আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাজোট সরকারের ৭-৮ মাস হয়ে গেল কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য প্রস্তুতিই নাকি শুরু হয়নি!

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ

গত বছরের শেষ দিনে তথা ৩১শে ডিসেম্বর ২০০৮, সদ্য বিজয়ী মহাজোট ন্যাম সম্মেলন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন "জনগণ ভোটের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে দিয়েছে"। এটা বলার পর তার মুখে খুব হাসি। তারপর সাংবাদিকদের পীড়াপীড়িতে হাসিনা বলেন আইনী বিচার হবে। যে কথাটি তিনি একবারে বলতে পারতেন সেটা সাংবাদিকদের একই বিষয়ে পুনঃ প্রশ্নের জবাবে আইনী প্রক্রিয়ার কথা বলা যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে হাসিনা ও তার দলের আন্তরিকতার অভাবকেই নির্দেশ করে। এখন সময় যত গড়াচ্ছে আলীগ কে ভোট দেওয়া তার সমর্থকগণ এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবীতে সোচ্চার যারা তারা একের পর এক টাস্কি খাচ্ছে।

তারা অবাক হলেও আমি এবং আমার মতন যাদের অতীতের তিক্ত স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা আছে আমরা মোটেও অবাক হই নি। কারণ যুদ্ধাপরাধের বিচার করার অঙ্গীকার নেহায়তই আলীগের ক্ষমতায় আসার কৌশল তা যে এক সময় প্রকাশিত হবে সেটা আমরা ভালভাবেই জানতাম। মিথ্যা ওয়াদা করতে এবং কোন ইস্যু জিইয়ে রাখতে আলীগের জুড়ি মেলা ভার। কোন সরকারের দেশের সার্বিক অবস্থা বুঝতে বড়জোর এক মাস সময় লাগে। তারপর বাকী দুই মাসে তাদের বিভিন্ন নির্বাচনী ওয়াদা পূরণের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ অবশ্যই শুরু হয়ে যাওয়ার কথা।

সে হিসেবে দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ এবং যুদ্ধাপরাধের বিচাররে প্রস্তুতি এই এপ্রিল মাসেই শুরু হয়ে যাওয়া অবশ্যই উচিত ছিল। বিগত ফখরু-মঈন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হাসিনা যখন জেলে তখন কোন এক সভায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান তখনকার দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন সরকারের উচিত দেরী না করে এই মুহুর্তেই যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে দেওয়া উচিত। দেখা যাচ্ছে নিজেরা যখন ক্ষমতায় না থাকে তখন যুদ্ধাপরাধের বিচার করার জন্য প্রচন্ড উদগ্রীব হয়ে উঠে। আলীগের অন্যকোন নেতা হলে কথা ছিল খোদ যখন দলের সভাপতি যুদ্ধাপরাধের বিচার তড়িঘড়ি করার জন্য ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে উঠেন তখন নিজেরা ক্ষমতায় থেকে ৮ মাস হতে চলল এখনও বিচারের প্রস্তুতিই নেয় নি সেটা কিভাবে যৌক্তিক হয়? যুদ্ধাপরাধের বিচার যে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার হাতিয়ার তা আবারও কালের ব্যাবধানে প্রমাণিত। এ বছর যখন হাসিনা ও জয় সৌদি আরবে সরকারী সফরে যেয়ে ওমরা করে বাংলাদেশে ফিরেন তখন যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে হাসিনা ও তার সিনিয়র মন্ত্রী এবং সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম আরো চুপসে যায়।

ইতিমধ্যে আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক বলছেন সারা বিশ্ব হতে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ যোগাড় করতে। ভাবখানা এমন যে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের কোন তথ্য প্রমাণ নেই। ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধের ঘটনার চাক্ষুশ সাক্ষী এখনও অনেকেই জীবিত আছে মোদ্য কথা বেশীর ভাগ তথা সিংহভাগ তথ্য প্রমাণ বাংলাদেশেই বিদ্যমান। তারপরও যাই তথ্য প্রমাণ আছে এটা দিয়ে কি ট্রাইবুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের একটা অংশের বিচার সম্ভব নয়? যদি বিদেশী মাধ্যমের সাহায্য নেওয়া হয় তখন দেখা যাবে নাম মাত্র এদেশীয় দালাল-যুদ্ধাপরাধের কৃত্বিকলাপের রেকর্ড আছে যেখানে সিংহভাগই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও সরকারের কৃত্বিকলাপ লিপিবদ্ধ থাকবে। তো সরকার কি পারবে যে সকল যুদ্ধাপরাধী পাকি সৈন্য জীবিত আছে তাদের ফিরিয়ে আনতে? এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মণি মাত্র একবার পাকিস্তানের কাছে আবেদন জানিয়েছে যে জীবিত পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী সৈন্যদের বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতে।

