সুইট ভাই
গত ৩০/০৫/২০০৯ ইং শনিবার প্রায় সকল মিডিয়া চ্যানেলে ও পরবর্তী দিনের পত্রিকাগুলোতে-’ অবৈধ ট্রান্সমিশন যন্ত্র সহ সাতক্ষীরায় কামরুল হাসান সুমন গ্রেফতার’ শিরনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সুমন বর্তমানে ৫ দিনের পুলিশি রিমাণ্ডে আছে। সুমন একজন গ্রামের ছেলে। সুমনকে আমি ছোট বেলা থেকে চিনি। আজ বিবেকের টানে লিখলাম।
গ্রামের সকলেই সুমনকে খুব ভাল জানে। সে ২০০৪ ইং সনে SSC, ২০০৬ সনে HSC এবং বর্তমানে সাতক্ষীরা সরকারী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ২য় বর্ষে ;পাশাপাশি যুব উন্নয়নে ইলেকট্রনিক্স বিভাগে ৬ মাসের কোর্সের ৫ম মাসে অধ্যায়নরত। সুমন ছোট বেলা থেকেই বিজ্ঞান মনস্ক। তার বয়স যখন ১২/১৪ তখন থেকেই কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা/সাহায্য ছাড়াই সে গ্রামের প্রায় ব্যক্তিরই টেপ, টেলিভিশন, রেডিও, লাইট, ক্যামেরা ইত্যাদি বিনা পয়সায় ঠিক করে দিত। আর এসব ঠিক করার জন্য সে সাইকেলের এস্পক দিয়ে বানানো একটি স্ক্র ড্রাইভার, টর্চের বাল্ব ও তার দিয়ে বানানো যন্ত্রাংশ পরীক্ষার যন্ত্র, ইত্যাদি ব্যবহার করতো।
বিভিন্ন জায়গা থেকে চেয়ে আনা ইলেকট্রনিক্সের বাদ পড়া সার্কিট, ফেলে দেওয়া লাইট, টেপ ইত্যাদি সংগ্রহ করে সুমন নিজেই এ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। মা-বাবার কাছ থেকে টাকা জমিয়ে পরে সে একটি তাতাল, গ্যালভানোমিটার ইত্যাদি কিনেছে। তখন ২০০৩ সাল ওর মাথায় চাপলো হেলিকাপ্টার বানাবে। পরে পরিবারের চাপে ও আর্থিক সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে ১ হাত লম্বা ইঞ্জিন নৌকা বানিয়ে সে গ্রামের সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।
তার নিজের বাড়িতে যে ঘরে সে থাকে সেখানে পা ফেলার জায়গা পর্যন্ত নেই। সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে ছোট ছোট যন্ত্রাংশ। মা-বাবার চাপের কারণে সুমন ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে না পড়ে সাধারণ বিষয়ে পড়াশুনা করে। ২০০৮ এর শেষের দিকে তার মাথায় চাপলো সে যুব উন্নয়নে ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে ভর্তি হবে। কথা মত সে ভর্তি হয়।
বাড়ি থেকে যাতায়াতের অসুবিধার জন্য সে কলেজের পাশে একটি মেসে ওঠে। এভাবে মেসে ৫ মাস চললো। কিছুদিন আগের কথা ওর বন্ধুর সাথে মেসে mp3 তে গান শুনছিল। একান্ত আড্ডার ছলে সে দুর থেকে বন্ধুর mp3 র গান ঘরে বসে শুনবে বলে চ্যালেঞ্জ করে। তাছাড়া এরকম একটি অধ্যায় যুব উন্নয়নে তার ব্যবহারিক পরীক্ষায় আছে।
এভাবেই শুরু হয় একটি যন্ত্র বানানোর। এক সপ্তাহের মধ্যেই success । এটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালানোর সময় পুলিশের ওয়াকিটকিতে সমস্যা ধরা পড়ে। বিশেষ তথ্যের ভিত্তিতে গভীর রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে সুমনকে। ঘটনা জানার সাথে সাথে সকল মিডিয়ার সাংবাদিক চলে আসে।
আর মিডিয়ার কারণেই হয়ে যায় বিশাল ঘটনা। সুমনের কাছে যে ২১টি সিডি পাওয়া গেছে তা গান, সার্কিড বানানো ও ভারতীয় সিনেমার সিডি যেগুলো জিহাদী সিডি বলে চালানো হয়েছে। কম্পিউটারটি তার নিজের। মিডিয়াতে সামনে কিছু কাঠের লাঠি দেখানো হয়েছে যেগুলোর সাথে তার কোন সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। একটি রাজনৈতিক দলের নাম দিয়ে পুলিশের এস পি নিজেই মিডিয়াতে যে বক্তব্য দিয়েছে তার কোন ভিত্তিও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ উঠেছে পুলিশের দূর্বলতা ঢাকার জন্যই সুমনকে শারিরীক নির্যাতনের মাধ্যমে জোর পূর্বক স্বীকার করানো হচ্ছে। জানা গেছে ৫দিনের রিমান্ড পুলিশ আরো বর্ধিত করতে পারে।
এই ঘটনার সকল তথ্য যে কোন সচেতন ব্যক্তি ভালভাবে যাচাই করতে পারেন। যদি সত্য হয় তাহলে আপনার নূন্যতম উপকার হয়তো সুমনের মত মেধাবী ছেলেকে মুক্ত করতে পারে। সুমনকে বাঁচান যে যেভাবে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।