আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ
প্রথমেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের কথা বলা যাক। ১৯৪৮ সালে জিন্নাহর ঘোষণা যে Urdu will be the state language of Pakistan এর আগেই আমাদের বাংলা ভাষা কে ঊর্দূর সাথে সমমর্যাদা দেওয়ার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় তমুদ্দন মজলিশ সেই ১৯৪৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর এবং এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন মরহুম প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম সাহেব। এই তমুদ্দন মজলিশ ও আবুল কাশেম সাহেবই ১৯৪৮ সালের ২০শে মার্চে জিন্নার অন্যায়-অযৌক্তিক ঘোষণায় আমাদের বাংলা ভাষার সমমর্যাদার দ্বাবীকে ধীরে ধীরে আন্দোলনে রুপান্তরিত করেন। অথচ ১৯৯৬-২০০১ সালে এবং বর্তমানে আবুল কাশেম সাহেবের কথা দূরে থাকুক ভাষা আন্দোলনের স্তম্ভ তমুদ্দন মজলিশের নাম পর্যন্ত তেমন উচ্চারিত হয় নি। কারণ একটাই সেটা হল ধর্ম।
ভাষা আন্দোলনে তমুদ্দন মজলিশের কমন শ্লোগান ছিল "নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার"। আর বর্তমানে একে অসম্প্রাদিয়কতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার অজুহাতে এই কমন শ্লোগান সহ পুরো বিষয় কে অস্বীকার করে আওয়ামী-বাকশালী গোষ্ঠী।
http://en.wikipedia.org/wiki/Tamaddun_Majlish
আর ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভঙ্গের নির্দেশ নাকি দেন শেখ মুজিব। প্রথমে আওয়ামী গোষ্ঠী প্রচারণা চালিয়েছিল যে মুজিব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগর হতে আগের দিন ২০শে ফেব্রুয়ারী চিরকুটের মাধ্যমে এই নির্দেশ দেন। পরে কয়েকজন ভাষা সৈনিক এই মিথ্যা ধরে ফেলেন।
তারা প্রমাণ করেন মুজিব নির্দেশ দিয়েছিল তো দূরে থাক মুজিব ২০শে ফেব্রুয়ারী ঢাকা জেলখানাতেই ছিলেন না। কারণ ১৮ই ফেব্রুয়ারী তাকে ফরিদপুর জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী-বাকশালী গোষ্ঠী এই নিয়ে আর কোন টু শব্দ করে নি।
বহুল আলোচিত আগরতলা মামলা কে ষড়যন্ত্র শব্দ টি আগে জুড়ে দেওয়া হয়। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ব্যাপারটি বৈধ ছিল কারণ তা না হলে আমরা পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দ্বাবী আদায়ের আন্দোলন জোরদার করতে পারতাম না।
কিন্তু স্বাধীনতার পর ব্যাপারটি জনগণের কাছে প্রকাশ করা উচিত ছিল যে ঐ মামলার অভিযোগ সমূহ মোটেই মিথ্যা ছিল না। (সুত্রঃ লেখক-নূরে আলম লেলিন, দৈনিক আজকের কাগজ ১৮ই নভেম্বর ২০০৬ইং)
এরপর ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণ। এটাকে আমি বলব ষ্ট্যান্ডবাই স্বাধীনতার ঘোষণা। ঐ ভাষণে মুজিব বলেন যা অনেকটা এ রকম আর হামলা হলে এবং আমি যদি নির্দেশ নাও দিতে পারি তোমরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করবা। কিন্তু ঐ ভাষণের শেষে মুজিব জয় বাংলা বলার পর জয় পাকিস্তানও বলেন (সুত্রঃ নির্মল সেন দৈনিক আমাদের সময় ৮ই মার্চ ২০০৯ইং)।
Click This Link
কিন্তু স্বাধীনতার পর আওয়ামী-বাকশালী গং অত্যন্ত কৌশলে জয় পাকিস্তান শব্দ টি বাদ দিয়ে ভাষণের নতুন অডিও বের করে। আমি বুঝিনা ২৫শে মার্চ ১৯৭১ সালের কালোরাত্রি অপারেশন সার্চ লাইট মুজিবের ষ্ট্যান্ডবাই স্বাধীনতা ঘোষণাকে স্বার্থক করে তারপরেও জয় পাকিস্তান বাদ দিয়ে প্রকারন্তরে ইতিহাসকেই ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে মহাজোট সরকার শহীদ জিয়ার ২৬শে মার্চ ১৯৭১ প্রথমে নিজ নামে স্বাধীনতার ঘোষণা কে স্বীকৃতি দেওয়া তো দূরে থাকুক তোফায়েল, সাজেদা ও শেখ সেলিম বলেন যে জিয়া নাকি মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না। তাহলে ২৬শে মার্চ ১৯৭১ এর প্রথম প্রহরে কোন ভুতে পাকিস্তানী কর্ণেল ও সৈন্যদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাদের কে বন্দী করে কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র দখল করে? আর মুজিবই ১৯৭২ সালে জিয়া কে মেজর হতে সরাসরি স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য তার সম্মানার্থে সেনাবাহিনীতে উপ-প্রধানের পদ সৃষ্টি করা হয়।
তাহলে কি মুজিব খামোখা জিয়া কে সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান করেছিলেন? আর ১৯৭২ হতে ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্টের পূর্বে কি কোন ইতিহাস আছে যে ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য জিয়া ব্যাতীত অন্য কাউকে পুরস্কৃত করা হয়? কিংবা ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা যা পরে নাকি রেকর্ড করে বলধা গার্ডেন হতে বাজানো হয় সেই রেকর্ডটাই কই গেল?
