আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যাচেলর লাইফের বিড়ম্বনা ( To-Let)...



“হ্যালো, এটা কি ৮১২৩৪৫৬?” অপর প্রান্তঃ হ্যা। “আমি রাস্তার মোড়ে দেখলাম আপনাদের বাসা ভাড়া দেবেন...” মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে অপর প্রান্তের ‘কন্ঠী’ এক নিশ্বাসে বললেন, “বাসা ভাড়া দেব শুধু ফ্যামিলিকে, কোন ব্যাচেলার না... আপনি কি ব্যাচেলার?” “ইয়ে, মানে হ্যা...” “তাহলে ভাই কিছু করার নাই...” খট করে ফোন কেটে গেল। হৃদয়টা খান খান হয়ে গেল আবারও! এই নিয়ে কত্তগুলো যে ফোন করলাম, কে জানে? সবার এক কথা ব্যাচেলর ভাড়া দেবেনা। একটু সামনে যেতেই ঝকঝকে কালিতে লেখা দেখলাম, বাড়ী ভাড়া, যোগাযোগঃ মোবাইল নাম্বার দেয়া। বুকে সাহস এনে রিং করি ঐ নাম্বারে।

বাব্বা, এবার দেখি John Denver গান গাচ্ছেন অপর প্রান্তে... ‘You fill up my senses...’ সেই বিখ্যাত গান। মনে মনে ভাবলাম, এ লোক নিশ্চয়ই বাড়ীওয়ালার সদ্য প্রেমে পড়া কম বয়স্ক ছেলে বা আত্মীয় হবেন। দেখি বরফ গলে কিনা? ফোন যিনি ধরলেন বেশ ভারী গলা। বললাম, আমার যা বলার। উনি বললেন, “হ্যা ভাই আমাদের বিল্ডিং এ ব্যাচেলরই ভাড়া দিই।

” এই কথা শোনামাত্র যেন ‘কর্ণকুহরে’ সুখের নহর বয়ে গেল । “আমাদের এখানে ৩টা বেড, ড্রয়িং কাম ডাইনিং রুম, ২টা টয়লেট আছে। ভাড়া পড়বে কারেন্ট, পানির বিল ছাড়া ২০,০০০ টাকা। দুই মাসের Advance দিয়ে উঠতে হবে। ” ভাড়া শুনেই আমার ‘কস কি রে মমিন’ ()অবস্থা।

মানে ফোন রাখতে পারলেই বাঁচি আরকি। স্মৃতি হাতড়েও ৪০,০০০ টাকা একসাথে দেখেছি কিনা মনে করতে পারলাম না! অবশেষে খুজতে খুজতে পেলাম অন্ধকারাছন্ন দ্বোতালা এক বাসা। ভাড়াও নাগালের ভিতরে। বেশ বড় বড় দুইটা রুম। সম্ভবত, ফ্যামিলি নিয়ে যারা থাকেন তারা এমন বাসা নেন না, তাই আমাদের কে দেওয়া হচ্ছে, রুম সেটিংস টা আজব।

সমস্যা টয়লেট মাত্র একটা (আমরা দলে আসলে অনেকে ছিলাম) এবং এর সাথে যুক্ত হল অনেক গুলো ‘না যুক্ত’ লিস্ট। সেই তালিকাটা মৌখিক হলেও সেটি অত্যন্ত Strict মনে হল। লিস্ট এর লিখিত রূপ দাঁড়ায় এমনঃ ১। উচ্চ স্বরে গান শোনা, কথা বলা যাবেনা ২। মেয়ে/বান্ধবী ফ্ল্যাটে আনা যাবেনা ৩।

রাত করে ফেরা যাবেনা ৪। দেওয়ালে পেরেক ঠোকা যাবেনা ৫। ছাদে ওঠা যাবেনা, ইত্যাদি ইত্যাদি। খালি না আর না। তারপরেও রাজি হয়ে গেলাম নিমিষেই।

এছাড়া আর উপায়ও ছিল না। সাথে থাকা পুংঠা ছোট ভাইটা বলল, “বাড়ীওয়ালার মাইয়া মনে লয় বড়ই সৌন্দর্য, নাইলে ছাদে উঠতে নিষেধ করল ক্যা?” ব্যাচেলর বলেই মাঝে মাঝেই এ ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, শুনতে হয় বেশি কথা। তখন কেন জানি খুব ছোট মনে হয়, নিজেকে ‘হাফ’ মানুষ মনে হয়। মনে প্রশ্ন জাগে, বাড়ীওয়ালা ব্যাটা কি কোন সময়ে ব্যাচেলর ছিলনা? নাকি ছোট বেলা থেকেই সব বাড়ীওয়ালা বিয়ে করে বসে থাকে? আচ্ছা বাড়ীওয়ালার অবিবাহিত ছেলেগুলা কি ব্যাচেলর না? তারা কি তাদের মেয়েদের বিয়ে দেন বিবাহিতদের সাথে, নাকি ব্যাচেলরদের সাথে? রাগ বাড়ে আরও যখন দেখি ঠিক মত পানি পাই না, গ্যাস থাকেনা এবং যখন আবিষ্কার করি বাড়ীওয়ালার কোন মেয়েই নাই...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।