আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আশিনী – আইভরি কোস্ট

কিছু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে এই জীবনে। ভ্রমণ আমার ভাল লাগে্‌ তাই সবার মাঝে তা জানাতে চাই। সবার উপরে ভালোবাসি বাংলাদেশ । ধন্যবাদ
আবিদজান থেকে ছুটির দিনে বাইরে কোথাও চলে যেতাম আমরা। এই সপ্তাহে ঠিক হল আশিনী যাব।

ভোর ৮ টায় উঠে তৈরী হলাম। গাড়ী নিয়ে প্রথমে ফিলিং স্টেশনে গিয়ে তেল ভরলাম তারপর রওয়ানা হলাম আশিনীর পথে। রাস্তা বেশ সুন্দর। শহর থেকে বাইরে যেতে চেক পয়েন্ট আছে। সব পাড় হয়ে আটলান্টিকের পাড় ঘেঁসে বানানো রাস্তা দিয়ে আমরা চলছি।

একপাশে বীচ, মাঝে মাঝে নারকেল গাছের সারি, অন্য দিকে নারকেল,আনারসের বাগান। বাসাম বীচ ছাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। আশিনী ঢোকার পথেও চেকপোস্ট আছে। এক ঘন্টা লাগল যেতে। প্রথমে কুমিরের একটা ফার্মে গেলাম, বেশ সুন্দর অনেক বড় জায়গা নিয়ে এই ফার্ম।

পাশেই লেক, লেকের পানিতে ওয়াটার স্কি হচ্ছে। স্পীড বোটে করে ঘুরছে ৫/৬ জন। সপরিবারে এসেছে কিছু বিদেশী। এখানে কটেজ আছে, অলস সময় পার করে এখানে। কিছু ছবি তুললাম।

তারপর বীচ এর দিকে রওয়ানা হলাম। মেটাল রোড ছেড়ে লালমাটির পথ বেয়ে ভেতরে বীচ। অনেক গুলো সী সাইড রিসর্ট আছে এখানে। বার, রেষ্টুরেন্ট, থাকার কাটেজ সবই আছে। পুল ও আছে কোন কোন জায়গায় ।

তবে যুদ্ধের কারণে পর্যটন ব্যাবসাতে এখন মন্দা চলছে মনে হয়। আমরা একটা চক্কর দিয়ে ফাকা জায়গা দেখে গাড়ী ঢুকিয়ে দিলাম। দুরে আটলান্টিকের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। মসৃণ ঢালু সমতল বালুবেলায়। এখানে আটলান্টিক তেমন তেজী না।

আমরা বসেছিলাম বেলাভূমির নারকেল গাছের ছায়ায়। কিছুটা অপরিচ্ছন্ন,কিছুটা রক্ষনাবেক্ষনের অভাব সব মিলিয়ে একান্তই প্রকৃতির নিজস্ব পরিবেশে। নারকেল গাছ থেকে নারকেল ঝড়ে পড়ে আছে নীচে। ঝরে পড়া নারকেল থেকে গাছ উঠছে, কিছু বেঁচে যাচ্ছে কিছু নষ্ট হচ্ছে। প্রকৃতির উদারতার কাছে এসব কিছুই অতিসামান্য ।

মানুষজন খুব কম , আমরা ছয়জন এসেছি আজকে। ইয়ং গ্র“প হাফপ্যান্ট পড়ে রেডি সাগরে নামার জন্য। প্রথম জিন্স পড়ে গেলাম পরে কেটস্ খুললাম। ছবি তুললাম বীচে, সূর্য় মধ্য আকাশে । বীচে হাতে গোনাকয়েক জন সানবাথ করছে, ।

মোটর সাইকেল স্পীড এ চালাচ্ছে জনা দুই। চার চাকার গাড়ী চালাচ্ছিল কিছু পর্যটক। হাত পা ভেজালাম, বেশ লবনাক্ত পানি। তারপর আমরা হাঁটতে বের হলাম, বিচের মধ্যে চার পাচ কিলোমিটার হাঁটা হলো। দুপুর বেলা শটস পড়ে সাগরের পানিতে আজ মন ভরে গোসল করলাম।

