মাসের শুরুতে যখন মাসকামাই পকেটে আসে, তখন গুনে গুনে বাড়ি ভাড়া, গ্যাস বিল, কারেন্ট বিল, পানির বিল, ময়লার বিল...ইত্যাদি নানা ফর্দ হাজির হয় সামনে। আয়ের উৎস এক, কিন্তু ব্যয়ের রাস্তা হাজারো। সামান্য কটা টাকা আয়ের দরূন আক্ষেপ হয়, বাপ-দাদার একটা টিনশেড বাড়িও যদি থাকতো, তাহলে এই কটা টাকা জীবনে সামান্য বাড়তি কিছু আনন্দ যোগ করতো হয়তোবা! বেতনের সিংহভাগ চলে যাচ্ছে যে বাড়ি ভাড়ায়, সেটির কোথাও কোথাও এতোটাই ড্যাম..একনাগারে বৃষ্টি হলেই ভিজে সয়লাব। বৈঠক ঘরের পূব দিকের দেয়ালে জানালার ফিটিংসে গন্ডগোল, তার ঠিক উপরে ভেন্টিলেটর, বাইরের দিকে ভেন্টিলেটর লাগায়নি বাড়িওয়ালা খরচ বাচানোর জন্যে। এই দুইয়ে মিলে এতো পানি গড়ায় বর্ষা এলে, কোথায় শুয়ে শুয়ে বৃষ্টির রূপ দেখবো নয়নভরে, ফার্নিচার টানটানি।
বারান্দায় শখ করে লাগানো বেঁতের পর্দাটাও ভিজবে বৃষ্টি এলে। টানা রোদ্দুর, কিংবা একুট কাল বৈশাখীর দাপট সৈতে পারেনা ছোট চারা গাছগুলো। প্রতিদিন ঘরের ভিতরে আনা নেয়া চলে। জীবনে এগুলোর মূল্য অনেক, তাই এগুলো নিয়ে টানাটানিটাও বাহুল্য মনে হয়না কখনো।
তবুও বউটা প্রতিদিনই বলে, আষাঢ় আসার আগেই ভালো একটা বাসা দেখে উঠে যেতে।
শুয়ে শুয়ে নিশ্চিন্তে বর্ষা দেখার শখ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সেই সুন্দর বাসাটিতে উঠি উঠি করেও ওঠা হয়ে উঠেনা। ভাঙাচোরা টাইপ সিঁড়ি দিয়েই প্রতিদিন উঠানামা, পানি জমে থাকা, উচু-নিচু ভাঙা রাস্তা, যার মাঝে মাঝে ফোঁড়ার মতো ফুলে তাকা ম্যানহোলের ঢাকনী...তীব্র গাড়ির হর্ন, ঝা রোদ্রে ছুটন্ত পিক আওয়ারে রিকশায় বসে বসে ধুলিবালি খাওয়ার মাঝে ধাতস্ত: হতে হয়। ফিরে আসতে হয় নিজের মাঝে। এটাই নিত্যদিন।
আমার, আমাদের মতো সাধারন: মধ্যবিত্তের জীবন। এতো ভালো আছি, মাঝে মাঝে মনে হয় পৃথিবীর সবসুখ আমাদের। জানি মানুষ এই ঢাকা শহরে, দেশজুরে নানা কষ্টের মধ্যে আছে। কারো মাথার উপরে হয়তো ছানিটিও নেই!
এমন অবস্থায় নগরীর কুলীন এলাকায় একজন মানুষের (রাজনৈতিক মানুষ) একাধিক বিলাস বহুল বাড়ি (অবশ্যই বাপ-দাদার নয়) থাকাটাকে রাষ্ট্র যদি মনে করে অন্যায্য, বিশেষত: যখন সেই মানুষটির কোনো অভাব অনটন তো দুরে থাক, বসে খেলেও জীবন চলে যায় অবস্থা, তাতে খুব একটা দু:খ পাইনি। এবং রাষ্ট্র তার একটি বাড়ি নিতে চাইলে সেটিকে যদি অসহায় মানুষকে উচ্ছেদের বাতাবরনে উপস্থাপন করা হয়, তাতে সামান্যতম দু:খও পাচ্ছিনা...!!! খালি মনে হয়, নাহয় একটু বিদ্রুপ করলোই বা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।