ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
পরের সপ্তাহে সাদা শার্ট, টাই ও কালো প্যান্ট পড়ে রেডি হয়ে বসে আছি। এদিকে যাত্রার সময় হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে মালিক আমাকে ফোন করে বললো তার বাসার সামনে চলে আসতে। নির্দিষ্ট সময়েই এক দৌড়ে গিয়ে বাসার সামনে পৌঁছলাম। বাসা থেকে কিছুক্ষণ পরে তিনি বের হয়ে আমাকে নিয়ে গাড়িতে রওনা দিলেন। এর পর থেকে প্রতিদিনই আমাকে তার বাসার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে থাকতে হতো।
তবে আমি ছাড়া অন্য কোনো কর্মচারীকে এভাবে আসতে হতো না বা কোথাও দাড়িয়েও থাকতে হতো না। তাদের বাসার সামনে গিয়েই তিনি গাড়িতে উঠিয়ে নিতেন। অবশ্য আমার এতে কোনো অসুবিধা হয়নি। কারণ ওনার গাড়িতে করে যেতে পারাটাই আমার জন্য ছিল বিরাট ভাগ্য।
রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারি মনোয়ারের সাথে কাজের ফাকে ফাকে আলাপ হলো।
সে জানালো তার বয়স মাত্র ২৩ বছর। কিন্তু সে বিবাহিত। ৩-৪ বছর বয়সে বাবা-মায়ের সাথে বৃটেনে চলে এসেছে। এখন বৃটিশ নাগরিক। আমি কোনো নেশা করিনা জেনে সে খুব নিরাশ হলো।
তার অল্পবিস্তর নেশা করার অভ্যাস আছে। সে জানালো তার গাঁজা ও অ্যালকোহলের নেশা আছে।
ওয়েটারদের সহায়তায় আজকে আরো কয়েক ধরনের ড্রিংক্স বানানো শিখলাম। এর মধ্যে ফ্রেঞ্চ কফি উল্লেখযোগ্য। আমাকে শেখানো হলো বড় কাপে কিছু ব্র্যান্ডি ও কফি মিশাতে হবে।
এরপর সেখানে কয়েক চামচ চিনি দিয়ে ভালভাবে মেশাতে হবে। মেশানোর পরে কফি স্থির হলে দুধের ক্রিম ফেনা ফেনা করে তার উপরে ছড়িয়ে দিতে হবে। একই পদ্ধতিতে আইরিশ হুইস্কি দিয়ে আইরিশ কফি ও টিয়া মারিয়া দিয়ে টিয়া মারিয়া কফি বানাতে হবে।
এছাড়াও কয়েক ধরনের ককটেল বানাতে শিখলাম। অর্ধেক লেমনেড ও অর্ধেক লাগার মিশিয়ে বানাতে হয় সাধারণ শ্যান্ডি।
আবার লাগারের গ্লাসের উপরে এক ইঞ্চি পরিমান লেমনেড ঢেলে বানাতে হয় লাগার ড্যাশ। এছাড়াও ওল্ড স্পার্কল হ্যান নামের এক বিয়ার ও লেমনেড মিশিয়ে বানাতে হয় বিটার শ্যান্ডি।
তৃতীয় দিনে কাজ অল্প অল্প শিখে নেয়ার পাশাপাশি গ্লাস ও বেশ কিছু হাফ প্লেট ধোয়ার দায়িত্ব পড়লো আমার উপর। হাফ প্লেটগুলো ধোয়া খুব একটা কঠিন না। গরম পানি আর লিকুইড মিশিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখার পরে এগুলো ঘষে ধুয়ে ফেলতে হয়।
এর পর কয়েক মিনিট পানি ঝড়িয়ে তারপর শুকনো কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে ফেলতে হয়। এরকম দুই-একটা জিনিস হলে ধোয়াটা সমস্যা না। কিন্তু একবারে যখন ৫০টা ধুতে, মুছে রেডি করতে হয় তখন হাত ব্যথা হয়ে যায়। এদিকে দেরি করার কোনো উপায় নাই। কারণ এগুলোর পরে আবার লাইনে আছে আরো শ খানেক গ্লাস।
