আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিঙ্ক ফ্লয়েড অথবা সীড ব্যারেট অথবা বাইক!

চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)

"আই'ভ গট এ বাইক, ইউ ক্যান রাইড ইট ইফ ইউ লাইক ইট'স গট এ বাস্কেট, এ বেল দ্যাট রিঙস অ্যান্ড থিঙস টু মেইক ইট লুক গুড আই'ড গীভ ইট টু ইউ ইফ আই কুড, বাট আই বোরো'ড ইট। " কী শিশুতোষ, আমাদের অমল শৈশবের মত সরল কথামালা! এক অবুঝ কিশোরের একটা সাইকেল, বেণী করা আর ফ্রক পরা মেয়েটির সামনে গিয়ে তার সাইকেলের এহেন আধো-বিজ্ঞাপন আমাকে মজা দেয়। মনে পড়ে, বয়ঃসন্ধির সময়কাল, হালকা গোঁফের রেখার সাথেই লজ্জা আর ব্রীড়া কতটা অসহায় করতো। মনে পড়ে গোলাপি ফ্রকের ফুলে থাকা কুঁচিগুলো আমাকে অসহায় করে দিতো। "You're the kind of girl that fits in with my world I'll give you anything Everything if you want things." এই কথাগুলোও বেশ সাধারণ।

এই প্রতিশ্রুতি যে কোন আকাঙ্ক্ষিত মানুষের প্রতিই দেয়া যায়। "তুমি এমন একটা মেয়ে যে আমার এই ছোট জগতে দারুণ মানাবে, তুমি যা চাইবে, আমি তোমাকে তাই-ই দিবো। " এরকমভাবে কথাগুলো যুগে যুগে কতজনেই না বলেছে, সামনে বসে থাকা মেয়েটির গাঢ় ত্বকে তখন কি একটু খুশির ঝিলিক জমে উঠেছিলো? সাথে মিশে ছিলো অনাগত ভবিষ্যতের সুখ, হর্ষ আর গান! এমন সাধারণ কথা দিয়ে একটা গান, নাম- "বাইক"। গানটাও ছোট, মাত্র পৌনে দুই মিনিট। তাহলে এই সাধারণ কথার সাধারণ গানের কথা কেন বলছি? গানটির অসাধারণত্ব টের পাওয়া যায় পরের স্তবকে।

আসলে ভালো জিনিসের জন্য বোধহয় একটু বেশিসময় অপেক্ষা করাটা জগতের রেওয়াজ! "I've got a cloak It's a bit of a joke There's a tear up the front It's red and black I've had it for months If you think it could look good Then I guess it should." শুনতে শুনতেই আমি আবার অবাক হলাম। পিঙ্ক ফ্লয়েডের গান শোনার মজাটাই হলো, লিরিকের এই খাপছাড়া সৌন্দর্য শ্রোতাকে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফলে দিবে। ও আচ্ছা, বলা হয়নি, এটাও পিঙ্ক ফ্লয়েডেরই গান। বিশেষ করে বললে, সীড ব্যারেট জমানার পিঙ্ক ফ্লয়েডের গান, আরো বিশেষ করে বললে, এটা তাদের প্রথম অ্যালবামের শেষ গান। অ্যালবামটির নামঃ "দ্য পাইপার অ্যাট দ্য গেইটস্‌ অফ ডওন" (The Piper At The Gates of Dawn)।

নামটাকে বাংলা করা যায় কি? কেমন দাঁড়ায়ঃ "ভোরের দরজায় দাঁড়ানো বাঁশিওয়ালা!" কী চমৎকার শিরোনাম! আমি যখন প্রথম পিঙ্ক ফ্লয়েডের গান শোনা শুরু করি, তখন সবার আগে এই অ্যালবামটাই খুললাম। শুনতেই যখন হবে, শুরু থেকেই শুনি! [আগ্রহীরা অ্যালবামের একটি ভালো রিভিউ পাবেন এখানে] তারপরে শেষ গানটার সময়ে আমি মনে হয় অন্য কোন কাজ করছিলাম... ঢুংঢাং করে বেখাপ্পা তালে ড্রাম শুরু হলে মনোযোগ চমকে ফিরে আসে। শিশুতোষ ভাবনা নিয়ে গাওয়া শুরু করলো সীড, গলায় আধো মাতলামির ছোঁয়া। তৃতীয় স্তবকে এসেই উপরের ধন্দে ফেলে দেয়া লাইনগুলোঃ "আমার একটা ক্লোক্‌ আছে। যেটা একটা মস্ত তামাশা।

সামনের দিকে একটু ছেঁড়া। লাল আর কালো রঙের মেশানো। আমার কাছে আছে বেশ কয়েকমাস ধরে। যদি তোমার মনে হয় এটা তোমাকে মানাবে, তাহলে মনে হয় সেটাই ঠিক। " আবারো কি মনে হয় না, এমন অসংলগ্ন কথা কেনই বা মেয়েটির সামনে সে বলছে! একটু হেসেও ফেলি আমি, আহা বেচারা অর্বাচীন কিশোর।

