আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিনাকের অকূটনৈতিক বক্তব্যের জবাব দিলেন না দীপুমনি আফা

ফেসবুক আইডি:নাই
-তথাকথিত পানি বিশেষজ্ঞরা ভারতপ্রেমি মানুষকে উস্কাচ্ছেন ভারত বিদ্বেষী হতে -ভারত গঙ্গার পানি দিচ্ছে বলেই এ দেশে ফসল হচ্ছে আবারো কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করলেন ভারতীয় হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। বাংলাদেশের কতিপয় তথাকথিত পানি বিশেষজ্ঞ ভারতপ্রেমী মানুষকে ভারতবিদ্বেষী করে তুলছে। টিপাইমুখ বাঁধকে কেন্দ্র করে তারা ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে শত্রুতায় পরিণত করতে উস্কানী দিচ্ছে। এরূপ নানা মন্তব্য করলেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ভারতীয় হাই কমিশনারের বক্তব্যের কোন জবাব দেননি। দক্ষিণ এশিয় কানেকটিভিটির নামে ভারতকে সড়ক, রেল, বিমান ও জলপথে ট্রানজিট দিলে এই অঞ্চলে মহাবিপ্লব ঘটে যাবে বলে মন্তব্য করেন সেমিনারের আয়োজক বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির আয়োজকরা।

তবে সেমিনারে বিশেষজ্ঞ আলোচকদের কেউ কেউ ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ালেও মানুষের কাছে বিশ্বাস অর্জন করতে না পারার অভিযোগ আনেন। কানেকটিভিটি হতে হবে সার্কভুক্ত সকল দেশের মধ্যে কোন বিশেষ একটি বা দুটি দেশের মধ্যে নয়। এশিয়ান হাইওয়েতে অন্তর্ভুক্ত ট্রানজিট, করিডোর বা ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে রাজনৈতিক ইস্যু তৈরির জন্য কেউ কেউ অভিযুক্ত করেন। তারা এটাকে নিছক অর্থনৈতিক ইস্যু বলে অভিহিত করে বলেন, এতে বাংলাদেশের বিপুল লাভ হবে। সংকীর্ণতা পরিহার করে বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি গতকাল রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সাউথ এশিয়ান কানেকটিভিটি : বাংলাদেশ পারসপেক্টিভ (দক্ষিণ এশিয়া যোগাযোগ-প্রেক্ষিত বাংলাদেশ)' শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতীয় হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। সেমিনারে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ, ড. আবুল বারাকাত ও সাবেক কূটনীতিক ড. এম রহমাতুল্লাহ। এছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সাবেক সচিব ড. মারগুব মোরশেদ, এফবিসিসিআই-এর সভাপতি আনিসুল হক ও ড. আমিনা মহসীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. একে আজাদ চৌধুরী।

এছাড়াও স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির সেক্রেটারি জেনারেল সুবিক কুশারী। অনুষ্ঠানে পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে নানা উস্কানী ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভুত বক্তব্যের জবাব শোনার জন্য উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও মিডিয়া কর্মীরা অপেক্ষা করলেও অনুষ্ঠানের সর্বশেষ প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ সম্পর্কে একটি বাক্যও বলেননি। তার মন্ত্রণালয়ের সার্ক ডেস্ক থেকে যে বক্তব্যটি লিখে দেয়া হয়েছে তিনি তাইই হুবহু পাঠ করে মুখ লুকিয়ে মিডিয়াকর্মীদের এড়িয়ে সোনারগাঁও হোটেল ত্যাগ করেন। পররষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। এ জন্য সার্কভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হলে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।

