["বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ভূ-খন্ডের প্রয়োজনীয়তা কার স্বার্থে ?" - এই শিরোনামে নিক "আগামি" একটা পোষ্ট দিয়েছিলেন গতকাল। Click This Link
"অর্থনৈতিক মুক্তি" এর দিক থেকে দাড়িয়ে দেখে এটা "কমিউনিষ্টদের" একটা বহু পুরানো সমালোচনা বা আক্ষেপ। মূল লেখা আর মন্তব্যগুলো পড়তে পড়তে লক্ষ্য করছিলাম প্রায় সবাই আক্ষেপের সুরে সূর মিলিয়েছেন। অথচ এক্ষেত্রে আমার অবস্হান সম্পূর্ণ বিপরীত। সেজন্য কিছু লিখতে একটু অস্বস্তি বোধ করছিলাম।
আবার প্রসঙ্গটা সিরিয়াস আলোচনার দিকে নেবার লোভ সামলাতে পারছিলাম না। পরিণতিতে এই আলাদা বিপরীত পোষ্ট। ]
নিক "আগামি", আপনার "অর্থনৈতিক মুক্তি" খোঁজা দেখে আমার মনে হয়েছে, লেখাটা একটা 'কমিউনিষ্ট' অবস্হানে দাড়িয়ে লেখা ক্রিটিক - এভাবে মনে করা যেতে পারে। আলোচনা আগাবার সুবিধার জন্য এটা ধরে নিলাম, আশা করি আপনার আপত্তি হবে না।
কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, কৃষক প্রজা পার্টির পাশাপাশি কমিউনিষ্ট পার্টিও কিন্তু ১৯২০ সাল থেকেই অবিভক্ত ভারতে বিরাজ করছিল এবং বিভিন্ন দল উপদল হিসাবে বিভক্ত হলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশেও আছে।
আপনার "অর্থনৈতিক মুক্তি"র রাজনীতির খবর নিতে গেলে কমিউনিষ্ট পার্টিরও একটা মূল্যায়ন, পরীক্ষা আপনাকে করতেই হবে, ঠিক যেমন আপনি কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও আওয়ামী লীগের সম্পর্কে ১৯৪৭ ও ১৯৭১ এর সংক্ষিপ্তভাবে মূল্যায়ন টেনেছেন। আপনার বক্তব্য এই মূল্যায়নের উপর দাঁড়িয়ে আছে।
কমিউনিষ্ট রাজনীতিতো সবসময়ই কংগ্রেস, মুসলিম লীগের পাশপাশি হাজির ছিল। তাহলে কেন কংগ্রেস বা মুসলিম লীগই নিজেদেরকে আপনার "৯০ ভাগ" মানুষের পছন্দের দল হিসাবে জায়গা করে নিতে পারল। আর কমিউনিষ্ট পার্টিকে তা দাড়ায় দাড়ায় দেখতে হলো কেন? - এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের খুজতে হবে।
এটা স্রেফ "১০ ভাগ যে ৯০ রে বোকা বানাইতে পারে" - একথা বলে পার পাওয়া যাবে না। "অর্থনৈতিক মুক্তির" চিন্তাভাবনাকারী কমিউনিষ্ট পার্টিও কেন "৯০ রে বোকা বানাইতে" না পারুক ৫০-৬০ ভাগ রেও কেন পারলো না? এর সদুত্তর দরকার।
আপনার 'ধনিক শ্রেণী", "নব্য ধনিক শ্রেণী", "শোষণ", "শোষক" - এই ভোকাবোলারিগুলো ভারতীয় উপমহাদেশীয় কমিউনিষ্ট পার্টির সমান বয়সী। ১৯৪৭ সালের আগে একবার আর একই কায়দায় ১৯৭১ এর আগে (সোভিয়েত ধারা বাদে) কমিউনিষ্ট পার্টি রাজনৈতিক পরিস্হিতির মূল্যায়ন করেছিল - একইভাবে একই সারসংক্ষেপ করেছিল - ভোটের আগে ভাতের প্রশ্ন সমাধা করতে হবে। এই রাজনীতি সঠিক হোক বা বেঠিক; কিন্তু মানুষ শুনেনি সেই কথা।
ফলে কাজেও আসেনি। কেন?
আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক নই। শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগও নয়, আর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের তো প্রশ্নই উঠে না।
এখানে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন দেখলাম "৬৯ এর গণ আন্দোলন টা আবার দরকার"। এটা খুবই ভাল প্রস্তাব - সন্দেহ নাই।
ঐ গণঅভুত্থান কিন্তু ছিল ভাসানী-শেখ মুজিবের আন্দোলন। মাঠের দিক থেকে দেখলে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পাশপাশি শ্রমিক আন্দোলনে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে কমরেড তোয়াহার (তাঁকে ভাসানী ন্যাপের নেতাও বলা যেতে পারে) ভুমিকা ছিল খুবই নির্ধারক। অভ্যুত্থানে হার মানা আয়ুব খান ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি একথা ঘোষণা দিয়ে তবেই গণঅভ্যুত্থানে বিরতি টানতে পেরেছিল। সেই সাথে ক্ষমতা হস্তান্তরের মোডালিটি বা আইনগত পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে গোলটেবিল আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিল। আয়ুব খানের এই ঘোষণার পর এই গণঅভ্যুত্থান একটা বিরতি নেয়।
ক্ষমতা হস্তান্তরের মোডালিটি বা পদ্ধতি ঠিক করার এই আলোচনা যেটা পরবর্তীতে ফলাফলে LFO বা "লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার" নামে পরিচিতি নেয় ও LFO এর পক্ষে প্রেসিডেন্টের ডিক্রি জারি করে একে আইনে রূপান্তরিত করা হয়েছিল; প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ১৯৭০ এর নির্বাচন (কনষ্টিটিউশন বা গঠনতন্ত্র প্রণয়ন সভার সদস্য নির্বাচন) আহ্বানের আইনগত ভিত্তি এটাই।
এখন, কমিউনিষ্টরা সেই আলোচনা বর্জন করেছিল কেন? ভাসানী কেন সেই আলোচনা বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন? এই প্রজন্ম আজকের রাজনীতির ধরণ-ধারণ দেখে যেন ভেবে না বসেন শেখ মুজিব আর ইয়াহিয়া (অভ্যুত্থান শেষে ততদিনে, আয়ুব ইয়াহিয়ার কাছে ক্ষমতা দিয়ে পদত্যাগ করেছিল) মিলে আতাঁত করে ভাসানী বা কমিউনিষ্টদের আলোচনার বাইরে রেখে LFO করেছিল। মনে রাখতে হবে ১. ভাসানী ন্যাপ ও কমিউনিষ্ট পার্টি দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে এই আলোচনায় অংশগ্রহণ না করা ও বর্জনের ডাক দিয়েছিল। ২. জেল থেকে মুক্তি হয়ে শেখ মুজিব LFO আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন; এবং আক্ষরিক অর্থেই আলোচনায় যাবার পথে মুরুব্বী হুজুরের ভাসানীর দোয়া সমর্থন চাইতে তাঁর বাড়ি হয়ে গিয়েছিলেন।
অর্থাৎ ঘটনার সোজা মানে দাড়িয়েছিল, ভাসানী ন্যাপ ও কমিউনিষ্ট পার্টির সিদ্ধান্ত ভাসানী ও শেখ মুজিব উভয়েই শ্রদ্ধা জানিয়ে মেনে নিলেন।
