আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইকোর খেরোখাতা

Let the wind blow out the candles
সন্ধ্যার দিকেই এখানকার আকাশে গোলাপী আভা জমা হতে শুরু করে। দিগন্তজুড়ে যে রক্তিম আভা শেষমুহুর্ত জুড়ে খেলা করছে সেটার ত্রুটিগুলো ধরার জন্য আমার ফোটোসেলের চোখজোড়ায় অতিরিক্ত শক্তি সরবরাহ করতে হল। আমি একজন পেশাদার ডিজাইনার। গ্রহের গোধূলীলগ্নের পারফেক্ট একটা শেপ এনে দেওয়া ছাড়া আমার সময় কাটে বাজারে আসা নতুন সব দুর্ধর্ষ এটমিক ব্লাস্টারের ম্যানুয়াল পড়ে। কাউকে না জানিয়ে বেআইনি তিনটি এটমিক ব্লাস্টারও জোগাড় করেছি।

জীবনের প্রতি বতৃষ্ণা থেকেই কিনা কে জানে, ধ্বংসলীলা উপভোগের জন্য মাসে আমি কয়েকশো ইউনিট খরচ করি। "ক্রিভা, তোমার পারমাণবিক ব্যাটারী রিচার্জের সময় হয়েছে। " শৈশবে একবার চেষ্টা করেছিলাম মস্তিষ্কের পেছনের যে অংশটায় কৃত্রিম অনুভূতি দেওয়া হয়, সেটা নষ্ট করে দিতে। কপোট্রোন খোলার অনুমতি সবার নেই, লাইসেন্সধারী নিউরাল সার্জনেরই কেবল কপোট্রন খোলার অনুমতি আছে। কপোট্রোন না খুলে আরেকটা সহজ উপায় ছিল প্রচণ্ড শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ফিল্ডে নিজেকে বিসর্জন দেওয়া।

সেটাও করা হয়নি, কারণ গ্রহটিতে অবৈধভাবে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করা সপ্তম মাত্রার অপরাধ। সপ্তম মাত্রার অপরাধের লিস্টি খুব বড় নয়, যে তিনটি অপরাধের লিস্ট আছে অবৈধ ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি তার মধ্যে একটি। অবৈধ ব্লাস্টার রাখা মাত্র চতুর্থ মাত্রার অপরাধ। গুলি করে কারো কপোট্রন উড়িয়ে দেওয়া ষষ্ঠ মাত্রার অপরাধ, শাস্তি বড়জোড় এক দশক নেভুলা গ্যালাক্সিতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হবে। রবোটের কপোট্রণ উড়ানো কোন অপরাধের মধ্যেই পড়ে না, রবোটের মালিককে কয়েকশো ইউনিট ক্ষতিপূরণ ধরিয়ে দিলেই হবে।

"মহামান্য ক্রিভা, আপনার বিশ্রাম গ্রহণের প্রয়োজন। " - তুমি জানো না আমি তোমার মত অপদার্থ নই। আমার মস্তিষ্কে প্রতিনিয়ত কি খেলা করে সেটা জানার ক্ষমতা তোমার তৈরি হয়নি। "মহামান্য ক্রিভা, আমি আপনার কথা অস্বীকার করছি না। কিন্তু মস্তিষ্কে স্টিমুলেশন নিয়ে কাজ করা আপনার জন্য সুখকর হবে না।

" কথা সত্য। স্টিমুলেশন নেবার সময় তরঙ্গের অসম উপস্থাপনার সময় অবর্ণনীয় যন্ত্রণা তৈরি হয়, চতুর্থ প্রজন্মের কপোট্রনও ব্যালেন্স রাখতে পারেনা। প্রচণ্ড যন্ত্রণা সহ্য করে হলেও গত তিনদিন ধরে আমি স্টিমুলেশন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। গোধূলীলগ্নে দিগন্তরেখায় তৈরি হওয়া কৃত্রিম ফটোইফেক্টের ত্রুটিগুলো তাও ধরতে পারছিনা। স্বাভাবিক ফটোসেলের চোখে এই ত্রুটি ধরা পড়বে না।

কিন্তু আমার ফোটোসেল চতুর্থ প্রজন্মের, ক্রিটিকাল এররগুলো তাই ধরা পড়ে যায়। - ইরি, স্টিমুলেশন দেবার মডিউল প্রস্তুত কর। "মহামান্য ক্রিভা, " গলায় আহ্লাদ ঢেলে ইরি আমার কাছে এসে বলল, "আমি যদি তৃতীয় প্রজন্মের রবোট না হয়ে আপনার মত হতাম, তাহলে হয়ত আমার অনুরোধ আপনি ফেলতে পারতেন না। " কাছে এসে আমার হাত ধরে ইরি কথা শেষ করল - "আপনার ফোর্থ জেনারেশনের কপোট্রনে যে কি গ্রেম্যাক্সের তরন্গ খেলা করে, সেটা বোঝার ক্ষমতা যদি আমার থাকতো!" আমি চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম, সেটা বোঝার ক্ষমতা তোমার কোনদিন তৈরি হবে না। কারণ তুমি একটা রোবোট বিশেষ।

