শূণ্যস্থানঃ চারু পিন্টু
সময়টা খুব জটিল। গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন দীর্ঘ রাতের পর যে সূর্যটা উঁকি দিয়েছিলো সেটাও ক্রমশ: ফ্যাকাসে, অর্থহীন ও বিভ্রান্তিকর হয়ে পড়ছে। কালোর বদলে সাদাই মানুষের প্রত্যাশা। লাল-হলুদ বা জলপাই রঙ মানুষ পছন্দ করবেনা, মেনে নেবেনা। সাধারণ শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তি শোষণ-নিপিড়ন-সা¤প্রদায়িকতা মুক্ত বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চায়।
পাকিস্তানী মডেলের গণতন্ত্র চায় না। সে জন্য সংস্কার কর্মসূচীতে জনসমর্থন থাকবে যুক্তি সঙ্গত সময় পর্যন্ত। সোচ্চার হতে হবে তাদেরও। সংস্কারের নামে দীর্ঘ সময় নষ্ট হলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাবে। সরকারকে বুঝতে হবে অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন জনসমর্থন ধরে রাখতে পারেনা।
আরো বুঝতে হবে জনতার নেতা কে হবে তা কারো ঠিক করে দেবার মত বিষয় নয়। জনগনই ঠিক করবে কে তাদের নেতা হবেন। জনমতই সরকারের সর্বোচ্চ অধিকার বিবেচনা করতে হবে। জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য পন্থায় বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে সাম্রাজ্যবাদী কর্পোরেট পূঁজির দেশী-বিদেশী রাঘব-বোয়ালদের এবং রঙ বদলানো সুবিধাভোগী তোষামোদকারী শ্রেণীর ব্যাপারে এবং যতদ্রুত সম্ভব অবাধ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
অন্যথায় সরকারকে জনগন একসময় সুবিধাভোগী সাম্রাজ্যবাদী কর্পোরেট পূঁজির ক্রীড়ানক এবং নয়া দখলদার হিসেবে ভাবতে শুরু করবে। তখন ফলাফল ভিন্ন জবে। এটা কারো কাম্য হবে না।
একজন কবি-সাহিত্যিক-লেখক-শিল্পীকে আরো দশ জনের সাথে সমাজে-রাষ্ট্রে বাস করতে হয়। চাল-ডাল-তেল-নুন-বেবি ফুড-কনডম কিনতে হয়।
ফলে সামাজ-রাষ্ট্র-বাজারের অসংগতির নিয়ে এসব নিত্য অনুষঙ্গ থেকে গা বাঁচিয়ে যারা তথাকথিত নিরপেক্ষ থাকতে চান এবং শুধু ফুল-পাখি-নদী-নারী-প্রকৃতি নিয়ে কাব্য সাহিত্য বা শিল্প চর্চা করতে চান তাদেরকে আমরা কবি শিল্পী-সাহিত্যিক নয় বরঙ ‘ভেড়া’ মনে করি। ‘শূন্যস্থান’ ভেড়ার পালের রাখাল হবেনা। নিরপেক্ষ থাকবেনা। শোষিত-বঞ্চিত-নিপিড়ীত-অনগ্রসর মানুষের পক্ষে অন্যায় ও অসুন্দরের বিরুদ্ধে সমসাময়িক, জীবন ঘনিষ্ঠ, যুক্তি নির্ভর, বিজ্ঞান মনষ্ক, প্রগতিশীল, অসা¤প্রদায়িক, সাহসী ও উষ্কানীমূলক সাহিত্য চর্চাকে ধারণ করবে শূন্যস্থান। শূন্য দশকের মেধাবী বিশুদ্ধ প্রথা ও প্রতিষ্ঠান বিরোধী স্বাধীনচেতা কবি-লেখক-শিল্পীরাই হবে শূন্যস্থানের প্রাণভোমরা।
শিল্প সাহিত্য-কাব্য চর্চা শাশ্বত, স্বাধীন ঐশ্বরিক। আর সৃষ্টিটা তার ভাব-চিন্তা-চেতনা-আদর্শ-বিবেকের প্রতিফলন। এটা ঐশ্বরিকভাবে লেখকের উপর নাজিল হয়। এ জন্য একজন প্রকৃত লেখক ইচ্ছা করলেই যখন-তখন লিখতে পারেনা, লিখতে পারেনা অন্য কারোর মর্জিমাফিক। যারা পারে শূন্যস্থান তাদের কে লেখক মনে করেনা।
