আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মায়ের হাতের উষ্ণতা সারাক্ষন ছড়িয়ে থাকে আমাতে..................


(মায়ের হাতের উষ্ণতা সারাক্ষন ছড়িয়ে থাকে আমাতে) আজ আমাদের এখানে মা দিবস। কাল রাতে মাকে ফোন করলাম..............হ্যালো মা শুনেই মা বরাবরের মত বললেন ," কে মা সাজি?" এমনই মা আমার । আমরা তিনবোন। আপা (বড়বোন) মায়ের কাছাকাছি থাকে। লালমনিরহাটেই।

আপু(মেজোবোন) কলকাতায়। তিনজনই ফোন করি। আপা প্রতিদিন সকালে মায়ের সাথে অনেক্ষন কথা বলে তারপর তার কাজে বের হয়। আপু ও ঠিক নিয়মিত না করলেও করে। আমি সপ্তাহে ২/৩ দিন কখনো বা তার বেশি করি।

অথচ মা ঠিক হ্যালোটা শুনেই বুঝে ফেলেন কে আমি। চমকে উঠি। এর পরেই বলেন রিং শুনেই মনে হলো তুই। আগে ভাবতাম বাইরে থেকে ফোন গেলে মনে হয় অন্যরকম রিং হয়। মা বুঝে ফেলেন।

এখানে যেমন লং ডিসটেন্স কল বোঝা যায়। এবার দেশে যেয়ে খুব খেয়াল করে রিং শুনলাম। নাহ্‌ বাইরে বা দেশের সব কলেই একই রিং টোন। তাহলে? মাঝে মাঝে এমন ও হয়। ঘুমাতে চলে গেছি।

মায়ের কথা মনে হয়। উঠে যাই। মাকে ফোন করি। ও হাসে আর বলে কি মা মেয়েতে কানেকশন হচ্ছে? মা অপেক্ষা করছে? আর তুমি বুঝতে পারছো। ঠিক তাই।

মা বলেন ,"পেপার পড়ছিলাম আর তোর কথাই ভাবছিলাম"। এই তো মা আমার। আমাদের মা। না বললেও মুখের দিকে তাকিয়ে সব কথা বুঝে ফেলতে পারে পৃথিবীতে এই একটা মানুষ। কি অসম্ভব টান।

মাকে কাল বলছিলাম মা এতদুর থেকে কিছুই পাঠাতে পারলাম না.....মা বললেন এই যে প্রায়ই ফোন করিস । কথা বলিস। আর কিচ্ছু লাগবে না মা। খুব অবাক লাগে মা কি কোনদিন ও কিছু চাইতে শেখেন নি ? আমি বলি মা আজ ও আমসত্ত্ব কিনে এনেছে। কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না।

এবার আমি যখন বাসায় ছিলাম। ভাবী ফিনল্যান্ড থেকে আসার সময় আমসত্ত্ব এনেছিলো। মা দেখলাম কদিন কুটকুট করে খাচ্ছে যখন তখন। এত ভালো লেগেছিলো। বেশ কয়েক বছর হয়ে গেলো মা শুধু দুধভাত ছাড়া কিছু খান না।

মনে মনে ভাবছিলাম মায়ের জন্য অনেক আমসত্ত্ব নিয়ে যাবো। মা ছোট্ট মেয়ের মত বসে বসে খাবে। আর সারা বাড়ী হেঁটে বেড়াবে। আমি বললাম মা প্রান কোম্পানীর একটা আমসত্ত্ব আছে ওটা ভালোই। মাঝে মাঝে কিনে আনতে বললেই হবে বাসার কাউকে।

তবে বেশী না কিন্তু। দিনে একটার বেশী না। মা হেসে জানালো ....."ভয় নেই। ব্লাডে সুগার নেই। প্রেসার ও একদম নর্মাল"।

মানে হলো সে বেশী ও খাবে। এত হাসি পেলো। বাবা মায়েরা বয়স হলে কেমন শিশু হয়ে যায়। মায়ের সাথে খোদা হাফেজ বলে ফোন রাখতেই আমার বড়ছেলে রাশীক এসে জড়িয়ে ধরে আদর করে বললো ,"হ্যাপি মাদার্স ডে। " একটু পর বললো ,"কাল বাংলাদেশী দোকানে যেয়ে একটা পছন্দের শাড়ী কিনো।