তিনি নাফটা, ইইউ এবং আশিয়ানের উদাহরণ দিয়ে বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে ওইসব সংস্থা দ্রুত এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু সার্ক তা হতে পারেনি। এজন্য আমাদেরকে আঞ্চলিক উন্নয়নের স্বার্থে ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। কানেকটিভিটির উন্নয়ন হলে এই অঞ্চলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি শতকরা ৮ ভাগে উন্নীত হতে পারে। এ প্রসঙ্গে সার্কভুক্ত দেশ শ্রীলংকা ও মালদ্বীপের সাথে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের সরাসরি কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, সাম্রাজ্যবাদ এই অঞ্চলের একটি বড় সমস্যা। এটা দমনের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমমর্যাদার ভিত্তিতেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। এই সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। বৃহত্তর দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের স্বার্থেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে যোগাযোগ বৃদ্ধির ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। সড়ক, রেল, নৌ ও বিমান পথে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা সঠিকভাবে স্থাপিত হলে তা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। ভারত বাংলাদেশের রেলওয়ের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। শিলং থেকে সিলেট হয়ে ঢাকা এই রুটে খুব শীঘ্রই বাস ও ট্রেন চলাচল করবে। এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার জন্য বর্তমান সরকারের মন্ত্রী পরিষদ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা সময়োপযোগী।

১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি চুক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত নির্বাচনের পর আমাদের প্রত্যাশা ছিল আরো কিছু দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি ইতোমধ্যে স্বাক্ষরিত হবে যাতে দু' দেশই লাভবান হবে। তিনি বলেন, গঙ্গার পানি প্রাপ্তি সম্পর্কে অন্তসারশূন্য তথ্য দেয়া হচ্ছে। গঙ্গার পানি ভারত দিচ্ছে বলেই বাংলাদেশে ধানসহ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ ইস্যুতে তথাকথিত কিছু পানি বিশেষজ্ঞ ভারতপ্রেমী বাংলাদেশী মানুষকে ভারত বিদ্বেষী করে তুলছে। অকূটনীতিকসুলভভাবেই তিনি উল্লেখ করেন যারা ট্রাক ভর্তি করে সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র পাঠাতে চেয়েছিল তারাই এখন জনগণের মধ্যে ভারতফোবিয়া তৈরি করছে।

ভারতকে শত্রু দেশ হিসেবে জনগণের মধ্যে ধারণা দিচ্ছে। শুধু তাই নয় ওই মহলই টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে অবাস্তব সব তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, ভারতবিদ্বেষী করে তুলছে। এই বাঁধ নিয়ে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে ১৯৭২ সালে ১৯৭৮ সালে আলোচনা হয়েছে। এটা নিয়ে বিগত ৪০ বছর ধরে আলোচনা চলছে। তারপরেও আমরা ওই এলাকা পরিদর্শনের আহবান জানিয়েছি।

এ ধরণের ড্যাম ভারতে চার হাজার রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়া এই প্রকল্পের অন্য কোন উদ্দেশ্যে নেই। দ্বি-পাক্ষিক সচ্ছল চুক্তির মতই টিপাইমুখ নিয়ে চুক্তি হতে পারে। এতে ভয়ের কিছু নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের হাজার হাজার ড্যাম রয়েছে।

সর্বজন সম্মত কোন আন্তর্জাতিক পানি নদী বা ড্যাম, বাঁধ নিয়ে কোন কনভেনশন নেই। অন্য স্টাইলের একটি চুক্তি আছে যা স্বাক্ষর করেছে মাত্র ১৭টি দেশ। বাংলাদেশ ও ভারত আন্তর্জাতিক নদী নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে লাভবান হতে পারে। পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, একটি মহল বাংলাদেশের জনগণের কাছে ভারতকে শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করতে সক্রিয়। অথচ বন্ধুত্বের কারণেই বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

দাদাগিরির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা ৫০ বছরের পুরনো শব্দ। এটা মুছে ফেলুন। বিগ ব্রাদারসুলভ আচরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই অঞ্চলে তাহলে একজন বিগ ব্রাদার আছে। ভারত বাংলাদেশের সাথে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। এফবিসিসিআই সভাপতি আনিসুল হক বলেন, ভারত আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা দিয়েছিল।

কিন্তু বিশ্বাসের জায়গাটি এখনো উন্নত হয়নি। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আশ্বস্ত করছেন কিন্তু ভারতের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে আমরা সুস্পষ্ট কোন বক্তব্য না পাওয়ায় নানা সন্দেহ সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বড় প্রতিবেশী দেশ ভারতের কাছ থেকে বিশ্বাসের আশ্বাস না পেলে ভাল কিছু করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কানেকটিভিটি শুধু সড়ক, রেল আর বিমান নয়- হতে হবে জনগণ টু জনগণ এবং সহযোগিতা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে। তবে দক্ষিণ এশিয়া প্লাটফরমের মধ্যেই তা হতে হবে।