সেগুলো না ধুলে কাস্টমারকে ড্রিংক্স দেয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এগুলো ধোয়াধুয়ির পাশাপাশি বারের অর্ডারের দিকেও নজর রাখতে হয় সব সময়। কোনো অর্ডার আসলেই সাথে সাথে ধোয়াধুয়ি বন্ধ করে অর্ডারটা সরবরাহ করতে হয়। এরপর আবার ধোয়াধুয়ি শুরু হয়।
এভাবে যখন তুফান মেইল চালিয়ে একটানে পঞ্চাশটা হাফ প্লেট ধুয়ে মুছে রেডি করে তারপর গ্লাস ধোয়ার তোরজোড় করছি তখনই আবার মালিকের আগমন।
হাফ প্লেটগুলো দেখে সে জানালো যে, এগুলো কেমন যানি পরিষ্কার পরিষ্কার লাগে না। বলেই সে সেগুলো আবার সিঙ্কের পানিতে রেখে দিল। এতো কষ্ট করে ধোয়া জিনিসগুলোকে আবার ধুতে হবে দেখে আমার মাথা কিছুটা গরম ছিল। এর মধ্যে আবার গ্লাস স্বল্পতায় নতুন ড্রিংক্সের অর্ডার সরবরাহ করতে পারছিলাম না। কারণ সব গ্লাসই কাস্টমাররা ব্যবহার করে ফেলেছে।
বারে আর কোনো পরিষ্কার গ্লাস নাই। তাই হেড ওয়েটার এসে অর্ডার দিতে দেরী হবার কারনে ঝারি মেরে গেল। উভয়ের ঝারি খেয়ে আমার মাথাটাও বেশ গরম হয়ে গেল। চিন্তা করছিলাম এই মুহূর্তে যদি চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়া যেত তাহলে কতোই না ভাল হতো। কি দরকার ছিল এই দেশে আসার।
মেজাজ খুব খারাপ হলেও মুখে কাউকে কিছু বললাম না। রাগের মাথায় একটা গ্লাস ধোয়ার জন্য হাতে নিলাম। কিন্তু হাতে নেয়া মাত্র গ্লাসটা ভেঙ্গে গেল দেখে আমি খুব অবাক হলাম। স্বাভাবিক অবস্থায় গ্লাসটা হাত দিয়ে ভাঙ্গার মতো নয়। আবার গ্লাসটার কোথাও বারিও লাগেনি।
শুধু হাত দিয়ে ধরেছি আর সেটা ভেঙ্গে গেল। বুঝলাম এদের অত্যাচারে আমার মাথাও গরম হয়েছে। এর মধ্যে আমার হাতও কেটে গেল দেখে হেড ওয়েটার আবার আসলো। তারাও এবার কিছুটা নরম হলো। কিছু না বলেই আবার চলে গেল।
সম্ভবত মালিক হেড ওয়েটারকে ইশারা করে কিছু বলেছিলো।
কাটা হাত নিয়েই গরম পানি আর কড়া ওয়াশিং লিকুইড দিয়ে শত শত গ্লাস আর হাফ প্লেট ধুয়ে পরিষ্কার করলাম। এর পর রেস্টুরেন্টের ভিড় আস্তে আস্তে কমে গেল। সময় শেষে খাওয়া দাওয়া করে চিন্তা করলাম এ সপ্তাহ পরে এই কাজটা ছেড়ে দিলে কেমন হয়। কিন্তু একথা ভাবলেই পেছন পেছন তাড়া করে বেড়ায় ইউনিভার্সিটির টিউশন ফিয়ের পাহাড়।
যেটা শোধ না করলে আমার সব পরিশ্রম মাটি হয়ে যাবে। তবে এই কাজের একটা বেশ ভাল জিনিস আবিষ্কার করতে পারলাম। যতো ঝড় ঝাপ্টাই যাকনা কেন, সবকিছু হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি। কাজের সময়টা কেটে যায় চোখের পলকে। নিঃসন্দেহে এটা একটা ভাল দিক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।