♥♥♥♥♥♥♥♥ শুরুতেই সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। সবার ঈদ আনন্দে কাটুক।
ছোটবেলা থেকেই আমার ঈদটা একটু ভিন্নরকম ছিল। আমার কোন ভাই নেই। বড় বোন ঈদের দিন ঘর গোছাতে, রান্না করতে আম্মাকে হেল্প করত।
আর ছোট আপা আর মামাত বোনের দল একটু ঘোরাঘুরি, খেলা-ধুলা নিয়েই ব্যস্ত থাকত। বাবা ব্যবসা নিয়েই পড়ে থাকত।
আমি আর কি করব? বন্ধু-বান্ধব ছিলনা, তাই ছোট আপা আর মামাত বোনের দলে মিশে যেতাম। সবার ছোট ছিলাম, তাই খেলার সময় আমাকে দুধভাত বানিয়ে রাখত। পুতুল খেলা, রান্না-বান্না খেলা নিয়েই দিন কেটে যেত।
তখনও এলাকায় স্যাটেলাইট চ্যানেল আসেনি। বিটিভি দেখার চেয়ে আমরা খেলতেই বেশি পছন্দ করতাম। তবে ইত্যাদিটা বেশ আগ্রহ নিয়েই দেখতাম।
রোজার ঈদে বেশি আনন্দ হত। কুরবানীর ঈদে আম্মা-আব্বা এক প্যাকেট মাংস ধরিয়ে দিয়ে জায়গায় জায়গায় পাঠাতেন।
ভাল্লাগতো না
আমি রোজা থাকা শুরু করি সিক্সে উঠে। ৬-৭ টা থাকতে পারতাম। এ সময় আমার কাজিনদের সাথে পাল্লা দিতাম কে বেশি রোজা থাকতে পারে। আমি সবসময় হেরে যেতাম। সম্পূর্ন ভাবে রোজা থাকা শুরু ক্লাশ এইট থেকে।
১১-১২ বছর বয়স থেকেই তারাবীহর নামাজে যেতাম। তারাবীহর নামাজে ৬-৮ রাকাআত পড়েই ঘুমে ঢুলে পড়তাম। মসজিদের বারান্দায় বসে বসে ঝিমাতাম, কখনও ঘুমিয়েও যেতাম । আমরা বসে বসে স্যান্ডেলও পাহারা দিতাম। কেউ যাতে স্যান্ডেল চুরি করতে না পারে।
তারাবীহর নামাজে অনেক দুষ্টুমিও করেছি। আমাদের এলাকার মোড়ল টাইপের বড় ভাইরা খালি দাদাগিরি করত। আমাদের ভেতরের দিকে নামাজ পড়তে দিত না। খালি বের করে দিত। আবার নামাজের ভেতর নিজেরাই ফাজলামো করত।
মসজিদে যেইসব তাবলীগ জামাত আসত তাদের তরকারী(গোশত+ইলিশ) চুরি করে খেত। আমরা কিছু বললে বকা দিত।
তখন আবার নতুন নতুন গ্যাসলাইটের পেছনে এলইডি লাইটের চল উঠেছে। প্রতিবার দ্বিতীয় রাকাআতে ঐসব বড়ভাইদের দুপায়ের মাঝের ফাকা দিয়ে ঐসব লাইট বার-বার জ্বালাতাম আর নিভাতাম। যখন সেজদায় যেত, মাঝে মাঝে আলপিন দিয়ে পশ্চাৎদেশে খোচা মারতাম।
দাড়ানো অবস্থায় লুঙ্গির গিট খুলে দিতাম।
তারাবীহর নামাজে মসজিদের জিরো পাওয়ারের দুইটা ডিম লাইট ছাড়া কোন আলো থাকত না, তাই আমরা ধরাও পড়তাম না। তাছাড়া আমরা দুষ্টুমি করে কি আর বসে থাকতাম? দৌড়ে মসজিদের পেছনে মাদ্রাসায় গিয়ে বসে থাকতাম।
