আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চৈত্র সংক্রান্তি বাঁচলেই কেবল শুভ হবে পহেলা বৈশাখ । এবং পান্তার মঞ্চওয়ালারা চৈত্র সংক্রান্তি বাঁচাবে না।

অতএব- লক্ষন যা, তাতে দুঃখ আর ক্ষোভই আমার কপালের লেখা।

এককালে আমাদের (বৃহৎ বাংলার: আমাদের বলতে দুর্ভাগ্যক্রমে আলাদা হয়ে যাওয়া দুই বাংলাকেই বোঝানো হচ্ছে) কোনো কালচার আছিলো না। তাহাদের মতে আমাদের আছিলো শুধু এগ্রিকালচার। ব্রিটিশ উপনিবেশী সাহেবদের দেখাদেখি ওইপাড়ে এবং এইপারেও বাবুদের কালচার চালু হইলো। এবং আমাদের এগ্রিকালচার এর ৩৬০ ডিগ্রী বিপরীত মেরুতে।

এগ্রেরিয়ান কালচারের, কৃষি সংস্কৃতির বিপরীতে সাহেবদের চাকর-নফরদের নন্দনবাগান। সে যাউকগা, এখন আইজকার কথাই কই। ------------------------------------------------------- আইজ চৈত্র সংক্রান্তি। সুতরাং কাইল পহেলা বৈশাখ কিংবা অন্য যা কিছুই হোক তাতে কিছু আসে যায় না। বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি, কৃষি সংস্কৃতি'র মধ্যে কৃষির জীবনযাত্রার মধ্যে চৈত্র সংক্রান্তি হইলো জীবনমানের মানদন্ড।

এইটা মাপজোখ কইরা আমাগোরে জানান দেয় যে; তোমাদের জীবনমান ঠিক আছে। আগামী মাসের প্রথম দিনে, বিশাখা নক্ষত্রের রেখায়, রাশিতে যখন সূর্য তার জায়গা নিবো, সেই পহেলা বৈশাখের বর্ষ তোমাদের জন্য শুভ হইবো যদি আমি চৈত্র সংক্রান্তি আমার স্বরুপে থাকতে পারি, শুভাবস্থায় থাকতে পারি। সুতরাং সংক্রান্তি নিজে কোনো উদযাপন এর দিন নয়। সংক্রান্তি উদযাপন এর লক্ষ্য। কৃষি-প্রাণ-প্রকৃতি আমাদের ঠিক আছে কি না, সেইটা খেয়াল কইরা আগামী বর্ষে প্রবেশের উদযাপন।

এই ঠিক আছে কি না, সেইটা আমাদের কিভাবে বুঝায় চৈত্র সংক্রান্তি? মোটামুটি সংক্রান্তি'র আচার ইত্যাদি সারাদেশে এইরকম; চৈত্র সংক্রান্তিতে সারা রাত্রি পাড়ায় পাড়ায় কীর্তন হতো। নগর কীর্তন। বাংলার দেবতা, অনার্য দেবতা শিব-পার্বতীরও বটে। ঘরদোর লেপা পোছা থাকতো। গোয়ালঘরও।

সকালে গোয়াল থেকে গরুগুলোকে বের করে গোসল করানো হতো। দুপুরে রান্নাবান্না। আমিষ ছিলো নিষিদ্ধ। অবশ্য কেউ করলে শুধু জিয়ল মাছ যেমন কই-শিং-মাগুরের ঝোল করতো। নিরামিষ শাক সবজি’র সাথে সাততিতে রান্না করা হতো।

সবচেয়ে অনিবার্য হইলো ব্রত পালন। সারা চৈত্র মাস জুইড়া নারী'রা ব্রত পালন করতো। (দু:খজনকভাবে বাংলাপিডিয়া এইটারে হিন্দুর উৎসব লেখছে)। কৃষিজীবনের নারীর নিজস্ব সংস্কৃতাচার এই ব্রত। আমিষ নিষিদ্ধ ব্রতকালীন সময়ে।

স্বামী সংসারের কৃষির ব্যবসার শুভ কামনা করে ব্রত পালন। আলানে পালানে কুড়িয়ে পাওয়া শাক খাওয়া হইতো এই সময়। এই চাষ না করা, কুড়িয়ে পাওয়া শাক যদি আলানে পালানে ক্ষেতে বাগানে পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে সারা বছরের কৃষি ঠিক ছিলো। সারা বছরের কৃষি মানুষসহ সব প্রাণ এর, চারপাশের প্রকৃতির আপন ছিলো। সুতরাং আগামী বর্ষে প্রবেশ শুভ, পহেলা বৈশাখ শুভ।