সুন্দরীর সামনে এসে এলোমেলো কথা বলছে, যা মনে আসে তা-ই। আমি যদি চলি পাতায় পাতায়, তাহলে সীড তারচেয়েও বড়ো কোন গাছের ডালে ডালে চলে বেড়ায়! পরের প্যারাটা শুনি-- "I know a mouse And he hasn't got a house I don't know why I call him Gerald He's getting rather old But he's a good mouse। " মাথা কি পুরাই খারাপ হয়ে গেলো আমার! বলে কি ব্যাটা। ইঁদুর পালে, তার নাম কিনা জেরাল্ড! বাড়ি নাই, ঘর নাই, বুড়াও হয়ে গেছে। ঠিকঠিকানাবিহীন কথা সব! আমার হাসি মুছে যায়, আমি আরো 'বেকুব' হয়ে পড়ি।

পরের কথাগুলো একইরকম ধোঁয়াশা-মাখা-- "I've got a clan of gingerbread men Here a man There a man Lots of gingerbread men Take a couple if you wish They're on the dish." এবারে আমি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যাই যে বেচারা সীডের অবস্থা আসলেই গেছে (আসলে যায় নাই)। কিন্তু আমার ভুল ভাঙে যখন শুনি সুরের বদল। এতক্ষণ গীটার বাজছিল, সুর বদলে ঝনঝনিয়ে ওঠে নাম-না-জানা বাদ্যযন্ত্র। আমি আসলে নিশ্চিত হতেও পারি না যে আদৌ সেগুলো কোন বাদ্যযন্ত্র কী না। একেবারেই আলাদা বাজনা, সুরের দমকা হাওয়া চারপাশ হতে ঘিরে ধরে, মাতাল প্রবল আলোড়ন! (পরে জেনেছি এটাকে "মিউজিক কংক্রিট্‌ " বলে।

এলেক্ট্রো-অ্যাকুয়স্টিক বাজনা। সীড ব্যারেটের উদ্ভিন্ন স্বভাবের মতোই সুর আর যন্ত্র নিয়ে তার নিরীক্ষার একটা চমৎকার উদাহরণ!) এটাই হয়তো আভাস ছিলো। শেষ স্তবকের কথাগুলো বলার আগে প্রস্তুতি। একটা অ্যালবামের শেষ গানের শেষ স্তবকের আগে, শ্রোতাকে একটু বাজিয়ে নেয়া, ঝেড়ে জাগিয়ে দেয়া-- শোনো হে, সুরের মাতোয়ারা বাজি শেষ হতে চললো, এখন একটু মন দিয়ে শোনো! "I know a room full of musical tunes Some rhyme Some ching Most of them are clockwork Let's go into the other room and make them work. সীড ব্যারেট বা পিঙ্ক ফ্লয়েডের আকর্ষণ এখানেই যে শেষ পর্যন্ত তারা গভীরভাবে মিউজিক নিয়ে ভাবে। পৃথিবীর বাকি সকল প্রাত্যহিক জঞ্জাল আর দৈনন্দিন ব্যর্থতার মাঝেও তারা সুরসৃষ্টি নিয়ে কতটা গভীর নিবেদিত-প্রাণ।

কী বললো তারা, কী বললো সে? "আমি তোমাকে এমন এক ঘরে নিয়ে যাবো, যেখানে সুরের সুরেলা জাদু ঘুরে বেড়ায়, ঘড়ির কাঁটার মত ধ্রুবক সুর, নির্লঙ্ঘ্য অমোঘ সুর! চলো! আমরা সেই ঘরের ভেতরে গিয়ে সুরগুলোকে নিয়ে কাজ করি। " আমি ততক্ষণে অনেকটাই জড়, স্থবির। ভাবছি এভাবে কেন বললো সীড, কী কারণ থাকতে পারে সাধারণ শিশুতোষ ক্লিশে কথার একটা গানে এমন সুর আর বাক্য ভরে দেয়া। কবিতার মতো যার দুই বা বহু-অর্থ। খুঁজে খুঁজে পেলাম এটাকে অ্যাবসার্ডিটি বলে।

দর্শনের বিরাট শাখা হেনোতেনো। পড়তে পড়তে জেনে গেলাম নিহিলিজম, সহ গোটা দুই তিন ইজম। কয়েকটা জানালা আর চশমা খুলে গেলো চোখের সামনে। শাদা চোখে পৃথিবীকে যেভাবে দেখি, বিচার করি, তাতে আরেকটু রঙ লেগে গেলো। মাথায় ঘুরতে লাগলো বাইকের সামনে দাঁড়ানো ছেলেটির মুখ।

তাতে নির্বিকার আবেদন, ধার করা বাইকটি সে কেনই-বা মেয়েটিকে দিয়ে দিতে চায়? কেন তার ঘরে পালছে ইঁদুর, চারপাশে কেন ঘুরছে ছোট ছোট জিঞ্জারব্রেড ম্যানগুলো? আমার ঔৎসুক্যের পালে হাওয়া দিয়ে শেষের অনুরণন সুরটা ঘরের মাঝে বন্দী হয়ে থাকে!... *গানটির পুরো লিরিক এখানে **ডাউনলোডের জন্যে এখানে ক্লিকান। *** সবশেষে ইউটিউব ভিডিওঃ নোটঃ এই গানের লিরিকের একটা সুন্দর অনুবাদ করেছেন ব্লগার হাসান মাহবুব। এই পোস্টে দেখুন ! আগের পর্ব// সীড ব্যারেটঃ শাইন অন! *** - অনীক আন্দালিব ১৯.৮.৯

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।