আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পকেটবন্দী বয়েস পকেটেই বাড়ছে

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

উলের গাট দেখেছেন? চামড়া কুচকে-বুচকে তেমন হয়ে গেছে। কপাল, গাল, ঠোঁট, নাক, গলা থেকে পরিদৃশ্যায়মান হাত ও পায়ের অংশেও। স্যান্ডেলের ভেতর থেকে পায়ের আঙুলগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক পরিষ্কার। খালি পায়ে হাঁটেন না। তবে শতছিন্ন পরিধেয় আর ময়লা চুলের জঙ্গলের মধ্যে বৃদ্ধার ভগ্ন জীবন যখন দুই টাকার জন্য হাত বাড়ালো - তখন কেবল বয়সের কথা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো।

পৃথিবীর সকল মনুষ্য নিজের বয়েস পকেটে নিয়ে হাঁটে। ঠিকমত জানে তার মূলধন। বৃদ্ধাও জানালো - তিনি আশি বৎসরের অধিক কাল এই জাগতিক কালের পরিভ্রমক। আমার পকেটেও বেশ কিছু বৎসর জমা পড়েছে। সবার পকেটেই জমছে।

সুদসহ তার পরিমান বাড়ছে প্রতিদিন। পাই পাই হিসাব কষি - কিভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছি। বৃদ্ধার কাছে আমার অনেক জিজ্ঞাসা ছিল। জানতে ইচ্ছে হচ্ছিলো তার বিগত দিনগুলির গল্প। হয়তো বিচ্ছিন্ন, স্রোতের শ্যওলা - অথবা স্মৃতিহীন ক্লান্তিনামার অবষাদ।

দিন গুজরান এখন কেবল পেটযন্ত্রের পথ্য জোগারে। আমার পকেটে যে দিনগুলি জমছে - একমাত্র সেটুকুই চালান; এই অষ্ট্রপ্রহরের বস্তুনামা অন্য নামে ট্রান্সফার হবে। যেমন বিকল্প কোন ইস্টিশানে...একটা হুইসেল ধ্বণিতে। কিন্তু বৃদ্ধার এই মলিন আশি বছরের ইতিহাস এই পৃথিবীর উপরে গচ্ছিত আধুনিকায়নের শকটে বন্দী হতে পারতো। কি জানি।

আমি তার হাত ধরে বসে থাকলাম দুপুরের গাঢ় রৌদ্রে। পাশেই কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে। এই রোদ কাঁঠাল পাঁকা আয়োজনের পরিকল্পনা জুগিয়েছে বিক্রেতার। কুড়কুড়ে চামড়া খসানো মুখের ভেতরে দাঁতের অস্তিত্ব জানান দেয় - একসময়ে বৃদ্ধার দাঁতের সাথে কাঁঠালের সম্বন্ধ ছিল। তবে সেটা আমি বুঝলাম মাত্র তখনই যখন আমাকে একটা কাঁঠাল কিনে দিতে বললেন।

দাম জিজ্ঞেস করলাম বিক্রেতাকে। একটা মাঝারি সাইজের কাঁঠালের দাম হাকালো দেড়শ টাকা। শুনে আমার শক্তসোমর্থ দাঁতই খসে যাবার জোগার। মানিব্যাগ ঝেড়েঝুড়ে আশি টাকা দিয়ে একেবারে মাইক্রোস্কপিক একটা কাঁঠাল কিনলাম। বৃদ্ধার হাতে দিতেই তিনি সেখানে বসেই কাঁঠালটা ভাঙলেন।

তারপরে সেমি-আঠালো কাঁঠালের একটা কোষ যখন তিনি মুখের ভেতরে ছেড়ে দিয়ে ঠোঁট-আঙুলের ভোজভাজিতে বিচিটা আলাদা করে দূরে ছুড়ে মারলেন - এক অভূতপূর্ব দৃশ্য চোখের সামনে নেচে উঠলো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.