আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কতিপয় মানুষের লোক দেখানো শপথ এবং তার ভেতরের মানুষটার শপথ (পুঃ)

একমুখাপেক্ষি না হয়ে যা কিছু ভাল তা গ্রহন করা উচিৎ...

শপথ গ্রহণ কর্মসূচী সারাদেশে সফলভাবে চলছে। তবে আমার কাছে এই শপথ গ্রহণটা মনে হচ্ছে শুধুই ভালো মানু দের জন্য। এই শপথ গ্রহণে চোর, ডাকাত, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, টেন্ডারবাজরা কখনোই শপথ গ্রহণ করতে আসছে না এবং আসবে না। তাই শপথ গ্রহণে আপনি কখনোই শুনতে পাবেননা যে কেউ শপথ করে বলছে, ”আমি আর ঘুষ খাবো না”, ”আমি আর দুর্নীতি করবো না”, ”আমি আর চাঁদা তুলবো না”। মানূষ নিজেকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে।

তাই সে নিজের দোষটা জনসম্মুখে কখনোই তুলে ধরবে না!! এটা চিরন্তন সত্য। তাই শপথ গ্রহণ ভালো মানুষের জন্য, খারাপ মানুষের জন্য না। এখন নিচে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের (ভালো-খারাপ উভয় প্রকার)বাইরের ও ভেতরের শপথ গ্রহণ তুলে ধরা হলোঃ সরকারের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ আমি শপথ করিতেছি যে, যেভাবেই হোক বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। ভেতরের মানুষটার শপথঃ ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্থই জানিনা! তবে পরবর্তী নির্বাচনে কিভাবে নিজেকে ক্ষমতায় বহাল রাখা যায় সেই উপায়সমূহ বের করবো। মন্ত্রীদের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ আমি যেই সেক্টরে আছি সেই সেক্টরকে সর্মৃদ্ধ করে তুলবো।

ভেতরের মানুষটার শপথঃ যে সেক্টওে আছি সেই সেক্টরকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি নিজেকেও সমৃদ্ধ করবো। এমপিদের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ এলাকার উন্নয়নে নিজেকে উজার করে দিবো। এলাকার কোথায় কি ধরনের সমস্যা আছে তা খুঁজে বের করে সমাধান করার চেষ্টা করবো। ভেতরের মানুষটার শপথঃ কোথায় কার কাছ থেকে অথবা কোন কোন খাত থেকে টাকা আদায় করা যায়, রাত-দিন না ঘুমিয়ে সেই উপায়সমূহ বের করবো। চেয়ারম্যানের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ গ্রামে থেকে গ্রাম-বাসীর দুঃখ-দুর্দশার সাথী হয়ে তাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার চেষ্টা করবো।

গ্রামে মানুষ থাকে! শহরের এসি রুমে থাকবো। পাজেরোতে চড়ে শহর চুষে বেড়াবো। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির শপথ(পুলিশ, র‌্যাব, আর্মি)ঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ আমরা শপথ বাক্য পাঠ করতে করতে বৃদ্ধ হয়ে গেছি। তাই আর শপথ বাক্য পাঠ করতে চাই না! ভেতরের মানুষটার শপথঃ ঘুষ দিলেই ছেড়ে দিবো শীর্ষ সন্ত্রাসীকে আর ধরবো নিরঅপরাধিকে। চিকিৎসকের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ গরিবদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।

ভেতরের মানুষটার শপথঃ বাইরের থেকে চার-পাঁচটা ডিগ্রি নিয়ে এসে দেশে প্রাইভেট মেডিকেলে বসে লাখ-লাখ টাকা কামাবো। রোগী আসলে তাকে আবার এখানে আসার মন্ত্রটা শিখিয়ে দিবো। নির্মান প্রকৌশলীদের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ সঠিক দিক নির্দেশনায় পরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট, দালানকোঠা বানাবো। কাজ পাবার জন্য কোনোপ্রকার দুর্নীতির আশ্রয় নিবো না। ভেতরের মানুষটার শপথঃ সিমেন্ট ১০০০ বস্তার জায়গায় ৫০০ বস্তা দিবো।

যেনো পরের বছরই আবার আমাকে স্মরণ করতে হয়। স্কুল-কলেজের শিক্ষকের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ আমি স্কুল কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সঠিক পাঠদান করবো। আমি তাদেরকে এমনভাবে পড়াবো যেনো তাদেরকে আর কারো কাছে পড়তে যেতে না হয়। ভেতরের মানুষটার শপথঃ আমি ক্লাসে এসে গল্প করবো এবং আমি এমন কিছু পদক্ষেপ নিবো যেনো ছাত্র-ছাত্রীরা আমার কাছে আসতে বাধ্য হয়। বিশেষ করে প্র্যাকটিক্যাল নম্বরগুলো আমি আমার হাতে যতœ করে রেখে দিবো।