দুশো মেগাইউনিট থাকলে তোমার মত কয়েকা অপদার্থ আমি আামার ড্রয়িংরুমে বসে তৈরি করতাম। ইরি আহত হয়ে দাড়িয়ে থাকে। ও'র গোলাপি গালে গোধূলীর শেষ আলোকছটা পড়ে বিচ্ছুরিত হচ্ছিল। তৃতীয় মাত্রার যেকোন গর্দভ রোবট ইরিকে দেখলে এক্ষুনি প্রেমে পড়ে যেতো। আমার ওর গালে পড়া গোধুলির আলোকছটার বিচ্ছুরণের ক্রিটিকাল এররগুলো ধরার জন্য আমার ফোটসেলের চোখ আপনা থেকেই বেগুনী হয়ে গেল।

ভাঙ্গা গলায় ইরি বলল - "মহামন্য ক্রিভা, আপনি এমনভাবে বলছেন আমি একটা জন্জাল রবোট ছাড়া কিছুই না। আপনি কি অস্বীকার করবেন আপনার মধ্যে যে অনুভূতি আছে সেটা আমার কপোট্রণে অণুরণিত হয়না?" ইরির গালে পানি চিকচিক করছিল। "চতুর্থ মাত্রার কপোট্রন যদি আমার থাকতো, তাহলেই হয়ত বুঝতাম অনুভূতি কি। " - অনুভূতি বোঝার জন্য তোমাকে মানবসন্তান হতে হবে, মূর্খ রোবোট। অবাক হয়ে আমি লক্ষ্য করলাম, মানুষ শব্দটা উচ্চারণ করার সময় আমি ভোকাল কর্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললাম।

কেন্দ্রীয় ডেটাবেইজ নিয়ন্ত্রিত গবেষণাগারে মানুষ শব্দ উচ্চারণ তৃতীয় মাত্রার অপরাধ। ইরির গলা থেকে অবশ্য দুর্বোধ্য সব যান্ত্রিক শব্দ বেড়িয়ে আসছে। কথা শেষ করার সাথে সাথেই টাইটেনিয়াম রড খুলে ইরির কপোট্রনে আঘাত করেছি। ইরির হালকা গোলাপী শাড়ি কপোট্রন শীতলকারী সবুজ তরলে ভিজে নতুন একটা ফটোইফেক্ট তৈরি করেছে। ইফেক্টের কৃত্রিমতাটুকু ধরার জন্য ফটোসেলের চোখে অতিরিক্ত পাওয়ার সাপ্লাইয়ারটি সচল করতে গিয়ে আমি সামলে নিলাম।

তৃতীয় মাত্রার রবোট ধ্বংস করা পঞ্চম মাত্রার অপরাধ, এটির জন্য কেন্দ্রীয় তথ্যাগারের এলিট প্যানেলে আমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে। ইরির বিদীর্ণ কপোট্রণ থেকে তখনো বিচিত্র সব যান্ত্রিক শব্দ থেমে থেমে আসছিল। সেই সাথে ছেড়া তারে শর্ট হওয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ। আমি অবাক হয়ে দেখলাম বিগত তিনদিনে প্রথমবারের মত আমি কপোট্রনে উত্তেজনা অনুভব করছি। গোধুলীলগ্নে তৈরি হওয়া ফটোইফেক্টের ক্রিটিকাল ভুলগুলোও মাথা থেকে সড়িয়ে দিলাম।

শার্টের কলার টা ঢিলে করে দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলাম, এখন এরা ইরিকে খুজে বের করে হান্গামা শুরু করবে। শুধু শুধু এক মেগাইউনিট জরিমানাও গুনতে হবে আবার। ধুর, এই ইউনিট দিয়ে কতগুলো ব্লাস্টার জমানো যেতো! গাড়ি নিয়ে পার্কিং লট থেকে যখন ক্রীভা নামের চতুর্থ প্রজন্মের যন্ত্র-মানবটি বেড়িয়ে গেল, তখন গ্রহটিতে আধার নেমে এসেছে। হালকা ঝড়ো হাওয়ায় গ্রহটির সমুদ্রতটের গাছগুলোর পাতা তিরতির করে কাপছিল। মনিটরের সুইচটি অফ করে দিয়ে চেয়ারে গা হেলান দিয়ে বসলেন রিও।

=কি মনে হয়, এ আর কয়টা রবোট উড়িয়ে দেবে? - যতগুলি খুশি উড়াক না। রবোট কি তোমার বাপের তৈরি করে দিতে হচ্ছে? = বাজে কথা বলো না। প্রজেক্ট সাকশেসফুল হবার পরও তোমার মত বুড়ো হাবড়া'র মত মুখ করে রাখে যেগুলো সেগুলোকে ধরে নেভাল গ্যালাক্সিতে ছেড়ে দেওয়া উচিত! - হুম = কি ব্যাপার? এনিথিং রং? - নো, নাথিং। বলার পরও রিও'র ভ্রু কুচকে যেতে থাকে। চোখ এখনো কালো মনিটরের পর্দায়, যদিও ফোকাস অসীমের দিক থকে সড়ছিল না।

চলবে। পরবর্তী পর্ব - Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।