আবুল হাসানের কবিতা : নির্জনের আরাধ্য বাতিদান
এমরান হাসান
===================================
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন গভীরভাবে আলোড়িত করেছিল এই কবিকে। তার বেশ ক’টি কবিতায় তীব্রতরভাবে প্রকাশ হয়েছে এসব বোধ। সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে আবুল হাসান নির্মাণ করেন ভিন্ন দৃষ্টির ছায়া প্রদর্শিত কবিতা। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা নয়, আবুল হাসানের কবিতায় জেগে ওঠে অন্য এক চিত্রকল্পের প্রাথমিক ভাবনা, যেখানে মাতৃভাষার উপমা পৃথক পরিবেশে নন্দিত হয়েছে, আবার নিন্দিতও হয়েছে সময় আর সভ্যতার প্রয়োজনে।
এমরান হাসান
ষাট দশকে বাংলাদেশের কবিতায় অনিবার্য গতিধারা পরিলক্ষিত হয়।
স্পষ্টত বাংলাদেশের কবিতার সংসারে একঝাঁক অতৃপ্ত প্রাণের কোরাস প্রতিধ্বনি তোলে পঞ্চাশ দশকের শেষদিকে, যার ফলে ষাটের দশককে বাংলাদেশের কবিতার বাঁকবদলের চিহ্ন বলা যায় যৌক্তিকতার সঙ্গে। কেননা রাজনৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় অস্থিরতার বিশাল বিবর্তনপ্রত্যাশী যখন সমগ্র শ্রেণীর মানুষ, ঠিক সেসব চিন্তাচেতনা থেকেই ষাটের কবিরা নির্মাণ করতে শুরু করেন তাদের কবিতা। স্যাড জেনারেশন কিংবা ‘কণ্ঠস্বর’ (আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সম্পাদিত লিটল ম্যাগ) থেকেই শুধু নয়, গোটা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের কবিরাও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন একটি নতুন ভূমি, নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার এবং সে সঙ্গে সাহিত্যের নতুন প্লাটফর্মের। এ দশকে রফিক আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, বুলবুল খান মাহবুব, আসাদ চৌধুরী প্রমুখের কবিতায় যখন উঠে আসছিল অস্থির স্বপ্নচেতনা, ঠিক তেমন সময়েই পবিত্র নির্জনতার খোলসাবৃত হয়ে নীরব বিপ্লবের মতোই ষাটের কবিতায় আসেন আবুল হাসান। মাত্র ২৯ বছর বয়সী এই কবি জীবনানন্দিক চেতনামুক্ত ভাবধারায় নির্মাণ করেছেন তার কবিতা।
মাত্র তিনটি গ্রন্থের মাধ্যমেই তিনি বাংলা কবিতার দিকদর্শনকে টেনে নিয়ে যান অবিমিশ্র এক মহাধ্যানী আখড়ায়। তার কাব্যগ্রন্থÑ রাজা যায় রাজা আসে (প্রথম প্রকাশ, ডিসেম্বর ১৯৭২), যে তুমি হরণ করো (১৯৭৪) এবং পৃথক পালঙ্ক (১৯৭৫)। সময়ের প্রয়োজনেই আবুল হাসান হয়ে ওঠেন অভিমানী পাথর। মায়াবী করুণ কিংবা একান্ত শিল্প ঋদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ তার কবিতা। রাজা যায় রাজা আসে কাব্যগ্রন্থ থেকেই তার কাব্যশক্তি ঘুরেফিরে বেড়ে ওঠে বারবার।
এ গ্রন্থের ভেতর তিনি প্রকাশ করেছেন আদিগন্ত ‘স্বপ্ন-ফসিল’ আর জ্যামিতিক অস্তিত্ব। ‘আবুল হাসান’ শীর্ষক কবিতার এই অংশই তার প্রমাণ বহন করেÑ
‘সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে, উজ্জ্বলতা ধরে আর্দ্র,
মায়াবী করুণ’
আবার এই কবিতার শেষ তিন পঙ্ক্তিতে নিজের ভেতর নিজেই ছুড়ে দেন অনির্বচনীয় দ্বিধা!
