আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইকোর খেরোখাতা (২)

Let the wind blow out the candles
পর্ব - ১ গ্রহটির মানব-ক্লোনিং সেন্টারের আকাশের কাছাকাছি একটি কক্ষে বসে আমি আপাতত অসীমে দৃষ্টি ফোকাস করে রেখেছি। গ্রানাইটের টেবিলের ওপাশের চতুর্থ প্রজন্মের সুন্দরী একজন রবোট-মানবী গোপন চ্যানেলে কারো সাথে কথা বলে গেলেও সেটা নিয়ে ভাবার সময় আমার এখন নেই, কারণ এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি নিয়ে আমার এখন ভাবতে হচ্ছে সেটি হচ্ছে একটি যুক্তিসঙ্গত অযুহাত তৈরি করা। প্রায় শতাব্দী আগে যখন গ্রহের রবোটগুলো মানবদের অপসারণ করেছিল তখন মানব-প্রজাতির একটি ক্ষুদ্র অংশকে কেন্দ্রীয় তথ্যাগারের ক্লোন ল্যাবরেটরীতে রাখা হয়েছে। রবোটরা যেহেতু মানবীয় গুণাবলী চূড়ান্ত পর্যায়ে অধিকার করতে চায়, সেহেতু মানব সভ্যতার বিকাশ ও ইভুলোশন ট্র‌্যাক করা প্রয়োজন। প্রয়োজন শেষে গিনিপিগ-মানবদের আস্তাকুড়ে ছুড়ে দেওয়া হয়, অথবা মস্তিষ্কে স্টিমুলেটর ঢুকিয়ে অনুভূতি-যাচাই ল্যাবরেটরীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সেই মানুষদের সাথে দেখা করার সম্ভাব্য একটা যুক্তি আমাকে তৈরি করতে হবে। কেন্দ্রীয় তথ্যাগারের এই পর্যন্ত যে আসতে পেরেছি সেটা আমার পদমর্যাদা'র জোড়েই, সাধারণ রবোট এখানকার ছায়াও মারাতে পারেনা! সুন্দরী যন্ত্র-মানবী চ্যানেলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে করতে বলল, তুমি কেন মানব ক্লোনদের সাথে সাক্ষাৎ করতে চাও। = আমি গ্রহের জিওগ্রাফিকাল ডিজাইনার পদের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক। নিরাপত্তা জনিত কারণে আমি তা তোমাকে বলতে বাধ্য নই। রবোট-মানবীর কঠিন মুখে হঠাৎ হাসির রেখা দেখে আমার অস্বস্তি লাগল।

- "তুমি নিজেকে এত যোগ্যতাসম্পন্ন ভাবলে হলোগ্রাফিক চ্যানেলে সরাসরি কেন্দ্রীয় তথ্যাগারেরর সাথে কথা বল, আমার সময় নষ্ট করো না" আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। ঝাড়িতে কাজ হলোনা। রবোটী উল্টা ঝাড়ি নিয়ে নিয়েছে। মানবিক গুণাবলির নতুন আপডেট প্যাকেজটা তাহলে মন্দ হয়নি! আমি বললাম, বলয়ের বাইরে কিছু ক্রিটিকাল ফটোইফেক্ট তৈরি সংক্রান্ত গবেষণার জন্য আমার সত্যিকারের মানব-ক্লোন প্রয়োজন। একটু থেমে যোগ করলাম - তাছাড়া হলোগ্রাফিক চ্যানেলে যোগাযোগ না করায় তোমার সাথে কিছুক্ষণ বসা গেল, এটাও মন্দ কি! রবোট-মানবী মনে হয় নরম হতে শুরু করেছে।

তার ঠোটে খেলা করা বিদ্রুপের হাসিটাও থিম-চেন্জ করছে মনে হল। সে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে কিছু মানব-ক্লোনের রেটিনা দেওয়া হবে। না না, আমি তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে বসলাম। আমার মানবিক অনুভূতি যাচাই এর প্রয়োজন, রেটিনার সাথে তাদের মস্তিষ্কে কি অনুভূতি কাজ করে, মস্তিষ্কের কোন অংশ স্টিমুলেশন পায় সবই জানা দরকার। শুধু রেটিনা দিয়ে আমার কোন কাজই হবেনা, আমার জ্যান্ত মানুষের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটানো প্রয়োজন।

রবোট-মানবী স্থির চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয় সে আমার ওপর বিশ্বাস আনতে পারছে না। আমি একটু অনুরোধের গলায় নরম করে বললাম, তুমি কেন্দ্রীয় তথ্যাগারে আমার অনুরোধ জানিয়ে দেখ, আর সিকিউরিটি নিয়ে কোন চিন্তা করো না, সেসব তো তোমরাই ভালো বোঝ। একটু থেমে রবোটীর ফটোসেলের দিকে তাকিয়ে আমি বললাম, আর চোখ যে সরাসরি মস্তিষ্কের সাথে জড়িত সেটাতো তুমি জানো। গবেষণার জন্যই জ্যান্ত মানুষ আমার দরকার।