প্রচলিত অগ্রাসী বাজার ব্যবস্থায় বাজারী সাহিত্য-সাময়িকী ও প্রত্রিকাগুলো ‘বাণিজ্যিক স্বার্থ’ এবং ‘মতাদর্শ স্বার্থ’ একশো ভাগ বজায় রেখেই সাহিত্যের জন্য দরদী ভাব দেখাচ্ছেন। ফলে এসব সাময়িকী ও পত্রিকায় যারা লিখছেন তারা নিজেদের স্বাধীনতা-বিবেক-চেতনা-ঐশ্বরিক সৃষ্টিশীলতাকে বিকৃত করে বিক্রি কেেছন বাজারে। যেমন পতিতারা বাজারে তাদের শরীর বিক্রি করে। শূন্যস্থান এসব বাজারি সাময়িকী ও পত্রিকার লেখককে বিকারগ্রস্ত ‘সাহিত্যির পতিতা’ বৈ কিছু ভাবেনা।
প্রতিষ্ঠান বিরোধীতা তারুণ্যর ক্রেজ নয়।
এটা আদি, অকৃত্রিম-মৌলিক চেতনা ও বিশ্বাস। অর্থের লোভ ও মেকি খ্যাতির কাছে মাথা নত না করার দুঃসাহস। বিবেবেকের কাছে শুদ্ধ থাকার অহংকার। নিজের ভাব চিন্তা-বিবেককে তুলে ধরার স্পর্ধা। আপোষ করে শিল্প-সাহিত্য হয়না, ফলে ছোট কাগজ আজ হয়ে উঠছে নয়া বিপ্লবের মুখপাত্র।
চারদিকে এখন ছোট কাগজের ছড়াছড়ি! শুয়োরের পালের মত অগনিত। অথচ হাতে গোনা কয়েকটা ছাড়া আর সবই ভূয়া। নামে ছোট কাগজ বা প্রতিষ্ঠানবিরোধী অথচ ভেতরে বাজারী লেখকদের ঠাসাঠাসি। এইসব ছোটকাগজ সম্পাদকদের(!) বুঝতে হবে আকারে ছোট হলেই ছোটকাগজ হয়না। সত্যিকারের ছোটকাগজ করতে হলে এর স্বকীয়তা-চরিত্র-বৈশিষ্ট্য ঠিক করতে হবে।
শূন্যস্থান এগুলোকে ছোটকাগজ নয় বড়োজন টয়লেট পেপার মনে করে।
কিছু ছোটকাগজ আবার নিজেদের গোষ্ঠিবদ্ধতা অতিক্রম করতে পারছেনা। তাদের কাগজকে তারা গুটি কয়েক লোকের প্রচার-প্রপাগ-ার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। নতুনদের সুযোগ দিচ্ছেনা, ফলে কেউ কেউ লেখা ছাপানোর তীব্র আকাঙ্খায় তাড়িত হয়ে এক সময় বাজারি সাময়িকী বা পত্রিকার বেদীমূলে নিজেকে বলি দিচ্ছে কিছু না বুঝেই। এন্টিএস্টাব্লিষ্টমেন্ট মুভমেন্ট মহান ও বৃহত্তর স্বার্থেই ভাঙতে হবে গোষ্ঠিাবদ্ধতার শুচিয়ায়ূতা, সুযোগ দিতে হবে নতুনদেরকেও।
অগ্রজদের কেউ কেউ নতুনদের বিভিন্ন ছবক দিয়ে গুরু সাজার পায়তারা করে থাকেন। আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি সত্যিকারের কবি-লেখক-শিল্পীদের কোন নেতা হয় না। তাদের বিবেকই তাদের গুরু তাদের অভিবাবক, বিবেকের স্পর্ধাই হয়ে উঠুক শূন্যদশকের কবি -লেখক-শিল্পীদের প্রধান হাতিয়ার।
স্বাধীন-মননশীল-সমসাময়িক-জীবনঘনিষ্ট-দুঃসাহসিক-নিরীক্ষাধর্মী সাহিত্যচর্চার মুক্তাঙ্গন প্রতিষ্ঠার আদি ও অকৃত্রিম আকাঙ্খায় প্রতিষ্ঠান ও প্রথাবিরোধী আন্দোলনকে আরো বেগবান-কার্যকরী করার দৃঢ় প্রত্যয়ে এবং চলমান আন্দলনের সব শূন্যতা ঢাকতেই শূন্যস্থান এর প্রকাশ ঘটছে।
এই অনিবার্য সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই আসবে শিল্প সাহিত্যের মুক্তির পথ।
আমাদের সমন্বিত স্বপ্ন, বাঁধভাঙা আবেগ, চিরায়ত সত্য প্রকাশের আকুতি, আদম্য প্রাণ শক্তি এবং নিয়ম ভাঙার স্পর্ধা একদিন নিশ্চয়ই পূর্ণতা পাবে এ বিশ্বাস আমরা সযতেœ লালন করি।
দরজা খুললেই মুক্তির আশ্রম, উš§ুক্ত স্বাধীন চত্তর, স্চ্ছতা ধারণ করেই আমরা নোঙর ফেলতে চাই সেই কঙ্খিত বন্দরে। আমরা বিশ্বাস করি বিপ্লব, অনিবার্য, আজ... কাল... অথবা খুব নিকটেই...
কাজী টিটো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।