* মুস্তফা মনির সৌরভ লিখেছেন, '‘শাকিলের বউ যে ৪ কোটি টাকা নিয়ে বিমান বন্দরে ধরা পড়লেন,এইটা ভুললেন কেমনে?’'
এই সংবাদটি কবে কোথায় প্রথম এসেছিল আমার জানা নাই (অথেনটিক সোর্স কারও জানা থাকলে দয়া করে লিংক দিন). ব্লগে দেখেছি, কেউ বলছেন ৮ কোটি, কেউ বা ৬০০০ কোটি. এ নিয়ে তদন্ত কমিটিগুলো তথ্য পেয়েছে কি না, জানি না. আর মিসেস শাকিলও বিচারের উর্ধে. তবে ডালভাত অপারেশন ও ৪-কোটি টাকার ঘটনায় জীবিতদের কেউ জড়িত প্রমাণিত হলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক. কিন্তু, গুটিকয়েকের অপেশাগত কাজে দূর্নীতির দায় সকল সেনা-অফিসারের উপর বর্তাতে পারে না. আরেকটি কথা, একজন অভিজাত মহিলা, যিনি নির্যাতনে হত্যার শিকার হয়েছেন, তাকে উদ্ধৃত করতে ‘'শাকিলের বউ'’-এর চেয়ে আরেকটু কি সন্মান দেখানো যায় না? পরিশেষে, আমরাতো সভ্য মানুষ, নাকি?
কেউ একজন লিখেছেন, বিডিআর-এ যে আটা বরাদ্ধ দেয়া হয় তাতে নাকি একটা রুটিও হয় না. এতে আংশিক সত্যতা আছে, এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একাধিক পত্রও লেখা আছে. বরাদ্ধের মালিক মন্ত্রণালয়, বিডিআর না. একজন বিডিআর সদস্যের দৈনিক শুকনা রেশন বরাদ্ধ একজন সেনাসদস্যের বরাদ্ধের হুবহু সমান, শুধুমাত্র আটার পরিমাণ ভিন্ন (বিডিআর-৫৬ গ্রাম, সেনা-১১২ গ্রাম). আর দৈনিক তাজা রেশন ভাতা হল ৬৫/- থেকে ৮৫/- টাকা (বাজারমূল্যের সাথে উঠানামা করে). পক্ষান্তরে, একজন সেনাসদস্যের দৈনিক তাজা রেশন ভাতা বিডিআর সদস্যের অর্ধেকেরও কম, ফিক্সড ৩১/- টাকা মাত্র. একজন সেনাসদস্যের কাছে বিডিআর-এর খাওয়াদাওয়ার মান রাজার হালের! বিডিআর সদস্যরা আটার বরাদ্ধের স্বল্পতার কথা যেমন জানে, তাজা রেশন ভাতার বিপুলতার কথাটাও তেমনই জানে. এই তথ্যটা হেইট ক্যাম্পেইনারদের জন্য একেবারে সুবিধার না, চেপে যেতে হয়!
১১. * শূন্য আরণ্যকের তালিকা: ‘'বড় বড় পদ্দোনতি গুলো হয় রাজনৈতিক পরিচয়ে’'.
এটা দুঃখজনক. কিন্তু দায় কার? রাজনীতিকরা যদি সেনাবাহিনীর রাজনীতিকরণ চান, যদি এই এই আর ঐ ঐ পদে পোশাগত যোগ্যতার বদলে নিজেদের বসাতে লোক চান কিংবা কারও আত্মীয়তার সূত্র ধরে পোশাগত যোগ্যতা সত্ত্বেও বঞ্চিত ও অপদস্ত করেন, তবে তার দায় মূলত রাজনীতিকদের উপরই বর্তায়. এটা বিষোদ্গারের বিষয়বস্তু হতে পারে না, আক্ষেপের হতে পারে. তবে, সেনাবাহিনীতে এমন পদোন্নতির হার বাংলাদেশের যে কোন রাষ্ট্রীয় সংস্থার তুলনায় অনেক কম - সেনাসদস্যদের এই অগত্যা, অক্ষম পরিতৃপ্তি লাভ করা ছাড়া উপায় কী?
