কোনো বিরুদ্ধ মত বা বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মেধা ও যুক্তিতে দূর্বল ব্যক্তিরাই প্রত্যক্ষ কিংব পরোক্ষভাবে দৈহিক শক্তি ব্যবহার করে।
। । বিমল সাহা, ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা, দৈনিক ইত্তেফাক। ।
দেশে প্রাপ্ত গোবর দিয়ে ৩০ লাখ গৃহস্থের রান্নার উপযোগী বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের সুযোগ রয়েছে। সরকারি ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) ১২টি এনজিও এবং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০১২ সালের মধ্যে রান্নার জন্য ৬০ হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের কর্মসূচী নিয়েছে। ইতিমধ্যে সাড়ে ৬ হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। আর এ প্রকল্পে ব্যয় হবে দু’শ ১৬ কোটি টাকা।
ইডকলের ঢাকা হেড অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে এ সকল বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের কাজ শুরু হয়।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে জার্মানীর কে এফ ডাব্লিউ নামের একটি ব্যাংক ৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন ইউরো, নেদারল্যান্ড সরকার সাড়ে ৪ মিলিয়ন ইউরো, নেদারল্যান্ডের এসএনডি নামে একটি সংস্থা ৭ মিলিয়ন ইউরো এবং বাংলাদেশ সরকার ৪০ লাখ ইউরো আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। প্রতিটি বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে ৯ হাজার টাকা করে গ্রাহককে সাবসিডি দেয়া হয়ে থাকে। দৈনিক ৪ ঘন্টা রান্নার গ্যাস উৎপাদনক্ষম বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে ১৯-২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এটি চালাতে ৪টি গরুর গোবর লাগে। দৈনিক ৬ ঘন্টা চালানোর মত গ্যাস উৎপাদনকারী প্লান্ট চালাতে ৬টি গরুর গোবর লাগে।
এতে ব্যয় হয় ২১-২২ হাজার টাকা। ৯ ঘন্টা চালানো উপযোগী একটি প্লান্ট স্থাপনে ২৬-২৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এটি চালাতে ১০টি গরুর গোবর লাগে। ১০-১১ ঘন্টা চালানোর মত গ্যাস উৎপাদনক্ষম প্লান্ট স্থাপনে ২৮-৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এটি চালাতে ১১-১২টি গরুর গোবর লাগে।
দৈনিক ১২-১৪ ঘন্টা চালানোর মত গ্যাস উৎপাদনক্ষম প্লান্ট স্থাপনে ৩৫-৩৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর চালাতে ১৪টি গরুর গোবর লাগে। আবার দু’শ মুরগির বিষ্টা দিয়ে ছোট আকারের এবং ৭-৮’শ মুরগির বিষ্টা দিয়ে বড় আকারের বায়োগ্যাস প্লান্ট চালানো যায়। ইডকলের এক কর্মকর্তা ও এনজিও সূত্রে জানা যায়, নগদ টাকায় এবং কিস্তিভিত্তিক পরিশোধযোগ্য ঋণে যে কেউ বায়োগ্যাস প্লান্টের গ্রাহক হতে পারে। তবে বাড়িতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গরু থাকতে হবে।
ইডকলের এক সূত্রে জানা যায়, স্থাপনের পর ৫ বছরের রক্ষণাবেক্ষণের ওয়ারেন্টি দেয়া হয়ে থাকে। যতেœর সাথে চালালে এক নাগাড়ে ২০ বছর গ্যাস উৎপাদন করা যায়। স্থাপনের পর আর কোন ব্যয় হয় না। প্লান্ট সঠিক ডিজাইন মত তৈরি এবং সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় বলে ইডকল সূত্রে জানা যায়।
গোবর ছাড়াও হাঁস-মুরগির বিষ্টা, মলমূত্র, আবর্জনা, কচুরিপানা ও কৃষিজবর্জ্য দিয়েও বায়োগ্যাস তৈরি করা যায়।
এসব পদার্থে ৬০-৭০ ভাগ মিথেন থাকে। বাকিটা থাকে কার্বন ডাইঅক্সাইড। বায়োগ্যাস তৈরির পর অবশিষ্ট বর্জ্যতে উন্নতমানের জৈব সার পাওয়া যায়। এক তথ্যে জানা যায়, ২০০৪ সালে দেশে ৮ কোটি (৮০ মিলিয়ন) টন গোবর পাওয়া যায়। এর ৬০ ভাগ জৈব সার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল।
বাকি গোবর দিয়ে ঘুঁটে তৈরি হয়েছিল। বর্তমানেও প্রায় এ পরিমাণ গোবর পাওয়া যায়।
সরকার ১৯৯৩ সালে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি প্রসারের সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়। প্রথম পর্যায়ে ৪ হাজার ৬শ’ ৬৪টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের কর্মসূচী ছিল।
প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে হাত গুটিয়ে নেয়। এরপর প্লান্টগুলোর ফলোআপ করা হয় না। বেশিরভাগ অকেজো হয়ে পড়েছে রক্ষাণাবেক্ষণের অভাবে। তখন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ প্রকাশিত তথ্য পুস্তিকায় বলা হয়েছিল বছরে সারাদেশে কাঠ, খড়কুটা, গাছের পাতা, পাটখড়ি, গোবর মিলিয়ে ৪ কোটি টন প্রচলিত জ্বালানি রান্নার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। ইডকলের সূত্রে জানা যায়, কাঠ, গোবর, পাটকখড়ি, খড়কুটা মিলিয়ে ১১ হাজার ২শ’ মিলিয়ন টন কয়লার সম পরিমাণ প্রচলিত জ্বালানি পুড়ে থাকে।
বায়োগ্যাসের সুবিধা হচ্ছে পরিচ্ছন্ন, দূষণমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় থাকে। আর বেশি পরিমাণ গ্যাস উৎপাদন হলে জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ তৈরি পাম্প মেশিন ও ইনকিউবেটর মেশিন চালানো যায়।
আমাদের প্রতিবেশি দেশ চীন, ভারত, নেপাল ও ভিয়েতনাম বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। চীনে ১৮ মিলিয়ন, ভারতে সাড়ে ৩ মিলিয়ন এবং নেপালে এক লাখ ৮০ হাজার প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে বলে ইডকল সূত্রে জানা যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।