ছোট থেকেই ঈদের নামাজে আমার ফুপাত (আপনের চেয়েও আপন) ভাইয়ার সাথে জামাতে যেতাম। আমি নামাজের কিছুই বুঝতাম না।
বয়স তখন ৬-৭ হবে। তবে ঈদের কোলাকুলি করতে অনেক মজা পেতাম। দেড়ফুটের আমি রাস্তায় গিয়ে বড় বড়দের সাথে কোলাকুলি করতাম। সবাই আমাকে কোলে নিয়ে কোলাকুলি করত, অনেক মজা পেতাম।
সেলামী সংগ্রহ।
আমার সেলামী আসত ৩-৪ জায়গা থেকেই। আম্মা-বাবা দুজনে ১০০ করে দিত। ফুপাত ভাইয়া দিত ২০০। আর গ্রামে ঘুরে বেরিয়ে আরও ৭০-৮০ জোগাড় হয়ে যেত। গ্রামে বেড়াতে ভাল লাগতো না।
সবাই খালি পায়েস খেতে দিত। আর সালাম করলে খালি দোয়া করত। সেলামী না পেয়ে আমাদের দলটি (দলে একমাত্র আমি ছেলে এবং সবার ছোট) তাদের মুন্ডুপাত করতে করতে এগোতাম।
প্রতি ঈদেই এক দেড় ঘন্টা সেলামী অভিযানে মিষ্টি পায়েস খেয়ে খেয়ে আমার বদ হজম হয়ে যেত। বাকি দিন শুয়ে শুয়ে আর বদনা হাতে দৌড়িয়ে সময় কেটে যেত।
বিকালটা মজার হতো। অনেক মেহমান আসত। টিভিতে নাটকও হতো। আমি অবশ্য আমাদের দলটার সাথে পুতুল বিয়ে খেলতাম। আমি খেলতাম বলা ঠিক হবে না, আপুরা সবাই খেলত, আমি দুধভাত হয়ে বসে থাকতাম।
এখনকার ঈদের রুটিন আলাদা। ফুপাত ভাই প্রবাসী। ফোনেই কথা হয়। রোজাও সব রাখি। তারাবীহতে আমাদের জায়গায় নতুন ছেলেরা এসেছে।
ওরাই ফাজলামী করে বেড়ায়। আমরা মাঝে মাঝে বকা দিই। কান ধরে কয়েকটাকে বেরও করে দিই। কয়েকটা মোড়ল টাইপের নেতারও আবির্ভাব হয়েছে। এখনও তাবলীগ জামতের খাবার চুরি হচ্ছে।
পেছরে কাতারে দুষ্টুমি চলছে। আমরা এখন শুধু নামাজেই কনসেন্ট্রেট করি।
এখন আর সেলামী সংগ্রহে বেড়োই না। বাবা-মা, নানু আর আপুর কাছ থেকেই শ'পাচেক পেয়ে যাই। ঈদের নামাজ টা পড়ে নানার কবরে দোয়া করে বাসায় আসি।
খেয়ে দেয়ে ঘুম, নয়তো কম্পিতে বসি। বড় আপা রান্নায় আম্মাকে হেল্প করে, ছোট আপা ঘর গোছায়, সিরিয়াল দেখে (এই দিনও ) আমার এখন ঘরকুনো স্বভাব হয়ে গেছে। ঈদের দিনে বাইরে কোথাও বেড়োই না। অটো+রিক্সার ভাড়া শুনলে মাথা ঘুরে। আমার মোটরবাইকও নেই, বাইকে বসার মত কেউও নেই।
বন্ধুরা তাদের মেয়ে-বান্ধবীদের নিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়, আর আমি ঘরে বসে গেমস খেলি, কার্টুন-মুভি দেখি। আর ছোটবেলার কথা ভেবে নষ্টালজিয়ায় ভুগি।
সবাই কে ঈদের শুভেচ্ছা। একটা আনন্দের ঈদ কাটান সবাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।