আর, এতে দুজনার দলীয় রাজনৈতিক অবস্হান দুই রাজনীতির পথে হাটা শুরু হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আলোচনায় সফলতার জন্য শেখ মুজিবের দোয়া চাওয়া ও ভাসানীর দোয়া করা আগামি বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্ত্বপূর্ণ বাঁক নেয়া বলা যায়। বাংলাদেশের সমাজের আজ যে স্পষ্ট দুই রাজনৈতিক মেরু আমরা দেখি তার শুরুটা পোতা আছে ওখানে, নির্ধারক ঘটনা হয়ে আছে সেটা।
অনেক কমিউনিষ্ট মূল্যায়নে শেখ মুজিবকে বুর্জোয়া, বিপ্লব বিরোধী বা অপছন্দকারী নেতা বলে খাটো করার চেষ্টা দেখা যায়। অথচ, শেখ মুজিব কিন্তু কখনই দাবি করেন নি তিনি কমিউনিষ্ট, কমিউনিষ্ট বিপ্লব তার রাজনীতি বা কমিউনিষ্ট রাজনীতি করা তাঁর দলের লক্ষ্য।
ফলে কমিউনিষ্টদের এই অভিযোগের কোন সারবত্তা নাই। বরং এটাকে দেখা যেতে পারে, কমিউনিষ্টরা কেন তাদের বিপ্লব, ভিন্ন রাজনীতি সফল করতে পারলো না সেই অকর্মন্যতার প্রতিক্রিয়াজনিত ঈর্ষাকাতরতা। এছাড়া অন্যকোনভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ আমি দেখি না। কিন্তু এসব কিছু সত্ত্বেও সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ ফ্যাক্টস হলো তিনি একটা সশস্ত্র সংগ্রামের নেতা। এটাকে বলা যায় শেখ মুজিবের রাজনৈতিক চিন্তার সীমা চৌহদ্দি ছাড়ানো এক রাজনৈতিক পদক্ষেপ; যখন পদক্ষেপ বা সিদ্ধান্ত - যতদূর রাজনৈতিকভাবে চিন্তা করে নাই বাস্তবে তাকে ছাড়িয়ে চলে যাওয়া।
তাই একদিকে যেমন এটা সত্য যে বাস্তব পরিস্হিতি তাকে বুর্জোয়া রাজনীতির সীমা ছাড়িয়ে যেতে বাধ্য করেছে। অন্যদিকে এটাও সমান সত্য যে কমিউনিষ্টরা গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানে সাথে বরাবর থেকেও কেবল ফসল ঘরে তোলার সময় হলে আর গণমানুষের সাথে থাকেনি বা থাকতে পারে নি - সেই অবস্হা; এই না থাকার পিছনে, ভিন্ন রাজনৈতিক পথ নেবার পক্ষে যদিও কমিউনিষ্টদের নিজস্ব ব্যাখ্যা আছে। সারকথায় যেটাকে কমিউনিষ্টরা ভোটের রাজনীতি বলে। ব্যাখ্যাটা হলো, তাঁরা ভোটের রাজনীতির পক্ষে থাকতে চান নি, আর শেখ মুজিব ভোটের রাজনীতির পক্ষে গিয়েছিলেন। ("আগামি" আপনি এখানে ভোটের রাজনীতির বিরোধীতাকে "অর্থনৈতিক মুক্তির" রাজনীতি বলেও মনে করতে পারেন)।
কিন্তু আজ যদি বিচার করে দেখি, শেখ মুজিব কী আসলে ভোটের রাজনীতি করেছিলেন অথবা নির্বাচন-ভোটের মাধ্যমেই কী ক্ষমতা পেয়েছিলেন? উত্তর হলো না।
তিনি তো, সত্তরের নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন বলেই ক্ষমতা পান নি, ক্ষমতা তাঁকে নিতে হয়েছিল বা পেয়েছিলেন সশস্ত্র সংগ্রামে বল প্রয়োগের মাধ্যমে। অর্থাৎ নতুন রাষ্ট্র ও ক্ষমতা কেন তাঁর দলের হওয়া উচিত - নির্বাচন, ভোটের বিজয়টা এর স্বপক্ষে একটা নৈতিকতা তৈরি করেছিল ও জনগণের মুড এর পক্ষে দাড়িয়ে গিয়েছিল মাত্র। এরপর বাকি ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের গায়ের জোড়কে গায়ের জোড় দিয়ে মোকাবিলার মুরোদ; বলপ্রয়োগ করে নিজের ক্ষমতা নেয়া ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা। ফলে বাস্তবে নির্বাচন, ভোট তাঁর লক্ষ্য হিসাবে হাজির হয়নি, ক্ষমতা দখলের পথে হয়েছিল একটা হাতিয়ার বা টুল মাত্র।
