আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশের বাইরে দেশ

...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা, যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...
দেশের বাইরে গেলে কি হয়। মানুষজনকে দেখতাম দেশের বাইরে যাচ্ছে, থাকছে, ফেসবুকে সুন্দর সুন্দর জায়গার ছবি দিচ্ছে। আমি দেখতাম, আর মনে মনে ভাবতাম, আহারে কতই না সুখে আছে। আর জায়গাটা যদি হয় ইওরোপ আমেরিকা, তাহলে তো কথাই নেই। কত রকম সুবিধা সেখানে।

বন্ধু বান্ধবদের দেখতাম সর্টস্কার্ট পড়া সহপাঠিনীর সাথে ধরাধরি করে ছবি তুলে পাঠাচ্ছে। আহারে কতই না আনন্দের জায়গা সেসব। সেসব জায়গায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয় নি। তবে খুব অল্পসময়ের জন্য ছিলাম দিল্লীতে, আর এখন প্রায় মাস চারেক বা তার কিছু বেশী সময়ের জন্য আছি কালো মানুষের দেশে। নাইজেরিয়াতে।

এই দেশটাতে আসার আগে কতরকম ভয় কাজ করেছে। প্রথমেই আমাদের ধারনা দেয়া হয়েছে এখানে অসুখ বিসুখের ছড়াছড়ি। এমন কি ভিসা নেয়ার জন্যও ইয়োলো ফিভার নামে একটা অসুখের জন্য ভ্যাকসিনেশনের সার্টিকেট দেখাতে হয়েছে। এখানে অসুখ বিসুখ আছে। ভালোই আছে।

আজই আমার এক সহকর্মীর সাথে দেখা হলো যে বেচারা ম্যালেরিয়ায় ভুগছে। এখানে এই রোগটা ভালো মতোই আছে। সাবধানে থাকতে হচ্ছে তাই। দ্বিতীয় যে ভয়টা দেখানো হয়েছে, সেটা হলো এখানে নিরাপত্তা নেই। সবসময় নাকি সাথে একজন গার্ড নিয়ে চলতে হয়।

যার হাতে একে ফর্টি সেভেন থাকে। আগে নাকি এমনই অবস্থা ছিলো। এখন একটু ভালো। তাই এখন পর্যন্ত এমন কোন গার্ড নিয়ে চলতে হচ্ছে না। যেখানে যাচ্ছি অফিসের গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি, এটুকুই সিকিউরিটি।

আমি আছি লাগোস সিটিতে। এটা আগে নাইজেরিয়ার রাজধানী ছিলো। এখন কেবল স্টেট ক্যাপিটাল। মূল লাগোস সিটিতে যাওয়া হয় নি এখনো। তবে লাগোসের কোল ঘেষে আটলান্টিকের বুকে মাটি ভরাট করে কিছু দ্বীপ বানানো হয়েছে।

তার একটা হলো ভিক্টোরিয়া আইল্যান্ড। আমি আছি সেখানেই। পাশেই আছে বানানা আইল্যান্ড। এখানকার লোক জন এই দ্বীপগুলোকে বলে আইল্যান্ড, আর মূল শহরকে বলে মেইনল্যান্ড। এখানকার মানুষজন সবই দেখি ইংরেজীতে কথা বলে।

কারন এখানে অনেক ভাষা। তাই ইংরেজীটাকেই তারা হয়তো কমন ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে নিয়েছে। কাল মসজিদে জুমআর নামাজের খুৎবা শুনলাম ইংরেজীতে। তবে এখানকার ইংরেজী উচ্চারণ বোঝাটা একটু কঠিনই। আমার বেশ কষ্ট হয়।

এখানকার মানুষজন সব দৈত্তাকৃতি। ইয়া লম্বা আর কালো, এক একজন মাসলম্যান। সবাই ওয়েষ্টার্ন কালচারে চলে। এদেরে নিজস্ব একটা পোষাক হলো আমাদের পাঞ্জাবী পাজামার মতো দেখতে রঙচঙ মার্কা একটা পোষাক। সেটাতে যে যত রঙ চাপাতে পারে তাই চাপায়।

মেয়েরা বেশীর ভাগই সার্ট,প্যান্ট,স্কার্ট পরে। আমারা আমাদের কোম্পানীর মোট এগারোজন আছি এখানে। তিনজন বাংলাদেশ থেকে, দুজন ইন্ডিয়া, একজন পাকিস্তানী, একজন সুদান, এক কুয়েত,একজন উগান্ডা আর দু'জন লেবানন। আরো অনেকে আছে, তবে তারা অন্য অফিসে কাজ করে। আমি বাংলাদেশী, এটা বলতে সত্যিকারের গর্ব বোধ করি।

বাংলাদেশ সম্পর্কে বলতে পছন্দ করি। এগারো জনের মধ্যে অনেকেই অফিসের কাজে বাংলাদেশে গিয়েছিলো কোন না কোন সময়। বিশেষ করে বাংলালিংক বা ওয়ারিদের কাজে। তারা যখন তাদের বাংলাদেশ সফরের কথা বলে, তখন খুব ভালো লাগে। কারন তার বেশীর ভাগই থাকে প্রসংশা।

বাংলাদেশে সহজেই তারা মার্কেটে যেতে পারে, খাবারের কোন সমস্যা হয় না, যেটা এখানকার প্রধান সমস্যা। দেশের প্রশংসা শুনলে খুব ভালো লাগে। তবে মুখটা চুন হয়ে যায় যখন তাদের সামনে খেলা দেখি আর বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে যায়। অফিস থেকে যখন হোটেলে ফিরি, দেশে তখন মাঝরাত। এরপর একলা রুমে বসে ভাবি একদিন আমি আবার দেশে ফিরবো।

ঢাকার ট্রাফিক জ্যামে বসে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে বলবো, 'এই দেশে মানুষ থাকে?'। লোডসেডিং এ রাত পার করে বলবো,'নাহ, এ দেশে আর থাকা যাবে না;। তারপরও আমি বলবো আমি বাংলাদেশে থাকতেই পারলেই খুশি। দেশের বাইরে যেয়ে মানুষ কি করে। যত সুখেই থাকুক না কেন, আমার মনে হয় তার মনের সবটুকু জুড়ে থাকে তার দেশ।

একা বসে থাকি, প্রিয় মুখটা ভেসে উঠে চোখে, ভেসে উঠে ঢাকা শহর আর সবকিছু ছাপিয়ে আমার বাংলাদেশ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.