আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা ব্লগ সম্পর্কিত গবেষণা জরিপে আমার ৪৭ কিলোবাইটের উত্তরমালা

আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে...

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক বাংলা ব্লগ সম্পর্কিত একটি গবেষণা জরিপ পরিচালনা করেছেন কিছুদিন আগে। ইতিমধ্যে তার আংশিক ফলাফলও প্রকাশিত হয়েছে। বলাবাহূল্য, বাংলা ব্লগিং নিয়ে এটিই প্রথম কোনো গবেষণা। এতে আরো অনেক ব্লগারের সঙ্গে আমিও অংশগ্রহণ করি। তবে যেহেতু দীর্ঘ উত্তরমালা স্বাভাবিকভাবেই গবেষণাপত্রে স্থান পাওয়ার কথা নয়, সে কারণে তা ব্লগে তুলে রাখলাম।

আশা করি এ থেকে নতুন ব্লগাররাও বাংলা ব্লগ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেতে পারেন। ১. প্রশ্ন : বাংলা ভাষায় ব্লগিং করার ক্ষেত্রে আপনি কার কাছ থেকে প্রথম অবগত হন? উত্তর : এক প্রতিবেদনে প্রথম দেখি সামহোয়্যারইন...ব্লগের নাম। পরে রেজিস্ট্রেশন করি। ২. প্রশ্ন : আপনি ব্লগিং কেন করেন? উত্তর : পুরোটাই অবসরের অবলম্বন। তবে নিয়মিত ব্লগিংয়ে নেটওয়ার্ক বাড়ে।

এটিও একটি কারণ। ১২৮০ বাই ৮০০ পিক্সেলের মনিটরের ভেতরে অনিঃশেষ উত্তেজনা উপভোগের ব্যাপারও আছে। ৩. প্রশ্ন : সামাজিক রাজনৈতিক কোন কোন ইস্যু ব্লগে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়ে থাকে? উত্তর : জামায়াতবিরোধিতাই ব্লগে মূল আলোচনার বিষয়। ব্লগে হয় আপনি জামায়াতের পক্ষে, নয়তো বিপক্ষে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যা কিছু আলোচনা, তাও ওই জামায়াতবিরোধিতা থেকেই, স্বতঃস্ফূর্তভাবে নয়।

এর বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেন্দ্রিক রাজনৈতিক বিষয়-আশয় এবং ধর্মীয় বিশেষত আস্তিক-নাস্তিক ইস্যু প্রায়ই চোখে পড়ে। সরকারি কর্মকাণ্ডের সমালোচনাও এখানে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। ৪. প্রশ্ন : সমসাময়িক আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কোন বিষয়গুলো গত এক বছরে ব্লগে বেশি আলোচিত হয়েছে? উত্তর : বছরজুড়ে কারণে-অকারণে আলোচনার শীর্ষে থেকেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ। বাউলমূর্তি অপসারণ প্রসঙ্গে বেশ প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে বটে, তবে নির্বাচনের নানা বিষয় নিয়ে এই প্রথম ব্লগারদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল, যা আলোচনার শীর্ষতালিকায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরেই থাকবে। ইন্টারনেটে নির্বাচন প্রসঙ্গে এবার যা কিছু আলোচিত হয়েছে, তার সিংহভাগই ব্লগারদের অংশগ্রহণের কারণে।

৫. প্রশ্ন : মানবিক সাহায্যের জন্য জনমত গঠনের ক্ষেত্রে ব্লগের সাফল্য কেমন? এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কেসগুলো কী কী? উত্তর : মানবিক সাহায্যের জন্য জনমত গঠনের ক্ষেত্রে ব্লগমাধ্যমকে সফল বলা যায় না। শাশ্বত, প্রাপ্তি ও রাহেলার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সাহায্য ব্লগারদের কাছ থেকে পাওয়া গেলেও তার কিছুটা আবেগ এবং বাকিটা লোকদেখানো। এ কারণেই সামহোয়্যারইন...ব্লগের প্রথম পাতায় 'হাত বাড়িয়ে দাও' নামের যে বিভাগটি আছে, তাতে ব্লগারদের অংশগ্রহণ তেমন দেখা যায় না। ভ্যালেরি টেইলর নিয়ে একটি ক্যাম্পেইন হয়েছিল সামহোয়্যারইন...ব্লগের শুরুর দিকে। তাও মূলত সফল হয়েছিল মূলধারার গণমাধ্যমের দৃঢ়তার কারণে।

