আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিমজ্জন

নভেরা হোসেন

অদ্ভুত একটা ব্যাপার। আবার অদ্ভুতও না। এরকম তো আগেও ঘটেছে। কিন্তু প্রত্যেকবারই নতুন। গন্ধটা নতুন, রংটা নতুন, গায়ের ভেতর যে শিরশিরে অনুভূতিটা জাগছে সেটা নতুন।

আবার নতুনও নয়। দীর্ঘদিন বাসে যেতে যেতে নিরানন্দ যে ক্লান্তিটা চেপে ধরে মনে তার একঘেয়েমি থেকে বের হতে পারলে যেমন সতেজ লাগে, এ যেন তেমনই এক ঝড়ো হাওয়া। আস্তে আস্তে নরম চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে, মুখের উপর এসে পড়েছে এলোমেলো কিছু ছায়া। হাঁসেরা ডানা ঝাপটিয়ে পানি সরাতে শুরু করলে মোমের মত গলে পড়ে নিস্তেজ হাসি। কতকাল দক্ষিণী হাওয়ার স্রোতে ভেসে ভেসে উড়িয়েছি ম্যাজেন্টা ঘুড়ি।

তখনও এরকম হিম ঝরে পড়তো উদ্বেলিত হাওয়ার সাথে। সেই সব বহুকাল আগের কথা। তবু যেন আনকোরা। হৈমন্তিক শস্যের মতো মৌ মৌ গন্ধ নিয়ে এসে দাঁড়ায় শীতের শুরুতে। কখন থেকে যে ব্যাপারটা ঘটতে শুরু করল তা ঠিক মনে করতে পারিনা।

হয়তো কোনো এক সন্ধ্যায়, তখন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল বাসন্তিক গন্ধ। বুনো নয় বেশ মিষ্টি মাধবীলতার মতো মৃদু গন্ধ। নাটকের শেষ দৃশ্যে অভিনয় করবার জন্য মঞ্চে পৌঁছাতেই সব আলো গেল নিভে । ঘূর্ণির মতো পাক খেতে খেতে কালবৈশাখিটা উড়িয়ে নিয়ে গেল মঞ্চের উল্টো পাশে। বিপন্ন সেই মুহুর্তে এক টুকরো খড়কুটোর মতো মনে ভেসে উঠেছিল শান্ত সৌম্য দুটি চোখ।

যার নির্লিপ্ততা স্মরণ করবার মতো। হয়তো তখনকার মুহুর্তটা অতিক্রান্ত হয়ে গেলে আর তার দেখা মিলত না। কখনোই না। তার প্রয়োজনও হয়তো থাকতো না। কিন্তু সেই বিক্ষুব্ধ সন্ধ্যায় রিকশাটা চলছিল।

মসৃণ বাতাসে বয়ে যাচ্ছিল স্রোতহীন জলকেটে। তারপর বহুদিন সূর্যের রং ছিল কমলা, ঠিক কমলালেবুর মতো। গন্ধটাও হৃদয়গ্রাহী। তোমার নির্বিকার চোখেও দেখা দিয়েছিল উৎসবের রং। দিনগুলো কাটছিল আরবি ঘোড়ায় চেপে বাধা-বন্ধনহীন।

কিন্তু কিছুকাল যেতেই মুখ থুবড়ে খানা খন্দে পড়ল সে ঘোড়া। ঝড়ের রাতে রঙিন আলোটা যেমন আকস্মিক জ্বলে উঠেছিল নিভেও গেল ধুপ করে। অদ্ভুত ঘটনারা যেমন তাক লাগিয়ে দেয়, তেমন নাটকীয় ভঙ্গিতে দ্রুত নেমে গেল মঞ্চের পর্দা। নাটক শুরু হওয়ার প্রারম্ভেই সম্ভাবনাগুলো চুপসে গেল। এটা কি পরিচালকের অতিমাত্রায় সাবধানতা নাকি নির্বুদ্ধিতা বোঝা গেল না ঠিক, বোঝার উপায় ছিলনা।

হয়তো চরিত্ররা আরও কিছু বলত। তাদের অসহিষ্ণুতা মঞ্চের কানা উপচিয়ে পড়ত। নয়তো হিম হয়ে আসতো রাতের বাতাস। স্ক্রিনে বড় বড় অক্ষরে লেখা থাকত ঘটনার অবশেষ। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটল না।

অর্জুনের তীর শুধু গেঁথে রইল দ্রৌপদীর স্মৃতিতে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।