আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভটিজিং নিয়ে অরণ্যে রোদন, দুর্ভাগ্য আমাদের!



চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ইভ টিজিং নিয়ে ব্লগার নির্ঝর নৈঃশব্দ্য-২ এর পোস্টটি স্টিকি করা ছিল কয়েকদিন। আমরা সবাই বিষয়টি নিয়ে কমবেশি জানি এখন। ব্লগারের পরের পোস্টটি পড়ে এই পোস্টটি না দিয়ে আর পারলাম না। সত্যি হতভাগা আমরা। শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কমবেশি এই অবস্থা।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মূলত তৈরি হয় পাবলিক (আমজনতা বা রাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ) কে সেবা দেওয়ার জন্য। অর্থাৎ পাবলিকের অর্থে এই প্রতিষ্ঠান চলে। পাবলিকের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করা হয় বিনিময়ে পাবলিক আশা করে রাষ্ট্র তথা রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা গ্র্যাজুয়েটরা কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করবে। রাষ্ট্র তথা দেশ ও জাতির কল্যাণে দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সৃষ্টির লক্ষ্যেই পাবলিক তার ট্যাকের পয়সা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পেছনে ব্যয় করে। কোন রাজনৈতিক দলের সার্চ ইন্জিন বা দলীয় স্বার্থ হাসিলের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে নয়।

কিন্তু বাংলাদেশে হয় পুরো উল্টাটা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ছেলেপেলেরা হয় "ভার্ছিটির শ্টুডেন্ট"। কতিপয় শিক্ষার্থীরা এসে ওঠে হলে। আর হলের উঠতে গেলে কী করতে হয় তা সবারই জানা। এরপর যা হবার তাই।

বাবা-মা বাড়িতে বসে জানে ছেলে বড় বিদ্বান হচ্ছে। এদিকে ছেলে হচ্ছে রাজনৈতিক দলের শিকার। এই শিকার এক সময়ে নিজেই হয়ে পড়ছে শিকারী। তখন তো "আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে" অবস্থা। শুধু হলের ছেলে নয়, বাসায় থাকা শিক্ষার্থীরাও ক্যাডারদের খপ্পড়ে পড়ে ক্ষমতা, ব্যাকআপ ইত্যাদি লোভনীয় বস্তুর স্বাদ নিয়ে ফেলে।

আর যায় কোথায়? " আমি হইতিছি ভার্ছিটির শ্ডুডেন্ট। আমারে আটকাইবো কে? আমি বাদশা। চুখে ছানগ্লাছ লাগায়া ঘুরুম, সবার বড় ভাই হমু, মাগনা খামু আর মৌসুমে হলে পোলাপান উঠামু। আর চা-নাশতার খরচ তো আছেই। " কিছু থাকে বড়ভাই, কিছু হচ্ছে একশন এক্সপার্ট বা ক্যাডার আর কিছু হচ্ছে ম্যানপাওয়ার বা পাতি পোলাপান যারা মূলত কনিষ্ঠ এবং দলের জন্য "নিডি" হয়ে কাজ করতে করতে একসময়ে "গ্রিডি" হয়ে যায়।

এভাবেই হয় তাদের "দিনবদল"। ধরা তো অনেক আগেই সরা হয়ে যায়। ক্যাম্পাসে অনেক রোমিও থাকে তবে তারা বেশি কিছু করতে পারে না কেননা তারা জানে ধরা খাইলে তাদের সেভ করার কেউ নেই। এরা শুধু ভাব নিয়ে চলে, টুকটাক ইভ টিজিং করতে চায়। মূলত ইভ টিজিং করে উপরে উল্লেখিত ঐ তিন শ্রেনীর দলীয় কর্মীরা।

তারা জানে তাদের আব্বারা তাদেরকে যেকোন বিপদ থেকে বের করে আনতে পারবে। আব্বা মানে তাদের স্যারদের কথা বলছি। শিক্ষকরূপী নিম্ন মানসিকতার ঐ রাজনৈতিক চামচাগুলা তাদের মেধাবী(?) ছাত্রদের সেভ করে সর্বদা। তারাও যে ছাত্রজীবনে এমন মেধাবী(?) ছিল। সাধারণত দেখা যায় যেসব স্যারদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদেরকে যৌন নিপীড়নের জোরালো অভিযোগ থাকে এবং যে সকল ছাত্ররা ছাত্রীদের টিজ থেকে শুরু করে যৌন নিপীড়নে সিদ্ধহস্ত তাদের কোনদিনও কিছু হয় না বরং ভিকটিম ছাত্রীর সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়।

সেই ভিকটিমকে যারা সাপোর্ট দেয় তাদেরকে মহাপুরুষ প্রক্টেরিয়াল বডি (যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের টাকায় চলে) এবং একাডেমিক কাউন্সিল বা সিন্ডিকেট বা সিনেট এইসব "আবজাব" (অন্য একটি শব্দ লিখতে চেয়েছিলাম যা 'ব' দিয়ে শুরু কিন্তু ভদ্রভাষা লিখতে বাধ্য হলাম) কমিটি দুষ্কৃতিকারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্টকারী সর্বপরি পথভ্রষ্ট শিক্ষার্থী হিসেবে বহিষ্কার করে। আর দলীয় ক্যাডার নেতা, মাস্তান তথা অভিযুক্তগুলাকে প্রথমে নিষ্পাপ এবং পরে বয়সের দোষ, ছোটভাই, বুঝতে পারে নাই হিসেবে খালাস করে দেয়। আন্দোলন সিরিয়াস না হলে তো ঐ বখাটেগুলো কিছুই করেনি, মেধাবী ছাত্র, মেয়েটাই খারাপ ইত্যাদি বলে সবকিছু হালাল করে ফেলে। জাহাঙ্গীরনগরের নাট্যতত্ত্বের ঐ লম্পটের কিন্তু এখনও কিছু হয় নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তো তাকে নির্দোষ প্রমাণই করে ফেলেছিল।