সবমিলিয়ে জনমত গঠনের ক্ষেত্র হিসেবে ব্লগ এখনো উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। ৬. প্রশ্ন : কমিউনিটি ব্লগ হিসেবে সামহোয়ারের সাফল্যগুলো কী কী? উত্তর : সংবাদপত্র জগতে যেমন প্রথম আলো, ব্লগেও তেমনই সামহোয়্যারইন একটি স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। সামহোয়্যারইনের পর যে ব্লগই এসেছে, তা কমিউনিটি হোক বা রাইটার্স কমিউনিটি, সবারই মাথায় থেকেছে বাংলাভাষার এই প্রথম কমিউনিটি ব্লগটি। সবারই পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে একে অনুসরণ বা অনুকরণ করেই। সহজবোধ্য ইন্টারফেস, ভালো ডিজাইন, ওয়েবে বাংলা লেখার মতো কঠিন কাজটি সহজ করে তোলার পাশাপাশি প্রায় সব ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষের পেশাদারি দৃষ্টিভঙ্গি সামহোয়্যারইনের ইতিবাচক দিক।

অনলাইন কমিউনিটি গড়ায় তারা অসামান্য অবদান রাখছে। ৭. প্রশ্ন : সামহোয়ারের সীমবদ্ধতা কী? কী উপায়ে সামহোয়ার অধিক ফলপ্রসু হতে পারে? উত্তর : কমিউনিটি ব্লগে নানা ধরনের লেখা আসতে পারে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বা মৌলবাদের সপক্ষেও। একে সামহোয়্যারের সীমাবদ্ধতা বলা যায় না। পক্ষে হোক কিংবা বিপক্ষে, একপেশে মতামত ব্লগের মতো একটি স্বাধীন মাধ্যমকে গুরুত্বহীন করে তোলে।

বরং বৈচিত্রহীন ও বৈচিত্রপূর্ণ পোস্টের পাশাপাশি অবস্থান- সামহোয়্যারইন সবসময়ই প্রাণবন্ত করে রাখে। একে নেতিবাচকভাবে নেওয়া যায় না। তবে মডারেশনে বেশ কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে বিশেষ বিশেষ ব্লগারের প্রতি বিশেষ বিশেষ মডারেটরের পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে। সংঘবদ্ধ কিছু ব্লগারের সাজানো অভিযোগের ভিত্তিতে ভালো ব্লগারকে স্থায়ীভাবে ব্লগে নিষিদ্ধ করার দৃষ্টান্তও রয়েছে একাধিক।

আবার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কিংবা গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়াই পোস্ট, অনেক ক্ষেত্রে পুরো ব্লগই মুছে দেওয়ার উদাহরণও প্রচুর। এ সবই মডারেটরদের সীমাবদ্ধতা। ৮. প্রশ্ন : ব্লগিং সংস্কৃতির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো সংক্ষেপে বলুন। উত্তর : ইতিবাচক : মূলধারার গণমাধ্যমে যা প্রকাশ করা যায় না, তা ব্লগে প্রকাশ করা যায়। এই স্বাধীনতা ব্লগীয় সংস্কৃতির সবচেয়ে ইতিবাচক দিক।

যে কোনো বিষয়ে এখানে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়- এটাও উল্লেখযোগ্য। নেতিবাচক : ভয়ের সংস্কৃতি। সংঘবদ্ধ ট্রোলিংয়ের ভয়ে প্রায় সবাই আতঙ্কিত থাকেন। ভিন্নমত মোটেও সহ্য করা হয় না। আছে ব্লগীয় কুটিল রাজনীতি, যা অভিজ্ঞ ব্লগারদের পক্ষেও বোঝা সহজ নয়।