‘তবে কি সে মানুষের সাথে সম্পর্কিত ছিল, কোনদিন
ভালোবেসেছিল সেও যুবতীর বাম হাতে পাঁচটি আঙ্গুল?
ভালোবেসেছিল ফুল, মোমবাতি, শিরস্ত্রাণ, আলোর ইশকুল?’
(আবুল হাসান/রাজা যায় রাজা আসে)
আবুল হাসানের কবিতায় মানুষের জীবনযাত্রা, দৈনন্দিন ঘর-গৃহস্থালি ইত্যাদির স্পষ্ট ছায়া পড়েছে। কেবল হাসি, আনন্দ, উল্লাসকে দূরে ঠেলে দিয়েও আবুল হাসানের কবিতায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব মানুষের ছায়াচিত্র। কারণ তার কবিতায় দুঃখবোধ ও অতৃপ্তির পূর্ণতা ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না। বলা যায়, এক প্রকার সামাজিক ধ্যান-ধারণায় ডুবে না গিয়েও আবুল হাসান অকপটে সাজিয়েছেন শব্দের পর শব্দের দোলা, যা তার কবিতাকে সৌকর্যম-িত করেছে।
একাকিত্ব আর চেতনার জগৎ থেকেই কবিতার শরীর নির্মাণ করেছেন তিনি। সহজিয়া ভাষার উৎকর্ষ বৃদ্ধি করে তার কবিতায় তীব্র মজবুত গাঁথুনিতে উঠে এসেছে অদ্ভুত অনুভূতিÑ
‘আমার ও বক্ষে একটি গর্ত প্রয়োজন!
যার ফোকরের মধ্যে চালিয়ে চক্ষু
খোলা দরজার মতোন মা মণি আমারই
সেই দূর থেকে দেখবেন, আমি দিনরাত
রেঁদা তুরপুন চালাচ্ছি কত তক্তায়Ñ
(আর) সেলাই কলের সুতোর মতোন কত হাত
রক্ত নামিয়ে দিচ্ছি ভাগ্য বুননে!’
(নিঃসন্দেহ গন্তব্য/রাজা যায় রাজা আসে)
আবুল হাসান শিল্পোত্তীর্ণ সময়ের নয়, সাময়িক বোধের সংস্পর্শেই তার কবিতায় নিয়ে এসেছেন পবিত্র চেতনার সংমিশ্রণ। কবিতার প্রয়োজনে সাবলীলতাই হয়তো তার প্রধান উপজীব্য ছিল, যার কারণে প্রতিটি মুহূর্তকেই ধারণ করেছেন তার কবিতায়। প্রকাশিত তিনটি কাব্যগ্রন্থের বাইরেও যে কবিতাগুলো রয়ে গেছে, সেগুলোও অনেকাংশে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। একটি বিষয় আবুল হাসানের কবিতায় তীব্রভাবে ধরা পড়ে, সেটি চিত্রকল্প এবং সার্থক উপমার সঠিক ব্যবহার।
উপমা, অলঙ্করণ বাংলা কবিতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বলা যায়, একটি সার্থক কবিতা হয়ে ওঠার জন্য উপমা এবং অলঙ্করণের বিষয়টি অবশ্যই জরুরি। বিমূর্তবাদ, পরাবাস্তব ঘরানায় আবুল হাসানের কবিতা নির্মিত না হলেও অপরিসীম দ্যোতকতা রয়েছে তার কবিতায়। তার রচিত কয়েকটি কবিতার পঙ্ক্তি থেকেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। সময়ের তাগিদ থেকে নয়, চেতনার কেন্দ্র থেকেই সৃষ্টি হয়েছে এসব পঙ্ক্তিমালাÑ
‘ক. শিল্প তো নিরাশ্রয় করে না, কাউকে দুঃখ
দেয় না
কোনো হীন সিদ্ধান্তের মতো’
(স্বাতীর সঙ্গে এক সকাল/রাজা যায় রাজা আসে)
‘খ. আমি আলোর ভিতরে শুধু ধ্বংস, হাড় হৃৎপি-, রোদনের স্রোত দেখে
এসেছি তোমার কাছে ফিরে ফিরে হে পাবক, অগ্নিশিখা হে তীব্র তামস!’
