...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা,
যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...
বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ দিন পরীক্ষা দেয়ার পর পরই এক সপ্তাহ শেষ হতে না হতেই চাকরী পেয়ে গেলাম। তাও আবার টেলিকমে। র্যাংসটেলে। কিছুই জানি না কিছুই বুঝিনা। হাজির হলাম এক অন্য জগতে।
সেখানে আমার বস হলেন এক সেলিব্রেটি। জাকারিয়া স্বপন। যার লেখা পড়েছি। যার অটোগ্রাফের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি যখন আমাদের ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন তখন দাড়িয়ে থেকেছি। মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাথে তার সম্পর্ক বেশ ভালো।
দু’জন মিলে বই ও লিখেছেন। এই কারনে হয়তো তিনি প্রায়ই আমাদের ক্যাম্পাসে যেতেন। সেই সেলিব্রিটি আমার বস। আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো তার সাথে পুরো দুই বছর কাজ করার। কোন কাজ করতে দেরী হলেই তিনি যেটা বলতেন, জায়েদ তোমাকে র্যাংগস ভবনের চৌদ্দ তলা থেকে ফেলে দেবো।
সেই ভয়েই কিনা কে জানে, আমি মনে হয় ভুল টুল তেমন করতাম না। তবে তার যে জিনিসটা সবচেয়ে ভালো লাগতো, এখনো লাগে, সেটা হলো তার বন্ধুত্ব আর তার কাজ শেখানোর কৌশল। খুব ছোট্ট একটা কাজ দিয়ে শুরু করিয়ে তিনি হয়তো দেখা যাবে খুব বড় একটা দায়িত্ব দিয়ে বসে আছেন। র্যাংসটেলে তিনি সম্পূর্ণ নিজেদের তৈরী একটা বিলিং সিস্টেম দিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। আমার সৌভাগ্য আমি সেই বিলিং সিস্টেমে কাজ করতে পেরেছি।
আমি এখন মোটামুটি বিশ্ববিখ্যাত একটি আন্তর্জাতিক টেলিকম বিলিং ভেন্ডরে কাজ করি। পৃথিবীর ত্রিশটির মতো অপারেটর আর বিশটির মতো দেশে যাদের বিলিং সিস্টেম চলে। তাই টেলিকম বিলিং এর অনেক কিছুই আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার মতে আমাদের র্যাংসটেলের সেই বিলিং সিস্টেম কোন অংশে খারাপ ছিলো না।
একটি মোবাইল কোম্পানিতে প্রতিদিন অগনিতক কল হয়।
পোস্টপেইড সিস্টেমে সেই কলগুলোকে ঠিকমতো চার্জ করাই একটি বিলিং সিস্টেমের কাজ। অবশ্য বিলিং সিস্টেমের আরো অনেক কাজ আছে। যেমন কেউ যখন একটি মোবাইল সিম কিনে থাকে, তাকে একটা ফর্ম ফিলআপ করতে হয়। যেটাকে আমরা সাবস্ত্রিপসন ফর্ম বলে থাকি। একজন কাস্টমার রিপ্রেজেন্টেটিভ বা সেলস কর্মচারী নেই ডাটা গুলোকে একটা অটোমেটেড সিস্টেমে এন্ট্রি দিয়ে থাকে।
এই ডাটাগুলো থেকেই গড়ে উঠে একটা কাস্টমার ডাটাবেজ। যেখানে প্রতিটা মোবাইল সিম হোল্ডারের তথ্য থাকে। বিলিং সিস্টেমের কাজ হলো এই সুযোগটা করে দেয়া। একজন কাস্টমারের ডাটা এভাবে এন্ট্রি দেয়ার সাথে সাথে আরো একটা জিনিস করা হয়, সেই কাস্টমার কোন প্রোডাক্টটি নিচ্ছে, সেই তথ্যটিও দিয়ে দেয়া হয়, আর সেই সাথে সাথে একটি অটোমেটেড সিস্টেম সেটাকে এক্টিভ করে। এক্টিভ করা মানে হলো, সেই নাম্বারটিকে কথা বলার উপযোগী করা
এরিকসন,হুয়াউই,সিমেন্সের মতো কোম্পানীগুলো থেকে মোবাইল কোম্পানীগুলো ইন্ফ্রাস্টাকচার গুলো কিনে থাকে।
বিলিং সিস্টেমের কাজ হলো এন্ট্রি দেয়ার পর এই ইন্ফ্রাস্টাকচারে নাম্বার গুলোকে কল করার উপযোগী করা। এবং যদি কোন কাস্টমার তার লিমিটের চেয়ে বেশী বলে থাকে তাহলে তার নাম্বারটিকে কথা বলতে না দেয়া।
বিলিং সিস্টেমের আরো একটি কাজ হলো কাস্টমার কেয়ার ইউনিটগুলোকে সাহায্য করা। একজন কাস্টমার যখন হেল্পলাইনগুলোতে ফোন করে কোন একটি সেবা চেয়ে থাকে, তখন সাথে সাথে সেই কাস্টমার কেয়ার রিপ্রেজেন্টিটিভের সামনে কম্পিউটার স্ক্রীনে সেই কাস্টমারের যাবতীয় তথ্য সয়ংক্রীয়ভাবে চলে আসে। তখন সেখান থেকে কাস্টমার কেয়ার রিপ্রেজেন্টেটিভ কাস্টমারকে সেবাটি যাতে প্রদান করতে পারে এবং তার যেন একটা রেকর্ড থাকে, তারও ব্যাবস্থাও করে থাকে বিলিং সিস্টেম গুলো।
বিলিং সিস্টেমের আরো একটি কাজ হলো সেলস, মার্কেটিং, ফিনান্স এইসব ইউনিটগুলোকে বিলিং সিস্টেমের সাথে যুক্ত করা। এছাড়া সময়মতো প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে মার্কেটিং ইউনিটকে সাহায্য করা, যাতে নতুন নতুন মার্কেটিং প্ল্যান করা যায়।
একটি বিলিং সিস্টেমের কাজ এতোই ব্যাপক যে একটি লেখায় তার সমস্ত কাজকর্ম বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তবে এর প্রধান কাজই হলো প্রতি সেকেন্ডে লাখ লাখ তথ্য নিয়ে কাজ করা আর সেই সাথে অন্যান্য সিস্টেমের সাথে ইন্টিগ্রিটি বজায় রাখা। সবচেয়ে বড় যেটা, তা হলো নিঁখুত ভাবে কাজ করা।
কোটি কোটি তথ্যকে সঠিকভাবে প্রসেস করা।
আমার সৌভাগ্য যে এখন পর্যন্ত মোট চারটি মোবাইল কোম্পানীর বিলিং সিস্টেমে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। দু’টো দেশে, আর দু’টো দেশের বাইরে। তবে দুঃখের কথা আমাদের দেশের নিজেদের তৈরী বিলিং সিস্টেম তেমন নেই। যেটা আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের আছে।
আমাদের দেশের মোবাইল কোম্পানীগুলো মূলত ভারত,চীন বা দুবাই বেসড বিলিং সিস্টেম গুলো ব্যাবহার করে থাকে। আর যেসব কোম্পানীগুলোতে আমাদের দেশেরই অনেকে কাজ করছে। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন সত্যিকারেই স্বপন স্যারের স্বপ্ন পূরন হবে, আর আমাদের দেশও একদিন এমন বিলিং সিস্টেম তৈরী করে নিজেরা তো বটেই , অন্য সব দেশেও তা বিক্রী করতে পারবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।