ঝা ঝা ঝা
বিশ্বশান্তির জন্য প্রার্থনা করার একটা রীতি জাপানে প্রচলিত আছে। কিছু মধ্যবয়সী মহিলা টোকিওর রেলস্টেশন গুলোর বাইরে দাড়িয়ে কখনো কখনো তাদের সাথে সেই প্রার্থনা সভায় আপনাকে যোগ দেবার আমন্ত্রন জানাতে পারে। গত রবিবার টোকিওর ইকেবুকুরু তে শাহবাগ আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য অনেকেই সমবেত হয়েছিল। সেখানেই এক মধ্যবয়সী জাপানীজ মহিলা আমাদের কয়েকজনকে দেখে এগিয়ে এসে বিশ্বশান্তির জন্য প্রার্থনা করার আমন্ত্রন জানায়। মহিলার এই আমন্ত্রনের জবাবে আমাদের একজন বলল, ক-তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার তুই রাজাকার।
মহিলা যতই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিশ্বশান্তির কথা বলেন, সে প্রতিবারই উত্তর দেয় ক-তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার তুই রাজাকার। বার বার ক-তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার তুই রাজাকার বলার ধরন দেখে মহিলা হয়ত ভাবলেন যে আমাদের দেশে প্রার্থনা করার জন্য এই বাক্যটিই ব্যবহার হয়। তাই সে অতি সযতনে সেটি মুখস্ত করার চেস্টা শুরু করলেন- "ক-তে কাদে মোলা, তুই রাজাকা তুই রাজাকা"। সেই মহিলা তার সেদিনের প্রার্থনা ক-তে কাদে মোলা, তুই রাজাকা তুই রাজাকা দিয়ে শুরু করেছিল কিনা জানা যায়নি তবে বিশ্বশান্তির জন্য এবং বাংলাদেশর শান্তির জন্য ক-তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার তুই রাজাকার স্লোগান আজ বিশ্ববাংগালীর প্রানের স্পন্দনে মিশে গেছে। টোকিওর ইকেবুকুরুতে একটা শহীদ মিনার আছে।
সেখানেই শত কর্মব্যস্ততার মাঝে বাংলাদেশিরা মিলিত হয়েছিল ৭১ এর ঘাতক হায়েনাদের ফাসির দাবি নিয়ে। গত পাঁচ বছরের জাপান জীবনে কোনদিন কোন জাপানীজ কে স্লোগান দিতে দেখিনি, এই ব্যপারটার সাথে ওরা সেভাবে পরিচিত না। এখানে সমাবেশ করার আমাদের কোন অনুমতিও ছিল না। শুধুই প্রানের স্পন্দনে আমাদের এই জমায়েত, আর এই স্পন্দনে "জয় বাংলা" হবে না তাতো হয় না। জয় বাংলা, ৭১ এর হাতিয়ায় গর্জে উঠুক আরেকবার, পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা, শাহবাগ দিচ্ছে ডাক-রাজাকার নিপাত যাক, ফাসি ফাসি ফাসি চাই-রাজাকারদের ফাসি চাই স্লোগান গুলি তাই আর থামানো গেল না।
ছোট ছোট চোখের জাপানিজ গুলো বড় বড় চোখে উপলব্ধি করার চেস্টা করল আমাদের প্রানের উচ্ছাস, আশে পাশের বড় বড় দালানগুলো অবাক হয়ে প্রতিধ্বনিত করল আমাদের হৃদয়ের ভাষা হৃদয়ের দাবি, এত উচ্ছাস এত জাগরন কে কবে দেখেছে কোথায়। ক-তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার তুই রাজাকার স্লোগানের যেই পরশমনি তাতে টোকিওর আকাশে বাতাসেও ছড়িয়ে গেল- তুই রাজাকার তুই রাজাকার। স্লোগানের এই রাজ্যে হতদরিদ্র জাপানিজগুলোর জন্য বড়ই মায়া হল। ওরাতো কখনো আমাদের মত করে গর্জে উঠতে পারে না "জয় বাংলা " মত স্লোগান নিয়ে। লাখো শহীদের প্রানের স্পন্দন ওরা পায় না।
