আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতীয় মিডিয়া মাফিয়াদের কাছে বাংলাদেশের ক্যাবল টিভি ব্যাবসা তুলে দেওয়ার পায়তারা!

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ

ভারতে এখন Direct To Home তথা DTH ব্যাবসা বেশ জমে উঠেছে। বেশ কয়েকটি DTH সার্ভিস সেখানে রমরমা ব্যাবসা করছে। এরা হল Dish TV(a ZEE TV subsidiary), Tata Sky, South India Media Giant Sun Network owned 'Sundirect DTH', Reliance owned BIG TV, Bharti Airtel's DTH Service 'Airtel Digital TV' and the public sector DD Direct Plus. হবেই বা না কেন, সেখানে এমন কিছু চ্যানেল প্যাকেজ আছে যা ক্যাবল টিভিতে দেওয়া হয় না। যেমন ষ্টার ক্রিকেট চ্যানেল। তাই বাংলাদেশের ক্যাবল টিভিতে এই চ্যানেল বৈধ ভাবে পাওয়াতো আরো অবান্তর।

অথচ এই চ্যানেলেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট টূর্ণামেন্ট দেখানো হয়। এর পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ আছে। দেখা গেছে বাংলাদেশে তো বটেই ভারতেও কোন ক্যাবল অপারেটর তাদের সঠিক গ্রাহক সংখ্যা সমন্ধে তথ্য দেয় না। তাই ষ্টার, জি, সনি সহ অন্যান্য ভারতীয় মিডিয়া গ্রুপ গুলো DTH এর ব্যাপারে সক্রিয় ভাবে চিন্তা ভাবনা করতে থাকে। বিষয় টি উপলদ্ধি করে সর্ব প্রথম এগিয়ে আসে Tata-Sky।

এটা ভারতের বিখ্যাত TATA শিল্প গ্রুপ ও যূক্তরাজ্যের Sky যৌথ উদ্যোগ। সহজ অর্থে রতন. এন টাটা ও মিডিয়া মোগল রুপার্ট মর্ডাকের পার্টনারশীপ বলা যায়। তাদের অনুসরণ করে আসে জি গ্রুপের ডিশ টিভি। তারপর একে Airtel, Relance, Sun Direct ইত্যাদি। একমাত্র দূরদর্শনের ছাড়া এরা সবাই ষ্টার ক্রিকেট চ্যানেল ও নিম্বাস স্পোর্টস প্রচারের অধিকার সংরক্ষণ করে।

বাংলাদেশের BCB এর সাথে নিম্বাস চুক্তিবদ্ধ। তাই বাংলাদেশে কোন ক্রিকেট খেলা হলে তখন বিটিভি সেই খেলা না দেখালে তখন পাইরেসী ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না। তাই এতদিন(প্রায় ২/৩ বছর) বাংলাদেশে অবৈধ ভাবেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট খেলা অনেক বাংলাদেশী ক্যাবল অপারেটরগণ দেখিয়ে আসছিল। দূরদর্শন বাদে যেকোন ভারতীয় DTH সার্ভিসের জন্য গড়ে প্রায় ৩০০ রুপি যা বাংলাদেশী অর্থে ৪৩০ টাকা। আর এটা বৈধ ভাবে দেখতে গেলে ভ্যাট ট্যাক্স ও স্থানীয় এজেন্টদের লাভ বাবদ ৬০০ টাকা মাসে দিতে হবে।

বাংলাদেশে কতজন গ্রাহকের পক্ষে এত অর্থ ব্যায় করে এ সমস্ত ভারতীয় মিডিয়ার সার্ভিস দেখা সম্ভব? যেখানে আমরা গড়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহড়ে ৩০০ টাকা মাসে এবং অন্যান্য জেলা ও মফস্বল অঞ্চলে গড়ে ১০০-১৫০ টাকা ব্যায় করে দেই সেখানে কোন দুঃখে ৫০০-৬০০ টাকা খরচ করে খেলা দেখব? তার উপর DTH দেখার জন্য নিজস্ব ছাদ লাগে। কয়জনের নিজের বাড়ী আছে? আর ইনষ্টলেশন ফি ১০-১২ হাজার টাকার কম নয় (ডিশ ও ডিকোডার বক্স সহ)। ব্রিটিশরা এক সময় ফ্রি চা আমাদের কে পান করিয়ে পরে এটাকে বাণিজ্যিক পণ্য বানিয়ে আমাদের হতে বহু অর্থ কামিয়ে নিজ দেশে নিয়ে যায়। এক সময় এই সমস্ত স্পোর্টস চ্যানেল ফ্রি থাকলেও সেটাকে পে-চ্যানেল করা হয়। আর দিন কে দিন এগুলোর মূল্য বৃদ্ধি করা হয়।