বলা হয়ে থাকে পাকিস্তানে বন্দী অবস্থায় থাকাকালীন মুজিবের জন্য আমেরিকা ও বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের বসবাসরত বাঙালীরা, কিছু মার্কিন সিনেটর ও বিশ্বের কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তির তদবিরে মার্কিণ প্রেসিডেন্ট নিক্সন পাকি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কে বলেন মুজিব কে প্রাণদন্ড দেওয়া যাবে না। এর মাঝে ৭১ সালের সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখ বা তার দুয়েকদিন পরে বেগম মুজিব নাকি তৎকালীন এ অঞ্চলের গভর্ণর এ. এম. মালিকের কাছে মুজিবের প্রাণ ভিক্ষা চান। (সুত্রঃ নিউ ইয়র্ক টাইমস্ ২৭শে সেপ্টেম্বর ১৯৭১)
এরপর শাহ আজিজুর রহমানের উপখ্যান। বলা হয়ে থাকে শাহ আজিজ কে নাকি জিয়াই বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালে আসার অনুমতি দেন এবং পরবর্তীতে তাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী করেন। এ সমন্ধে উইকি পিডিয়া কি বলে দেখি;
Click This Link
Click This Link#Return_to_Bangladesh
জিয়া তাকে প্রধানমন্ত্রী করেন এটা পরম সত্য।
কিন্তু জিয়ার ক্ষমতা গ্রহণের পর তাকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়া হয় ব্যাপার টি চরম-পরম ভাবে মিথ্যা কথা। শাহ আজিজ খুব সম্ভবত ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ এর পূর্বেই বাংলাদেশে আসেন। পরবর্তীতে শাহ আজিজ কে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গ্রেফতার করলেও ২ বছর পর ১৯৭৩ সালে খোদ বঙ্গবন্ধু তাকে জেল থেকে মূক্ত করেন এবং ঐ সময়ে তার পরিবার কে ২২০০০ টাকা দামের গাড়ি সরকারি ভাবে কিনে দেন সেটা অবশ্যই সত্য। নিম্নের লিংক টি দেখুন;
Click This Link
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে তথাকথিত জিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালীন যে শাহ আজিজ বাংলাদেশে আসে একেবারেই মিথ্যা। বরং বঙ্গবন্ধুর কৃপায় তিনি ১৯৭৩ সালে মুক্তিপান এবং ১৯৭৪ সালে লাহোর ও.আই.সি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু তাকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে সফর সঙ্গী করেন।
এর দুটি কারণ ১) শাহ আজিজ একজন দক্ষ কূটনীতিক এবং ২) মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের সাথে তার ভাল সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে তাকে জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী করেন ঠিক একই কারণে। মজার ব্যাপার হল দীর্ঘকাল যাবৎ আওয়ামী-বাকশালী গং এ সত্যকে চেপে রাখে এবং জিয়া কে একতরফা ভাবে দোষারোপ করে। আরকি মুজিব করলে কোন দোষ নাই কিন্তু জিয়া করলে যত দোষ। ঠিক যেমন মুজিব সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত ভাবে সকল পাকিস্তানী সৈন্যদের মূল যুদ্ধাপরাধীদের সমেত কে ছেড়ে দেন তার কোন সমালোচনা নাই
Click This Link
কিন্তু জিয়া ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে দালাল আইন সহ এ দেশীয় হুকুমের গোলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেন সেটা যত দোষ হয়ে গেল।
যদি জিয়া গোলাম আযম সহ অন্যান্য এ দেশীয় যুদ্ধাপরাধীদের বাংলাদেশে আসতে না দিলে সৌদি আরব, কুয়েত সহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ কে কখনই স্বীকৃতি দিত না এবং আজকে ২০লক্ষেরও অধিক বাংলাদেশী সে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেত না। এটা কি আওয়ামী-বাকশালী গং জীবনে কোনদিন ভেবে দেখেছে?
১৯৭২ সালের মুজিব-ইন্দিরার চুক্তির জন্যই যে ১৯৮০ সালে ভারত কে বাংলাদেশ নৌ ট্রানজিট দেয় সেটা অতীতে ও বর্তমানে বহু আওয়ামী-বাকশালী গং অস্বীকার করে। এর ৫নং ধারায় লেখা আছে;
v) The contracting parties shall continue to strengthen and widen their mutually advantageous and all round cooperation in the economic, scientific and technical fields, and shall develop mutual cooperation in the fields of trade, transport and communication on the basis of the principles of equality and mutual benefit;
http://banglapedia.search.com.bd/HT/I_0040.htm
কিন্তু বর্তমান মহাজোট সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী ফারুক খান তা মানতে একেবার্ই নারাজ।
তাই দেখা যাচ্ছে যে উইকির মত বিশ্বখ্যাত অনলাইন তথ্যভান্ডার সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পর্যন্ত আওয়ামী-বাকশালী গংদের কালো থাবা প্রসারিত হয়েছে। সর্বশেষ জিয়ার কথিত ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের স্বাক্ষাৎকারের ভিডিও তে অডিও ও ভিডিও তে জিয়ার ঠোট নাড়ানোর কোন মিলই নেই।
তাই অনেক বিতর্কিত বিষয়ে চাইলেই সহজে সত্য মিথ্যা যাচাই করা যাবে না। আওয়ামী-বাকশালী গং জিয়া ও বিএনপির বিরুদ্ধে একতরফা ইতিহাস বিকৃতির দ্বাবী করে অথচ নিজেরাই স্বাধীনতার পূর্বের ও পরের ইতিহাস কে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই তা করে আসছে। তাই বাংলাদেশের সাথে জড়িত বহু ইতিহাস বিকৃতির দ্বায় ভার বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আওয়ামিলীগের উপরই বর্তায়। এর জন্য তারা একদিন ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।