ইট কাঠের রোবোটিক জীবন ওদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে এই পরশমনি যেই পরশমনি নিয়ে লক্ষ জনতা শাহবাগে সমবেত হতে পারে, যেই পরশমনি তে "জয় বাংলা" দিয়ে সকাল দুপুর আর রাতের আহার শেষ হয়, যেই পরশমনিতে এক লাকি আক্তার গর্জে উঠে লক্ষ নারীর কন্ঠ হয়ে, যেই পরশমনিতে জাহানারা ইমাম জ্বেলে দিতে পারেন অনির্বান শিখা, যেই পরশমনিতে বিশ্ব মানচিত্রের আনাচে কানাচে গর্জে উঠে ৭১ এর হাতিয়ায়। কী সৌভাগ্য আমাদের, আমরা জন্মেছি সেই সোনার বাংলাদেশে। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।
বড় মায়া হয়, বড় মায়া হয় যাদের প্রানে বাঁজতে পারে না জয় বাংলার এই বজ্রনিনাদ। ওরা গৃহপালিত, ঐ হায়েনা রাজাকারেরা তাদের অভিসপ্ত জীবনের বোঝা লাঘবে তিলে তিলে তৈরি করছে এদের, এরাই আজকের কিছু পথভ্রস্ট তরুনের দল যারা শিবির করে।
অভিসপ্ত রাজাকারদের দায় নিয়ে এরা আজ মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে না, প্রানের স্পন্দন হারিয়ে এমনই কিছু তরুন ঢুকে যাচ্ছে অন্ধকারের চোরাগলিতে, শাহবাগ ওদের কাছে এক মূর্তমান আতংকের নাম, জয় বাংলায় ওরা ভীত হয়ে লেজ গুটিয়ে পালায়, ওরাই আবার ধর্ম বিক্রি করে খায়, মিথ্যার বেসাতি দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে ধর্মকেও করে কলংকিত। কিন্তু ওরা জানে না যে এদের প্রভুদের অধর্ম ওদেরকে করেছে অভিসপ্ত, দেশমাতার সাথে প্রতারনার ফল ওরা বয়ে বেড়াচ্ছে, জাতি কখনোই ওদের ক্ষমা করবে না, ক্ষমা করবে না ওসব হায়েনাদের হাতে তৈরি এইসব নব্য রাজাকারদের। তাই ফিরে এসো তরুন, ফিরে এসো প্রানের স্পন্দনে, ফিরে এসো ঐসব ক্ষুদ্র স্বার্থচিন্তার বৃত্ত থেকে, ফিরে এসো ঐ অভিশপ্ত জীবনের ছায়া থেকে। অন্যথায় ইতিহাস তোমাদের ক্ষমা করবে না, জাতি তোমাদের ক্ষমা করবে না যেমন ক্ষমা করেনি তোমাদের পূর্ববর্তীদের।
আমি জানাতে চেয়েছিলাম শাহবাগের সাথে সংহতি জানিয়ে কিভাবে জাপানের বাংগালিরা মিশে গেছে শাহবাগের চেতনায়, তারই কিছু খবর।
টোকিও শহীদ মিনারের সামনে লাল সবুজের আমার সোনার বাংলা
টোকিও শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধনের একাংশ
টোকিও শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধনের একাংশ
টোকিও শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধনের একাংশ
জাপানের সাইতামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশিদের সংহতি সমাবেশ
জাপানের সাইতামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশিদের সংহতি সমাবেশ
জাপানের সাইতামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশিদের সংহতি সমাবেশ
জাপানের সাইতামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশিদের সংহতি সমাবেশ। প্রানের টানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলেই ছোটে এসেছিলেন রাজাকারদের ফাসির দাবি নিয়ে।
জাপানের গিফু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশিদের সংহতি সমাবেশ। প্রানের টানে ছুটে আসা।
জাপানের কুমামতো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশিদের সংহতি সমাবেশ।
প্রানের টানে ছুটে আসা।
জাপানের মিয়াজাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশিদের সংহতি সমাবেশ। জাপানের এক প্রান্তে অল্প কজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীও ভুলে যাননি রাজাকারদের ফাসির দাবিটি জানাতে। স্যলুট সবাইকে।
ছবিগুলো ফেসবুকের পেজ থেকে নেয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।