যেমন ইএসপিএন-ষ্টার প্রথমে ১২ টাকা থাকলেও বর্তমানে তা ৪৪ টাকা প্রতি টিভির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে বাংলাদেশে এর পরিবেশক টোটাল স্পোর্টস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। তাই যদি সরকারের নির্ধারিত ভাড়া থাকে ৩০০ টাকা তাহলে স্পোর্টস সহ অন্যান্য চ্যানেল দেখতে গ্রাহক প্রতি একজন অপারেটর কে দিতে হচ্ছে কমপক্ষে ২৮০ টাকা। তাহলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কোন অপারেটররে প্রকৃতপক্ষে ৩০০ জন গ্রাহক হলে সে বলে তার ১০০ জন গ্রাহক আছে। তাতে সে পে-চ্যানেল বাবদ ২৮০০০ টাকা দেয়। যদি এটা না করত তাহলে তাকে ৩০০ জন গ্রাহকের জন্য ৮৪০০০ টাকা গুণতে হত।

তাতে তার হাতে থাকত মাত্র ৬০০০ টাকা। এতে তার অফিস ভাড়া, কর্মচারী খরচ এবং নিজের খরচ কিভাবে চলবে সেটা বাংলাদেশের সরকার কোনদিনও আমলে আনে নি। আর বর্তমানে ঢাকাতে তো বটেই বাংলাদেশের সকল জেলাতেই কমপক্ষে ২০-৩০ ছোট মহল্লা ভিত্তিক অপারেটর যৌথ ভাবে বা অন্য কোন বৃহৎ ব্যাবসায়ীর মাষ্টার কন্ট্রোল রুমের কাছ থেকে মাসিক ভাড়া ভিত্তিক ভাবে লিজ লাইন নিয়ে আসছে। এটার বয়স প্রায় ১০-১২ বছর হতে চলল। এখানেও দেখা যায় একেক টি মাষ্টার কন্ট্রোল রুমের নিয়ন্ত্রণে ৫-৬ হাজার প্রকৃত গ্রাহক থাকলেও তাদের হতে লিজ নেওয়া ফিড অপারেটরগণ ১/৩ অংশ গ্রাহকের হিসাব দেয়, তাতে মোট ২০০০-২৫০০ গ্রাহকের অর্থ পায় মাষ্টার অপারেটরগণ।

আর এই মাষ্টার অপারেটরগণ পে-চ্যানেল এজেন্টদের কাছে ১০০০-১৫০০ গ্রাহকের বেশী স্বীকার করে না। এতে আসলে উপকৃত হয় গ্রাহকগণ। কারণ আজকের দিনে ৩০০ টাকা খুব বেশী না। আর ঢাকা শহড়ের বস্তিবাসী সহ মফস্বলের দিরদ্র গ্রাহকদের জন্য অপারেটরগণ অনেক না হলেও ভালই ছাড় দেয়। তাদের থেকে ১৫০ টাকার বেশী ভাড়া নেয় না।

যদি আজকে অপারেটরগণ সঠিক তথ্য দিত তাহলে ৫০% এর বেশী গ্রাহক বিনোদন হতে বঞ্চিত হত। ভারতেও ঠিক একই অবস্থা। কিন্তু ষ্টার, জি, সনি গ্রুপ সহ এই সকল অতিরিক্ত মুনাফা লোভী ভারতীয় DTH (দূরদর্শন ব্যাতীত) সার্ভিস গুলো কৌশলে ষ্টার ক্রিকেট ও নিম্বাস চ্যানেল দ্বয়কে হোম সার্ভিসে নিয়ে আসে। উল্লেখিত কোম্পানী গুলি শ্বেত হস্তী তথা মাফিয়া হওয়ায় কোন ভারতীয় ক্যাবল অপারেটররে পক্ষে পাইরেসী করে সেই দুটি চ্যানেলে খেলা দেখানো সম্ভব হয় না। এটা ভারতীয়দের মাথা ব্যাথা।

কিন্তু আমি বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে সব সময়ে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে ভাবি। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় হতে উল্লেখিত ভারতীয় মিডিয়া মাফিয়া ও বাংলাদেশে তাদের এজেন্ট ন্যাশন ওয়াইড, টোটাল স্পোর্টস এবং এমজিএইচ অনেক চেষ্টা করেও তারা বাংলাদেশে DTH আনতে পারে নি। কারণ সাবেক জোট সরকার ভালভাবেই জানত তাতে বাংলাদেশের ক্যাবল টিভি ব্যাবসা এই সকল ভারতীয় মিডিয়া মাফিয়া চিরতরে দখল করে নিবে। পরবর্তীতে ফখরুদ্দিন সরকারের সময়ও তারা চেষ্টার কোন ত্রুটি করে নি। কিন্তু ক্যাবল অপারেটরদের ঐকান্তিক ও দৌড়াদোড়ির জন্য সেবারও ব্যার্থ হয় মাফিয়া গ্রুপ।