" আমি ওর বাবার দিকে অবাক তাকাতে বুঝলাম নাহ্‌ ওর কোন ধারনাই ছিলো না। খুব অবাক হয়ে ভাবছিলাম কদিন আগেই রাশীক রাইয়ানের মত স্কুল থেকে নানান কিছু বানিয়ে এনে দিতো। শুক্রবার স্কুল থেকে এনে ২দিন কি কষ্ট করে যে লুকিয়ে রাখতো। বারবার বলতো ব্যাগ খুলবেনা। সেই রাশীক এখন আমার ভালোলাগা জানে।

শাড়ী কিনতে বলে। রাইয়ান ও শুক্রবার স্কুল থেকে ২৫ সেন্ট দিয়ে একটা আংটি কিনে এনে দিয়েছে। আমার রাইয়ানের দেয়া আংটি......... গতবার এনেছিলো একটা চেইন লকেট আর কানের দুল। এবার প্যাকেট দেখে আমি তো ঠিক বুঝতেই পারি নাই কি থাকতে পারে...... আংটিটা পেয়ে হাসছিলাম । ভালো লেগেছে কিনা জানতে চাইলো।

মাথা নাড়লাম। দু'চোখ ভরে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয় সবাইকে ছেড়ে এই দুর বিদেশে বাচ্চাগুলো জন্মেছে। বড় হচ্ছে। ওদের অনুভবগুলো হয়তো আমাদের দেশের মত না।

কিন্তু প্রায়ই খেয়াল করেছি ওরা খুব বেশী নির্ভরশীল। আমরা ছাড়া ওদের যে কেউ নেই। এটা খুব বোঝে। আর তাই মনে হয় অনেকবেশী গা ঘেষা হয়। ন্যাওটা যাকে বলে।

আজ সকাল ঘুম থেকে উঠার পর থেকে মনটা তেমন ভালো ছিলো না। জাগতিক কিছু ভাবনা চিন্তায় অস্হির সময়। এর মাঝে রাশীকের ঘ্যান ঘ্যান.....যাও শাড়ী কিনো আনো মাম্‌মা। ওদের বাবাও একই গান গাইতে লাগলো। এর মাঝে বন্ধু মিনুর ফোন।

ও এলে দুজনে মিলে বাইরে যাই। টিম হর্টনে বসি। কত গল্প করি। কেমন করে সময়গুলোগড়িয়ে যায়..............ও ওর মায়ের গল্প করে। যে ৪২ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে চলে গেছে ওদের মা হারা করে।

কত বছর আগে চলে যাওয়া সেই মার জন্য ও কাঁদে । আমাদের কান্না প্রার্থনা হয়ে যায় সেই মায়ের জন্য। আমার মায়ের জন্য। পৃথিবীর তাবৎ মায়ের জন্য। আমাদের দুজনের গল্পে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকালটাও গড়িয়ে যায়........ আমাদের দুজনের গল্প ছুঁয়ে কত দুঃখ কত আনন্দ ।

ওর অকালে হারিয়ে যাওয়া মা......... বাংলাদেশে ফেলে আসা আমার মা....... কেমন করে যেনো আবিস্কার করি আমরাও তো মা............ আমার পাখীর ছানার মত দুইটা ছেলে যারা এখনো কেমন বুকের কাছে নিত্য খেলা করে। মিনুর দুইটা পুতুলের মত মেয়ে........ এদের জন্য যেনো বেঁচে থাকি । প্রার্থনা করি.......... পৃথিবীর সব বাবা মায়েদের আদরে যেনো সন্তানেরা বড় হয়। মাবাবা হীন জীবন বড় কষ্টের। বিশেষ করে যেইসব সন্তানেরা জন্মের সময় মাতৃহীন হয়।

তাদের দুঃখ পৃথিবীর আর কোন দুঃখের সমান না। যাদের কাছে মা শুধু একটা শব্দ। আল্লাহ কে বলি ...........আল্লাহ আমাদের কে সুস্হ্য রেখো। আমাদের সন্তানদের জীবনে আমাদেরকে ভীষন দরকার। পৃথিবীর সব মায়ের জন্য শ্রদ্ধা,ভালোবাসা আজকের এই দিনটাতে।

যার কাছে জন্মের ঋণ। যা শোধ করা যায়না কোন মূল্যে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.