রসায়নে লবনের পরীক্ষা করা ছাড়াই অনেককেই ২৫ এ ২৫ দিয়ে দিবো। জীববিজ্ঞানে কাউকেই ব্যঙ কাটানো শিখাবো না। আমি নিজেই যে ভালো করে কাটতে পারি না!! পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ আমি আর কখনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টাকে ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে যাবো না। ভেতরের মানুষটার শপথঃ আমি বেশি বেশি করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে যাবো। বেশি বেশি টাকা আমার হাতে আসবে।

ছাত্রদল-ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ নিজেদের স্বার্থের জন্য রাস্তায় অযথা ভাংচুর ও বিশৃঙ্খলা তৈরী করবো না। কারনে অকারনে ধর্মঘট ডেকে ক্যাম্পাস বন্ধ করবো না। ভেতরের মানুষটার শপথঃ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যা যা করতে হবে তাই করবো, সেটা নৈতিক হোক আর অনৈতিকই হোক না কেনো! ব্যাবসায়ীদের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ অযথা জিনিস পত্রের দাম বাড়াবো না। ভেজাল কিছু খাদ্যের সাথে মেশাবো না। ভেতরের মানুষটার শপথঃ জিনিস পত্রের দাম অযথাই বাড়িয়ে দিবো।

মাঝে মাঝে খাদ্য সংকট সৃষ্টি করার জন্য খাদ্যদ্রব্য স্টক করে রেখে দিবো। নীলক্ষেতের বইয়ের দোকান কমিটির শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ শুধুমাত্র মলাট পরিবর্তন করে কোনো বইয়ের নতুন এডিশন বের করবো না। ভেতরের মানুষটার শপথঃ বছর ঘুরতেই মলাট পরিবর্তন কওে নতুন এডিশন বের করবো। ছাত্র-ছাত্রীদের ৬০% টাকা ফেরৎ দেয়ার পরিবর্তে ৩০-৪০% ফেরৎ দিবো। কেননা বাজারে নতুন এডিশন বের হয়ে গেছে।

চোর/ডাকাতঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ চুরি-ডাকাতি করবো না। ভেতরের মানুষটার শপথঃ চুরি ডাকাতি একসাথে করবো। সন্ত্রাসীর শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ আমি আর কোনোদিন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করবো না! ভেতরের মানুষটার শপথঃ আমি হবো শীর্ষ সন্ত্রাসী। চাঁদাবাজের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ আমি আর কোনোদিন কারো কাছে চাঁদা চাইবো না। ভেতরের মানুষটার শপথঃ সুযোগ পেলেই চাঁদা চাবো।

ছেলেকে খুন করার হুমকি দিয়ে চাঁদা চাইবো। ধীরে ধীরে চাঁদার পরিমান বারাবো। খুনির শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ আমি আর কোনোদিন খুন করবো না। ভেতরের মানুষটার শপথঃ আমি আরও ৯৫ টা খুন করে সেঞ্চুরি করবো। রাজাকারের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ আমাকে আর একবার দেশ গড়ার সুযোগ দিলে আমি দেশটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলবো।

ভেতরের মানুষটার শপথঃ মুক্তিযোদ্ধাকে সবার চোখের সামনে আবারো লাথি মারবো। চালকের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ রাস্তায় সিগনাল মেনে গাড়ি চালাব। ভেতরের মানুষটার শপথঃ কিসের সিগনাল! গাড়ি সিগনাল মানেনা। রিক্সাওয়ালার শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ কখনো কাউকে ব্লাক মেইল করবো না। ভেতরের মানুষটার শপথঃ সুযোগ পেলেই ঘাড় বাকিয়ে বসে থাকবো।

ভাড়া ২০ টাকার জায়গায় ৩৫ টাকা চাবো। বিপদে পরে কেউ না কেই তো যাবেই। আমি একজন, পেসেঞ্জার পাঁচজন। সিএন জি চালকের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ মিটারে যা ভাড়া আসে আমি সেই ভাড়াই যাত্রীর কাছ থেকে নিবো। ভেতরের মানুষটার শপথঃ মিটারে যা ভাড়া আসে আমি যাত্রীর কাছ থেকে সেই ভাড়ার দ্বিগুন ভাড়া নিবো।

