংলা ব্লগগুলাতে বা ফেসবুকে বহুবার রুবাবার ছবি ব্লগাররা দিয়েছেন। গুগলে সার্চ দিলে, ফেসবুক বা ব্লগে সার্চ দিলে বহু ছবি পাওয়া যাবে। রুবাবার নতুন ছবি পাইলে এই লোকগুলো হন্যে হয়ে পোস্ট দিয়া ফেলতেন। কোনো লেখাও দেখতাম ছবির সাথে আসতো।
সেইখানে গ্রামীন ফোনের প্রতি গালি থাকতো অথবা গ্রামীন ফোনের তরফে রুবাবাকে গালি দেওয়া হইতো। কোথাও দেখছি, রুবাবার প্রতি উন্মুক্তভাবে কামনা প্রকাশ করা হইছে। ফেসবুকের গ্রুপগুলাতে নামে বেনামে লোকেরা গ্রুপে জয়েন করছেন। ব্লগে কেউ এভাবে ছবি পোস্ট করায় বাহবা দিছেন কেউ বা একে রুচির বিলাপ বলছেন।
কিন্তু রুবাবার ছবি পোস্ট করা একটা নিয়মিত ঘটনা।
অনেকের কাছে দেখেছি রুবাবার ছবির সংগ্রহ। কেউ কেউ তো ডেস্কটপেও রেখেছেন।
প্রশ্ন হলো রুবাবার দোষ বা গুন কী?
তার দোষ কী হতে পারে সে নিয়ে একটু ভাবা যাক :
১. তিনি গ্রামীন ফোনে চাকরি করতেন।
গ্রামীন ফোনে তো আরও অনেক নারী পুরুষ চাকরি করেন। তাহলে শুধু রুবাবাকে কেন বেছে নেওয়া হবে?
২. তিনি বাঙালিদের মধ্যে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
কিন্তু গ্রামীন ফোনের নীতি তো মাল্টিন্যাশনালের উচ্চপদস্থরাই ঠিক করেন। তারা গ্রাহকদের সঙ্গে যদি কোনো অপরাধ করে থাকে তবে তার দায় তো শুধু রুবাবার ওপর বর্তাবে না। বরং বাঙালি অফিসার হিসেবে তো তার জন্য আমাদের গর্ব করা দরকার আছিল।
৩. তিনি নারী।
নারী হওয়াটা এই দেশে দোষের বটে।
৪. তিনি যৌনআবেদনময়ী।
এইটাকে তো আধুনিক দুনিয়ায় গুন হিসাবেই দেখা হয়। যে জেনারেশন হামেশা তার ছবি পোস্ট করে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তাইলে কী?
৫. তার পোশাক
পছন্দসই পোশাক পরার অধিকার কি তার নাই? তার চেয়ে খোলামেলা পোশাক পরে নায়ক-নায়িকারা অহরহ হাজির হন। কই তাদের ছবি নিয়ে তো রেগুলার পোস্ট দেওয়া হয় না।
৬. তিনি গ্রামীন ফোনের সব অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন।
তার দায়িত্ব তিনি পালন করবেন না? কোম্পানি যদি তাকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত করতে চায় তবে তিনি উপস্থিত হবেন না? কিন্তু তাকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বা ফোনের প্রতিনিধি মনে করার কারণ কী? যারা গ্রামীন ফোনের বিজ্ঞাপনের মডেল হন তাদের কী আমরা খারাপ ভাবি বা সমালোচনা করি?
আমার ধারণা, মূল সমস্যা আমাদের মনের ভেতরে গেঁড়ে বসা পুরুষতন্ত্র। একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির উচ্চপদে বাংলাদেশী নারীর আসীন হওয়াকে পুরুষতন্ত্র কেমনে পাঠ করে তার একটা উদাহরণ হিসাবে রুবাবা দৌলাকে আনলেই যথেষ্ট।
পুরুষতন্ত্র হয়তো ভাবে :
১. কোনো খোঁজ-খবরের তোয়াক্কা না করে যে ওনার যোগ্যতা নাই।
২. ওনাকে চেহারা দেখে নেওয়া হয়েছে।
৩. উনি কোনো কাজ করেন না, শুধু নানা অনুষ্ঠানে যান।
ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখন ওনার পদত্যাগের পর তার অনুরাগীরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন তিনি এতদিন একটা চাকরি করছিলেন? কিন্তু তাতে তাদের প্রতিক্রিয়া কী?
ওনার তো অনেক গুণ ছিল।
১. উনি সুন্দর ছিলেন।
২. যৌনআবেদনময়ী ছিলেন।
৩. ওনার স্তরের সিইওকে তো স্টারের মর্যাদাই দেওয়া হয়।
৪. শুনছি উনি গান গাইতেন।
৫. হাসিখুশি ছিলেন।
৬. কথাবার্তা যা শুনছি তাতে তো পজেটিভ মনে হইতো।
৭. মিডিয়ায় রেগুলার উপস্থিতি তাকে তারকার মর্যাদা দিতে পারে।
৮. উচ্চশিক্ষিত একজন ব্যক্তি তিনি।
৯. তার পরিবার বনেদী বইলা শুনছি।
তারপরও কোনো কথা হইলো না কেন?
আমি তো ভাবতাম যারা তার ছবি নিয়ে গোপনে বা প্রকাশ্যে কামনা প্রকাশ করেন তারা সবাই তাকে ধিক্কার দিতে চান না। কেউ কেউ বরং গোপনে ও প্রকাশ্যে তার ভক্ত অনুরাগী। তারপরও তারা চুপ কইরা রইলেন কেন? কেন কোনো গসিপ বা কোনো উড়া কথার পোস্ট আসলো না?
এই কয়েক হাজার প্রশ্ন মনে জাগলো। আপনাদের জানাইলাম।
সুযোগ-সুবিধামতো উত্তর দিয়েন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।