১২. * শূন্য আরণ্যকের তালিকা: ‘'সেক্টর কমান্ডার বা টুআইসি (সেকেন্ড ইন কমান্ড) হয়ে পোস্টিংয়ের জন্য ঘুষ প্রদান, এবং পোস্টিংয়ের পর পরই সুদেআসলে টাকা উদ্ধার।’'
এটি একটি বল্গাহীন মিথ্যা উক্তি. একটাও প্রমাণ দিলে হত, প্রমাণ দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয় জানি, না-হয় দু-একটা গালগল্পই বলতেন এমন ঘুষের! ততটুকু অধপতনে যেতে সেনাবাহিনীর আরও অনেক সময় লাগবে. যাহোক, কারও কারও অবৈধ অর্থ উপার্জনের তথ্য অসত্য নয় এবং সেটা সচরাচর বিরল ঘটনা. আর সেটা শুধুই সুদের, কোন আসল সেখানে নেই.
১৩. * শূন্য আরণ্যকের তালিকা: ‘'নামমাত্র মূল্যে ডিওএইচ এ জমি প্রাপ্তি। রাজউকের অনুমোদন ছাড়া বাড়ি তোলা। ধরা পড়ার পর জরিমানা প্রদান (দুদক প্রধান)’.'
ডিওএইচএস-এ জমি প্রাপ্তির বিষয়টি ভারত-পাকিস্থানেও আছে. বাংলাদেশেও পুলিস, ব্যাংকার আরও কিছু পেশাজীবিদের এমন জমি প্রাপ্তির বিষয় আছে. ভারতে একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট কিস্তিতে একটি ফ্লাটের মালিক হয়, মেজর হতেই তার কিস্তি শোধ হয়ে যায়. ট্যাক্স ছাড়া একটি মারুতি গাড়ি সে প্রায় অর্ধেক মূল্যে সিএসডি থেকে কিস্তিতে কেনে. তাদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল. এ অঞ্চলে ভারতীয় সেনা-অফিসাররা সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী. কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কেউ এমন পরশ্রীকাতর বিষোদ্গার করে না. যারা দেশ রক্ষায় প্রাণবাজির (noblest act of mankind) শপথ নিয়েছে, এমন ঘৃণার ছোবলে জর্জরিত হওয়া তাদের প্রাপ্য নয়. আর হ্যা, বর্তমানে একক প্লট বরাদ্ধ বন্ধ প্রায়, পাচ জন অফিসার মিলে ছয় কাটা পাচ্ছেন, সেও অনিশ্চয়তায় ভরা (সন্দেহবাদীরা পরিচিত চাকুরিরত/অবসরপ্রাপ্ত সেনা-অফিসারদের মাঝে বিষয়টি খতিয়ে দেখুন).
একজন সেনা-অফিসার ২১ বছর বয়স থেকে ১ম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা. ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই ৩৫-৪৫ বৎসরে অবসর নিয়ে আরও ১০-২০ বছর উঁচু বেতনের চাকুরি/ব্যবসা করেন. তার একটা বাড়ি ঢাকা শহরে না থাকাটাই কি অস্বাভাবিক না? এ প্রসঙ্গে একটি জিজ্ঞাসা, ঢাকা শহরে যে কোন এলাকায় বাড়িওয়ালাদের খোঁজখবর নিলে দেখা যাবে, সরকারি চাকুরেদের (চাকুরিরত/অবসরপ্রাপ্ত) অধিকাংশই ২য় থেকে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারি. তারা কীভাবে বাড়ির মালিক হলেন? কোন সাবেক আমলার বাড়ি ঢাকা শহরে নাই? সব বাড়িওয়ালাদের বাদ দিয়ে সেনা-অফিসারদের নিয়ে মাতামাতির কারণ থাকতে পারে না. সৎ, বৈধ উপার্জন দিয়ে নিজেদের যোগ্যতায় যারা স্বীয় আবাসস্থলকে অভিজাত করে তুলেছেন - তাদের সে যোগ্যতা সমীহের, ঘৃণার বাষ্পে দূষিত হওয়ার নয়.
সাবেক দুদক প্রধান জেনা (অব) হাসান মাসউদের জরিমানা প্রদান - যার বিশ্বাস করে তারা করুক. যারা তাকে চেনে তারা কেউ বিশ্বাস করবে না. কিন্তু ম খা আলমগীরদের বিষবাষ্প থেকে বাঁচবেন কীভাবে? সততা দিয়ে. এবং সেভাবেই তিনি বেঁচে আছেন. এ দেশে নীতিবান মহৎ ব্যক্তিরা কম জন্মেছেন - সেইসব বিরল ব্যক্তিত্বদের অপ্রমাণিত মিথ্যা গালগল্পের অপবাদ দিয়ে তুচ্ছ, অপদস্ত করার মাঝে হীনতা আছে. হয়ত এটাই আমাদের জাতিগত দীনতার উৎস.
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।