অনেক অভিজ্ঞ ব্লগারকে জানি, যারা এক নিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং অন্য নিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পোস্ট দেন। তথ্যপ্রমাণ ছাড়া অভিযোগ উত্থাপন, ট্যাগিং, ব্যক্তি আক্রমণ মিলিয়ে লেখার স্বাধীনতা মাঝে মাঝেই স্বেচ্ছাচারিতার পর্যায়ে চলে যায়। এছাড়া নাগরিক সাংবাদিকতার চর্চা খুবই কম। ব্লগের প্রকৃত ধারণার সঙ্গে সাহিত্য না গেলেও তার চর্চাই বেশি। এটি নেতিবাচক।

৯. প্রশ্ন : ব্লগিং ছাড়া আপনার লেখালেখির পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল কি? উত্তর : আমার পেশা সাংবাদিকতা। ১০. প্রশ্ন : নিম্নলিখিত কমিউনিটি ব্লগগুলো কীভাবে একটি থেকে আরেকটি আলাদা? এদের প্রত্যেকটির বিশিষ্টতা পৃথক পৃথকভাবে বলুন। ক. সামহোয়ার, খ. সচলায়তন গ. আমার ব্লগ. ঘ. দৃষ্টিপাত ঙ. প্রথম আলো ব্লগ চ. নির্মাণব্লগ ছ. প্যাঁচালি উত্তর : সচলায়তন ও নির্মাণব্লগ ছাড়া আর সবকটি বাংলাব্লগই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে সামহোয়্যারইন...ব্লগের 'গুদামঘর' হিসেবে। সামহোয়্যারে যা প্রকাশিত হয়, তার একটি করে কপি ওইসব ব্লগেও রাখা হয়। ক. সামহোয়ার ব্লগারের সংখ্যা, পোস্ট, প্রতিক্রিয়া, পেশাদারি মনোভাব- সবদিক থেকেই বাংলাব্লগের ভুবনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

খ. সচলায়তন সচলায়তনে ভালো কিছু ব্লগার আছে, ভালো লেখাও কিছু থাকে। তবে সেখানে পক্ষকালে যতোগুলো ভালো লেখা আসে, সামহোয়্যারইনে এক বা দুদিনেই তার চেয়ে বেশি আসে। সবমিলিয়ে সচলায়তন হয়ে উঠেছে জানালাবিহীন ড্রইংরুমের মতো, দমবদ্ধ অসুস্থ পরিবেশ। এর ভবিষ্যৎ ভালো নয়। গ. আমার ব্লগ এতোদিনেও আমারব্লগ ব্লগ হয়ে উঠতে না পারার মূল কারণ পেশাদারিত্বের অভাব।

চরিত্রটি অনেকটা সাপ্তাহিক ই-ম্যাগাজিনের মতো। পরিমিতিবোধ নেই, উপস্থাপনার জোরও নেই। ঠিক সপ্রাণ গতিটা এখনো সেখানে গড়ে উঠেনি। গড়ে ওঠার লক্ষণও নেই। সামহোয়্যারইনে যে প্রাণময় গতি, সচলায়তনে যে সিরিয়াস ভঙ্গি- কোনটিই আমারব্লগে নেই।

ফলে নো-মডারেশনের সম্ভাবনাময় স্টান্টটিও কাজে লাগছে না স্বাভাবিকভাবেই। সবমিলিয়ে, আমারব্লগ হয়েছে অনেকটা আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার মতো- যা নিয়মিত বের হয় কিন্তু সার্কুলেশন নেই। ওয়ার্ডপ্রেসের বাজে ইন্টারফেস, অনভিজ্ঞ ডেভেলপার, নিম্নমানের ডিজাইন, অস্বাভাবিক ধীরগতি এবং পেশাদারি মনোভাবের অভাব আমারব্লগের ব্যর্থতার জন্য দায়ী। ইউজারের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তাও সেখানে সুরক্ষিত নয় বলে অনেকের অভিযোগ। ঘ. দৃষ্টিপাত একে ঠিক ব্লগ বলা যায় না।

