দেশের প্রতি পরিবার থেকে একজনকে চাকরি দেয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে দলটি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অচিরেই ‘ন্যাশনাল সার্ভিস’ নামে একটি নতুন প্রকল্পের আওতায় দেশের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করা প্রায় এক লাখ শিক্ষিত বেকার যুবককে দুই বছরের জন্য ছয় হাজার টাকা মাসিক বেতনে অস্থায়ীভাবে চাকরি দেয়া হবে।
নির্বাচিত যুবক-যুব মহিলাকে ব্যাংক, বীমা, করপোরেশন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান, নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান, কৃষিপণ্য বাজারজাতে কৃষককে সহায়তা, সার, ডিজেল ও বীজ সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা, কমিউনিটি পুলিশের দায়িত্ব পালন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা ও স্বাস্থ্যসেবায় সহায়তাসহ সামাজিক নানা উন্নয়ন কর্মকা-ে লাগানো হবে। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যাংক, বীমা, করপোরেশনসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
প্রায় এক লাখ যুবকের দুই বছরের চাকরিকালীন বেতনের জন্য ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ১৩.৪ অনুচ্ছেদে প্রতি পরিবার থেকে একজনকে আত্মকর্মসংস্থান করে দেয়ার অঙ্গীকার করা হয়। সেই আলোকে গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে চিঠি দিয়ে শিক্ষিত বেকারদের বায়োডাটা চাওয়া হয়। এতে সাড়া দিয়ে সারাদেশ থেকে প্রায় সাত লাখ শিক্ষিত বেকার তাদের বায়োডাটা জমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল আলম হানিফ জানান, গত ৩০ জুন পর্যন্ত জমা নেয়া এ বায়োডাটাগুলো কম্পিউটারে ডাটাবেইজ তৈরি করা হচ্ছে।
এ কাজ শেষ হলে উচ্চ মাধ্যমিক পাস যুবক ও যুব মহিলাদের তালিকা ন্যাশনাল সার্ভিসে পাঠানো হবে।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের লেবার ফোর্স সার্ভে অনুযায়ী ২০০৯ সালে ১৫ বছর বয়সের কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা ৪ কোটি ৯৫ লাখ। আর ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সের তরুণ-তরুণীর সংখ্যা হচ্ছে ১ কোটি ৭৩ লাখ, যা কর্মক্ষম জনসংখ্যার ৪০.৬ ভাগ। তবে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের শিক্ষায় শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা হচ্ছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৩০ জন। এর মধ্যে ৯৮ হাজার যুবক ও যুব মহিলাকে এ প্রকল্পের মধ্যে আনা হচ্ছে, যা মোট সংখ্যার প্রায় ৭০ ভাগ।
একটি গবেষণা সংস্থার মতে, দেশে বেকার ও ছদ্ম বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি।
ইতিমধ্যে পাইলট কর্মসূচি হিসেবে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি কুড়িগ্রাম ও বরগুনা জেলার ১৪টি উপজেলায় শুরু হয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এতে দুই জেলার ১ হাজার ৯৮৮ জন উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস বেকার যুবক ও যুব মহিলা দুই বছর মেয়াদে স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে কর্মসংস্থানের আগে প্রশিক্ষণ চলাকালে দৈনিক ১০০ টাকা হারে প্রশিক্ষণ ভাতা আর কর্মরত অবস্থায় দৈনিক ২০০ টাকা হারে পারিশ্রমিক দেয়া হবে।
পাইলট প্রকল্পের সার্বিক দায়িত্ব পালন করছেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক গোলাম মেজবাহ উদ্দিন। তিনি জানান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের ১২৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন চাকরি প্রার্থীদের তালিকা করবে। নিজ উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী উপজেলায় চাকরির জন্য নিয়োগ করা হতে পারে। সরকারের রাজস্ব বাজেট থেকে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে।
এ প্রকল্প দুই বছর পর পর ২০১৪ সাল পর্যন্ত চলবে। এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. আহাদ আলী সরকার বলেন, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি যুব বেকারত্ব নিরসনের জন্য সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। স্বেচ্ছায় এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে যুবকরা। তবে চাকরির আগে তিন মাসের একটি প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হবে। প্রচলিত নয়টি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে বিধৃত পরিকল্পনা অনুযায়ী ন্যাশনাল সার্ভিসের আওতায় উচ্চ মাধ্যমিক এবং সমপর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন যুবক/যুব মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি বিষয়ক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে লিড মন্ত্রণালয় এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরকে বাস্তবায়নকারী সংস্থার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপের খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৫ সালে যেখানে দেশে মোট কর্মসংস্থান ছিল ৪ কোটি ৪৩ লাখ, ২০০৮ সালে তা হয়েছে ৪ কোটি ৭৪ লাখ। তিন বছরে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৩১ লাখ লোকের। অর্থাৎ তিন বছরে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ।
২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিন বছরে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়তি কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় দেশে বেকার লোকের সংখ্যা বাড়ছেই। ২০০৯ সালে দেশে মোট বেকার লোকের সংখ্যা হয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ। ২০০৩ সালে বেকার লোকের সংখ্যা ছিল ২ কোটি এবং ২০০০ সালে ছিল ১ কোটি ৯০ লাখ। অন্যদিকে অর্ধবেকার ও নির্ভরশীল লোকের সংখ্যাও বাড়ছে।
সুত্র-যাযাদি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।