২. * শূন্য আরণ্যক লিখেছেন, '‘কিভাবে একজন সেনা অফিসার বিলাসবহুল গাড়ীতে চড়েন আর আমাদের ব্লাডি সিভিলিয়ান বলে গালি দেন তার স্মৃতি ধরে রাখতেই এই পোষ্ট’'.
কজন সেনা-অফিসারের গাড়ি আছে, শতাংশে কত - এমন একটা হিসাব দিলে বক্তব্যের সারবত্ত্বা থাকতো, তা দেননি. পাঁচ লক্ষ টাকার অধিক মূল্যের গাড়িইবা কজনের আছে তাও বলেননি. জাতিসংঘ মিশনের টাকা হাতে না আসা পর্যন্ত যে সেনা-অফিসাররা ব্যাংকে লাগাতার ওডি বয়ে বেড়ান আর জাতিসংঘের টাকা হাতে পেয়ে কেউ কেউ গাড়ি কিনে ফতুর হয়ে আবার বেচে দেন, তাও বলেননি. গাড়িমাত্রই যদি বিলাসবহুল হয় তাহলে ভিন্ন কথা, তবে কোন সেনানিবাসে দশ লক্ষ টাকার অধিক মূল্যের গাড়ি ২-৩টির অধিক পাবেন না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা পরিবারের আর্থিক সমর্থনে কেনা অথবা হয়ত তাদের স্ত্রীরা রোজগেরে. নিশ্চিত করে বলছি, দশ লক্ষ টাকার অধিক মূল্যের গাড়ি অধিকাংশ সেনানিবাসে নাই. সেনা-অফিসাররা তাদের সমান মেধা, যোগ্যতা ও সামাজিক অবস্থানে থাকা বন্ধু/সহপাটিদের চেয়ে আর্থিকভাবে অধিকাংশ সময়েই পিছিয়ে থাকেন. জাতিসংঘ মিশনের টাকা ব্যয় করেও তারা বেসামরিক বন্ধু/সহপাটিদের চেয়ে অনেক সস্তার গাড়ি চালান. আর বিলাসবহুল গাড়ি? সে সাধ্য তাদের নাই, বোধ করি তাই সাধটুকুও নাই.
ব্লাডি সিভিলিয়ান গালিটি বৃটিশ ঐতিহ্যের কুফল. আমাদের প্রগতিশীল সেনাবাহিনী সে কুফল কাটিয়ে উঠেছে অনেক আগেই. আমি আশ্বস্থ করতে চাই, গালিটিকে '‘বিলুপ্তপ্রায়'’ ঘোষনা করে সেনা যাদুঘরে রাখার সময় এসেছে. এ প্রজন্মের কোন সেনা-অফিসারের মুখে গালিটি শুনা বিরল অভিজ্ঞতার ব্যপার হবে. জাতি হিসাবে যখন চারিত্রিক অবক্ষয়ের প্রলয়স্রোতে গা ভাসাচ্ছি, তখন সেনাবাহিনীর এই উত্তরণ অভিনন্দিত হোক. আর একটি বিষয়, কোন একজন ব্লাডি শব্দটির এক নৃশংস ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছেন, চরম অশ্লীল বিধায় উল্লেখ করতে পারছিনা. তিনি সে ব্যাখ্যার উৎস জানাননি, আমিও কোথাও খুঁজে পাইনি. যাহোক, ব্লাডি শব্দটি সাধারণভাবে তিরস্কার অর্থে ব্যবহৃত হয় (Used for disapproving emphasis – WordWeb Dictionary).
৩. * রাগ ইমন রেপ ইত্যাদি বিষয়ে যা লিখেছেন, তা রূচিহীন, উদ্ধৃতির অযোগ্য. সেনাবাহিনী আমাদের বৃহত্তর সমাজেরই অংশ, যে সমাজ ঘুণে ধরা, যেখানে দূর্নীতি, সন্ত্রাস, যৌনাচার, নিপীড়ন প্রতিদিনই খবরের শিরোনাম হয়. তফাত্ হল, সেনাবাহিনীর আবদ্ধ সমাজে সামান্য একটি ঘটনাও মুহুর্তে ছড়িয়ে পড়ে পুরো সেনাপরিবারে, এমন কি কঙ্গোতে, লাইবেরিয়ায় এবং তা সজীব থাকে দীর্ঘ দিন. বেসামরিক পরিমন্ডলে এমন একটি ঘটনা মানুষ সহজে ভুলে যায়, এলাকা বদল হলেত কথাই নাই. কিন্তু সেনাবাহিনীতে অনেক বদলি হলেও, অনেক বছর পরেও এসব লিগ্যাসি থেকে যায়. এমন গল্প উৎসাহীদের মুখে মুখে ফিউশন পদ্ধতিতে ছড়ায়, এক গল্প অনেক রঙ মেখে, অনেক গল্প হয়ে. হাজার হাজার সেনা-অফিসারদের মাঝে এমন কোন ঘটনা ঘটবে না এটা যেমন অসত্য, তার চেয়ে ন্যাক্কারজনক হল আদিরসের বিষয়টিকে সেনা-অফিসারদের সাধারণ চরিত্রের অংশ হিসাবে তুলে ধরার ইচ্ছাটি. নিন্দা জানাই.
পাঠকদের অবগতির জন্য জানাতে চাই, এবং দাবি করছি, সেনাবাহিনীতে এ জাতীয় ঘটনা বেসামরিক পরিমন্ডলের চেয়ে অনেক কম, অংশত শৃঙ্খলার অনুশাসনের জন্য, অংশত সেনাসমাজে বর্ণিত করুণ পরিণতির জন্য.
* রাগ ইমন বলেছেন, '‘দুর্নীতি আর অত্যাচার যে কি পরিমান হয়, সেইটা সেনা অফিসারদের রেপ এর খবর যদি বাইরে প্রকাশ হত তাইলে পাবলিক সেন্টিমেন্ট কই যাইতো, আমার দেখতে ইচ্ছা করে'’.
সেনা অফিসাররা ভিনদেশ থেকে আসে নাই, তাদের মা-বাবা-ভাই-বোন-বন্ধুবান্ধব এ দেশেরই, সিভিলিয়ান. এমন যদি সত্যি খবর থাকত, তবে তা বাইরে প্রকাশ হতোই. বরং সব খবর চলে এলে রাগ-শূন্যদেরই লস –- পাবলিক সেন্টিমেন্ট ক্ষেপিয়ে মজা দেখার ইচ্ছাটি তৈরি হওয়ারও সুযোগ থাকতো না.
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।