আমাদের আগামী পহেলা বৈশাখ কি শুভ? না। কারন এখন আর চৈত্র সংক্রান্তির ব্রত পালনে নারীরা উপায় উপকরণ খুজে পায়না। আমরা ক্রমাগত ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফুড প্রডাকশনের বিষের দিকে যাচ্ছি, প্রাণ ও প্রকৃতির কৃষি ছেড়ে। আমাদের মাটি নষ্ট করে কেএফসি'র দিকে ঝুকছি। আমরা আমাদের সবই ছিলো কৃষিভিত্তিক জীবনযাত্রার সাথে সম্পৃক্ত।

নানা ঋতুতে নানা রকম শষ্য-শাক-সবজি-ফল-মাছ ইত্যাদি। এবং এই বিভিন্ন রকম কৃষি ফসলাদি ও বিভিন্ন ঋতুর আবহাওয়া বৈশিষ্ট্যের ওপর ভর করে পাল্টে যেতো উৎসবাদিও ধরন, আচার-অনুষ্ঠান। হঠাৎ-ই সব পাল্টে যেতে লাগলো, খুব দ্রুত। দেশে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলো হাইব্রীড বীজ আর সবশেষে জিএম বীজ-শস্য। ঋতুর কোনো বাছবিচার নাই।

যখন যা ইচ্ছা সে বীজ দেয়া হচ্ছে জমিতে, সাথে প্রাণবিনাশী সার কীটনাশক। এমনকি আগন্তুক সব শস্য ফল ফসল জোর করে গছিয়ে দেয়া হচ্ছে । এমনকি প্রাণ ও। হাইব্রীড পশু পাখি। নষ্ট হচ্ছে আমাদের চিরচেনা প্রকৃতি প্রাণ পরিবেশ।

অথচ এসব যারা করছেন আধুনিক কৃষির নামে। খাদ্য নিরাপত্তার নামে। তারা’ই আবার পহেলা বৈশাখ পালনের ধূম করছেন। হৈ হুল্লোড়ের কনসার্ট করছেন। চাষাভূষোর দেশে রবীন্দ্র সংগীত করছেন।

কৃষির গান আর পুথির জায়গা নাই। কোথাকার ভুয়োমি'র পান্তা ইলিশ আমদানী করছেন। বাচ্চা ইলিশ, জাটকা ইলিশের প্রাণবিনাশী উৎসব। কৃষির জীবনে সংক্রান্তির নিয়মে থাকা গাছের নিরামিষ এর জায়গা নাই, বাবু কালচারের বৈশাখে। যে বাংলা দীর্ঘ কৃষি জীবনের ইতিহাসের মধ্যে থেকে উঠে এসেছে সে এসবের সাথে জুড়তে পারেনা নিজেকে।

কারন এসবই প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ককে অস্বীকার করে। যে সম্পর্কের আচার আমরা দেখি চৈত্র সংক্রান্তির আচার অনুষ্ঠানে। সুতরাং আমরা চাই পহেলা বৈশাখ এর হৈ হুল্লোড় নয় বরং চৈত্র সংক্রান্তি ফিরে আসুক। সেই কৃষি ফিরে আসুক যে কৃষি মানুষ আর প্রকৃতিকে আলাদা করে না। যে কৃষি এই বাংলাদেশের চিরচেনা শস্য আর পশু পাখিকে সাথে নিয়ে।

সে কৃষি যদি বাচে তবে তার সাথে কৃষি জীবনের উৎসব চৈত্র সংক্রান্তিও বাচবে। --------------------------------------- এবং পান্তা আমদানী করনেওয়ালারা আমাদের কৃষি বাঁচাবে না, তারা বরং কেএফসির শিল্পকারখানাজাত মুরগী এবং অন্যান্য ভাজির নতুন বিষ ছড়াবে। তারা আমাদের নিজস্ব উদ্ভিদ বাঁচাবে না। এই মঞ্চওয়লাদের হাতে আমাদের প্রাণ ও প্রকৃতি নিরাপদ নয়। আমরা আমাদের নিজস্ব কৃষি চাই।

কৃষির গান চাই। যাতে চৈত্র সংক্রান্তি আবার ব্রত হয়ে উঠতে পারে। আমাদের জানান দিতে পারে- শুভ পহেলা বৈশাখ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.