সাগরে আজ জোয়ার ভাটা দুটোই দেখলাম। তবে এখানে সী বেড উচু নীচু। কক্স বাজারের মত সমান না । হঠাৎ প্রায় বুক পর্যন্ত ডিপ, পাশেই হাঁটু পানি, স্রোত নিরন্তর আসছে বেশ বড় স্রোতে গা ভাসাতে ভালই লাগল। ১২-৩০ এ ফিরে এসে লাঞ্চ।

পরোটা সব্জী,মাংশ,বেশ মজা লাগল। আবিদজান থেকে যাওয়ার সময় নিয়ে গিয়েছিলাম। খাবার শেষে বীচে চাদর বিছিয়ে আড্ডা। ১০০ সিএফএ দিয়ে একটা আনারস , কেনা হল , ছোট ছেলেটা সুন্দর করে কেটে দিল আনারসটা । কামড়ে কামড়ে খেলাম , ছোট বাচ্চাদের একটা দল এলো একটু নাচানাচি হলো মিউজিকের সাথে।

গাড়ির প্লেয়ার টার ভলুম বাড়িয়ে দিলাম, ছেলে মেয়ে গুলো নাচল আমরা দেখলাম। ওদেরকে বিস্কিট খেতে দিলাম। খুসি মনে ওরা চলে গেল। খাবার পর গল্পের আসর হলো। কৌতুক শুনলাম।

একটা হলো সিগারেটের উপকারিতা। সিগারেটের অপকারিতা সবাই জানি তবে এটা যে উপকারী তা জানতাম না এগুলো হলো ১। সিগারেট খেলে বুড়ো হবে না। ২। বাড়ীতে চোর আসবে না।

৩। কুকুর কামড়াবে না। এগুলোর ব্যাখ্যা হলো যারা সিগারেট খায় তারা তাড়াতাড়ি লাঠি ব্যবহার করতে হয় দুর্বল হওয়ার কারণে। লাঠি হাতে থাকলে কুকুর কামড়াতে আসে না। বুড়া হয় না কারণ তার আগেই মারা যায়।

চোর আসবে না কারণ সারারাত কাশি চলে চোর বেটা ভাবে মালিক ঘুমায় নাই এখনো। ভালই চলল এই কৌতুক। গাড়ীতে গান চলছিল এমন ছায়া ঢাকা সুন্দর পরিবেশ অনেক টাকা দিয়েও সব সময় পাওয়া যায় না। আজ আবহাওয়া ভাল ছিল আকাশ পরিষ্কার তবে সাগরের পানি একটু ময়লা ছিল মনে হলো। ট্যুরিষ্ট তেমন দেখা যায়নি।

বিকেলে সবাই বের হয়। বাংলাদেশের আমরা কজন পশ্চিম আফ্রিকাতে আটলান্টিকের পাড়ে হাঁটছি, দেখছি নীল আকাশ আর ভাবছি আমার দেশের কথা । তিনটার তপ্ত রোদে নারকেল গাছের ছায়ায় বসে সাগর দেখছিলাম। কেন যেন রোদে যেতে ইচ্ছে করেনি। এরপর জুস,আপেল পর্ব।

সূর্য হেলে পড়ছে ফেরার জন্য রেডি হলাম। ফেরার পথে পিরামিডের মত একটা ভবন দেখলাম । গাড়ি নিয়ে সেখানে গেলাম। এটা একটা চার্চ। নতুন বানানো হয়েছে, অপূর্ব সুন্দর স্থাপত্য ।

কিছুক্ষণ সেখানে ছিলাম ছবি তুললাম। তারপর আবার যাত্রা শুরু। বামে সাগর দেখে দেখে পথ চলছি। চলতে চলতে সন্ধ্যার আগেই পৌঁছে গেলাম আবিদজানে। ভালভাবেই রোববারটা কেটে গেল।


 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.