(শিকড়ে টান পড়তেই/রাজা যায় রাজা আসে)
‘গ. হত্যা হয়, হীরা ভস্ম হয়, মেধা ঝরে যায়, তবু
কুমোরের চাকা ঘোরে
চাকা ঘোরে হাজার বছর!’
(চাকা/পৃথক পালঙ্ক)
‘ঘ. গোলাপ এখানে লাশ, মানুষের লাশ
কুকুর এখানে আজ হতে চায় কোমল হরিণ!’
(অপমানিত শহর/পৃথক পালঙ্ক)
‘ঙ. হঠাৎ দাও অন্ধকার, মা আমার হোক আবার নদী
এবং শুশুক হয়ে ভাসি, ভুসুক হয়ে সাজাই তার বোধি’
(দু’মুঠো চাল/অগ্রন্থস্থিত কবিতা)
তার কবিতায় সার্থক চিত্রকল্প তৈরি হয়েছে সবল হাতে।
ষাটের দশকের কবিতায় মুখ্য ছিল রাজনৈতিক চেতনা এবং অস্থিরতা। আবুল হাসান তার বোধকে পুরোপুরি এই বলয় আর দায়বদ্ধতার বাইরে টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। তার অধিকাংশ কবিতায় রাজনৈতিক আবহ এসেছে পরোক্ষভাবে। কোনো কোনো কবিতার চিত্রকল্প রূপকার্থে রাজনৈতিক ভাবধারামুখী হলেও মূলত মানবজীবন যাত্রাকেন্দ্রিক। কবিতার সপক্ষে আবুল হাসান আবহ সৃষ্টি করতে পেরেছেন নতুন আলোর দিকে।
সভ্যতার তীব্র ধ্বংসমুখরতায় তিনি বারবার গেয়ে ওঠেন নৈঃশব্দে বিমূর্ত বেহালার সুর। আবার প্রেমের পঙ্ক্তিমালা রচনায়ও পুরোদমে সিদ্ধহস্ত তিনি। যথারীতি লৌকিক ভাববাদিতার সপক্ষেই তার অবস্থান। প্রেমের কাঙাল হিসেবে নয়, মুহূর্তের শূন্যতাকে আবুল হাসান প্রেমের ভাষায় নিয়ে যান এক দীর্ঘায়ু শূন্যতায়!
‘তুমি নেমে গেলে এই বক্ষতলে কি সত্যিই ফুরোবে?
মুখের ভিতরে এই মলিন দাঁতের পঙ্ক্তিÑ তাহলে এ চোখ
মাথার খুলির নিচে নরোম নির্জন এক অবিনাশী ফুল;
আমার আঙ্গুলগুলি, আমার আকাক্সক্ষাগুলি, অভিলাষগুলি?
জানি কিছু চিরকাল ভাস্বর উজ্জ্বল থাকে, চির অমলিন!
তুমি চলে গেলে তবু থাকবে আমার তুমি, চিরায়ত তুমি!’