তারপর ২/৩ মাস হয়ে গেছে এ নিয়ে পাকিস্তানের কাছে তো দূরে থাকুক আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও সহযোগীতা চাওয়া হয় নি। বিশেষ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি এ বিষয়ে আগ্রহ দেখালেও যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানের সৈন্যদের ফিরিয়ে আনতে মহাজোট সরকার এখন পর্যন্ত মার্কিন সরকারের কাছে কোন অনুরোধ জানায় নি। আর পাকিস্তান ও সৌদির পীড়াপীড়িতে মার্কিনীরাও চায়না বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার হৌক। কিন্তু মহাজোট সরকার এ কথা নিজ হতে মুখে আনতে পারছে না। পাছে মার্কিনীরা যদি চটে যায়।

সে জন্যই মহাজোট সরকার এখন বলছে যে যুদ্ধাপরাধের বিচার নাকি সহজ বিষয় নয়। তো বিগত ৭ বছর না হৌক ফখরু-মঈনের সময় শাহরিয়ার কবির গং মঈণ ইউ. এর সাথে আলোচনায় যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবী তোলে তখন থেকেই তারা কেন প্রস্তুতি নিল না? তারা নিশ্চিত ছিল যে ক্ষমতায় মহাজোট সরকারই আসছে তাই যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি কেন গোছানো হয়নি? আর যদি গোছানেই হয়ে থাকে এখন কেন দীপু মণি বলছে আমাদের আট ঘাট বেধে নামতে হবে। তাও সরকারের মেয়াদের ৭ মাস হয়ে ৮ মাস হতে চলল। এই সময়ে সরকারের তেমন কোন জোড়াল পদক্ষেপ নিয়েছে বলে আমরা জানি না। আর এখন শোনা যাচ্ছে যে মহাজোট সরকার নাকি ক্ষমতায় আসার পর এ নিয়ে কোন প্রস্তুতিই নেয় নি।

এ অভিযোগ করেছেন স্বাধীনতার ইশতেহারের অন্যতম প্রণেতা এম আমীর-উল ইসলাম। Click This Link গতকাল সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম আয়োজিত এক সেমিনারে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে আসে। এই সেমিনারে সরকারের কোনই সমালোচনা করা হয়নি যখোনে বিগত ২০০৭-০৮ দুই বছরে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম ও শাহরিয়ার কবির গং মুখ দিয়ে তুফানী ভাষণ দিয়েছেন, বাঘের মত তর্জন-গর্জন করেছেন অথবা হুংকার ছুড়েছেন। কিন্তু আজকে তাদের আওয়াজ বিড়ালেন মত মিউ মিউও করে না। কারণ তারাতো প্রকৃতপক্ষে হাসিনার হাতের সুতার পুতুল।

হাসিনা বসতে বললে বসবে এবং উঠতে বললে উঠবে সেখানে তাদের পক্ষে কিভাবে মহাজোট সরকারের সমালোচনা সম্ভব? এখন শুধু মহাজোট সরকারের যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রক্রিয়া বিলম্ব করার নিত্য নতুন অজুহাত, কৌশল, কসরত এবং নানা সমস্যার কথা শোনা যাবে। তাদের ভাবখানা এমন যে তারাই যত্ত সমস্ত সমস্যায় থাকে কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দী ক্ষমতায় থাকলে তার ঘাড় মটকানোর চেষ্টা করা হয়। যেমনটি হয়েছিল ১৯৯১-৯৬। ঘাদনিক সৃষ্টি করে হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াওর মাধ্যমে হাসিনার এক মুহুর্তের জন্যও শান্তিতে না থাকার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করেছিল তারা। কিন্তু ১৯৯৬-২০০১ সালে তাদের আর খুজে পাওয়া যায়নি।

তাই এবারও যদি ১৯৯৬-২০০১ সালের পূনরাবৃত্তি দেখি বিন্দুমাত্র অবাক হব না। এ সমন্ধে রাসুল(সাঃ) এর একটি ঘটনা উল্লেখ করার মত। একদিন রাসুল(সাঃ) তার উপস্থিত সাহাবীদের বললেন "তোমরা যদি বল কাল রাতে কেউ উহদ পর্বত কে উপড়ে ফেলেছে তো আমি হয়ত মেনে নেব। কিন্তু যদি বল যে উমুক ব্যাক্তি রাতারাতি তার খাসলত বদলে ফেলেছে তো আমি সহজেই তা বিশ্বাস করব না। " তো যারা সত্যিকার অর্থেই তথা আন্তরিকভাবেই ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবীতে সোচ্চার তারা কি বার বার আলীগের এই ঘৃণ্য রাজনৈতিক খেলার দ্বারা প্রতারিত হবেন? তারা কি পারবেন এই সরকারের বাকী সাড়ে ৪ বছরের মেয়াদেই যু্দ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা সহ শাস্তি কার্যকর করতে? যদি না পারেন এবং পরবর্তীতে যদি চারদলীয় জোট ক্ষমতায় তথা সরকারে আসে তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে যারা সোচ্চার তাদের কথা আমলে নেওয়া তো দূরে থাকুক, রাজপথে আন্দোলন করতে গেলে দাড়াতেই দিবে না।

কঠোর হস্তে সেই আন্দোলন দমন করা হবে। তখন মাথার চুল ছিড়লে বা কপালে জুতা পেটা করলেও এই সময় ফিরত পাবেন না। তাই সাধু সাবধান!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.