রবোট-মানবী কিছুক্ষণ জানালার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ঠিক আছে, তোমাকে অনুমতি দেওয়া হল। তবে শর্ত রয়েছে- তোমাকে অবশ্যই আমাদের ল্যাবরেটরীতেই কাজ করতে হবে। রবোটী আমার দিকে একটা ক্রিস্টাল ছুড়ে দিয়ে বলল, এতে সব নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালার একটি ব্যাতিক্রম হলে তোমাকে বাকি জীবন নেভুলা গ্যালাক্সিতে কাটাতে হতে পারে। আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিলো না, এত সহজে কিভাবে অনুমতি আদায় করে ফেললাম! ক্রিস্টালটা নিতে নিতে আমি বললাম, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।

কবে কোথায় আমাকে আসতে হবে বলে দাও শুধু। রবোটি আমার ফটোসেলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমরা হলোগ্রাফিক চ্যানেলে তোমার সাথে যোগাযোগ করব। ____________________________ বন্ধ সেলটিতে ঢোকার সাথে সাথেই আমি চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। সেনসিটিভ ক্যামেরাগুলো আর মাইক্রোফোন বিকল করা দরকার। মানব ক্লোনের সাথে আমার কথোপকথন আমি কাউকে শুনতে দিতে চাইনা।

ভিবি মডিউলটি চালু করতেই সেটি সম্ভাব্য সব ফ্রিকোয়েন্সি সার্চ করা শুরু করে দিল। নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি খুজে পেলে আপনা থেকেই ডামি কথোপকথনের সিগন্যাল পাঠাতে শুরু করবে, সেটা নিয়ে আমাকে বিশেষ চিন্তা করতে হচ্ছে না। এই মুহূর্তে আমার চিন্তা হচ্ছে মানব-ক্লোন একটি রবোটকে কিভাবে নেবে সেটার কথা চিন্তা করে। কাচের দরজাটি সন্তর্পনে খুলে আমি ভেতরের সেলটিতে ঢুকে পড়লাম। টেবিলের ওপাশে একজোড়া তরুণ-তরুণীর সাথে আমার চোখাচোখি হল।

এরাই তাহলে সত্যিকারের মানুষ! রক্তমাংসের গড়া মানুষের শরীর একবার ছুয়ে দেখতে আমার কপোট্রন উশখুশ শুরু করল। নিজেকে সামলে নিতে নিতে আমি বললাম, হাই.... আমি ক্রিভা, তোমাদের সাথে পরিচিত হয়ে খুশি হলাম। তরুণ - তরুণীজোড়া নিজেদের মধ্যে দৃষ্টিবিনিময় করে ভীত চোখে আমার দিকে তাকালো। তরুণ ছেলেটি আমার দিকে চেয়ে সরাসরি প্রশ্ন করল, আপনি কি চান অনুগ্রহ করে সরাসরি বলুন। গিনিপিগের সাথে ছেলেখেলা করতে নিশ্চয়ই সুস্থ মননের কারো ভালো লাগার কথা না।

ছেলেটির কথা শুনে আমি থমকে গেলাম। সত্যিই তো এরা আজ গিনিপিগ! পৃথিবীতে নিজেদের রাজত্ব নিজেরা ধ্বংস করে আজ কিনা প্রাণহীন যন্ত্রের কাছে নিজেদের বিসর্জন দিয়েছে। নিজেদের ধ্বংসের পথ যারা নিজেরাই সূচনা করে, তাদের কি সত্যিই বুদ্ধিমান জীব বলা চলে? মেয়েটি উশখুশ করে বলে উঠল, শুনেছি আপনাদের রবোটদের মাঝেও আজকাল মানবিক গুণাবলী দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো নাকি মানুষের থেকেও উন্নত। আমার ধারণা ছিল যার মানবিক গুণাবলী যত উন্নত, তার আত্মসম্মানবোধ তত বেশি।

মেয়েটি শীতল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, যার প্রাণ নেই তার প্রাণীর অভিনয় অর্থহীন! যন্ত্রের ভালোবাসার কোন জৈবিক অস্তিত্ব নেই, সেটার সব ক্রেডিট কোন কৌশলী প্রোগ্রামারের! মেয়েটির কথা শুনে আমার ফটোসেলের চোখ কমলা হয়ে উঠল, মেয়েটা মনে হয় আমার চেহারা দেখে নিজেকে সামলে নিল। আমি বললাম, মেয়ে, তোমার বোঝা উচিত, এসব কথা তোমার কাছ থেকে শোনার জন্য আমি আজ এখানে আসিনি। বরং তোমাদের কিছু কথা শোনাবার আছে আমার। ছেলেটি হিশহিশ করে বলল, আপনার যা বলার আছে বলতে পারেন। এরপর মেয়েটির দিকে তাকালো।

আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত। অনুমান করতে পারি কি বলার আছে আপনার। -না মানব সন্তান। সম্ভবত এইমুহুর্তে নেই। দু'জোড়া চোখ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।

আমি ওদের চোখের দিকে তাকিয়ে আসতে আসতে বললাম, আমি রবোট নই। পরের পর্ব
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।