আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রেলগেট স্থাপনের ও ব্যবস্থাপনার দায়-দায়িত্ব শুধু কী রেলওয়ের?



বাংলাদেশ রেলওয়ের আমাদের নিজেদের সম্পদ সংগত কারণেই এর প্রতি আমাদের আস্থা, বিশ্বাস, প্রত্যাশ প্রবল। যখনই এর একটু ব্যাতয় ঘটে তখনই আমরা আমাদের আবেগ ভালবাসা দিয়ে এর প্রবল সমালোচনা করি। এই সমালোচনা বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিবাচক উন্নয়নের জন্য সহায়ক হতে পারে তো। কিন্তু আমাদের সমালোচনাকে পুজি করে কিংবা পরিকল্পিত সমালোচনার মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের চেষ্টা চালানো হয়। তাহলে তার দায় ভার অনেকটা আমাদের নিজেদেরও বহন করতে হবে আর এই বাস্তবতা থেকেই এই লেখা।

সময় এসছে আমাদের দাতা নামক ঋণ বাণিজ্য সংস্থাগুলোর উদ্দ্যেশগুলো একটু ভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গি দিয়ে বিচার করার। পাশাপাশি প্রয়োজন এই রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির উন্নয়নে গঠনমূলক সমালোচনা করা। ভূমিকা না বাড়িয়ে সরাসরি আলোচনায় যেতে চাই। আজকের বিষয় রেলগেট স্থাপনের ও ব্যবস্থাপনার দায়-দায়িত্ব শুধু রেলওয়ের নয় রেল পথের উপর দিয়ে কোন সড়ক পথ নির্মান করা হলে, তখন ঐ দুই পথের সংযোগ স্থলে বা ক্রসিং এ গেট স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপত্তা বিধান একটি জরুরী বিষয় হয়ে দাড়ায়। এই ক্রসিং হিসাবত সৃষ্টি করে সড়ক বিভাগ, দূরঘটনা হলে তার জন্য প্রকৃত দোষী পাওয়া যায় সড়ক পরিবহন গুলো কে, অথচ এই গেট স্থাপনের ও রক্ষনাবেক্ষনের সকল দায়-দায়িত্ব ও খরচ চাপান হয় রেলওয়ের উপর।

রেলপথ ও সড়ক পথের দৈর্ঘ্য এবং জাতীয় বাজেটে এই দুই পথের বরাদ্দে অনুপাত বিবেচনা করলে দেখা যায় এই দায়িত্ব ও খরচ সম্পুর্ণ না হলেও অর্ধেকের বেশি সড়ক বিভাগের হওয়া উচিৎ। সুতরাং সকলের কাছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই সব ক্রসিং এ গেট নির্মান ও এর রক্ষনাবেক্ষনের দায় ও ব্যয় ভার শুধু রেলওয়ে কেন বহন করবে, কেন সড়ক বিভাগ বহন করবে না ? বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বলতে গেলে নতুন করে কোন রেলপথ নির্মান হয়নি। বলা যায় বিৃটিশ আমলের পর নতুন করে রেলপথের কোন বিকাশ ঘটেনি। কিন্তু স্বাধনিতার পর থেকে সড়ক পথের দৈঘ্য প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। রেলওয়ে নেটওয়ার্ক ১৯৪৭ সালের ২,৮০০ কিলোমিটার থেকে ২,৭০০ কিলোমিটারে নেমে গিয়েছিল।

সমপ্রতি পার্বতীপুর হতে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা ও বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি পর্যন্ত এবং যমুনা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের আওতায় জামতৈল হতে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের ফলে বর্তমানে রেলপথের দৈর্ঘ্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ২,৮৩৫ কিলোমিটার হয়েছে। অন্যদিকে ১৯৪৭ সালে সড়ক পথ (পাকা রাস্তা) ছিল মাত্র ৬০০ কিলোমিটার। বর্তমানে তা বেড়ে এখন প্রায় ৪৯,৫০০ কিঃমিঃ হয়েছে। যার মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১৩,০০০ কিলোমিটার এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের ৩৬,৫০০ কিলোমিটার। এই নতুন নতুন সড়ক গুলো নির্মানের সময় তাদের প্রয়োজনে অনেক জায়গায় রেলপথের উপর দিয়ে গেছে।