(অপরূপ বাগান/পৃথক পালঙ্ক)
আবার তার কবিতায় সহজিয়া চিত্রকল্পও লক্ষণীয় হয় শক্তিশালী ভিত্তির সঙ্গে। কবিতার পঙ্ক্তিতে আবুল হাসান সুবোধ্য এবং সাবলীলতার সঙ্গে নির্মাণ করেছেন কিছু কিছু চিত্রকল্প, যা তার কবিতার প্রেক্ষাপটকে আরো সৌকর্যম-িত করেছে।
কবিতার শরীর নির্মাণের জন্যই আবুল হাসান বারবার নতজানু হয়েছেন নির্জনতার কাছে, পবিত্র স্নিগ্ধতার কাছে। তার প্রতিটি কবিতায়ই বিশদভাবে মুখ্য হয়েছে শুদ্ধতার বোধচিত্র। তার উপমেয়তা কিংবা শব্দের সাদৃশ্যতা প্রশ্নাতীত। কবিতার শরীর নির্মাণে এ বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। আবুল হাসান তার সার্থক ব্যবহার করেছেন।
‘বেদনার বংশধর’ শীর্ষক কবিতায় আবুল হাসান নিজের একান্ত গভীরতা থেকেই উচ্চারণ করেন ‘জ্যোৎস্নার আকাশে চাঁদ, সবুজ সোনার থালে ঢেকে দিবে জলে ভাসা লাশ?’ অদ্ভুত উপমা তার কবিতায়! বলা যায়, শব্দের মোহে নেশাগ্রস্ত বোধগুলো লিপিবদ্ধ হয়েছে তার কবিতায়। তার প্রকাশিত তিনটি কাব্যগ্রন্থের বাইরেও অগ্রন্থস্থিত অনেক কবিতায়ই এসব উপমার সার্থক ব্যবহার রয়েছে। কবিতার ভেতরে একদিকে যেমন ভাবের সম্পৃক্ততা প্রবল, অন্যদিকে জীবন-চেতনা আর রূপকার্থে বোধব্যাপ্তির চৌম্বকত্ত্বের ব্যবহার প্রবল। কবিতা যেন বাস্তবতার সপক্ষের সৌকর্য। আবুল হাসানের কবিতায় সম্পূরক সৌকর্য নিয়ে উঠে এসেছে গোপন বাস্তবতা।
কয়েকটি পঙ্ক্তির প্রকাশভঙ্গি এরূপÑ
‘ক. এই তো মানুষ চায়, যুগে যুগে এই তার জেগে থেকে
ঘুমোবার সাধ!’
(আশ্রয়/যে তুমি হরণ করো)
‘খ. তাকাও এদিকে ক্ষত ঐ দিকে খুন, তুমি তাকাওÑ সময়
যেখানে মমতা নেই, মনীষার ছায়া নেইÑ আমার গমন!’
(অপমানিত শহর/পৃথক পালঙ্ক)
‘গ. ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও
ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুজে মুক্তো ফলাও!’
(ঝিনুক নীরবে সহো/পৃথক পালঙ্ক)
‘ঘ. আমার অনলে আজ জাগো তবে হে জীবন, জয়শ্রী জীবন!’
(জলসত্তা/পৃথক পালঙ্ক)
আবুল হাসানের কবিতা সম্পর্কে শামসুর রাহমান একটি ভূমিকায় লিখেছেন, ‘গ্রামীণ ও নাগরিক জীবনের মিলিত অভিজ্ঞতা তার কবিতাকে বর্ণাঢ্য, সমৃদ্ধ করেছে। তিনি নৈঃসঙ্গ এবং দীর্ঘশ্বাসের কবি। ’ শামসুর রাহমানের উক্তির যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যায় তার কবিতায়। তার কবিতায় একদিকে রয়েছে ভাসমান জীবনাচার, একাকিত্ব; অন্যদিকে রয়েছে বিরামহীন উচ্ছন্নতার প্রকাশ। কবিতার আড়ালে আবুল হাসান ছন্নছাড়া জীবনের স্থিরচিত্র আঁকতে গিয়ে জীবনের অন্তঃদর্শনের মানচিত্র এঁকেছেন সবল হাতে।
তার কবিতার পঙ্ক্তিতেই যেন জীবনের বাউলিপনার প্রকাশÑ ‘যাই আমার পকেটে আছে তাহাদের নীল চিঠি, নীল টেলিগ্রাম, যাই/শস্যের ভিতরে রোদÑ রোদে যাই, রৌদ্দুরের মধ্যে চলে যাই। ’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন গভীরভাবে আলোড়িত করেছিল এই কবিকে। তার বেশ ক’টি কবিতায় তীব্রতরভাবে প্রকাশ হয়েছে এসব বোধ। সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে আবুল হাসান নির্মাণ করেন ভিন্ন দৃষ্টির ছায়া প্রদর্শিত কবিতা। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা নয়, আবুল হাসানের কবিতায় জেগে ওঠে অন্য এক চিত্রকল্পের প্রাথমিক ভাবনা, যেখানে মাতৃভাষার উপমা পৃথক পরিবেশে নন্দিত হয়েছে, আবার নিন্দিতও হয়েছে সময় আর সভ্যতার প্রয়োজনে।
‘মাতৃভাষা’ শীর্ষক কবিতার দুটি অংশ থেকে খুব সহজেই দু’রকম দৃশ্যপট খুঁজে পাওয়া যায়Ñ
‘ক. ঐ যে নষ্ট গলি, নিশ্চুপ দরোজা
ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওরা, গণিকারা
মধ্য রাতে উলঙ্গ শয্যায় ওরা কীসের ভাষায় কথা বলে?’