কাজেই শেখ মুজিব নির্বাচন বা ভোটের পথে হাটতে LFO আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন আর তাই ভাসানী ন্যাপ বা কমিউনিষ্টরা এর বিরোধীতা করে বর্জনের ডাক দিয়ে নিজেদের "শ্রেণীর রাজনীতিতে" মনোনিবেশ করেছিলেন - এই ব্যাখ্যা ধোপে টেকে না। কারণ ভোটের রাজনৈতিক কৌশল নিলেই তা সশস্ত্র ক্ষমতা দখলের দিকে অবশেষে যাবে না এমন ধরাবাধা কোন মানে নাই। চোখ বন্ধ করে সবসময় সবধরণের ভোটের রাজনৈতিক কৌশলই খারাপ এই মূল্যায়নের কোন ভিত্তি নাই। ফলে শেখ মুজিবের রাজনীতির বিরুদ্ধে কোন সমালোচনা খাঁড়া হয় না। শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে এই কমিউনিষ্ট মূল্যায়ন ভিত্তিহীন।
তাহলে কী আসলে সমস্যাটা কোথায়? শেখ মুজিবের রাজনীতির বিরুদ্ধে কী কোন সমালোচনা খাঁড়া করা যায় না?
অবশ্যই যায়। বহু খামতি আছে আমাদের রাষ্ট্রের। তবে যে খামতি আছে তা একটা বড় কারণ কমি্উনিষ্টদের রাজনৈতিক অবস্হান। সেজন্য শেখ মুজিবের রাজনীতির মুল্যায়নের আগে (যেমন নিক "আগামি" তাঁর পোষ্ট "বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ভূ-খন্ডের প্রয়োজনীয়তা কার স্বার্থে? বলে করেছেন) কমিউনিষ্টদের নিজেদের রাজনীতির মূল্যায়ন আমাদের অবশ্যই করতে হবে। নইলে শেখ মুজিবের মূল্যায়ন অসম্ভব।
দোষ ধরবার জন্য নয়, আগামিতে একই ভুল না করবার জন্য। তবেই সম্ভব হতে পারে, জানা যেতে পারে শেখ মুজিবের রাজনীতির সমস্যাটা কোথায়, কেন এই পথটায় কাম্য সফলতা পাব না। সশস্ত্র সংগ্রাম করলেও একটা শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণতি পাবে না, যেটা আমরা এখন হারে হারে টের পাচ্ছি, ভুগছি।
সমস্যার স্পষ্ট উত্তরটা কমিউনিষ্টদের তত্ত্বেও ছিল ও আছে। পুঁজির সাম্রাজ্যবাদী যুগে বিপ্লবের গণতান্ত্রিক স্তরে কমিউনিষ্টদের নেতৃত্ত্বে তা ঘটলে তবেই একটা শক্তিশালী মাথা উচু করা রাষ্ট্রের পত্তন ঘটানো সম্ভব।
আমার বিবেচনায়, ৬৯ এর গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানের কাল এক্ষেত্রে সবচেয়ে আদর্শ উদাহরণ ও পরিপক্ক অবস্হা ছিল। কিন্তু জ্ঞানবুদ্ধির দোষে, ব্লকে ভাগ হয়ে থাকা আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কমিউনিষ্টদের উপর এর প্রভাব ইত্যাদি নানান কারণে এই পাকা ফল আমরা ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছি। ৬৯ এর ঐক্যটা ছিল সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য পারফেক্ট ঐক্য। গণতান্ত্রিক মৈত্রী জোট। এজন্যই ওটা আয়ুব খানের মত শাসককে ক্ষমতা হস্তান্তর করার ঘোষণা দিতে বাধ্য করতে পেরেছিল।
