আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাত্রি শেষের আগে ক্ষুধার পরিসমাপ্তি (১৮- পুস্ট)

একট হাসি, অলস দুপুর, এক ফোঁটায় জলের পুকুর।
রাত জাগার অভ্যাস আমার পুরাতন। মাঝরাত্তিরে খাওয়া দাওয়া নিয়ে বেশ কিছু কাহিনী আছে আমার। এই যেমন, একটা সময় ছিলো আমার আর ভাইয়ার দেখা এবং কথা হতো কেবলই রাতে। ভাইয়ার পরীক্ষা ছিলো কি একটা সি এফ এ না কি যেন, আর আমার টার্ম ফাইনাল।

আমি সারা রাত পড়তাম, ভোরটা ঘুমিয়ে সকাল থেকে সারাদিন লাইব্রেরীতে, বিকেলে বাসায় ফিরে আরেকটা ঘুম দিয়ে কিংবা টিভি দেখে আবার রাতে পড়তে বসতাম। ভাইয়া সন্ধ্যা থেকে পরা শুরু করে সকাল পর্যন্ত, তার পরে সারাদিন ঘুম। তখন, সাড়ে তিনটা/চারটার দিকে আমাদের ক্ষুদা লাগতো। মাইক্রোওয়েভ তখনও আসেনি বাসায়। যার হাতের পড়াটা শেষ হতো সেই গিয়ে চা আর ম্যাগী বসায় দিতো চুলায়।

বেশিরভাগ ই ভাইয়াই করতো, আমিও করতাম মাঝে মাঝে। এরপরে রান্না হলে দুজনে বারান্দায় বসে খাওয়া এবং আড্ডা- আধ ঘন্টার ব্রেকের পরে আমি ঘুমাতে যেতাম আর ভাইয়া পড়তে। একদিন মা ইন্সট্যান্ট ম্যাগীর বদলে ফ্যামিলি প্যাক নিয়ে এসেছে। আমিও খেয়াল না করেই চুলায় বসায় দিয়েছি। মশল্লা আমি বা ভাইয়া আলাদা নিয়ে খাই, সুতরাং শুধু সেদ্ধ করলেই আমাদের ম্যাগী তৈরি হয়ে যেত।

আমি নুডল চুলা থেকে নামিয়ে আলাদা বাটিতে নিয়ে চা বসাতে বসাতে ভাইয়া তার বাটি নিয়ে মুখে দিয়ে ফেলেছে। কেমন যেন হকচকানো শব্দ শুনে আমি ঘুরে তাকালাম। ভাইয়া খুব নরমালি বললো, সেমাইয়ে মিষ্টি কম হয়েছে। আরেকদিন, আমি জমা দিয়ে এসে ক্লান্ত, বিকেলে বাসায় ফিরেই ঘুম। সাধারাণত, জমার সময় মা মুখে তুলে খাইয়ে দেয়, না হলে দেখা যায় কাজের অথবা ক্লান্তিতে কিংবা ঘুমিয়ে আমি নির্ঘাত খাওয়ার কথা ভুলে গেছি।

তো সেদিন রাতেই ভাইয়া মালয়াশিয়া থেকে ফিরেছে। আরও জানি কি কি হয়েছিলো, মোদ্দাকথা মা আমাকে খাইয়ে দেয়নি। আমি দেরটায় উঠলাম, জোম্বির মতন ভাইয়ার ঘরে নক, দরজা খুলতেই খবার কই কি আছে? ও বললো জানিনা। চকলেট আনসি। আমি বললাম গুড দেও।

ও টবলেরনের ৬ প্যাকের যে মেগা প্যাক, ওটা ধরায় দিলো। আমি কোনো বিকার ছাড়া একটা আস্ত প্যাক সাবাড় করে ঘুমায় পড়লাম। সকালে মা'র মনে পরার পর বেচারী কি করবে না করবে ভেবে আমার ঘরে ঢুকেই দেখে টবলেরন। এরপরের দুঃখের ইতিহাস না হয় বাকি থাক। শেষ গল্পটা হাউজিং প্রজেক্টের সময়।

জমার কিছু আগের কথা। সেদিন খুব মেজাজ খারাপ সবার। হঠাৎ আদবানা বললো ডিম ভাজি খাবো। আমি বললাম চল। শারিকা বললো সমস্যা হবে নাতো? আমার বাসায় কখনো সমস্যা হয় কিছুতে?- আমি উল্টা ঝাড়ি মেরে সোজা ফ্রিজের কাছে।

বাকি তিন জনও উঠে আসলো সাথে সাথেই। ডিম বের করলাম আমি, শারিকা নিলো তেঁতুলের সস। চুলা ধরালো আদবানা, ফ্রাই প্যান ধুলাম আমি, ডিম ফেটলো শারিকা। আমি চুলায় ফ্রাইপ্যান দিতেই তেল নিলো শারিকা। ফ্রাইপ্যান শুকাতেই আমাকে সরিয়ে তেল ঢেলে দিলো আদবানা তাকে সরিয়ে ডিম ঢেলে দিলো প্যানে।

যাদের রান্নার অভিজ্ঞতা আছে, তারা বুঝে গেছেন এই জগা খিচুড়িতে ডিম গেলো লেগে। সুতরাং আদবানাকে সরিয়ে সেই দিম ভাজিকে আমি স্ক্রাম্বল করে ফেললাম। ততক্ষণে শারিকা বাটি ধুয়ে নিয়ে নিয়েছে, আদবানা চারটা কাঁটা চামচ এনে ফেলেছে, আমি স্ক্রাম্বলড ডিম ঢেলে নিলাম বাটিতে। ফ্রাইপ্যান সিংকে ডুবিয়ে ডিমের খোসা বালতিতে ফেলে এসে জয়েন করলাম স্ক্রাম্বলড ডিম উইথ তেঁতুলের সস উৎসবে। পুরো ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিত মুনিয়া খানিক অবাক হয়ে বললো তোরা সত্যি সত্যি ডিম রান্না করে ফেললি? আমি আবারো ঝাড়ি দিয়ে বললাম, খাবি নাকি শেষ করলাম? মুনিয়া যখন আমাদের সাথে খাওয়ায় জয়েন করলো, তখন ঘড়িতে বাজে সাড়ে চারটা।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।