(মাতৃভাষা/রাজা যায় রাজা আসে)
আবার এই কবিতার শেষ অংশ থেকে বিবৃত হয় অন্য এক দৃশ্যকল্প!Ñ
শুধু আমি জানি আমি একটি মানুষ
আর পৃথিবীতে এখনও আমার মাতৃভাষা, ক্ষুধা!’
(মাতৃভাষা/রাজা যায় রাজা আসে)
মুক্তিযুদ্ধ কিংবা স্বাধীনতার চেতনায় অনুপ্রাণিত আবুল হাসান যেন অন্য মানুষ। মাতৃভাষার চেতনাকে রাজনৈতিক এবং বাস্তবতার ভিত্তিতে দাঁড় করালেও স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা প্রকাশে তিনি আবেগ, উচ্ছ্বাসের কাছেই পরাজিত হয়েছেন বারবারÑ
‘কেবল পতাকা দেখি
কেবল উৎসব দেখি
স্বাধীনতা দেখি,
তবে কি আমার ভাই আজ
ঐ স্বাধীন পতাকা?
তবে কি আমার বোন, তিমিরের বেদীতে উৎসব?’
(উচ্চারণগুলি শোকের/রাজা যায় রাজা আসে)
আবুল হাসানের চেতনায় স্বপ্নগুলো ‘রাজহাঁস’ এবং স্বপ্নের স্পর্শগুলো ‘সারস পাখি’। এসব স্বপ্ন আর স্বপ্নস্পর্শ নিয়েই আবুল হাসান তার কবিতা নির্মাণ করেছেন, সাজিয়েছেন শব্দের পর শব্দ। কবিতার উঠোনে আবুল হাসান নিজস্বতার স্বাক্ষর রেখেছেন তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পরপরই। তার কবিতার মূল উপজীব্য একাকিত্ব এবং একান্ত দৃষ্টিভঙ্গি।
তিরিশের দশকের জীবনানন্দ দাশ যেমন নির্জনতার সপক্ষে থেকেই ঘটিয়েছিলেন বোধের বিস্ফোরণ, ষাটের আবুল হাসান ঠিক একই রকম করে দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে স্বপ্ন আর স্বপ্নচিন্তার ব্যবধান দেখিয়েছেন ঋদ্ধতার সঙ্গে।
আবুল হাসানের কবিতায় মুহূর্তের উচ্ছ্বাস নেই, আছে শান্ত, স্থির এক বিশাল দীর্ঘশ্বাস। গোপন স্বপ্নের মতোন তীব্রতা নয়, প্রকাশ্য স্থবিরতা একান্ত পবিত্রতা আবুল হাসানের কবিতা।
-------------------------------------------------------------------
দৈনিক যায়যায়দিন। ১৭ জুলাই ২০০৯ প্রকাশিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।