বাস, লঞ্চ, ট্রেনের মালিকদের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ ঈদের সময় অযথা ভাড়া বারাবো না। যাত্রীদের হয়রানী করবো না। ভেতরের মানুষটার শপথঃ ব্যাবসাতো ঈদেও সময়ই। তখনি ভাড়া বারাবো। বখাটেদের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ মেয়েদের রাস্তায় একা পেয়ে উত্যক্ত করবো না, মোবাইল ফোনেও কাউকে বিরক্ত করবো না।

ভেতরের মানুষটার শপথঃ মেয়েদের দেখলেই শিশ দিবো। প্রেম করার প্রস্তাব দিবো। রাজি না হলে এসিড ছুঁরে মারবো। ধুমপায়ীদের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ আর কোনোদিন ধুমপান করবো না। ভেতরের মানুষটার শপথঃ বেশি বেশি করে ধুমপান করবো।

ঘন্টায় এক প্যাকেট সিগারেট টানবো। আমার টাকায় আমি টানবো, তাতে কার কি? মাদক সেবন কারীদের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ মদ, গাঁজা, হেরোইন থেকে দূরে থাকবো। ভেতরের মানুষটার শপথঃ মদ কখনোই ছাড়তে পারবোনা। গাঁজাতো নাই। হেরোইন মাঝে মাঝে খাবো।

জেলেদের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ কারেন্ট জাল দিয়ে ঝাটকা নিধন করবো না। ভেতরের মানুষটার শপথঃ কারেন্ট জাল দিয়ে ঝাটকা নিধন করবো, নয়তো বাচবো কিভাবে! খেলোয়ারদের শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ জাতীয় দলে জাতির জন্য ভালো খেলা উপহার দেয়ার চেষ্টা করবো। ভেতরের মানুষটার শপথঃ সুযোগ পেলেই আইসিএল এ চলে যাবো। কিসের জাতীয় দল। আমার সংসারের ব্যায়ভার আমাকেই বহন করতে হয়।

একজন বুদ্ধিজীবির শপথঃ বাইরের মানুষটার শপথঃ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে কিভাবে দেশকেু দেশের মানুষকে উন্নতির পথ দেখানো যায় সেই উপায়সমূহ বের করবো। প্রয়োজনে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবো। তবে কোনো দলের হয়ে নয়। সকল বুদ্ধিজীবিরা একত্রিত হয়ে দল গঠন করবো। ভেতরের মানুষটার শপথঃ কিসের রাজনীতি! আমাদের ভাবমূর্তি কেনো নষ্ট করবো? তাছাড়া আমাদের জীবনের মূল্যও রয়েছে।

প্রয়োজন হলে টিভিতে বার বার টকশোতে যাবো। এমন এমন পরামর্শ দিবো যা শুনে দেশের জনগণ বাহবা দিবে, কিন্তু সরকার ভ্র“ক্ষেপও করবে না। ------------------------------------------------------------------ ------------------------------------------------------------------ এতো এতো শপথ পাঠ না করে আমি একটি শপথই সবাইকে পাঠ করতে বলবো। আর তা হলোঃ ”আমি আমার ভেতরের ভালো মানুষটাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করবো এবং খারাপ মানুষটাকে কখনোই জাগতে দিবো না। ’ এই শপথের পেছনে যুক্তিঃ এক বাক্যে বলা যায়, প্রত্যকটা মানুষের ভেতরেই একটা ভালো মানুষ এবং একটা খারাপ মানুষ থাকে।

যাদেরকে বাইরে থেকে খারাপ মনে হয় তাদের ভেতরেও একটা ভালো মানুষ বাস করছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেই ভালো মানুষটা ঘুমিয়ে আছে। তাই প্রত্যেকটা মানুষের ভেতরের সেই ভালো মানুষটাকেই জাগ্রত করা উচিৎ। এতো এতো শপথ বাক্য পাঠ করেও যদি ভালো মানুষটাকে জাগানো না যায় তবে এইসব শপথ মূল্যহীন হয়ে পড়বে। তাই ভালো মানুষটাকেই জাগ্রত করুন সবাই।

------------------------------------------------------------------- বিঃ দ্রঃ এই লেখা সমালোচনার ভিত্তিতে লেখা। এখানে যেমন তীক্ষè যুক্তি রয়েছে, তেমনি রয়েছে কিছু ভোতা যুক্তি। ইচ্ছে করেই কিছু ভোতা যুক্তি লেখার মধ্যে রাখা হয়েছে। আর এই লেখাটা এবং শপথগুলো সবার জন্য প্রযোজ্য নয়।  


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।