mojnu@ymail.com
শ্রীমঙ্গল শহরের ভানুগাছ নিবাসী কমলা বেগম। তিন ছেলে ও এক মেয়ের মা। একদিন বোনের বাড়িতে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে প্রতিবেশী হরেন্দন্স দেবের ছেলে বিকাশ দেবের সঙ্গে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য কথা বলেন। গ্রামের মাতব্বররা অন্য ধর্মের পর পুরুষের সঙ্গে কথা বলার অপরাধে তাদের স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে বলে বলাবলি শুরু করেন। কমলার স্বামী রিকশাচালক নান্নু মিয়া গ্রাম্য মাতব্বরদের হাত থেকে সাময়িক বাঁচার জন্য স্ত্রীকে অন্য জায়গায় নিয়ে গেলেও তাদের চাপে আবার গ্রামে নিয়ে আসেন।
পরে কমলাকে দোষী সাব্যস্ত করে ১০১ ঘা দোররা মারার নির্দেশ দেয়া হয়। স্বামী-স্ত্রীর স্বাক্ষর রেখে কমলাকে উপযুক্ত তিন ছেলে ও চৌদ্দ বছরের এক মেয়ের সামনে দোররা মারা হয়। গত মাসের ঘটনা এটি।
বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে কথায় কথায় ফতোয়া দিয়ে দোররা মারা, মৃত ব্যক্তি নিয়মিত নামাজ পড়েনি, এই যুক্তি দিয়ে কাফফারা আদায় না হওয়া পর্যìত্ম দাফন বন্ধ রাখাসহ নানা বর্বরোচিত কাজ অহরহ হচ্ছে। কখনো কখনো মনে হয়, এই-ই কি একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশ।
এই দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপাìত্মরের উদ্যোগ চলছে। অথচ ভেতরটা এত ফাঁপা।
প্রশ্ন হলো, ফতোয়া কারা দেন? যারা গ্রামগঞ্জে এই ফতোয়া জারি করেন, তাদের এটা জারি করার নীতিগত বা আইনগত ভিত্তি আছে কী-না। প্রশ্নের জবাব হলো, প্রতি গ্রামেই ফতোয়া দেন গ্রামের সচ্ছল মাতব্বর শেন্সণীর লোক ও তাদের বশংবদ কাঠমোলস্নারা। প্রকৃতপক্ষে এটি সবল কর্তৃক দুর্বলের ওপর উৎপীড়ন।
ওই শেন্সণীর লোকের বাড়িঘরে অন্যায় বা অনিয়ম হলেও কেউ কিছু বলবে না। বরং বলবে এটা বড়লোকের ব্যাপার-স্যাপার। আর গ্রামের দুর্বল শেন্সণী গরিব ও অসচ্ছল লোকজন সব সময় এ ধরনের উৎপীড়নের শিকার।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফৌজিয়া করীমের এ সম্পর্কিত একটি অভিমত ছেপেছে সহযোগী সংবাদপত্র প্রথম আলো। ফৌজিয়া করীম বলেন, ফতোয়া দ্বারা যে শাস্তি দেয়া হচ্ছে, সেটা বেআইনি ও অবৈধ।
তার মতে, ফতোয়ার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন আইন না থাকায় ফতোয়া দানকারীরা দিনের পর দিন নির্বিঘ্নে এ ধরনের অমানবিক কার্যকলাপ করে সমাজকে ভুল পথে পর্যালোচনা করছে। ২০০১ সালে বিচারপতি গোলাম রব্বানী ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সমন্বয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে ফতোয়াকে আইনগতভাবে বেআইনি ঘোষণা করার জন্য দিকনির্দেশনা দিয়ে রায় প্রদান করা হয়েছিল। এ রায়কে চ্যালেঞ্জ করে একশেন্সণীর ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সুপ্রিম কোর্টে রায়ের কার্যকারিতা বন্ধ করে রেখেছে। এ মুহূর্তে প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগে এ রায় কার্যকর করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের স্খগিতাদেশ শুনানিপূর্বক রায়টি বাþত্মবায়নের বিষয়ে পদ‹েপ গ্রহণ করা। সরকার আইনি পদক্ষেপ নিলে প্রশাসন ও পুলিশ এ ব্যাপারে তৎপর হতে পারে।
সমাজকর্মীরা বলছেন, স্খানীয় সরকারকে এমন নির্দেশ দেয়া হোক, তার এলাকায় এ জাতীয় ফতোয়ার ঘটনা ঘটলে তাকে জবাবদিহিতা করতে হবে।
মোদ্দা কথা, দেশে এ জাতীয় মধ্যযুগীয় বর্বরতা চলতে দেয়া যাবে না। একে প্রতিহত করতে হবে। যে কোন মূল্যে। যারা এরকম ফতোয়া দিয়ে সাধারণ মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, মানসিক নির্যাতন ও শারীরিক নির্যাতন করে চরম অপমানের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
অন্যায়কারীদের কিছুতেই এধরনের অন্যায় কাজে প্রশন্সয় দেওয়া চলবে না। সরকার দন্সম্নত এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে এটা আমাদের প্রত্যাশা।
সূত্র : দৈনিক জনতা, ০২ জুলাই ০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।