আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৃথিবীর সব মেয়েদেরই কি সমস্যাগুলো কাছাকাছি????

মিলে মিশে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ!

গত সেমিষ্টারে মিমো ক্লাশে এক চাইনীজ মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল, নাম লি। তার আর আমার ল্যাব ভিন্ন। আমি বিবাহিত এবং স্বামী বাংলাদেশে শুনে খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞ্যেস করল, তোমার স্বামী তোমাকে আসতে দিল? আরো বললো, সে আর তার স্বামী দু'জনেই ইঞ্জিনিয়ার, তার স্বামীর আর পি. এইচ. ডি করার ইচ্ছা নাই, কিন্তু তার খুব ইচ্ছে, তাই সে এখানে এসেছে। এটা স্বামীটির পছন্দ হয় নাই এবং বলেছে তাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য মেয়ে বিয়ে করবে। সে এতোদিন একা থাকতে পারবে না।

তারপর সে আমার ব্যাপারে জানতে চাইল। তখন আমি বললাম, দেখ বাংলাদেশে ছেলে-মেয়েদের বিয়েটা সাধারণতঃ পারিবারিকভাবেই হয়, হোক সেটা নিজেদের পছন্দে অথবা বাবা-মায়ের পছন্দে। আর এতো সহজে কেউ ডিভোর্সের কথা চিন্তা করে না। দক্ষিণ এশীয় পরিবারগুলোতে পারিবারিক বন্ধন পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশী দৃঢ়। হ্যাঁ, আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটটা এমন যে, স্বামী দেশে থাকবে আর স্ত্রী বিদেশে পড়াশোনা করবে, এটা একটা ব্যতিক্রমই বটে।

তবে আজকাল কারো কারো ক্ষেত্রে এই ধরণের ব্যাপারটা ঘটছে। বললাম, মূল ব্যাপারটা হচ্ছে সমঝোতার, আর পারস্পরিক বিশ্বাসে সততার। আমার স্বামীও প্রথমে আপত্তি করেছে। কিন্তু আমি তাকে বুঝিয়েছি, বাস্তব প্রয়োজনীয়তাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, আমার ক্যারিয়ারের জন্য এটা প্রয়োজন, ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সে সেটা মেনে নিয়েছে। তার যেহেতু সরকারী চাকুরী, আর উচ্চতর শিক্ষাটা তার খুব বেশী প্রয়োজন নেই, নিজেরও তেমন একটা ইচ্ছে নেই, তাই সে দেশেই আছে।

কিছুদিনের দূরে থাকার কারণে সরাসরি ডিভোর্সের কথা আমরাতো এতো সহজে ভাবতে পারি না। এই ধরণের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যত প্রজন্মের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, বাচ্চারা হয় বাবাকে হারায়, নয়তো মাকে। অথচ শিশুদের সঠিক মনোবিকাশে বাবা-মা দু'জনেরই প্রয়োজন আছে। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেই পরিবারে শান্তি বজায় রাখা সম্ভব। প্রতি সেমিস্টার শেষে ছুটি তো আছেই।

টাকা-পয়সায় কুলালে দেশ থেকে ঘুরে আসা তো কোন সমস্যাই না। গতকাল কোরিয়ান ভাষার ক্লাশ ছিল। স্বাভাবিকভাবে সেই মেয়েটিরও এই ক্লাশে থাকবার কথা ছিল। তাকে না দেখে তার ল্যাবের আরেকজন পরিচিত চাইনীজ মেয়ের কাছে জানতে চাইলাম। সে বলল, লি'র স্বামী তাকে দেশে ফিরে যেতে বলেছে, বাচ্চা নিতে হবে......।

তাই সে ফিরে গেছে, এই মূহুর্তে পি. এইচ. ডি টা আর চালিয়ে যাবে না। শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল, ওই মেয়েটিও তার সামাজিক ব্যবস্থার কাছে হার মেনে গেল, পারলো না তার স্বামীকে বোঝাতে। কে বলে চীন অনেক উন্নতি করেছে??? সামাজিকভাবে তো দেখতে পাচ্ছি আমাদের মতোই। বিয়ের পর মেয়েদের এই পরাধীনতা কবে দূর হবে???

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.