ড. মারগুব মোরশেদ বলেন, কানেকটিভিটি বাংলাদেশকে বদলে দিতে পারে। এটা জরুরি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দক্ষিণ এশিয়া একটি অসংযুক্ত এলাকা। ড. আবুল বারাকাত দৈনিক সংগ্রামের নাম উল্লেখ করে বলেন, একটি মহল থেকে ট্রানজিট, করিডোর এবং ট্রান্সশিপমেন্টের বিরুদ্ধে একটি ফোবিয়া তৈরী করা হচ্ছে। উস্কানী দেয়া হচ্ছে।

খাদ্য, জ্বালানি, নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমনসহ বিভিন্ন বিষয়েই কানেকটিভিটি জরুরি। তাহলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। এটা কোন রাজনৈতিক ইস্যু নয়। অর্থনৈতিক ইস্যু। ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় পানি সমস্যা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে।

সেই সাথে পানি দূষিত হচ্ছে এবং জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পানি ব্যবস্থাপনা একটি বড় সমস্যা। এর মধ্যে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে পানির সমস্যাটি সবচেয়ে বেশী। বন্যার সময় সব পানি আমাদের দেশের উপর দিয়ে যায়। আর খরার সময় আমরাই সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়ি।

তিনি বলেন, গঙ্গার পানি চুক্তি হলেও আমরা এগিয়ে যেতে পারছি না। সমন্বিতভাবে কাজ না করার কারণে সার্কভুক্ত সকল দেশই আমরা এর ভুক্তভোগী। তাই কানেকটিভিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায় থেকে। পুরনো ধ্যান ধারণা মুছে ফেলে নতুনভাবে এগিয়ে যেতে হবে। টিপাই বাঁধ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিষয়টি এখনো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়।

সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সাথে বিশেষজ্ঞরাও যাবেন। সম্ভাব্য বন্যা সৃষ্টি সিলেট অঞ্চলে। আবার পানিশূন্যতাও সৃষ্টি করা হতে পারে। পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রে বিপর্যয় আসতে পারে। এমন প্রচারণা রয়েছে।

আন্ত নদী সংযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ড. মনমোহন সিং বলেছিলেন, এই অঞ্চলে এটা বাস্তবায়ণ হয়েছে। আমরা তার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা প্রয়োজন। সাম্য ও ন্যায় বিচার, সহমর্মিতা প্রয়োজন। বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা নেই।

ভারতে হলে তা ভারতেরই প্রয়োজন হবে। ভুটান এবং নেপালে পানি বিদ্যুতের সম্ভাবনা আছে। এটা হলে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে তারা রফতানি করতে পারে। তাতে আমরা লাভবান হবো। পূর্ব এশিয়ার চেয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী।

উপস্থাপিত প্রবন্ধে ড. এম রহমাতুল্লাহ বলেন, এই অঞ্চলে কেউ কাউকে সুযোগ দিতে চায় না। অথচ একে অন্যকে সুযোগ দিলে প্রচুর অর্থ উপার্জনসহ সবাই লাভবান হতে পারে। তিনি কলকাতা-ঢাকা-তামাবিল হয়ে এশিয়ান হাইওয়েসহ কানেকটিভিটির সড়ক যোগাযোগ চিত্র তুলে ধরে পরিসংখ্যান দেন যে এতে প্রচুর লাভ হবে। কলকাতা-রহনপুর-ঢাকা সিলেট-তামাবিল রেলযোগাযোগ এবং অন্য একটি রুট উল্লেখ করেন বীরগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে তামাবিল এবং আখাউড়া হয়ে আগরতলা। এক্ষেত্রেও অতিরিক্ত উপার্জনের চিত্র তুলে ধরেন।

