আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অমায়িক সংখ্যা এবং থাবিত ইবনে ক্বুররা'র সংখ্যা

শ্রদ্ধা আর মমতাই তোমাকে জয়ী করতে পারে; তুমি তোমার জ্ঞান প্রয়োগ কর।
"কে আমার বন্ধু?" "বন্ধু হচ্ছে এমন একজন যে আসলে অন্য আমি, যেমন হচ্ছে গিয়ে ২২০ ও ২৮৪। " "সংখ্যারা আবার কীভাবে বন্ধু হয়! ২২০ ও ২৮৪ এর ব্যাপারটিই বা কী?" "আচ্ছা, শোনো তাহলে। ২২০-এর প্রকৃত উৎপাদকগুলি (proper factor) হল ১, ২, ৪, ৫, ১০, ১১, ২০, ২২, ৪৪, ৫৫, এবং ১১০। আর ২৮৪-এর প্রকৃত উৎপাদক হল ১, ২, ৪, ৭১, এবং ১৪২।

ঠিক তো?" "হ্যাঁ। " "এবার দেখ, ১+২+৪+৫+১০+১১+২০+২২+৪৪+৫৫+১১০=২৮৪ এবং ১+২+৪+৭১+১৪২=২২০। আত্মায় আত্মায় মিলন না হলে কি এরূপ মিল সম্ভব? এ তো মানিক জোড়ের নমুনা! আর তাই ২২০ ও ২৮৪ হচ্ছে অমায়িক জোড় সংখ্যা (amicable pair)। অমায়িক সংখ্যার ইতিহাস বেশ সুপ্রাচীন—বিশেষ করে যাদুবিদ্যা ও জ্যোতিষী শাস্ত্রে, ভালবাসার আরক (love potion) ও তাবিজ-কবজ (talisman) তৈরিতে। বাইবেলের কিছু কিছু ভাষ্যকারের মতে, জেনেসিসের (Genesis) ২৩:১৪ বাক্যটিতে অমায়িক সংখ্যার ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যেখানে বর্ণিত আছে ইয়াকুব কর্তৃক তাঁর ভ্রাতা ঈসাউকে ২২০টি ছাগল উপহার দেয়ার কথা।

নব্য-প্লেতোনিয় দার্শনিক আয়ামব্লিকাস (আনু. ২৫০-৩৩০ খ্রি.)-এর মতে, পীথাগোরাস অমায়িক সংখ্যার ব্যাপারে অবগত ছিলেন। পীথাগোরিয়ানরা এদের উপর নানা রহস্যময় অতীন্দ্রিয় গুণ আরোপ করত বলে জানা যায়; তারা অবশ্য ২২০ ও ২৮৪ জোড়টিকেই কেবল চিনত। অমায়িক সংখ্যা বের করার সাধারণ সূত্রটি সর্বপ্রথম উদ্ভাবন করেন থাবিত ইবনে ক্বুররা (৮২৬-৯০১ খ্রি.), আনুমানিক ৮৫০ সালে। থাবিত বনু মুসার ভ্রাতৃত্রয়ের একজন, মুহাম্মদ ইবনে মুসা ইবনে শাকিরের আমন্ত্রণে বৃত্তীয় নগরী বাগদাদে গমন করেছিলেন, বাইতুল হিকমা তথা জ্ঞানের নিবাসে (House of Wisdom) জ্ঞান-বিজ্ঞান সাধনার ব্রত নিয়ে। অমায়িক সংখ্যার উপর গবেষণাকারী অন্যান্য আরবীয় গণিতবিদদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আল-মাজরিতি (মৃত্যু ১০০৭ খ্রি.), আল-বাগদাদী (৯৮০-১০৩৭ খ্রিস্টাব্দ), এবং আল-ফারিসী (১২৬০-১৩২০ খ্রি.)।

