কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি ।
আমি যে আজকে কী পরিমাণ বিরক্ত, সেটা বলে বুঝাতে পারছি না। মানে আমি সিরিয়াস বিরক্ত। সবার কাছে কিছু প্রশ্ন রাখছি।
আমার এক বন্ধুর মামার পিঠে বড় বড় ছয়টা কাল দাগ দেখেছিলাম।
আমি ভয় পেয়ে জিজ্ঞসা করলাম, “ মামা, এগুলা কী?” উনি উত্তরে বললেন, “ আমাদের সময়ে তখন নতুন জিন্সের প্যান্ট বের হয়েছিল। আমার বাবা ছিলেন ভয়ানক রাগী। আর আমার ছিল একটু উড়নচন্ডী স্বভাব। ত, আমিও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে একটা জিন্সের প্যান্ট কিনি। বাসায় এনে লুকিয়ে রাখি।
কিভাবে যেন আব্বার চোখে পড়ে যায়, আর আব্বা একটা বেত এনে আমাকে এভাবে পিটায়। এগুলা সেই বেতের বাড়ির দাগ। বাবার ধারণা ছিল জিন্স পড়লে পড়াশোনা নষ্ট হবে। ”
আমি চিন্তায় পড়ে যাই। এখন ত সবাই জিন্স পড়ে।
তাহলে ?? উনার বাবা এখন কী বলেন ?? ছেলের পিঠে এইসব দাগ দেখে উনি নিজের কী ভাবেন ? জিন্স পড়া ছেলেরা কী বুয়েটে চান্স পায় না ???? জিন্স পড়ার কারণে কেউ কি জীবনে পিছিয়ে গেছে ? যুগের সাথে সবই পরিবর্তন হয়।
আমি জানি, একসময় অডিও তে ইংলিশ গান শুনলে পাড়া পড়শী গঞ্জনা দিত, ছেলে নাস্তিক হয়ে গেছে !!!! আদৌ কী তাই?
কোন কিছু খারাপ মানে কী ??? ইয়াবা খাওয়া বেশি খারাপ নাকি বড় চুল রাখা বেশি খারাপ??? ক্যাম্পাসের সামনে বিড়ি টানা খারাপ নাকি চেনঅলা জিন্স পড়া তার চেয়ে বেশি খারাপ???????? কেউ ইয়া বড় বড় চেনলা জিন্স পড়ে ঘুরতেছে, দেখে আমারও বিরক্ত লাগে, কিন্তু, তার মানে এই না যে সে ছেলেটা খারাপ। আর, বড় চুল ত কাজী নজরুল ইসলামেরও ছিল। ত? বড় চুল রাখার কারণে কি উনারে কেউ খারাপ বলে ??????
এই হইতেছে আমার সমস্যা। এক স্যার আসছেন, আরেক ভার্সিটিতে উনি চল্লিশ বছর প্রফেসর ছিলেন।
নাম বলব না। ত, উনি আমাদের এখানে একদম নতুন(সম্ভবত তাই বললেন)। উনি ক্লাসে এসে আজকে অনেক্ষণ কথা বললেন। এই সেমিস্টারের প্রথম ক্লাস ছিল এটা। প্রথমটায় সবাই সাধারণত সবার সাথে পরিচিত হন।
এভাবে ২০ মিনিট লাগে। এরপরে পড়ানো শুরু হয়।
আজকে আমাদের কারও নাম ত জিজ্ঞাসা করলেনই না। নিজের সম্পর্কে দারুণ কিছু তথ্য দিলেন।
১) উনি জীবনে টাকা চান না।
উনি চাইলে টাকার উপর শুইয়ে গড়াগড়ি দিতে পারতেন।
২) উনি জীবনে কখনও টাকা জমান নাই। ( পরে জানা গেল উনার দুই ছেলে মেয়ে ইউএসটিসি মানে প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ে। টাকা ছাড়াই এদের কীভাবে পড়াচ্ছেন, উনিই জানেন। )
৩) বড়ো চুল রাখা পোলাপান তার ক্লাস করতে পারবে না।
( যেই পয়েন্টে আমি কট খাইছি। আমার বাবরি চুল রাখার বড়ই ইচ্ছা। )