কিন্তু বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার ১ মাস পরেই একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে যে বাংলাদেশে কোন অনুমতি বিহীন স্যাটেলাইট চ্যানেল চলতে দেওয়া হবে না। কোন অপারেটর এই সিদ্ধান্ত না মানলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা তথা জেল জরিমানা করা হবে; Click This Link তাই সরকার কে অনুরোধ করেছিলাম দেশের দর্শকদের উপরে ছেড়ে দিন যে তারা কোন চ্যানেল দেখবে। কিন্তু তার উপর হস্তক্ষেপ মানে অবাঞ্চিত অভিভাবকত্ব। Click This Link আর DTH সঠিক গ্রাহক সংখ্যা ব্যায় বহুল হওয়ায় বাংলাদেশে পাইরেটেড বা অবৈধ ভাবে চলা স্যাটেলাইট পে-চ্যানেল সমূহ কে যেন কোন রকম প্রশাসনিক হয়রাণিও না করা হয় সে জন্যও অনুরোধ করেছিলাম। Click This Link কিন্তু ২রা মে RAB হঠাৎ ই বঙ্গবন্ধু ষ্টেডিয়ামের মার্কেটে যেয়ে টাটা-স্কাই ও ডিশ টিভির পাইরেসী ব্যাবসায়ীদের কে ডিটিএইচ বক্স সহ গ্রেফতার করে।

Click This Link এই ব্যাবসায়গণই সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাবল অপারেটরদের কাছে টাটা ও ডিশ টিভির ডিকোডার বক্স সরবারাহ করে আসছিল। তাতে এই সকল অপারেটরগণ অনেক অনেক কম মূল্যে বিভিন্ন বিনোদন মূলক চ্যানেল সহ ষ্টার ক্রিকেট এবং নিম্বাস স্পোর্টস চ্যানেল দেখাতে পারছিল। এখন এই প্রশাসনিক হয়রাণি দর্শকদের কে ষ্টার ক্রিকেট এবং নিম্বাস চ্যানেল দেখা হতে বঞ্চিত করবে। কারণ এতে করে একজন অপারেটরের ৯৯% খরচ বেচে যায় এবং দর্শকগণও সহজে ক্যাবল টিভিতে উল্লেখিত চ্যানেল দ্বয় দেখতে পারে। কারণ একটি বক্সে গড়ে ৫০০ টাকা মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে সময় সময় অপারেটরগণ বিভিন্ন চ্যানেল ঘুরিয়ে দর্শকদের চাহিদা মাফিক খেলা বিশেষ করে ক্রিকেট খেলা দেখাতে সমর্থ হত।

কিন্তু ভারতীয় এই মিডিয়া মাফিয়া ও ভারত সরকারের চাপে বর্তমান মহাজোট সরকার ভারতীয়দের ব্যাবসার স্বার্থ রক্ষা করতে উদগ্রীব। এই গ্রেফতার তারই প্রমাণ। কারণ বাংলাদেশের দর্শকগণ বর্তমানে দারুণ ক্রিকেট পাগল তা বলাই বাহুল্য। যদি স্থানীয় অপারেটগণ সংশ্লিষ্ট চ্যানেল দ্বয় দেখাতে ব্যার্থ হয় তখন টাটা ও ডিশ টিভি বাংলাদেশে বৈধ ভাবে ব্যাবসা করতে কোন সমস্যা হবে না। তখন কার্যত বাংলাদেশের ক্যাবল টিভি ব্যাবসা স্থায়ী ভাবে ভারতীয়দের দখলে চলে যাবে।

বর্তামানে ৫০% দর্শকের পক্ষেই ক্যাবল উচ্চ মূল্যে স্যাটেলাইট বিনোদনের অনুষ্ঠান সমূহ দেখার সৌভাগ্য হবে। আর বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির উপর তার একটা ধাক্কা লাগবে। বর্তমানে যেখানে বৈধ-অবৈধ ভাবে ৩৫০-৪০ কোটি টাকা বছরে ভারতীয় মিডিয়াদের দেওয়া হয় সেখানে পাইরেসী বন্ধ হয়ে গেলে আনুপাতিক হারে আরও বেশী মূল্য আনুমানিক ১০০০-১৫০০ কোটি টাকা ভারতীয়দের কে দিতে হবে। কারণ বৈধ অবৈধ মিলে ৪০ লক্ষ ক্যাবল টিভির গ্রাহক আছে, যেখানে সরকার ১০-১২ লক্ষ গ্রাহকের নিকট হতে ট্যাক্স ও ভ্যাট পায়। কিন্তু DTH হয়ে গেলে অন্তত ২০ লক্ষ গ্রাহকের বৈধ অস্তিত্ব প্রকাশিত হবে।

তাই মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র দর্শকদের কথা এবং বাংলাদেশের সঞ্চিত মহামূল্যবান বিদেশী মুদ্রার তথা মার্কিন ডলারের কথা বিবেচনা করে এই সকল টুকিটাকি স্যাটেলাইট চ্যানেল পাইরেসী অব্যাহত থাকতে দেওয়া উচিত। তাতে বরং বাংলাদেশের সর্বাধিক সংখ্যক দর্শক লাভবান হবে। সিংহভাগ জনগণের কল্যাণই যেকোন দেশের সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.