কিন্তু এরপর আমার কমিউনিষ্টরা একা শেখ মুজিবকে যেন সাম্রাজ্যবাদ-বাঘের মুখে ফেলে পালিয়ে গেলাম। আমরা কমিউনিষ্টরা কী জানতাম না গণতান্ত্রিক মৈত্রী জোট ছাড়া সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই লড়াকু রেডিক্যাল না হলে একা শেখ মুজিব তা সামলাতে পারবে না? নির্ঘাত মারা পারবে? কারণ আন্দোলনের মুড ততদিনে রেডিক্যাল হয়ে গেছে। অথচ হঠাৎ আমাদের যেন হুশ হলো আমরা কমিউনিষ্ট; 'ধনিক শ্রেণী", "নব্য ধনিক শ্রেণী", "শোষণ", "শোষক"; আমরা ধনী গরীব বলে শস্তায় এক নৃশংস বুঝ আমাদের মাথায় ভর করল। অথচ বিপ্লবের স্তর যদি বুর্ঝোয়া বলে মানি, জানি তাহলে ধনী গরীবের কথা তখন কেন তুলব? আমরা কেন দেখতে পেলাম না অর্থনৈতিক মুক্তির বাকোয়াজে তখন ধনী-গরীবের কথা তোলা মানে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক মৈত্রী জোটে বিভক্তি ঘটবে, জনগোষ্ঠির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হবে?
শেখ মুজিব বুর্জোয়া রাজনীতিই তো করবেন। তিনি অন্য কিছু করবেন এমন তো কবুল করেন নি।
সমাজে বুর্জোয়া উন্মেষে উন্মুখ চিন্তা বিরাজ করবে এটাই তো ঐ সময়ের সবচেয়ে স্বাভাবিক লক্ষণ। বুর্জোয়া বিপ্লবের যুগে বুর্জোয়া উন্মেষে উন্মুখ চিন্তার গুরুত্ত্ব যে না বুঝতে পারে কমিউনিষ্ট হওয়া দূরে থাক, সে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কিছুই বুঝে নাই। অথচ এভাবেই, ভোটের আগে ভাতের কথা তুলে, ধনী গরীবের কথা তুলে শ্রমিক আন্দোলনের সমর্থনে ৬৯ এ যে গণতান্ত্রিক মৈত্রী জোট তৈরি হয়েছিল তা ধ্বংস করে দিয়েছি। শ্রমিক আন্দোলনের সমর্থনের কারণে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত লড়াকু থাকার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তাকে বিনষ্ট করেছি।
গণতান্ত্রিক মৈত্রী জোট দূর্বল ও ভেঙ্গে পরার পরও শেখ মুজিবের সাফল্য এখানেই যে তিনি তার পরেও একে নিজের মত করে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র (দূর্বল হলেও) পর্যন্ত নিতে পেরেছিলেন।
এখানেই তিনি আমাদের নির্বিবাদ নেতা। কিন্তু বাঁচতে পারেন নাই। আমাদের দূর্ভাগ্য। যদিও, গণতান্ত্রিক মৈত্রী জোট ভাঙ্গলে এই পরিণতিই তো আমাদের হবার কথা। তবু তিনি অবশ্যই আমাদের নেতা, সাফল্যের প্রতীক।
তাঁর দোষগুণের বিচারের আগে কমিউনিষ্টদের মূল্যায়ন হতে হবে। দায়বোধ করতে জানতে হবে। সেই আশায়।
লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে তাই এখানে শেষ করব। মন্তব্য আলোচনার সময় আর কিছু কথা বলার সুযোগ নিব হয়ত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।