দ্য ইনভিজিবল
ক্ষ্যাত গ্রুপের বিশিষ্ট ক্ষ্যাত ব্লগার ক-খ-গ আমায় বলেছেন, ক্ষ্যাত গ্রুপের সদস্য হতে হলে আমি যে একটা ক্ষ্যাত- সেটা প্রমান করতে হবে। ভাইরে প্রমান আর কী করবো! পড়ে দেখেন।
যে মেয়েটি আমায় চোখ মেরেছিল সে গল্পটার সূত্র ধরে কয়েকটা ক্ষ্যাত হবার গল্প বলি।
১
ঢাকায় রওয়ানা হয়ে বাসে চেপে বসলাম। গন্তব্য বন্ধুর বাসা।
সুপার নাম দেখে একটা বাসে উঠলাম। বাস চলছে। রওয়ানা হয়েছিতো হয়েছিই। আর ঢাকায় পৌছানোর নাম নাই। এদিকে বন্ধু আমার প্রতীক্ষায় অস্থির।
নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘন্টা পর ঢাকায় পৌছালাম। বন্ধু ব্যস্ত হয়ে বললো, এত দেরী করলি যে? পথে কোন সমস্য হইছিল?
বললাম, না।
কোন বাসে উঠছস?
বাসের নাম বলতেই বন্ধু নাক উচিয়ে বললো, শালা ক্ষ্যাত!!
সেই শুরু....!
অতপর: প্রতিনিয়তই এই বৈষ্ণুবী শহরে ক্ষ্যাত হয়ে চলেছি।
২
ক্যাম্পাসের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে উঠলাম। ইতোমধ্যে আমি আশংকার সাথে লক্ষ্য করলাম ক্লাসের এক সহপাঠিনী আমাকে নিয়মিত লক্ষ্য করছেন।
থাক সে কথা। অনেকদিন চুবচুব করে মাথায় তেল দিইনা। ব্যস্ত এই নগরে চুল হাওয়ায় উড়ানোর জন্য শ্যাম্পু নামক পদার্থের দারস্থ হয়ে চুবচুব তেল দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। তো সেদিন মাথায় চুবচুব তেল দিয়ে কাসে প্রবেশ করলাম। দেখলাম সেই সহপাঠিনী আমাকে আপাদ-মস্তক পরখ করছেন।
কাস থেকে বেরুনোর পর সহপাঠিনী পাশ দিয়ে বাতাসে ভাসিয়ে বলে গেল ‘গেয়ো ক্ষ্যাত‘। আমি মাথার চুলের তেল হাত দিয়ে চেখে নিয়ে শুষ্ক মুখে মাখলাম। নিজেকে পুরাপুরি ক্ষ্যাত বানিয়ে নিলাম।
৩
আরেকদিনের ঘটনা। জীবনে কমলাপুর স্টেশনের নাম অনেক শুনেছি, মাগার দেখি নাই।
তাই আরেক বলদকে নিয়ে চললাম কমলাপুর ইস্টিশন পরিদর্শনে। সেই বলদও জীবনে কমলাপুর ইষ্টিশন দেখেনাই। ফুরৎ করে ঢুকে গেলাম ভিতরে। আহারে কী সুন্দর! চারপাশ অনেণ ঘুরে-ফিরে দেখে বেরুবো। এমন সময় সাদা এফ্রোন পরিহিত দু’জন লোক আমাদেরকে গেইটে আটকিয়ে দিল।
বললো, টিকেট!
আমরাতো সাত আকাশ থেকে পড়লাম। কিসের টিকেট! আমরাতো ট্রেন ভ্রমন করিনাই!
কোমরের বেল্টে বিশেষ কায়দায় ধরে ঐ দু’জন আমাদের দুই বলদকে একটা অন্দর মহলে নিয়ে গেল। আটকিয়ে রেখে আমাদের বিচার করলো। আমাদের অপরাধ আমরা বিনে টিকেটে ইস্টিশনে প্রবেশ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছি। এখন আমাদের জরিমানা ১০০০টাকা।
পকেটে আছে ১২০০টাকা। কাঁচুমাচু করে বের করতে দ্বিধা করছি। এমন সময় একজন খপ করে পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিল। সবগুলো নিয়ে গেল।
অর্ধ-চন্দ্র দিয়ে বের করার আগে একজন বলে উঠলো, ক্ষ্যাত কোনাকার! যা ভাগ!!
আমরা ভেগে গেলাম!
৪
এবার যে মেয়েটি আমায় চোখ মেরেছিল তার গল্প বলি।
ঢাকায় আমার এক দুর-সর্ম্পকের মামা রয়েছেন। জীবনে কোনদিন তাদের বাসামুখি হইনি। মামা ছাড়া তাদের পরিবারের কাউকেই চিনিনা। মায়ের অনেক পীড়াপীড়িতে একদিন সেই দুর-সর্ম্পকের মামার বাসামুখি রওয়ানা দিলাম। ঠিকঠিক বাসা খুজে কলিং বেল চাপতেই এক ষোড়শী দরজা খুলে দিয়ে আগমনের হেতু জানতে চাইলেন।
পরিচয় দিতেই উল্লাস ফেটে পড়লেন যেন। বলতে লাগলেন, আপনাদের কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু দেখি নাই। আসেন আসেন।
ষোড়শী পথ দেখিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গেলেন।
বেশ গোছানো ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলাম। ষোড়শী জানালেন, মামা-মামী কেউ বাসায় নেই তবে খুব তাড়াতাড়িই এসে পড়বেন। আমিও আশ্বস্থ হলাম। ঠিক এমন সময়ই ঘটলো সেই ভয়ংকর ঘটনাটা। ষোড়শী কাজিন আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে খুব সুন্দর করে চোখ টিপে দিলেন।
প্রথমটায় আমি বুঝতে পারিনি। ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় লাগলো। ভাবলাম আমার দৃষ্টি বিভ্রম। আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম। অন্য কথা প্রসঙ্গে আবার ষোড়শীর দিকে তাকালাম।
তিনি আবারো আমাকে চোখ টিপে দিলেন। আমার কানে দিয়ে ধোয়া বেরুতে লাগলো। এ আমি ভুলতো দেখছিনা। এত সুন্দর একটা মেয়ে আমাকে কিনা চোখ টিপলো। জীবনে প্রথম এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরী করলাম না।
মামাতো বোন যেহেতু আমাকে চোখ টিপছে তাই আমি তার দিকে মুচকি হেসে আরো সুন্দর করে চোখ টিপে দিলাম। ঠিক তখনি একটা বজ্রপাতের মত শব্দ হলো। মেয়েটি রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে প্রচন্ড চিৎকার দিয়ে উঠলো।
আপনাকে আমি ভদ্র ভেবেছিলাম। আপনিতো দেখি একটা অভদ্র ছেলে!
অসভ্য কোথাকার! বের হয়ে যান আমাদের বাড়ী থেকে! আর কনো এই বাসায় আসবেননা।
আমি পুরা টাশকি খাইয়া কী করুম বুঝে উঠতে না পেরে মাথা নীচের দিকে রাইখা মামাদের বাসা থেকে বের হয়ে চলে আসলাম। আর কখনো ওই মুখো হইনি।
পরে শুনছি মামাতো বোনের নাকি চোখে একটা সমস্যা আছে। এমনি এমনি চোখ উঠানামা করে। কেউ প্রথমবার দেখলে মনে করে চোখ টিপছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।