এতে তিনি সড়ক পথের উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ড. আমিনা মহসিন বলেন, ফারাক্কা আমাদের সামনে বড় উদাহরণ যে কিভাবে ভারত পানিকে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। যারা ক্ষুদ্র তিন বিঘার করিডোর দেয়নি তাদেরকে কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে তামাবিল যাওয়ার করিডোর কিভাবে দেয়া যায় তা ভাবতে হবে। ড. একে আজাদ চৌধুরী বলেন, সব কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।

ভুল বোঝাবুঝি ঝেড়ে ফেলে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। রেল ও সড়ক যোগাযোগ এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। সুবিদ কুশারী বলেন, কানেকটিভিটি স্থাপিত হলে এই অঞ্চলে মহাবিপ্লব ঘটে যাবে। কারণ এই অঞ্চলে যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে তা আর কোথায়ও নেই। ফুটনোটঃ ভারত গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা বাঁধ চালু করার সময় একই রকম মিষ্টি কথা বলেছিল এবং ১৯৭৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে (১৯৭৫) পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কার ক্যানেল চালু করার চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।

কিন্তু এর মধ্যে তারা এই বাঁধ নিয়ে আর কোনো কথাও বলেনি এবং ১ জুন ১৯৭৫ থেকেই ফিডার ক্যানেল বন্ধ করেনি। ফারাক্কার পানি প্রত্যাহার শুরু করে দিয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধুর সরকারও তার অত্যধিক ভারত নির্ভরতার কারণে এর কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি। পরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকার ১৯৭৬ সাল থেকে অভিন্ন নদী গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আন্তর্জাতিকভাবে জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। সে উদ্যোগে আন্তর্জাতিক জনমত বাংলাদেশের অনুকূলে এনে ১৯৭৭ সালে ফারাক্কা ইস্যুটি জাতিসঙ্ঘে উত্থাপন করেন তখন অনন্যোপায় হয়ে ভারত বাংলাদেশের সাথে উভয় দেশের স্বার্থানুকূল একটি সম্মানজনক চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

সে চুক্তির গ্যারান্টি ক্লজ এই ছিল যে, কোনো পক্ষ চুক্তির ধারা লঙ্ঘন করলে অপর পক্ষ তৃতীয় কোনো মধ্যস্থতাকারীর দ্বারস্থ হতে পারবে। তিন বছরের জন্যও ওই চুক্তি সম্পাদিত হলেও জিয়াউর রহমানের মৃত্যু পর ভারত গায়ের জোরে একতরফাভাবে গঙ্গায় পানি প্রত্যাহার শুরু করে। আওয়ামী লীগ শাসন আমলে ১৯৯৬ সালে সরকার ভারতের সাথে তিরিশ বছর মেয়াদি একটি পানিচুক্তি স্বাক্ষর করে। অর্থাৎ সে চুক্তিতে গ্যারান্টি ক্লজ তুলে দেয়া হয়। ফলে চুক্তিবলে বাংলাদেশে যেটুকু পানি পাওয়ার কথা ভারত তা না দেয়ায় বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় কোনো শক্তির দ্বারস্থ হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।

এ কারণে ১৯৯৬ সালের চুক্তির পরও বাংলাদেশ চুক্তি মোতাবেক কখনো পানি পায়নি। ভারত খামখেয়ালি মতো গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এবারো শুষ্ক মৌসুমে ভারত বাংলাদেশকে চুক্তির চেয়ে ৮৩ হাজার কিউসেক পানি কম দিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও পানিমন্ত্রীর সাফাই ছিল, ফারাক্কায় যদি পানিই না থাকে তাহলে ভারত কোথা থেকে পানি দেবে। এতসব কারণেই ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন এ রকম ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার সাহস পেয়েছেন।

পানির ব্যাপারে সরকার নিশ্চুপ। টিপাইমুখের বাঁধ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খামোশ। দেশের ভারতানুগামী তথাকথিত সুশীলরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। সুতরাং টিপাইমুখের ব্যাপারেও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে সোচ্চার হয়ে উঠতে হবে। আর আত্মমর্যাদাবান জাতি হিসেবে কূটনৈতিক শিষ্ঠাচার লঙ্ঘনের দায়ে ভারতের এই 'অর্বাচীন' হাইকমিশনারকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য ভারত সরকারের কাছে অনড় দাবি জানানো হোক।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।