আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হামা দেওয়া বাবুদের জন্য নয় এটা-

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

সামহোয়্যার ইনে কিছু দিন পর পর একটা বিষয়ের পুনারাবৃত্তি ঘটে, গালিবাজ ঠেকান কতৃপক্ষ। কতৃপক্ষ কিছু একটা করেন, একটা কিছু তো করবেন আপনারা, এবং এখানের ইউজাররা বিভিন্ন রকম পদ্ধতি বয়ান করেন, সদ্য শুন্য আরণ্যক এবং তর্পন পুনরায় পুরোনো পাঠের পুনরালোচনা শুরু করেছেন। তাদের অভিযোগ, কিছু কিছু নিকসর্বস্ব ব্যক্তি খেয়ে না খেয়ে ব্লগের পরিস্থিতি উতপ্ত করতে কিংবা ব্লগের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করতে সক্রিয় হয়ে উঠে- বক্তব্যের ভঙ্গিতে স্পষ্ট কিংবা অস্পষ্ট ভাবেই চলে আসে এই রাজনৈতিক বক্তব্যটুকু, ব্লগের পরিবেশ বিনষ্ট করা বিষয়টা বোধগম্য হয় না আমার। ব্লগ কি পাঠশালা, মসজিদ, প্যাগোডা, সিনাগগ? ব্লগের পরিবেশ আদতে কি? শূণ্য আরণ্যক গণতান্ত্রিক একটা পদ্ধতি হাজির করেছেন, তবে সকল পদ্ধতিই নির্ভর করে চাবুক কার হাতে আছে তার নিজস্ব ব্যক্তিত্বের গঠনের উপরে। কতৃপক্ষ নামের আড়ালে যারা সক্রিয়, তাদের নির্দিষ্ট একটা ব্যক্তিত্ব নেই, তাদের ব্যক্তিত্বহীনতা বর্তমানে বিশাল একটা সমস্যা।

তবে কতৃপক্ষ নামক ব্যক্তিবর্গের সামষ্টিক ব্যক্তিত্বহীনতা মূলত কতৃপক্ষীয় সমস্যা নয়, সমস্যাটা সামাজিক। বাংলাদেশে আদতে ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠে না, সামাজিক সংস্কৃতিতে ব্যক্তির বিকাশসহায়ক তেমন উপকরণ নেই, এখানে ছাগলের ম্যাৎকারই শোনা যাবে, গড্ডালিকা প্রবাহই প্রবল হবে, বাংলাদেশে ব্যক্তি নেই, ব্যক্তি তৈরি হলেই ব্যক্তিত্ব তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। আধাখেঁচরা গাম্ভীর্য কিংবা অহেতুক তারল্য কোনোটাই ব্যক্তিত্বের পরচায়ক হয়ে উঠতে পারে না। বস্তির উড়নচন্ডী গাঞ্জুট্টির মতো যখন নেশা মাথায় চড়ে গেলো, তখন টোলের পন্ডিতের মতো এক সাথে ১০০ জনকে জেনারেল, ওয়াচ লিস্টে পাঠানোর উজবুকী কার্যক্রম ঠিক মানানসই আচরণ হতে পারে না। কিংবা কতৃপক্ষ শালীনতা শোভনতা রক্ষার জন্য যে বন্ধনী ব্যবহার করেন, সেটাতে শালীনতা আদতে কি প্রকাশিত হয়, সংকলিত পাতা, ক্রমানুসারে পাতা, আপনার লেখা সংকলিত পাতায় প্রকাশিত হবে আপনি নিরাপদ এবং আপনি ওয়াচে আছেন, মডারেটর দয়া করে আপনার ব্লগে পদধুলি দিয়ে আপনার লেখা প্রথম পাতা ও সংকলিত পাতায় প্রকাশিত করতেও পারে জাতীয় ইতরামিও আদতে নিয়ন্ত্রন ও নির্যাতন।

স্বাধীনতার বরখেলাপ। কতৃপক্ষ নিজেও নিশ্চিত না আদতে তারা এই সাইট নিয়ে কি করতে চান। তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তহীনতা কিংবা অনিশ্চয়তার ভুক্তভোগী হয় সাধারণ ব্লগারেরা। সেলেক্টিভ ইনভিজিবিলিটি আইডিয়াটা আমার নিজের কাছে গণতান্ত্রিক মনে হলেও এই প্রক্রিয়া সামহোয়্যার কেনো বাঙালি চালিত কোনো ফোরামে চলবে না। এখানে ব্যক্তি অনুপস্থিত।

সিলেক্টিভ ইনভিজীলিটি প্রয়োগের জন্য স্বাধীন মত ও স্বাধীন চিন্তার অধিকারী কিছু মানুষ প্রয়োজন, যারা দল গোষ্ঠি এবং আদর্শের বাইরে গিয়ে নিজের বিবেচনায় কাজ করতে সক্ষম। নিজের ভাবনায় নিজের দখল আছে যাদের, তাদের সমন্বয়ে গঠিত যেকোনো ফোরামে এটা কাজে লাগতে পারে, তবে সামহোয়্যার, সচলায়তন, প্রথম আলো ব্লগ, এইসবের উদাহরণ না। ডায়াপার পড়া মানুষেরা বাংলাদেশে বেড়ে উঠে, তারা বিয়ে করে বাচ্চা পয়দা করলেও হামা ধরা ভাবটা যায় না, আম্মা গো আমারে মারি ফেলাইলো, ফাডায়া ফেলাইলো ভঙ্গিটা কখনই ত্যাগ করা সম্ভব হয় না এদের। তারা সব সময়ই কতৃপক্ষ কিংবা আলাদা কোনো শক্তিশালী অস্তিত্বের হস্তক্ষেপ কামনা করে। এবং এই পরমুখাপেক্ষী আচরণ তাদের নিজেদের স্বাধীন মত বিকশিত হওয়ার অন্তরায়।