ষোড়শ শতকে পারস্যের গণিতবিদ মুহাম্মদ বাকির ইয়াজদি (৯৩৬৩৫৮৪, ৯৪৩৭০৫৬) অমায়িক জোড়টি আবিষ্কার করেন, যদিও কেউ কেউ একে রেনে ডেকার্তের (১৫৯৬-১৬৫০ খ্রি.) উপর আরোপ করে থাকেন। গণিতের এই শাখাটিতে প্রাচ্যের অনেক অবদানের কথা আসলে ভুলে যাবার একটা প্রবণতা দেখা যায় ইতিহাসে। থাবিতের সাধারণ সূত্রটি পিয়েরে দ্য ফামা (১৬০১-১৬৬৫ খ্রি.) এবং ডেকার্তে পুনরাবিষ্কার করেন; লিউনার্দো অয়লার (১৭০৭-১৭৮৩ খ্রি.) পরে সেটিকে বিস্তৃত করেন। ১৯৭২ সালে বরহো এটিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যান। ফামা এবং ডেকার্তে এমন সব অমায়িক জোড়ও খুঁজে পান, যা আরব গণিতবিদদের কাছে বহু পূর্বেই সুপরিচিত ছিল।

অমায়িক সংখ্যা নির্ণয়ে থাবিত ইবনে ক্বুররা'র এলগোরিদম ১। ১ম সারিতে ২^n এর মানগুলি লিখুন, n=১ থেকে শুরু করে। ২য় সারিতে ১ম সারির সংখ্যার তিনগুন মান বসান। R১ = ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২ R২ = ৬, ১২, ২৪, ৪৮, ৯৬ [৩xR1] ২। তৃতীয় আরেকটি সারিতে ২য় সারির সংখ্যাগুলি থেকে ১ বাদ দিয়ে বিয়োগফল লিখুন: R১ = ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২ R২ = ৬, ১২, ২৪, ৪৮, ৯৬ R৩ = ৫, ১১, ২৩, ৪৭, ৯৫ [R৩−R২] ৩।

৪র্থ আরেকটি সারি যোগ করে, সেখানে প্রতি কলামের ২য় সংখ্যাটিকে ঠিক আগের কলামের ২য় সংখ্যাটি দ্বারা গুণ করে, গুণফল থেকে ১ বাদ দিয়ে ফলাফল বসান: R১ = ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২ R২ = ৬, ১২, ২৪, ৪৮, ৯৬ R৩ = ৫, ১১, ২৩, ৪৭, ৯৫ R৪ = —, ৭১, ২৮৭, ১১৫১, ৪৬০৭ [R২Cj*R২C(j-১)−১] ৪। এখন করণীয়ঃ ৩য় সারি থেকে পর পর দুটি মৌলিক সংখ্যা খোঁজা; পাওয়া গেলে বড় মৌলিকটির ঠিক নীচে (অর্থাৎ কলাম বরাবর) ৪র্থ সারিতে সংশ্লিষ্ট আরেকটি মৌলিক খোঁজা। এই মৌলিকটিও পাওয়া গেলে, সবশেষে যে সংখ্যাটি প্রয়োজন তা হল পূর্বের কলাম বরাবর ১ম সারির সংখ্যাটি। এভাবে ৪টি সংখ্যা পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপঃ ৩য় সারিতে পর পর মৌলিক পাওয়া গেল ৫, ১১।

১১-এর নিচে মৌলিক পাওয়া যায় ৭১। ৭১ এর উপর সর্বশেষ সংখ্যাটি ৪। সুতরাং প্রথম অমায়িক জোড়াটি হলঃ ৪x৫x১১=২২০ এবং ৪x৭১=২৮৪। সংখ্যাগুলিকে অবস্থানগতভাবে সাজালে, যদি নিম্নরূপ হয় ...........x m........n ...........p। তাহলে প্রথম অমায়িক, A = x*m*n অপর অমায়িক, B = x*p অমায়িক সংখ্যা নির্ণয়ে থাবিত ইবনে ক্বুররা'র সূত্র যদি p = 3 × 2^(n−1)−1, q = 3 × 2^n−1, r = 9 × 2^(2n−1)−1, যেখানে n > 1 একটি পূর্ণ সংখ্যা এবং p, q, এবং r মৌলিক সংখ্যা, তাহলে (2^n*pq ও 2^n*r) এক জোড়া অমায়িক সংখ্যা।

3 × 2^n − 1 আকারের সংখ্যাকে থাবিত সংখ্যা বলা হয়। সূত্রঃ উইকিপিডিয়া
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।