৪) উনি সামনের বার বই মেলাতে উনার কবিতার বই প্রকাশ করবেন।
৫) টাকা জমিয়ে রাখলে মানুষ অমানুষ হয়ে যায়। তাই হাতে পাওয়ার পর খরচ করাই উচিত।
( আল্লাহ না করুন, কিন্তু, আমি আজকে এক্সিডেন্ট করলে টাকা পয়সা না জমালে বিপদে কে দেখবে ?? )
৬) উনি একটা সূরার ফজিলত জানেন, যেটা পড়লে সেই দিন আর সেই রাত মানুষ আহত কিংবা নিহত হবেনা। ( আমি জানতাম আল্লাহ মানুষের আয়ু নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ) এরপরে উনি বললেন, যেদিন উনার মৃত্যু হবে, সেদিন আল্লাহ উনাকে সূরা পড়তে ভুলিয়ে দেবেন। আমার ধারণা, আল্লাহ মানুষের ওপর হস্তক্ষেপ করেন না। করলে, ইজরাইলে সৈন্যরা মানুষ মারতে ভুলে না কেন ? ( এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা।
আমি চুরি করে সেটা আল্লাহর ইচ্ছায় করছি বললে হবে না, আল্লাহ মানুষকে বিবেক দিছেন আর মানুষের চলার পথে উনি হস্তক্ষেপ করেন না। আমি এমনটাই ভাবি। )
৭) উনি কবিতা লেখেন।
৮) উনি ক্লাস থ্রি, ক্লাস নাইন এর জন্য এমনকি অনার্সের জন্যও বই লিখেছেন। আমরা সবাই সেই বই কিনতে আগ্রহী হলে, উনি জানালেন এটা নাকি আবার বাজারে পাওয়া যায় না।
উনি আমাদের এক কপি দিবেন। আমরা সবাই সেটা ফটকপি করে নিব।
ছোট বেলা থেকেই আমার মাঝে একটা ব্যপার কাজ করে। আমি কখনও স্যারদের কথার বাইরে যেতে পারি না। একদম পিচ্চি থাকতে আমি যখন খেতাম না, আম্মা বলত, “আমি এখন তোমার স্যার।
আমি বলতেছি খাও। ” আমি তখন কাঁদো কাঁদো মুখে খেয়ে ফেলতাম। বড় হয়েও এই অভ্যাসটা রয়েই গেছে।
বাবরি রাখার স্বপ্ন ঝেঁড়ে ফেলে দিয়ে চুল একদম ছোট করে কাটিয়ে আনলাম। মনটা খুব খুব খারাপ।
আর্মিদের কলেজে পড়ে ভার্সিটি উঠেই বড় চুল রাখার স্বপ্ন দেখতাম। ভার্সিটিতে উঠার পরেও এখনও বাঁধা ধরা নিয়েমে পড়ে কাঁতরাতে হবে বুঝিনি।
দুইটা সেমিস্টার শেষ করে ফেললাম। কত কত স্যার দেখছেন, কেউ কিছু বলেন নি। ভার্সিটিতে সেটাই স্বাভাবিক।
সবার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থাকা উচিত।
স্যারের প্রতি কোন অসম্মান নেই আমার মনে। উনি শত হোক, আমার শিক্ষক, উনাকে শ্রদ্ধা না করে উপায় নেই।
কিন্তু, আমার ধারণা, বড় চুল রাখার জন্য এভাবে এঙ্গেল করে কথা না শুনিয়ে, ছেলে মেয়েদের সিগারেট-ইয়াবা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বললেই নীতিবান একজন সিনিয়ার শিক্ষককে মানাত বেশি। উনি যদি কোন খারাপ একটা কাজ উল্লেখ করে বলতেন যারা এটা কর, বা আমি যদি কাউকে এটা করতে দেখি, তাহলে আমার ক্লাস তার করা লাগবে না।
সেটা অনেক ভাল হত। উনি বলছেন, যারা বড় চুল রাখ, তারা চুল না কাটালে আমার ক্লাস করার দরকার নেই, আমিও এটাও বলে রাখছি।
