আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লামার পাহাড়ে নিমগ্ন তিনদিন...



বেশ কদিন থেকে মন পাহাড়ে যাবার জন্য উচাটন হয়ে ছিল। কোন এক অকারন কষ্টে মন বিষন্ন থেকে বিষন্ন হয়েই যাচ্ছিল। খুব ইচ্ছে করছিল নির্জন পাহাড়ে সাতটি দিন একাকী বসে থাকতে পারতাম! কার সাথে যাওয়া যায় নানা চেষ্টা শুরু হল.....কোন উপায় হচ্ছিল না। আইলার পর খুলনা থেকে ফিরে আবার জোর প্রচেষ্টা...ফোন করলাম কোয়ান্টামে...ওদের লামা সেন্টারে কোন প্রোগ্রাম যাদি থাকে তাহলে ওদের সাথে লামার পাহাড়ে কটা দিন ঘুরে আসি। ওদের কোয়ান্টায়ন চলছে লামায়....কোয়ান্টায়ন হল মৌন থেকে ধ্যান বা অন্যান্য সকল কাজ করা, মৌন হয়ে কিছুতে মনোনিবেশ করা।

ভাবলাম বেশ...তবে তাই হোক, মৌনতার মাঝে পাহাড় দর্শন হবে, মন্দ কি! যাবার সময় পর্যন্ত এটি ছিল আমার জন্য নিছক একটা ভ্রমন। যাবার পর যথারীতি সব বদলে গেল....লামার কোয়ান্টায়ন কঠোর মৌনতায় করা হয়.......তিনটি দিন রাত কোন কথা নয়, কোন ইশারা নয়, কারো চোখের দিকে দৃষ্টি পর্যন্ত নয়! শুধু আমি আর আমার অন্তর্যামী, স্রষ্ঠা। শুধু নিজের সাথে বোঝাপড়া, নিজের আয়নায় নিজেকে মেলে ধরা। রে বাবা, বেশ বিপদে পড়লাম, কোন ফোন নয়, কোন ম্যাসেজ দেখাও নয়, কোন ছবি তোলাতুলির সুযোগও নেই........এগুলোতে মনযোগ ওইদিকে ছুটে যাবে! প্রথমে মনে হল..গেল আমার পাহাড় দর্শন, জলে গেল। পরে মন পরিবর্তন করলাম, বেশ এসেই যখন পড়েছি, তবে এটাকে নিয়েই থাকি.........অতএব মৌনতা কে অন্তরে গ্রহন, মোবাইল, ক্যামেরা সব বাক্সবন্দী রইল পড়ে।

এর পর থেকে শুধু নিজেকে দেখা। নিজের মনে যে এত কষ্ট, এত গ্লানি, এত বিষাদ। এতসব কষ্টের কারন খুঁজে খুঁজে দেখা যায় সব আমারই কারনে.....হায় হায়.......আমিই তো ভুল, আমিই খারাপ। তবে শুরু হোক শুদ্ধিকরন। মন শুধু বলল........তুমি নির্মল কর, নির্মল কর.......রবিঠাকুর বুঝেছিলেন, তার অর্থ তো আমি বুঝিনি! সকাল ভোরে পাহাড়ের চূড়ায় সূর্যমূখী হয়ে একটি মেডিটেশন হয়.......দ্বিতীয় দিন এটি করার পর চোখ মেলে যখন চাইলাম....চাঁদের আলোর মত মোলায়েম রোদ গাছগুলো বেয়ে বেয়ে পড়ছে..........আহ সে যে কি অপার্থিব সুন্দর! মনে হচ্ছিল গাছ থেকে সোনারোদ আজলা ভরে খাই।

এমন অসম্ভব সুন্দর সময়ে কার না চোখ ভারী হয়! এত নিরবতার পরও ঝুম বৃষ্টি, রাতে ঝকঝকে চাঁদের মায়া মায়া আলো.........প্রানভরে দেখতে কোন বাঁধা ছিল না..........যদিও মনে বাজছিল......শুদ্ধ কর, নির্মল কর। কথা না বলার সে এক ভারী মজা........মন সারাক্ষন অবিরত কথা বলে যায়.....শুধু আমি শুনি আর কেউ না। আমি বিষাদ মুক্তি চেয়েছিলাম প্রকৃতির কোলে যেয়ে, আমি তার চাইতেও বেশি পেলাম.......বিষাদ এর মূল ধরে উপরে ফেলতে পারলাম। এর জন্য পরম করুণাময়ের প্রতি শুকরিয়া.........যিনি জানেন কোথায় গেলে আমার জন্য সবচাইতে ভাল হবে.......সেদিকে ই আমাকে নিয়ে গেছেন। কি অসম্ভব ভাগ্যবতী আমি!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।