আশির দশকের শুরুর দিকে যখন আনোয়ার কবির প্রথম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা নিয়ে কাজ শুরু করেন, তখন এটাকে সবাই স্রেফ পাগলামি বলেই ধরে নিয়েছিলো। কেউ কেউ এমনও বলেছিলো যে, আনোয়ারের এই পাগলামি পত্রিকার পাতায় কিছু রিপোর্ট আর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্যদের কিছু সাাৎকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সবার সব আশংকা ভুল প্রমান করে আনোয়ার কবির বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা নিয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, ঘন্টার পর ঘন্টা লেকচার দিয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত সাড়ে দশ ঘন্টার একটি প্রামাণ্যচিত্র বানিয়ে ছেড়েছেন। আনোয়ার কবির অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন, সাংবাদিকের আসনে বসেই দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী গোষ্ঠীটির ভেতরে ঘটে যাওয়া অন্যায় আর কলংকগুলো তুলে এনেছেন, এবং বুঝিয়ে দিয়েছেন যে সেনাবাহিনী সমালোচনার উর্দ্ধে কোনো সংস্থা নয়, সেনাসদস্যরাও সমালোচনার উর্দ্ধে নন।
আনোয়ার কবির এই প্রামাণ্যচিত্রটির কাজ শেষ করেছিলেন আরো বছর আড়াই আগেই।
কাছের বেশকয়েকজনকে পুরো কাজটি দেখিয়েছেনও। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে মোড়ক উন্মোচন সম্ভব হয়নি নানা কারনে, নানা বাধায়। শোনা যায় যে, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া না-কি এই ফিল্মটি দেখেছেন এবং আনোয়ার কবিরকে এই সত্য উন্মোচনের অপরাধে বিদেশী চর হিসেবে আখ্যায়িত। হায় আনোয়ার কবির, আপনার এই ১৯ বছরের শ্রম খুনীদের দাম্ভিকতা বুঝি এক বিন্দুও কমাতে পারেনি !
যাই হোক, এবার এর মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে ২১ জুলাই ২০০৯। এবার এই অসম্ভবটি জনসাধারনের জন্য উন্মোচিত হতে যাচ্ছে।
এবার দায়িত্ব আমাদের। দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে এই প্রামান্যচিত্র পৌঁছে দিতে হবে। প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি ইউনিয়নে এই সিনেমা প্রদর্শিত হতে যাবে। জাতির জানা উচিৎ যে কারা দেশের শত্রু, কারা খুনী, কারা মুখোশধারী। মানুষের জানা প্রয়োজন যে এদেশে খুনের সাথে সম্পৃক্ত থেকেও পুলিশের প্রধান পদে উন্নীত হওয়া গেছে, এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও হওয়া গেছে।
জনতার জানা উচিৎ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আজ বড় বড় কথা বলা অনেকেই পঁচাত্তর পরবর্তি সময়ে মুক্তিযোদ্ধা হত্যায় মত্ত ছিলেন। এবং দেশবাসীর আরো জানা প্রয়োজন এই যে, ‘সারা বাংলার ধানের শীষে মিশে থাকা’ সাবেক সেনা-রাষ্ট্রপতিটি মানুষ হত্যায় কতটুকু পটু ছিলেন।
আনোয়ার কবিরের সাথেই বেড়াতে গিয়ে সেই গল্প শুনছিলাম বর্তমান সংসদের একজন সংসদ সদস্যের মুখে। তিনি ১৯৭৭ সালে রাজশাহী পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তার কথাগুলো ছিলো এমন যে, সেসময় প্রতি রাতেই রাষ্ট্রপতি জিয়া’র সার যুক্ত একাধিক বান্ডিল ফাঁসির আদেশ থাকতো।
আদেশগুলো হতো ব্যাচ ও সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী। প্রায়ই দেখা যেতো যে দ্রুত সার করতে গিয়ে জিয়া কিছু পাতা বাদ দিয়ে গেছেন। এবং তখন ব্যাচসুদ্ধ ধরে আনা মুক্তিযোদ্ধা সেনাদের থেকে সারহীনদের ডেকে ডেকে সরানো হতো।
সেনাবাহিনীর ভেতরে মুক্তিযোদ্ধা হত্যার সঙ্গে সম্প্রক্ত এমন অনেক ছোট-বড় গল্প পাওয়া যায় এই সাড়ে দশ ঘন্টার ছবিটিতে। আনোয়ার কবিরের এখন স্বপ্ন- এই ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে নিয়ে একটি সংগঠন করা এবং এই প্রামাণ্যচিত্রটিকে একটি প্রামান্য দলিল ধরে নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের জন্য আবেদন করা।
আমরা কামনা করি, আনোয়ার কবিরের এই স্বপ্নটিও সফল হোক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেতরে মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারীদেরও কঠিন ও কঠোর বিচার হওয়া উচিৎ, এবং তা সম্ভব। প্রমান? আনোয়ার কবিরের এই ছবি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।