যার ফলে সেখানে একটি সড়ক ও রেলপথের সংযোগ বা ক্রসিং সৃষ্টি হয়। তাহলে খুব সহজেই বলা যায় এই ক্রসিং গুলো সড়ক বিভাগ সৃষ্টি করছে। রেলপথের উপর দিয়ে সড়ক নির্মানের সময় রেলওয়ের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে, অধিকাংশ নতুন ক্রসিং এর ক্ষেত্রে কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি। অতএব সড়ক বিভাগ রেলপথের উপর দিয়ে এই সকল অবৈধ ক্রসিং তৈরি করেছে।

যখন রেল ও সড়ক পথের কোন ক্রসিং সৃষ্টি হয়, তখন নিরাপত্তাবিধানে সেখানে একটি গেট নির্মান করতে হয়। যেহেতু এসব গেটের নাম দেওয়া হয়েছে রেলগেট, সেহেতু একতরফা ভাবে এই সব গেটের নির্মান ও অন্য সব দায় ও খরচ রেলওয়ের উপর চাপান হয়েছে। এই ক্রসিং গুলোতে যখন কোন দূঘটনা ঘটে তখন কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সড়ক পরিবহন গুলোই দায়ী। কারণ ট্রেন আসতে দেখেও ঝুকি নিয়ে পার হতে যেয়েই তারা দূঘটনার স্বীকার হয়। ট্রেন তার নির্দিষ্ট পথ দিয়ে নিদিষ্ট সময়ে যাবে।

ট্রেন যাবার সময় সড়ক বাহন গুলো থেমে তাকে পথ দিবে, ট্রেনকে থামিয়ে সড়ক বাহন পার হবার কোন নিয়োম নেই। কিন্তু কোন দূর্ঘটনার পরবর্তীতে ফলাও করে প্রচার করা হয়, এই সব দূঘটনার কারণ রেলগেট না থাকা এবং দায় ভার চাপান হয় রেলওয়ের উপর। এটা যে রেলওয়ের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালান হয় তা বলে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। র আমাদের জাতীয বাজেটে যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তার সিংহভাগই দেওয়া হয় সড়ক পথে, রেল পায় সামান্য। উদাহরণ হিসাবে ২০০৭-০৮ বছরের বাজেটের দিকে নজর দিলে দেখা যায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে সড়ক পথে বরাদ্ধ ২৮৫০.৩০ কোটি টাকা ও রেল পথে বরাদ্ধ ৬৮৫.৫৫ কোটি টাকা।

পূর্বেই বলা হয়েছে এই সব নতুন ক্রসিং সৃষ্টি করছে সড়ক বিভাগ। সুতরাং এর নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব হওয়া উচিত সড়ক বিভাগের। অথচ তারা কৌশলে এর দায়িত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে রেলওয়ের উপর। এসব ক্রসিং দিয়ে যত গুলো ট্রেন যাতায়াত করে তার কম করে হলেও শতগুন বেশি সড়ক বাহন যাতায়াত করে। সুতরাং এসব ক্রসিং এ গেট নির্মান এবং তার দায় দায়িত্ব ও খরচ সড়ক বিভাগের বহন করা উচিত।

অথচ সড়ক বিভাগ এর কিছুই করছে না। এখন সব নতুন নতুন ক্রসিং এ রেলগেট নির্মান জন নিরাপত্তার স্বার্থে সময়ের দাবি হয়ে দাড়িয়েছে। বতমানে জনসাধারনের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এসব নতুন ক্রসিং গুলোতে সড়ক বিভাগের কি উচিৎ নয় গেট নির্মান ও তার দায় দায়িত্ব ও খরচ বহন করা? এটি শুধুই রেলওয়ের দায়িত্ব? আগামীতে কিছু র্দূঘটার বিবরণ তুলে ধরব যা বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে তুলবে। লেখাটি আমার কলিগ ইসলাম আরাফাতের বাংলাদেশ রেলওয়ের দূঘটনা বিষয়ক গবেষণা থেকে নেওয়া হয়েছে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।