ক্রমশ সামাজিক এবং প্রচলিত সমাজের তুলনায় কঠোর, এবং সুশীল হয়ে উঠা সামহোয়্যারের পরিবেশ আমার কাছে খুব একটা ভালো লাগে না। কতৃপক্ষ নিজের দায় এড়াতে ব্যবহারকারীর হাতে নিয়ন্ত্রন তুলে দিয়েছেন, ব্যক্তি চাইলেই অন্য যেকোনো এবং সকল ব্যক্তিকে ব্লক করতে পারেন। চাইলেই কারো মন্তব্য মুছে দিতে পারেন। চাইলেই তার নিজের পোষ্টের কমেন্ট মডারেশনের আওতার রাখতে পারেন। বাংলাদেশের প্রচলিত সুশীল সমাজে যারা উঠাবসা করেন, তাদের এইসব নানাবিধ নিরাপত্তাবলয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তারা উন্মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে দিশেহারা বোধ করেন, বুঝতে পারেন না নিজের স্বাধীন মত না থাকলে স্বাধীন পরিবেশে কিভাবে বেঁচে থাকবেন।

ট্রোলিং যদি উৎপাত অর্থে ব্যবহৃত হয়, সেই উৎপাত ঠেকানোর জন্য কতৃপক্ষ সদস্য ব্লক আর কমেন্ট মডারেশন অপশন রেখেই দিয়েছেন। সেটা ব্যবহার করেন যথযথ ভাবে, যাদের বিরুদ্ধে আপত্তি আছে, তাদের ব্লক করে রাখলেই হয়, ধামাধরা বাচ্চার মতো সময় সময় নাকি কান্নার প্রয়োজন তো নেই। এখানে জামাতি বুদ্ধিজীবি এবং পেইড ব্লগার এবং সেই সাথে প্রচলিত সমাজের সেলিব্রিটি মানুষেরা নিজেদের পোষ্টে কমেন্ট মডারেশনে রাখেন। এখানে ত্রিভূজ, জামাত ঘারানা এবং প্রথম আলো ঘারাণার মানুষেরা কমেন্ট নিয়ে বেশী উদ্বিগ্ন, তারা সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকেন, এই বুঝি তাদের কেউ গালি দিয়ে গেলো, তাদেরঅনুপস্থিতির সুযোগে তাদের কেউ গালি দিলে সেটা তাদের হৃদে আঘাত করে। তাই কেউ আহ্বান জানায়, মুখোশ উন্মোচন করে দিতে হবে, সব পাষন্ডকে ন্যাংটা করে দিবো।

ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অর্থ যারা বুঝে না, যাদের নিজের ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয় নি, এবং যে সমাজ এখনও নিজের স্বাধীন মতটাই উপলব্ধি করতে শিখে নি, সে সমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা করা অরণ্যে রোদন সম্ভবত। সিলেক্টিভ ইনভিজিবিলিটি প্রক্রিয়াটার সমস্যা হলো- এখানে মানুষ ছাগলের বাচ্চার মতো দল বেধে চলে, আমি এই ঘারানা, আমি সেই ঘারানা, আমার পরিচিত একজন এখানে মাইনাস দিলো, চলো সবাই গিয়ে মাইনাস দিয়ে আসি, এই প্রবণতায় নিজের মত বলে কিছু নেই, গুরু বলেছেন খারাপ, তাই এটা বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেওয়া ব্যক্তিত্বহীন মানুষই সংখ্যাগুরু। তাদের নিজস্ব অসুয়া প্রবল, সুতরাং তাদের হঠাৎ করেই কোনো দিন প্রভুত ক্ষমতা দিলে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত অসুয়াকে ব্যবহার করবে, দুর্বল ও ব্যক্তিত্বহীনদের হাতে প্রচন্ড ক্ষমতা আসলে তারা উদভ্রান্ত প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে যায়। এখানেও সেটাই ঘটবে। সুতরাং যারা নিজেদের ব্লগের পবিত্রতা এবং সামহোয়্যারের পবিত্রতা নিয়ে চিন্তিত, তারা বরং একটা আন্দোলন শুরু করতে পারেন, তারা নিজেরা প্রচারণা শুরু করতে পারেন, এই মানুষটি গালিবাজ, এক ব্লক করে দোজাহানের নেকী হাসিল করেন।

আর সেই চর্চার সাথে সাথে নিজেদের ব্যক্তিত্ববিকাশের প্রচেষ্টাও নিতে পারেন। অন্তত সেইটুকু না হলে তাদের সাথে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্য সব বড়দের বিষয়ে আলোচনা করা সম্ভব হবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।