আজকে আমার সামনে দিয়ে এক ছেলে গেল। দেখি কোমরের একহাত নিচে দিয়ে প্যান্ট পড়ছে। ঠিকমত ইন করা হয়নি পিছন দিয়ে।
মানে, পিছনে অনেক কিছু দেখা যাচ্ছে। আমি মনে মনে ওকে গাধা বলে হেসে ফেললাম। কিন্তু, এই ছেলেটা যদি কখনও মাল্টিন্যশনাল কোম্পানীতে জব করে, ওকি এভাবে প্যান্ট পড়েই ঘুরাফিরা করবে? অবশ্যই না। ও যদি কোথাও জব না পেয়ে, কোম্পানীতে কোম্পানীতে ইন্টারপভিউ দিয়ে বেড়ায়, তখনও কী এমন ড্রেস আপ হবে? নিশ্চয়ই না।
এসবই ক্ষণস্থায়ী।
এগুলা ব্যাপার না। সময়ের সাথে আসে সময়ের সাথে যায়। মানুষের ড্রেস আপ ব্যাপার না। স্বভাবটাই আসল।
বসুন্ধরায় গত সপ্তাহে যেয়ে একটা প্যান্ট দেখলাম।
কতগুলা ছেলে এটা খুব পছন্দ করল। একগাদা শিকল লাগানো এখান । এত ওজন নিয়ে কীভাবে হাঁটব বুঝলাম না। যত যাই হোক, আমি বিশ্বাস করি না, সে এই প্যান্ট পরে কখনও চাকরীর ইন্টারভ্যু দেবে। তখন ঠিকই ভদ্র ড্রেস পড়বে।
চারুকলার পোলাপানও ত এই বড় বড় চুল দাঁড়ি গোফ রেখে ঘুরে। ওদের নিয়ে কেউ কিছু বলে না।
যাই হোক , পোলাপানরে এই সব কিনতে দেখে, আমার পাশের ভদ্রলোক বললেন, এইসব কাবজাব করা একজন ছাত্রের ছাত্রত্বের অবমাননা।
আমি ভাবলাম, আমাদের দেশের পিছিয়ে পড়ার এই কারণ। আমি উনাকে একটা প্রশ্ন করেছি।
“ একজন ছাত্রের ছাত্রত্বের অবমাননা ঠিক কখন হয় ??? ইয়াবা আর ক্যাডারবাজী করলে ? নাকি বড় চুল রাখলে ??? শিবিরে জয়েন করে পোলাপান কোপাকোপি করে যখন, ছাত্রলীগে ঢুকে বন্দুক নিয়ে স্যারকে হুমকি দেয় যখন, ফেন্সির ব্যবসা করে, তখন ছাত্রের ছাত্রত্বের অবমাননা হয় না? নাকি সে সব করুক, তার ড্রেস আপ ঠিক থাকলেই তার সব মাফ?”
উনি এর উত্তর দিলেন না। বললেন, “ বুঝছি, তুমি এদের বন্ধু। ”
আরবী মিডিয়ামে যারা পড়ে, তারা বাংলা মিডিয়াম সম্পর্কে কীভাবে? মাদ্রাসার অনেকেই মনে করে, স্কুলে পড়ে বেগানা পোলাপান সব। বাংলা মিডিয়ামে ম্যাডামরা পড়ায়। ছি ছি ছি।
আমরা যারা বাংলা মিডিয়ামে পড়েছি, আমাদের কাছে কি মেয়েদের শিক্ষকতা করা কি খুব অনৈতিক কিছু? আবার, অনেকেই ইংলিশ মিডিয়াম সম্পর্কে ভাবে, দেশটা এরাই খাইল। আসলে তা না। ভাল খারাপ সবখানেই থাকে। মাদ্রাসায় পড়লেই জঙ্গী হয় না। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়লেই সে উগ্র তাও না।
বাংলা মিডিয়ামে পড়লেই ক্ষ্যাত হয় না। এসব যার যার নিজের কাছে।
এখনই আমাদের সময়, জিন্সের প্যান্টের বিপক্ষে কথা না বলে ড্রাগস আর হল দখল, ক্যাডারবাজীদের না বলুন।
এরপরও কেউ কিছু না বুঝলে,
আমি তাহলে অফ গেলাম।
© আকাশ_পাগলা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।