ই-ম্যাগাজিন বলাই সঙ্গত। ঙ. প্রথম আলো ব্লগ প্রথম আলো ব্লগের সৌভাগ্য এই যে, বাংলাব্লগের স্বর্ণযুগে তাদের পদার্পণ ঘটেছে। আর দুর্ভাগ্য এই যে, সেই সুযোগটাকে তারা কাজে লাগাতে পারেনি। শুধুমাত্র প্রথম আলো ব্রান্ডটি থাকায় এই ব্লগ পাঠক সমাগমের যে সুবিধা পাচ্ছিল, সেই সম্ভাবনাকে প্রায় নিঃশেষ করে দেওয়া হয়েছে। ব্লগ যে আসলে কী- সেটি প্রথম আলো বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্লগাররা নিয়ন্ত্রণ পছন্দ করেন না। সেখানে প্রথম আলো ব্লগ বাংলা ব্লগে এ যাবতকালের সবচেয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ফলে সাহিত্য সাময়িকীর মেজাজ ও মানসিকতা নিয়ে ব্লগটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এর চেহারাটা দাঁড়িয়েছে অনেকটা সামহোয়্যারের গ্রুপ ব্লগের মতো। পোস্ট আছে, কবিতা আছে, গল্প আছে, কিন্তু মন্তব্য নেই।

মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া ব্লগিংয়ের প্রাণ। এর সরল অর্থ ব্লগাররা স্বস্তি বোধ করছেন না, তারা হতাশ হচ্ছেন। ক্রমাগত এই অস্বস্তি ও হতাশা ব্লগটিকে পুরোপুরি নিষ্প্রাণ করে রেখেছে। অবস্থা এমন যে, এখন আর টিম আর নীতিমালা বদলেও কাজ হবে না, বিনিয়োগও করতে হবে নতুন করে। প্রথম আলো ব্লগ নিয়ন্ত্রণের দিক থেকে সচলায়তনের সঙ্গে মেলে এবং জনসমাগমের দিক থেকে প্যাঁচালীর সমমান।

চ. নির্মাণব্লগ নিয়ন্ত্রিত ব্লগের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ নির্মাণব্লগ। লেখক ও লেখার মান দুটোই ভালো। অদূরভবিষ্যতে সচলায়তনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে যাচ্ছে। ছ. প্যাঁচালি প্যাঁচালীর শুরুটা ভালোভাবেই হয়েছিল। অধুনানিষ্ক্রিয় এই ব্লগটি ইন্টারফেস, ডিজাইন ও ফিচারের দিক থেকে প্রায় সামহোয়্যারের কাছাকাছি ছিল।

কিন্তু ব্লগীয় রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে পড়ে ব্লগটি উঠে দাঁড়াতে পারেনি। একে যে বারবার স্বাধীনতাবিরোধীদের ব্লগ হিসেবে প্রচার করা হয়েছে, কিন্তু তাও ওই ব্লগীয় কুটিল রাজনীতির অংশ। দিনে দিনে শেষপর্যন্ত এই ব্লগ যে প্রতিক্রিয়াশীলদের আখড়া হয়ে ওঠেছিল, তাও ওই একই কারণেই। ভেতরবাড়ির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত না থাকলে, এই রাজনীতি সাধারণ ব্লগারদের বোঝা সম্ভব নয়। এর কর্তৃপক্ষ অন্যায় অপবাদের শিকার হয়েছে বরাবরই।

প্রাসঙ্গিক কিছু সংযুক্তি বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সংক্রান্ত জরিপের ফলাফল চারটি ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কে ব্লগাররা যা বলেছেন বাংলা ব্লগ সম্পর্কিত গবেষণায় আপনার সহায়তা চাই

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.