মাঝখানে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে তা অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় দেখি কী হয়। আমাদের দেশে তো রাত ১২টার পর অনেক কিছু ম্যানেজ হয়ে যায়। সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা তো কেবল শুরু। রাজুর মত যারা ইভ টিজার এবং নারীদের গায়ে হাত তোলা (পা-ও তোলা) কাপুরুষ (নিজেও একজন পুরুষ হিসেবে পুরুষের এই কর্মকাণ্ডে লজ্জিত আমি) না-হয় বখে গিয়েছে কিন্তু ঐ সব ভিসি, প্রভোস্ট, প্রক্টর এবং স্যাররা কী? এরা তো জাতির সবচেয়ে বড় কুলাঙ্গার। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত মহান এক স্থানে ক্যামনে ঢুকসে তা বোধহয় সবারই জানা আছে।

এইসব "......." গুলা আবার কারও কাছে দায়বদ্ধ না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায়ও এই এক সমস্যা। শিক্ষকরা তাদের কাজের জন্য কারও কাছে দায়বদ্ধ নন, তারা তাদের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ শুধু। বিবেককে বিসর্জন দিতে পারলেই আর কোন কাঁটা থাকে না পথে। "ক্লাস নেই বা না নেই আমার ইচ্ছা।

কে আমাকে কী করবে? দলীয় পাওয়ার থাকলে তো প্রশাসনের বাপেরও ক্ষমতা নাই আমাকে শো-কজ করে। শিক্ষার্থীরা কিছু করলে পরীক্ষায় আর জীবনেও পাস করবে না তারা। আহ! কত ক্ষমতা আমার। কী মধুর এ ক্ষমতা! সমাজে কত্ত সম্মান! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। পিএইচডি।

বাহ! এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ভাঙ্গায়ে কত জায়গায় পাব কন্সালটেন্সি। সুশীল সমাজে নাম লেখাব, পত্রিকায় লেখব কলাম, আর্টিকেল। ডিকশনারি দেইখ্যা বসাব কঠিন দাঁতভাঙ্গা সব শব্দ। আর টিভি টক শো'তো করবই। খবরে দেখা দিব জাতির ক্রান্তিকালের পাণ্ঞ্জেরি হিসেবে, ক্লাসে দেখা দেই না তো কী হয়েছে? জাতি গড়ব আমি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব সপ্তাহে এক দু'দিন বাকি দিন আছে সুশীল সমাজের গোলটেবিল বৈঠক এবং বৈঠক শেষে সাদা খাম। এত কিছু করব কিন্তু জার্নালে পেপার বা আর্টিকেল সংখ্যা বাড়াব কী করে? এর জন্যও আছে চমৎকার এক ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের থিসিস পেপার যখন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হবে তখন প্রথমে নাম থাকবে আমার যদিও থিসিস সুপার ভাইজারের নাম থাকে শেষে। তাতে কী? ছাত্রের পরীক্ষা থাকুক, ল্যাব থাকুক আর ইয়ার ফাইনালই থাকুক, থিসিসের জন্য এমন চাপ দিব ব্যাটা থিসিস করবে পরীক্ষার পড়া বাদ দিয়ে। ছাত্রের পুরো পরিশ্রমের ফসল সেই থিসিস প্রজেক্টের শুরুতেই আমার নাম দিতে বলব।

না দিলে তো ওরে পাসই করাব না কোনদিন। এভাবে হয়ে গেল আন্তর্জাতিক জার্নালে আর্টকেল বা পেপার পাবলিকেশনের সমাধান। আর প্রভাষক নিয়োগ দেব আমার দলের ছেলেকে বা মেয়েকে। ভাগ্না-ভাগ্নি হলেও দোষ নাই। " চলছে, চলবে এভাবেই।

মাননীয় এইসব প্রফেসর বা শিক্ষকদের ক্ষমতা বা দৌরাত্মও কমবে না, কমবে না কুলাঙ্গার কাপুরুষ ছাত্রদের দৌরাত্ম। শুধু ছাত্ররা কেন, কত মমতাময়ী নেত্রীও জন্মাচ্ছে আজকাল যারা কিনা পান থেকে চুন খসলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দলের ক্যাডারদের দিয়ে মার খাওয়ায় আর ক্যাম্পাসের হিরোইন হয়ে ঘুরে বেড়ায়। এইসবগুলার চৌদ্দগুষ্টির ভাগ্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ, অতঃপর সারা দেশের মানুষের দুর্ভাগ্য তাদের কষ্টের পয়সা খেয়ে চরিত্রহীন শিক্ষক, শিক্ষার্থী সৃষ্টি হওয়া। সবকিছু খুঁড়লে সাপ পাওয়া যায় দু'থেকে তিনটি। এই দু'তিনটি সাপের এত্ত পাওয়ার যে, বড় ছোট সব ঘটনাতেই তাদের ব্যাকআপ থাকে।

At last, we have to be in the system to change the system.

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.